ইসলামী আন্দোলন ইমানের অপরিহার্য দাবী

ইসলামী আন্দোলন ইমানের অপরিহার্য দাবী

ইসলামী আন্দোলন ইমানের অপরিহার্য দাবী 

পবিত্র কুরআনে ইসলামকে অনেক জায়গায় ‘দ্বীন’ প্রতিশব্দে উল্লেখ করা হয়েছে যার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বাংলা পরিভাষা হচ্ছে ‘জীবনব্যবস্থা’। ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা করে বিদায় হজ্বের দিন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এই আয়াতটি নাযিল করেছেন, 

‘আজকের এই দিনে তোমাদের জন্য দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি নিয়ামতসমূহ পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে একমাত্র দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ [1]সুরা-আল মায়িদা: ৩ 

আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ইসলামকে শুধু পূর্ণাঙ্গ দ্বীন হিসেবে ঘোষণা করেননি বরং সকল জীবনব্যবস্থার উপর ইসলামকে বিজয়ী করার ঘোষণাও দিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, 

তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দীন সহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি একে সকল দীনের উপর বিজয়ী করেন, যদিও মুশরিকরা অপছন্দ করে। [2]সূরা তাওবা-৯ঃ৩৩

তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি এটাকে সকল দীনের উপর বিজয়ী করতে পারেন। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। [3]সূরা ফাত্হ; ৪৮ঃ২৮ 

তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্যদ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি সকল দ্বীনের উপর তা বিজয়ী করে দেন। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। [4]সূরা আস-সফ; ৬১ঃ৯

কোন বিপরীত শক্তির উপর বিজয়ী হওয়ার স্বাভাবিক দাবীই হলো একটি সর্বাত্মক আন্দোলন, একটি প্রাণান্তকর সংগ্রাম ও একটা সার্বিক বিপ্লবী পদক্ষেপ। সুতরাং আন্দোলন, সংগ্রাম, বিপ্লব প্রভৃতি শব্দ ইসলামের আলোচনা বা জ্ঞান গবেষণায় নতুন করে আমদানী করা কোন শব্দ নয়। ঈমানের সাথে, ইসলামের মূল প্রাণসত্তার সাথে এই শব্দগুলো ওতপ্রোতভাবেই জড়িয়ে আছে।

আন্দোলন কি?

আন্দোলন শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Movement যার অর্থ হলো কোনো দাবী আদায় করার জন্য, কোনোকিছু রদ বা বাতিল করার জন্য কিছু লোকের সংঘবদ্ধ প্রচেষ্ঠা। কোনো কিছুকে অপসারণ নতুন কিছু কায়েম করার উদ্দেশ্য নিয়ে যে সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা চালানো হয় তাকেই আন্দোলন বলা হয়। 

ইসলাম কি? 

ইসলাম শব্দের অর্থ আনুগত্য। পারিভাষিক অর্থে একমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সাঃ) প্রদর্শিত জীবন-পদ্ধতি অনুসরণ করা এবং এর বিপরীত সকল মত ও পথ পরিহার করে চালাকেই ইসলাম বলে। ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের ইহকালীন শান্তি ও পরকালিন মুক্তি। কোনো ব্যক্তি যখন ইসলামের সুশীতল চায়াতলে আসে তখন সে আল্লাহর সাথে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। 

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন,

নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। অতএব তারা মারে ও মরে। [5]সূরা আত-তাওবা; ৯ঃ১১১

ইসলাম শব্দটি এসেছে সিলমুন থেকে। সিলমুন শব্দের অর্থ শান্তি। এই শান্তি এই অর্থে শান্তি যে, মানুষের সার্বিক জীবনে যেখানে অশান্তি বিরাজমান ইসলামের অনুপস্থিতির কারণে, অথবা আল্লাহর আইনের পরিবর্তে মানুষের বানানো কোনো আইনের নিমজ্জিত থাকার কারণে সমাজে অশান্তির আগুন দাওদাও করে জ্বলে। এই অশান্তির কবল থেকে মানুষকে মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে বিধায় ইসলাম শান্তির বাহক। মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আল্লাহর দাসত্ব ও সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে মানুষ শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপনের সুযোগ করে দেওয়াই হলো ইসলাম। সুতরাং, আমরা বলতে পারি মানুষকে শান্তি, মুক্তি ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করে দেওয়ার আন্দোলনই ইসলাম।  

