সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট ; মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য ,প্রকৃতি বনাম আল্লাহ!
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট ; মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য ,প্রকৃতি বনাম আল্লাহ!
সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় প্রশ্নগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি প্রশ্ন ‘ মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হলো?’ ‘ মহাবিশ্ব কি ? ‘ অগণিত গ্যালাক্সি, ব্লাকহোল, নক্ষত্র, গ্রহ এ-সব কিছু আমাদের এতোটাই বিমোহিত করে তোলে যে আমরা নিজেদের অজান্তে হলেও নিজেদের প্রশ্ন করে বসি, “ মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য কি ? ”
যাইহোক, মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে ? মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য কি ? মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে একটি তত্ত্ব হচ্ছে ‘বিগ ব্যাং’ থিওরি। এই তত্ত্ব অনুসারে আজ থেকে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে মহা-বিস্ফোরণের মাধ্যমে একটি বিন্দু থেকে সৃষ্টি হয়েছে আমাদের এই মহাবিশ্ব।
বিগ ব্যাং তত্ত্ব
বিগ ব্যাং কি ? বিগ ব্যাং তত্ত্ব হলো মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কে একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। এই তত্ত্ব অনুসারে আজ থেকে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে মহাবিশ্বের বর্তমান ও অতীত সকল স্থান-কাল-শক্তি-পদার্থ-পদার্থের নিয়ম সবকিছুই একই সময়ে মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে একটি বিন্দু থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এই সময়ে সমস্থ পদার্থ অসীম ঘনত্ব এবং তীব্র তাপ সহ একটি বিন্দুর মধ্যে সংকুচিত ছিলো যাকে সিঙ্গুলারিটি বলা হয়। পরবর্তিতে একটি মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে প্রসারিত হতে শুরু করে। এবং এভাবেই মহাবিশ্বের শুরু হয়েছে।
পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়ম অনুসারে, যদি আমরা মহাবিস্ফোরণের এক সেকেন্ড পর মহাবিশ্বের দিকে তাকাই তাহলে আমরা ইলেকট্রন, প্রোট্রন, নিউট্রন এবং এন্টি ইলেকট্রন (পজিট্রন) এর সমুদ্র দেখতে পাবো যা ১০ বিলিয়ন ডিগ্রি (K) উত্তপ্ত। তারপর ধীরে ধীরে মহাবিশ্ব শীতল হয়, নিউট্রনগুলো প্রোট্রনে এবং ইলেকট্রনগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে প্রোটনের সাথে মিলিত হয়ে ডিউটেরিয়াম তৌরি করে।[1]The Big Bang | Science Mission Directorate (nasa.gov)
