আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে কুরআনের যুক্তি

আল্লাহর অস্তিত্ব

আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে কুরআনের যুক্তি 

আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ কি ? আল্লাহ আছে নাকি নেই? এই বিতর্ক নতুন কিছু নয়। প্রাচিনকাল থেকেই মানুষের মধ্যে আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্ক হয়ে আসছে। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে ফিলোসফিতে অনেক ধরণের যুক্তি পাওয়া যায়। তবে এখানে আমরা আল্লাহর অস্তিত্বের পক্ষে কুরআনের যুক্তি নিয়ে আলোচনা করবো।

আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে আয়াত ; তারা কি স্রষ্টা ব্যতীত সৃষ্টি হয়েছে, নাকি তারা নিজেরাই স্রষ্টা ? তারা কি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছে? আসলে তারা নিশ্চিত বিশ্বাসী নয়। [1]সূরা আত্ব তূর; ৫২ঃ৩৫-৩৬  

উক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তালা অবিশ্বাসীদের নিকট প্রশ্ন করেছেন যে, তারা কি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে? এই বিশাল মহাবিশ্ব কি তারাই সৃষ্টি করেছে? পবিত্র কুরআনের এই যুক্তিগুলোকে আরেকটু গভীরভাবে ব্যাক্ষা করা যাক। চারটি যৌক্তিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে আমরা এগুলো ব্যাখ্যা করতে পারি। 

* তারা কি স্রষ্টা ব্যতীত সৃষ্টি হয়েছে? [মহাবিশ্ব এমনি এমনি সৃষ্টি হয়েছে বা শূণ্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে।]

* নাকি তারা নিজেরাই স্রষ্টা  [মহাবিশ্ব নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে।]    

* নাকি তারা আসমান যমীন সৃষ্টি করছে ? [মহাবিশ্ব অন্য কোনো সৃষ্ট বস্তু থেকে সৃষ্টি।]  

* আসলে তারা নিশ্চিত বিশ্বাসী নয়। [চিরন্তন সত্তা থেকে সৃষ্ট।] 

ইউনিভার্স এমনি এমনি সৃষ্টি হয়েছে বা শূণ্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে ?

সৃষ্টি বলতে বুঝানো হয়, কোনো কিছু অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আসা। এক সময় যার কোনো অস্তিত্ব ছিলোনা। সৃষ্টির এই বিষয়টি বুঝতে পারলে আমরা বুঝতে পারবো, কোনো কিছু নিজে নিজেই সৃষ্টি হওয়া যৌক্তিকভাবে এবং বাস্তবিকভাবে অসম্ভব। কোনো কিছু নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়েছে এই কথার মানে এই যে, অস্তিত্বে আসার আগেই যেন সেটা অস্তিত্বে ছিলো। এটা যৌক্তিকভাবে একেভারেই অসম্ভব। উদাহারণ স্বরূপ, ‘ক’ নামক ব্যক্তি জন্ম নেওয়ার আগেই কি নিজেকে সৃষ্টি করতে পারবে?   

বিষয়টা আরো একটু সহজভাবে ব্যাখ্যা করি। ধরুন, ‘ক’ নামক ব্যক্তি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে। এখন সৃষ্টি মানে যেহেতু অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আসা তার মানে ‘ক’ নামক ব্যক্তিও অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এসেছে। কিন্তু কোন কিছু সৃষ্টি হতে হলে তার পিছনে কোনোনা কোনো কারণ লাগবেই। যেহেতু ‘ক’ নামক ব্যক্তি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে সেহেতু ‘ক’ নামক ব্যক্তির কারণ সে নিজেই। সুতরাং ‘ক’ নামক ব্যক্তি অস্তিত্বে আসার আগেই নিজের অস্তিত্বের কারণ হিসেবে নিজেকেই অস্তিত্বে থাকতে হচ্ছে। এটা যৌক্তিকভাবে অসম্ভব এবং বাস্তবিকভাবেও অসম্ভব।   

এখানে একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, কোনো কিছু সৃষ্টি হতে হলে তার পিছনে কেন কারণ থাকা লাগবে? কোনো কিছু সৃষ্টি হওয়ার পিছনে যদি কারণ না থাকে তার মানে ধারায় তা শূণ্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে। যৌক্তিক ভাবে এই ব্যাপারটি চিন্তা করে দেখুন। শূণ্য থেকে কি কোনো কিছু সৃষ্টি হতে পারে?  ০+০=০ হবে। কখনোই ০+০=১ হবেনা। 