ঈমান ও ঈমানদারের পরিচয় 

ঈমানদারদের পরিচয় ঈমান শব্দটি ‘আমন’ ধাতু থেকে নির্গত। ‘আমন’ এর মূল অর্থ হচ্ছে, আত্মার প্রশান্তি ও নির্ভীকতা লাভ। ঈমান শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো বিশ্বাস। এ ছাড়াও আনুগত্য করা, অবনত হওয়া, নির্ভর করা, স্বীকৃতি দেয়া অর্থেও ব্যবহৃত হয়। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর আল্লাহ্‌ যা যা অবতীর্ণ করেছেন সে সব বিষয়গুলো মুখে স্বীকার করা, অন্তরে বিশ্বাস করা, এবং কর্মের মাধ্যমে তা প্রকাশ করানো কে ঈমান বলে। ঈমানের সমন্বয় হলো, ক) মুখে স্বীকার করা। খ) অন্তরে বিশ্বাস গ) কাজে পরিণত করা। 

ছয়টি বিশ্বাসের ওপর ঈমান প্রতিষ্ঠিত: ১. আল্লাহ, ২. ফেরেশতাগণ, ৩. আসমানি কিতাবসমূহ, ৪. রাসূলগণ, ৫. বিচার দিবস এবং ৬. তাকদিরের প্রতি ঈমান আনা। ঈমান হলো আল্লাহর জাত সিফাত ও আল্লাহর রাসূল কর্তৃক উপস্থাপিত জীবনাদর্শের ওপর গভীর বিশ্বাসের নাম। অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা, এ বিশ্বাসের প্রতিফলন তার বাস্তব জীবনের বাস্তবায়িত করার নামই হলো ঈমান। কুরআন ও হাদিসের আলোকে ঈমানদারদের পরিচয় আমরা অনুধাবন করতে পারি- ঈমান সম্পর্কে কোরআনে এমন অনেক আয়াত এসেছে, যাতে ঈমানের সাথে আমলের কথাও বলা হয়েছে। 

যারা ঈমান আনে আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি আর নেক আমল করে। [6]সূরা আল বাকারা; ২ঃ৬২

অতঃপর ঈমান আনা আল্লাহর প্রতি ও রাসূলের প্রতি যদি তোমরা ঈমান আনো ও তাকওয়া অবলম্বন কর। তবে তোমাদের জন্য বিরাট পুরস্কার রয়েছে। [7]সূরা আলে ইমরান; ৩ঃ১৭৯

সংগ্রামের পথে তিনি খুঁজে পান জীবনের সফলতা। কুরআনে এসেছে, “মুমিন কেবল তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করেনি। আর নিজদের সম্পদ ও নিজেদের জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করেছে। এরাই সত্যনিষ্ঠ। [8]সূরা হুজুরাত; ৪৯ঃ১৫ 

ঈমান গ্রহণকারী ব্যক্তি আল্লাহ্প্রদত্ত প্রশান্তি তখনই লাভ করবে তখন তাগুতি শক্তির কাছে মাথা নত করবে না। আল্লাহর আদেশের প্রতি থাকবে তার দৃঢ় আস্থা। আল্লাহর কাছেই সে মাথানত ও আত্মসর্পণ করবে। মৌখিকভাবে আল্লাহকে বিশ্বাস করার নাম ঈমান নয়। ঈমানের স্বীকৃতি দেয়ার সাথে সাথে তাকে নিজের নাফসের সাথে সংগ্রাম করতে হয়। আল্লাহর আদেশের বিপরীত সকল কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে পরিচ্ছন্ন করে নেয়ার সাথে চিন্তার পরিশুদ্ধিও একান্ত প্রয়োজন। চিন্তাচেতনা এবং বাস্তবজীবনে ইসলামকে যখন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে সে মেনে নিবে তখন আসবে তার ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা। এই পরীক্ষায় যখন যে উত্তীর্ণ হবে তখনই সে হবে আল্লাহর খাঁটি বান্দা বা ঈমানদার।