মহাবিশ্ব শুরু হওয়ার অর্থাৎ মহাসম্প্রসারণের ঠিক প্রথম সেকেন্ডের মধ্যেই এই সব ঘটেছিল, যখন সবকিছুর তাপমাত্রা তখনও প্রায় 10 বিলিয়ন ডিগ্রী ফারেনহাইট (5.5 বিলিয়ন সেলসিয়াস)। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে তারা বিগ ব্যাং-এর পরে প্রায় 10 থেকে মাইনাস 36 সেকেন্ড – এক ট্রিলিয়ন ভাগের এক ট্রিলিয়ন ভাগের এক ট্রিলিয়ন ভাগের পরের সময়টি সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। [2]The Big Bang: What Really Happened at Our Universe’s Birth? | Space মহাবিশ্ব সৃষ্টির ১০−৪৩ সেকেন্ড পর পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলোর কার্যকারিতা লাভ করে। তাই এই সময়কে প্ল্যাংকের সময় বলা হয়।
১৯২৭ সালে বিখ্যাত পদার্থবিদ ও খ্রিস্টান ধর্ম যাজক জর্জ লেমেটার প্রস্তাব করে যে, মহাবিশ্বের সম্প্রাসারণ একটি আদি অবস্থা থেকে শুরু হয়েছিল। সেই আদি অবস্থা ছিলো একটি আদি পরমাণু বা Primeval atom.লেমেটার বলেন, যেহেতু নক্ষত্রগুলো একে অন্যের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তাই অতীতের দিকে ফিরে গেলে দেখা যাবে একপর্যায়ে মহাবিশ্বের সমস্ত পদার্থ একত্রে ঘনীভূত অবস্থায় বিরাজমান ছিলো। সুতরাং মহাবিশ্ব সবসময় অস্তিত্বশীল ছিলোনা বরং একটা নির্দিষ্ট সময়ে সেটি অস্তিত্বে এসেছে মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে।
লেমেটারের ব্যাখ্যা বিজ্ঞানমহলে তখন খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বিজ্ঞানীরা দাবী করেন যে, লেমেটার ধর্মীয় কারণের এমন ব্যখ্যা প্রধান করেছে। কেননা, লেমেটারের ব্যাখ্যা অনুযায়ী মহাবিশ্ব অস্তিত্বের জন্য একটা শুরু আছে। এবং অস্তিত্বে আসার জন্য যা যা কিছুর শুরু থাকে তা তা অস্তিত্বে আসার জন্য অবশ্যই একটা কারণ থাকাটা অনিবার্য। যা-কিনা সৃষ্টিকর্তার দিকেই ইঙ্গিত বহন করে।
কারণ সিঙ্গুলারিটির আগে যেহেতু স্থান-কাল-পদার্থ-এনার্জি কিছুই ছিলোনা তাই যে কস বা কারণ মহাবিশ্বকে অস্তিত্বে এনেছে তা হবে বস্তুজগতের বাহিরের অতিপ্রাকৃতিক কোনো বুদ্ধিমান সত্তা। মহাবিস্ফোরণের পরেই স্থান-কাল-পদার্থ-সূত্রের উদ্ভভ হয়েছে। [3]Yujin Nagasawa (2011), The Existence of God: A philosophical Introduction. Page:128-149 সে-কারণে নাস্তিক পদার্থবিদগণ প্রভলভাবে এই তত্ত্বের বিরোধিতা করেন এবং বিকল্প হিসেবে Steady State Theory (অটল মহাবিশ্ব মডেল) দাঁড় করিয়েছিলো।[4]Sir James Jeans | British physicist and mathematician | Britannica
তাদের প্রস্তাবিত বক্তব্য অনুযায়ী মহাবিশ্বের কোনো শুরুও নেই, শেষও নেই। প্রায়ই সকল বিজ্ঞানী এই তত্ত্বের একমত ছিলো।পরবর্তীতে হাবল টেলিস্কোফে পাওয়া মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ, ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন ইত্যাদি আবিষ্কার হলে কসমোলজির ধারণায় প্যারাডাইম শিফট নিয়ে আসে। আর তা হলো এই মহাবিশ্বের সূচনা রয়েছে। বিজ্ঞানী আইন্সটাইনও মহাবিশ্ব প্রসারণের ব্যাপারটি প্রথমে মানতে চাননি। কিন্তু প্রসারণের পক্ষে পর্যবেক্ষণ প্রমাণ পাওয়ার পর তিন বলেছিলেন এটি ছিলো তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত।