মহাবিশ্ব অন্য কোনো সৃষ্ট বস্তু থেকে সৃষ্টি।

আলোচনা খাতিরে যদি আমরা কিছু সময়ের জন্য ধরে নিই যে, মহাবিশ্ব অন্য কোনো সৃষ্ট বস্তু থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এখানে স্বাভাবিক ভাবে একটা প্রশ্ন আসবেই “সেই সৃষ্ট সত্তাকে কে সৃষ্টি করলো ?” উত্তরে যদি বলেন অন্য আরেক সৃষ্ট সত্তা তাহলে আবারো একই প্রশ্ন আসবে, “সেই সৃষ্ট সত্তাকে কে সৃষ্টি করলো ?” প্রশ্নের এই ধারা আজীবন চলতেই থাকবে যদি শুরুতে একজন অনাদি, অসৃষ্ট সত্তা না থাকে। এভাবে প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন চলতে থাকলে “অনবস্থা দোষ”(Infinite regress) দেখা যাবে। যদি “অনবস্থা দোষ”(Infinite regress) দেখা যায় তাহলে কখনোই বর্তমানে আসা সম্ভব না। 

উদাহারণ স্বরূপ, এই মহাবিশ্ব যদি “X” হয়, আর একে সৃষ্টি করে থাকে “X1”, আবার “X1” কে যদি সৃষ্টি করে “X2” আর এইভাবে যদি অনন্তকাল চলতে থাকে তাহলে “X” কখনোই অস্তিত্বে আসতে পারবে ? না কখনোই পারবেনা ! কারণ “X” অস্তিত্বে আসার জন্য নির্ভর করে “X1″এর উপর, আবার “X1” অস্তিত্বে আসার জন্য নির্ভর করে “X2″এর উপর এবং এভাবে অনন্তকাল চলতে থাকলো। যেহেতু সৃষ্টির এই ধারা অনন্তকাল ধরেই চলতে থাকবে তাই  “X” অস্তিত্বে আসার জন্য নির্ভর করবে অনন্তকাল ধরে চলা সৃষ্ট কিছুর উপর। যেহেতু X অস্তিত্বে আসার জন্য নির্ভর করে অনন্তকাল ধরে চলা সৃষ্টির ধারার উপর তাই এই  নির্ভরশীলতাও কখনোই শেষ হবেনা এবং “X” কখনো অস্তিত্বে আসবেনা। বরং শুরুতে এমন একটা সত্তা থাকতে হবে যে কিনা অসৃষ্ট এবং যার পিছনে আর কোনো সত্তা নেই।  

এছাড়াও, Law of parsimony ( মিতব্যয়িতা নিয়ম ) অনুসারে, একই জিনিসের একটি মাত্র কারণ থাকা সম্ভব। তাহলে এই ইউনিভার্সের একটি মাত্র কারণ থাকা সম্ভব। এবং সেই কারণই হলো সৃষ্টিকর্তা।

চিরন্তন সত্তা থেকে সৃষ্ট

এই মহাবিশ্ব নিজে নিজে সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব, আবার অন্য কোনো সৃষ্ট বস্তু থেকেও সৃষ্টি সম্ভব না। তাহলে এর বিকল্প কি ?

বিকল্প হচ্ছে এই মহাবিশ্ব চিরন্তন কোনো স্রষ্টা থেকে সৃষ্ট। অর্থাৎ যে সত্তা সব সময় অস্তিত্বশীল এবং মহাবিশ্ব কারণহীন  কারন থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ যা অসৃষ্ট। মোদ্দাকথা, কিছু একটাকে সবসময় অস্তিত্বশীল থাকতে হবে। সেটা হয় সৃষ্টিকর্তা বা মহাবিশ্ব। কিন্তু মহাবিশ্বের যেহেতু শুরু আছে এবং এটা যেহেতু সসীম তাই মহাবিশ্ব আদি কারণ হতে পারেনা। তাই কারণ হতে হবে সৃষ্টিকর্তা।    

আল্লাহ, চিরন্তন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি, তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। [2]সূরা আল-ইখলাস; ১১২ঃ২-৩ কুরানের  এই  আয়াতে সেই সত্য জ্বল জ্বল করছে।

সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে অন্যান্য আর্টিকেল পড়ুনঃ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব – Faith and Theology (faith-and-theology.com)

Sazzatul Mowla Shanto

As-salamu alaykum. I'm Sazzatul mowla Shanto. Try to learn and write about theology and philosophy.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button