ইসলামী আন্দোলন 

ইসলাম হলো একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এবং আল্লাহ ইসলামকে আদ- দ্বীন হিসেবে ঘোষণা করার পাশাপাশি একে ইসলাম ব্যতিত অন্য সকল মত ও পাতের উপর বিজয় করার জন্যই আমাদের উপর অর্পণ করেছেন। কোনো বিপরীত মত ও পাথকে পরাজিত করতে হলে, বা অন্য কোনো মত কে পরাজিত করে ইসলামকে বিজয়ী করতে হলে প্রয়োজন সর্বাত্মক আন্দোলন, সংগ্রাম এবং বিপ্লবী পদক্ষেপ। যেহেতু ইসলামকে বিজয় করার দায়িত্ব ঈমানদারদের দেওয়া হয়ছে সেহেতু  ইসলামি আন্দোলন বা ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম হচ্ছে ঈমানের অপরিহার্য দাবী। 

জিহাদ বা ইসলামী আন্দোলনের পরিধি

ইসলামি আন্দোলনের ইসলামি পরিভাষা হলো আল্লাহর পথে জিহাদ। জিহাদ শব্দের অর্থ সর্বাত্মকচেষ্টা বা প্রচেষ্টা। আল্লাহর পথে দ্বীন কায়েমের চেষ্টা করাই হলো জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। আল্লাহর পথ হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন ও নবী রাসুলদের মাধ্যমে যে পথ আমাদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে তাই আল্লাহর পথ। আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা, জিহাদ করা বা দ্বীন কায়েমের চেষ্টা করার সামগ্রীক পদক্ষেপই হচ্ছে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর শামিল। তবে জিহাদ সম্পর্কে আমাদের সমাজে নানারকম ভ্রিবান্তিকর ব্যাখ্যা প্রচলিত রয়েছে। সেই বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা হচ্ছে জিহাদ মানেই যুদ্ধ। মূলত অমুসলিম, নাস্তিকরাই এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা প্রচার করে থাকে। মূলত যুদ্ধ হচ্ছে জিহাদের একটা অংশ মাত্র। শারঈ পরিভাষায় জিহাদ হল সমাজে ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর রাস্তায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। জিহাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আল্লাহর দাসত্বে ফিরিয়ে আনা এবং মানুষে মানুষে সাম্য ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব গ্রহণ এবং গায়রুল্লাহর প্রভুত্ব ও কর্তৃত্ব বর্জনের আহবান করতে গেলে বাতিল শক্তির, অত্যাচারি শক্তির স্বার্থে আঘাত হানবেই! যার ফলে বাতিল শক্তির সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়। সুতরাং জিহাদ মানেই যুদ্ধ করা নয়। হাদিসে পিতা-মাতার খেদমত করাকে অন্যতম জিহাদ বলা হয়েছে, আবার কুপ্রবৃত্তি ও শয়তানের কুমন্ত্রণার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করাকেও জিহাদ বলা হয়েছে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তায়ালা বলেন,

যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে তারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে এবং যারা কাফির তারা শাইতানের পক্ষে যুদ্ধ করে; সুতরাং তোমরা শাইতানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; নিশ্চয়ই শাইতানের কৌশল দুর্বল। [9]সূরা নিসা; ৪ঃ৭৬