ফ্রেড হয়েল বিবিসি রেডিয়োর এক অনুষ্ঠানে তাচ্ছিল্য করে এই তত্ত্বের নাম দিয়েছিলো ‘বিগ ব্যাং।’ কারণ, সৃষ্টির শুরুতে এমন কোনো বিন্দু থাকলে মহাবিশ্বের শুরু কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে তার নির্ধারণের ভার ধর্ম আর স্রষ্টার হাতে চলে যাবে। [5]স্টিফেন হকিং, মাই ব্রিফ হিস্ট্রিঃ আত্মস্মৃতি (বঙ্গানুবাদ, ঢাকাঃ প্রথম … Continue reading
পরবর্তীতে বিজ্ঞানি এডুইল হাবল সর্ব প্রথম লেমেটারের দাবীর পক্ষে পর্যবেক্ষণমূলক প্রমাণ নিয়ে আসে। তিনি ‘ রেড লাইট শিফট’ ও ‘ ডপলার এফেক্ট ’ এর মাধ্যমে আবিষ্কার করেন যে, দূরবর্তী ছায়াপথ সমূহের বেগ সামগ্রীক পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এরা পরস্পর দূরে সরে যাচ্ছে। অর্থাৎ,মহাবিশ্ব ক্রমশই সম্প্রাসারণ হচ্ছে। ‘বিগ ব্যাং’ থিওরি অনুযায়ী সমগ্র মহাবিশ্ব একটি সুপ্রাচীন তত্ত্ব বা আদি পরমাণু থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে এবং ক্রমাগত সম্প্রসারণ হচ্ছে।
Red light Shift (রেড লাইট শিফট )
রেড লাইট শিফট দ্বারা আলোর তরঙ্গের কম্পাঙ্গের পরিবর্তন বর্ণনা করে। যা নির্ভর করে কোনো বস্তু আমাদের দিকে বা দূরে সরে যাচ্ছে। যখন কোনো বস্তু আমাদের থেকে দূরে সরে যায় তখন বস্তুর আলোকে রেড শিফট বলা হয়। সূর্যের বর্ণালিতে দৃশ্যমান আলোর পরিসীমা রয়েছে। সেখানে লাল আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ ৭০০ ন্যানো মিটার। এবং নীল আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ ৪০০ ন্যানো মিটার। লাল আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ বেশি হওয়ার কারণে আমরা বুঝতে পারি যে, যদি কোনো বস্তু থেকে লাল আলো বিকিরিত হলে সেই বস্তুটি আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
অর্থাৎ, কোনো গ্যলাক্সি যদি আমাদের কাছে আসতে থাকে তা হলে তা-থেকে নিঃসৃত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছোট হবে। যার ফলে গ্যালাক্সি যদি আমাদের কাছে আসতে থাকে তাহলে তা থেকে নীল আলোর দেখা মিলবে। একে বলে ব্লু-শিফট।অন্যদিকে, কোনো গ্যালাক্সি যদি আমাদের থেকে দূরে সরে যেতে থাকে তা-থেকে নিঃসৃত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বড় হতে থাকবে। যার ফলে, গ্যালাক্সি যদি আমাদের থেকে দূরে সরে যেতে থাকে তাহলে তা থেকে লাল আলোর দেখা মিলবে। যাকে বলে রেড-শিফট।
টেলিস্কোপের মাধ্যমে হাবল আবিষ্কার করেন যে, প্রতিটি গ্যালাক্সি আমাদের কাছ থেকে সমানুপাতিক হারে দূরে সরে যাচ্ছে।অর্থাৎ গ্যালাক্সিগুলো ক্রমশই সম্প্রসারিত হচ্ছে। যার ফলে লাল আলো নিঃসৃত হয়। যদিও হাবলের বেশ কয়েক বছর আগেই জর্জ লেমেটার এই সূত্রের চক এঁকেছিলো। [6]Helge Kragh (1996), Cosmology and Controversy (Princeton University press) page;30
Doppler Effect (ডপলার ক্রিয়া)
উৎস এবং পর্যবেক্ষকের মধ্যকার আপেক্ষিক গতির কারণে কোন তরঙ্গ-সংকেতের কম্পাঙ্ক পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে ডপলার ক্রিয়া (Doppler Effect) বলা হয়। উদাহারণ স্বরূপ, আপনি ওয়াইফাই রাউটারের যত কাছে থাকবেন তত বেশি ফ্রিকোয়েন্সি গ্রহণ করতে পারবেন। কোনো এম্বুলেন্স রাস্তায় হর্ণ বাজিয়ে আপনার যতই কাছে আসবে ততই কম্পাঙ্ক বেশি হবে। আবার যত দূরে যাবে ততই কম্পাঙ্ক কমে যাবে। অর্থাৎ, উৎস কাছে আসলে কম্পাঙ্ক বাড়ে। এবং উৎস দূরে গেলে কম্পাঙ্ক কমে।