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যার তাফসিরে আহসানুল বায়ানে উল্লেখ করা হয়ছে, কাফের এবং মু’মিন উভয়েরই যুদ্ধের প্রয়োজন হয়। কিন্তু উভয়ের যুদ্ধের লক্ষ্যের মধ্যে বিরাট তফাৎ। মু’মিন তো জিহাদ করে আল্লাহর জন্য, কেবল দুনিয়ার স্বার্থে অথবা রাজ্য জয়ের প্রবৃত্তি নিয়ে নয়। পক্ষান্তরে কাফেরের লক্ষ্য হয় কেবল এই দুনিয়ার স্বার্থ অর্জন। মু’মিনদেরকে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে যে, ‘তাগূতী’ বা শয়তানী স্বার্থ অর্জনের জন্য যে চক্রান্ত করা হয়, তা হয় একান্ত দুর্বল। তাদের বাহ্যিক উপকরণাদির প্রাচুর্য এবং সংখ্যাধিক্যকে ভয় করো না। তোমাদের ঈমানী শক্তি এবং জিহাদের উদ্যমের সামনে শয়তানের এই দুর্বল চক্রান্ত টিকবে না। এখান থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে ইসলামে জিহাদ মানে দুনিয়ার  স্বার্থে নয়, কারো উপর অত্যচার করা নয়, ঝুলুম করা নয়, বরং শয়তানি বা বাতিল শক্তির বিপক্ষে লড়াই করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কায়েম করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই করো যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দ্বীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। [10]সূরা-আনফাল; ৮ঃ৩৯

তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করছনা? অথচ নারী, পুরুষ এবং শিশুদের মধ্যে যারা দুর্বল তারা বলেঃ হে আমাদের রাব্ব! আমাদেরকে অত্যাচারী এই নগর হতে নিস্কৃতি দিন এবং স্বীয় সন্নিধান হতে আমাদের পৃষ্ঠপোষক ও নিজের নিকট হতে আমাদের জন্য সাহায্যকারী প্রেরণ করুন। [11]সূরা নিসা; ৪ঃ৭৫

ইসলামে জিহাদের অন্যতম আরেকটি বৈশিষ্ঠ হচ্ছে নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা তার রাসুলকে নির্দেশ দিয়েছেন,

তুমি নিজেকে ঐসব লোকদের সাথে ধরে রাখো, যারা তাদের প্রভুকে ডাকে সকালে ও সন্ধ্যায়। তারা কামনা করে কেবল আল্লাহ্র সন্তুষ্টি। তুমি তাদের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না। তুমি কি দুনিয়াবী জীবনের জৌলুস কামনা কর? তুমি ঐ ব্যক্তির অনুসরণ করো না, যার অন্তর আমাদের স্মরণ থেকে গাফেল হয়েছে এবং সে প্রবৃত্তির অনুসারী হয়েছে ও তার কাজকর্মে সীমালংঘন এসে গেছে। [12]সূরা কাহাফ; ১৮ঃ২৮

ফাযালা ইবনু উবাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে লোক নিজের প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করে সে-ই আসল মুজাহিদ। [13]জামে আত-তিরমিজি; ১৬২১

পবিত্র কুরআনে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজকে ৫ভাগে ভাগ করা যায়। ১. দাওয়াত ইলাল্লাহ ২.শাহাদাত আ;লান্নাস ৩.কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ ৪.ইকামাতে দ্বীন ৫. আমর বিল মারুফ ও নেহী আনিল মুনকার । এই ৫টি কাজের সমষ্টিই হচ্ছে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ।  

দাওয়াত ইলাল্লাহ

ইসলামের দাওয়ার শুরু হয় দাওয়াতের মাধ্যমে। প্রত্যকে নবি রাসুলগণ সর্ব প্রথম দাওয়াতের মাধ্যমে আন্দোলনের সূচনা করেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবাহানাহুওয়া তায়ালা বলেন, 

আমি তো নূহকে তার কওমের নিকট প্রেরণ করেছি। অতঃপর সে বলেছে, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন (সত্য) ইলাহ নেই। নিশ্চয় আমি তোমাদের মহাদিনের আযাবের ভয় করছি’। [14]সূরা আল-আরাফ; ৭ঃ৫৯

আর (প্রেরণ করলাম) আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হূদকে। সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না’? [15]সূরা আল-আরাফ; ৭ঃ৬৫

আর সামূদের নিকট (প্রেরণ করেছি) তাদের ভাই সালিহকে। সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন (সত্য) ইলাহ নেই। নিশ্চয় তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ এসেছে। এটি আল্লাহর উষ্ট্রী, তোমাদের জন্য নিদর্শনস্বরূপ। সুতরাং তোমরা তাকে ছেড়ে দাও, সে আল্লাহর যমীনে আহার করুক। আর তোমরা তাকে মন্দ দ্বারা স্পর্শ করো না। তাহলে তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব পাকড়াও করবে’। [16]সূরা আল-আরাফ; ৭ঃ৭৩

আর মাদইয়ানে (প্রেরণ করেছিলাম) তাদের ভাই শু‘আইবকে। সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণ এসেছে। সুতরাং তোমরা পরিমাণে ও ওজনে পরিপূর্ণ দাও এবং মানুষকে তাদের পণ্যে কম দেবে না; আর তোমরা যমীনে ফাসাদ করবে না তা সংশোধনের পর। এগুলো তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা মুমিন হও’। সূরা আল-আরাফ;৭ঃ৮৫ 

আল্লাহর সার্ববৈমতব স্বীকার করা এবং গায়রুল্লাহর দাসত্ব বর্জন করার কাজ কিভাবে করতে হবে সে বিষয়ে কুরআনে বিভিন্নভাবে ব্যাক্ত করা হয়েছে। যেমন; কুরআনে উল্লেখ আছে, 

তুমি তোমরা রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন। [17]সূরা নাহল; ১৬ঃ১২৫ 

হে নবী, আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে।আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী ও আলোকদীপ্ত প্রদীপ হিসেবে। [18]সূরা আহযাব; ৩৩ঃ৪৫-৪৬

পবিত্র কুরআনে দাওয়াতি কাজকে সর্বউত্তম কাজ হিসবে উল্লেখ করেছে। 

ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে কার কথা উত্তম হ’তে পারে, যে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে যে, নিশ্চয়ই আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত। [19]হা-মীম সিজদা; ৪১ঃ ৩৩

আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম। সূরা আল ইমরান; ৩ঃ১০৪ 

শাহাদাত আ’লান্নাস 

শাহাদাত আ;লান্নাস এর মানে হলো সাক্ষী হিসবে উপস্থাপন হওয়া। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রধান পরিচয় যেমন দায়ী ইলাল্লাহ তেমনি তার প্রধান পরিচয় হলো দাওয়াতের বাস্তব নমুনা হিসেবে শাহেদ এবং শহীদ। আর এই কারনে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তায়ালা বলেন, 

নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য স্বাক্ষীস্বরূপ তোমাদের কাছে রাসূল পাঠিয়েছি যেমনিভাবে ফির‘আউনের কাছে রাসূল পাঠিয়েছিলাম। [20]সূরা আল মুযযাম্মিল; ৭৩ঃ১৫ 

হে নবী, আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে।আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী ও আলোকদীপ্ত প্রদীপ হিসেবে। [21]সূরা আহযাব; ৩৩ঃ৪৫-৪৬

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষদানকারী হিসেবে সদা দন্ডায়মান হও। কোন কওমের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। [22]সূরা আল মায়েদা; ৫ঃ৮

আর তার চেয়ে অধিক যালিম কে, যে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার কাছে যে সাক্ষ্য রয়েছে তা গোপন করে? আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন। [23]সূরা বাকারা; ২ঃ১৪০

সাক্ষ হচ্ছে দাওয়াতের এক বাস্তব রুপ। নবী রাসুলগণ সাক্ষ্য দুভাবে প্রধান করছেন। ১. মৌখিক সাক্ষ্য (মুখে আল্লাহর বাণী প্রচার) ২. বাস্তব সাক্ষ্য (মুখে যা বলেছে তা বাস্তব জীবনে তা করে দেখিয়েছেন। তার উপর ভিত্তি করে আমল আখলাক গড়ে তুলেছেন।) 

কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ 

ইসলাম আহ্বান মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে মুসলিমরা   বাতিল শক্তির বাধা-বিপত্তির সম্মুখিন হয়। মুসলিমদের মুখের আওয়াজকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য তাদের উপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন।  তা মোকাবিলা করার জন্য দায়ীদের কিতাল ফি সাবিলিল্লাহর পথে হাঁটতে হয়। উপরে আমরা ইত্যিমধ্যে জিহাদ কি তা  ব্যখ্যা করেছি। ইসলামি আন্দোলনের ক্ষেত্রে জিহাদ অপরিহার্য। আর এই কারণে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, 

যারা ঈমান এনেছে তারা লড়াই করে আল্লাহর রাস্তায়, আর যারা কুফরী করেছে তারা লড়াই করে তাগূতের পথে। সুতরাং তোমরা লড়াই কর শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে। নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল। [24]সূরা আন-নিসা;৪ঃ৭৬  

ফিতনা দূরীভূত না হওয়া পর্যন্ত এবং দীন আল্লাহর জন্য নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, অতঃপর যদি তারা বিরত হয় তবে যালিমদের উপরে ছাড়া কোনও প্রকারের কঠোরতা অবলম্বন জায়িয হবে না। সূ[25]রা আল বাকারা; ২ঃ১৯৩

আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। তবে যদি তারা বিরত হয় তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তারা যা করে সে বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা। [26]সূরা আনফাল;৮ঃ৩৯

জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ যেমন ঈমানের অপরিহার্য দাবী তেমনি কিতালও ঈমানের দাবী পূরণের উপায়। আর এই কারণে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এরশাদ করেন, 

নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। অতএব তারা মারে ও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ ওয়াদা পূরণে আল্লাহর চেয়ে অধিক কে হতে পারে? সুতরাং তোমরা (আল্লাহর সংগে) যে সওদা করেছ, সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং সেটাই মহাসাফল্য। [27]সূরা তাওবা;২ঃ১১১

ইকামাতে দ্বীন 

ইকামাতে দ্বীন মানে দ্বীন কায়েমের চেষ্টা করা। কোনো একটা স্থানে আল্লাহর আইন কায়েক করাই হলো ইকামাতে দ্বীন। যদি কোনো দেশে ইকামাতে দ্বীন থাকে তাহলে সেখানে পুরোপুরি দ্বীন মানা সম্ভব নয়। কারণ ইসলামি শরিয়া অন্যায়,অত্যাচার,সুদ-ঘুষের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে বাতিল শক্তি এসবের পক্ষে। যার ফলে ক্ষমতা যদি বাতিল শক্তির হাতে থাকে তাহলে তারা সমাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে দুর্নিতি ছড়িয়ে দিবে। সমাজে নারী-পুরুষ অবাদ মিলামেশাকে বৈধতা দিবে। অনৈসলামিক কর্মকান্ডে মানুষকে উৎসাহ দিতে। অর্থাৎ পুরো সমাজ ব্যাবস্থাই হবে অনৈসলামিক। ফলে দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থা, সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থায় ইসলামি শাসন মেনে চলার মতো মানসিকতা তৈরি হয়না। এবং ব্যক্তি উদ্যগেও পুরোপুরি ইসলামি অনুশাসন মেনে চলা সম্ভব নয়। যেমন, গণতন্ত্র হারাম। কিন্তু বাংলাদেশে যেহেতু গণতন্ত্র পন্থীরা ক্ষমতায় তাই আপনি এই শাসন ব্যাবস্থায় আল্লাহর আইনের বদলে মানব রচিত আইন মানতে বাধ্য। সমাজ, রাষ্ট্র পরিচালনার চাবিকাঠি যাদের হাতে তারাই আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। সুতরাং পরিপূর্ণ ইসলাম কায়েম করতে হলে আমাদের দ্বীন কায়েম করতে হবে। 

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 

তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনের সেই বিধি-ব্যবস্থাই দিয়েছেন যার হুকুম তিনি দিয়েছিলেন নূহকে। আর সেই (বিধি ব্যবস্থাই) তোমাকে ওয়াহীর মাধ্যমে দিলাম যার হুকুম দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ‘ঈসাকে- তা এই যে, তোমরা দ্বীন প্রতিষ্ঠিত কর, আর তাতে বিভক্তি সৃষ্টি করো না, ব্যাপারটি মুশরিকদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে যার দিকে তুমি তাদেরকে আহবান জানাচ্ছ। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে করেন তাঁর পথে বেছে নেন, আর তিনি তাঁর পথে পরিচালিত করেন তাকে, যে তাঁর অভিমুখী হয়। [28]সূরা আশ-শূরা; ৪২ঃ১৩  

আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার 

আমর বিল-মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার অর্থ সৎ কাজের জন্য বলা ও অসৎ কাজ থেকে বাধা প্রধান করা। 

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এরশাদ করেন, 

তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত,যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করবে। আর যদি আহলে কিতাব ঈমান আনত, তবে অবশ্যই তা তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের কতক ঈমানদার। তাদের অধিকাংশই ফাসিক। [29]সূরা আলে ইমরান; ৩ঃ১১০ 

ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে কার কথা উত্তম হ’তে পারে, যে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে যে, নিশ্চয়ই আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত। [30]হা-মীম সিজদা; ৪১ঃ ৩৩

আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম। [31]সূরা আল ইমরান; ৩ঃ১০৪

Home – Faith and Theology (faith-and-theology.com)

References

References
1 সুরা-আল মায়িদা: ৩
2 সূরা তাওবা-৯ঃ৩৩
3 সূরা ফাত্হ; ৪৮ঃ২৮
4 সূরা আস-সফ; ৬১ঃ৯
5 সূরা আত-তাওবা; ৯ঃ১১১
6 সূরা আল বাকারা; ২ঃ৬২
7 সূরা আলে ইমরান; ৩ঃ১৭৯
8 সূরা হুজুরাত; ৪৯ঃ১৫ 
9 সূরা নিসা; ৪ঃ৭৬
10 সূরা-আনফাল; ৮ঃ৩৯
11 সূরা নিসা; ৪ঃ৭৫
12 সূরা কাহাফ; ১৮ঃ২৮
13 জামে আত-তিরমিজি; ১৬২১
14 সূরা আল-আরাফ; ৭ঃ৫৯
15 সূরা আল-আরাফ; ৭ঃ৬৫
16 সূরা আল-আরাফ; ৭ঃ৭৩
17 সূরা নাহল; ১৬ঃ১২৫
18, 21 সূরা আহযাব; ৩৩ঃ৪৫-৪৬
19, 30 হা-মীম সিজদা; ৪১ঃ ৩৩
20 সূরা আল মুযযাম্মিল; ৭৩ঃ১৫
22 সূরা আল মায়েদা; ৫ঃ৮
23 সূরা বাকারা; ২ঃ১৪০
24 সূরা আন-নিসা;৪ঃ৭৬
25 রা আল বাকারা; ২ঃ১৯৩
26 সূরা আনফাল;৮ঃ৩৯
27 সূরা তাওবা;২ঃ১১১
28 সূরা আশ-শূরা; ৪২ঃ১৩
29 সূরা আলে ইমরান; ৩ঃ১১০
31 সূরা আল ইমরান; ৩ঃ১০৪

Sazzatulmowla Shanto

As-salamu alaykum. I'm Sazzatul mowla Shanto. Try to learn and write about theology and philosophy. SEO (search engine optimization) expert and professional Graphic designer.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button

Adblock Detected

Please turn off the ad blocker