ডপলার ইফেক্ট অনুযায়ী উৎস যখন শ্রোতা থেকে দূরে সরে যাবে তা রক্তিম আলো অপসারণ করবে আর যখন শ্রোতার দিকে চলে আসবে তখন নীল আলো অপসারণ করবে। হাবল টেলিস্কোপের মাধ্যমে গ্যালাক্সিগুলোর বর্ণ পরিক্ষা করতে গিয়ে লক্ষ্য করেন, গ্যালাক্সিগুলো নীল আলো অপসারণ না করে লাল আলো আপসারণ করছে। যা রেড শিফট এর মাধ্যমেও তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। অর্থাৎ, গ্যালাক্সিগুলো আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
CMBR: Cosmic microwave background radiation
১৯৬৫ সালে আমেরিকান জ্যোতিবিজ্ঞানি আর্নো পেনজিয়াস এবং রবার্ট উইনসন CMB/CMBR আবিষ্কার করেন। Cosmic microwave background হলো, এটি মহাবিশ্বের প্রাথমিক পর্যায় থেকে মহাবিশ্বের সমস্ত স্থান জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যেহেতু মহাবিশ্বের প্রাথমিক পর্যায় থেকে আসা কোনো তরঙ্গকে বিজ্ঞানিরা সনাক্ত করতে পেরেছিলো, তার মাধ্যমে মহাবিশ্বের বয়স সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছে। CMBR হলো, বিগ ব্যাং উৎপত্তির পক্ষে সবচেয়ে যুগান্তকারী প্রমাণ। যা থেকে আমরা বুঝতে পারি মহাবিশ্ব বিগ ব্যাং থেকে উৎপত্তি হয়েছে। Doppler Effect, Red light shift, CMBR এগুলো প্রমাণ করে আমাদের মহাবিশ্ব ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে সিঙ্গুলারিটি থেকে সৃষ্টি হয়েছে।
সিঙ্গুলারিটি কি ?
পদার্থ বিজ্ঞান অনুযায়ী সিঙ্গুলারিটি এমন একটি বিন্দু যার অসীম মান রয়েছে। যেহেতু প্রকৃতিতে কোনো কিছুই অসীম পরিমাণে ঘটতে পারেনা, বা অসীম বাস্ততে অস্তিত্বশীল নয়। তাই বিজ্ঞানীরা এই সিঙ্গুলারিটিকে বাস্তব বলে মনে করেনা। [7]“Singularity” simply explained for laypersons with examples & an illustraiton (quantumphysicslady.org)
স্টনি ব্রুক ইউনিভার্সিটি এবং নিয় ইয়র্ক সিটির ফ্ল্যান্টিরন ইনস্টিটিউটের জ্যোতিপর্দার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপন পল এম সাটার এর মতে,
সিঙ্গুলারিটি দিয়ে ফিজিক্যাল কিছু প্রতিনিধিত্ব করে না। বরং, যখন তারা গণিতে উপস্থিত হয়। তারা (সিঙ্গুলারিটি) আমাদের বলছে যে আমাদের পদার্থবিদ্যার তত্ত্বগুলি অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে।….সহজ করে বললে, সিঙ্গুলারিটি হল এমন জায়গা যেখানে গণিত “দুর্ব্যবহার করে”, সাধারণত অসীম বড় মান তৈরি করে। পদার্থবিজ্ঞান জুড়ে গাণিতিক এককতার (সিঙ্গুলারিটির) উদাহরণ রয়েছে: সাধারণত, যে কোনো সময় একটি সমীকরণ 1/X ব্যবহার করে, X যখন শূন্যে যায়, সমীকরণের মান অসীম হয়ে যায়। [8]What is a singularity? By Paul Sutter;2021
টেক্সাস এ এন্ড এম ইউনিভার্সিটির একজন পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক এর মতে,
সাধারণভাবে, সিঙ্গুলারিটি হল একটি ত্রুটিপূর্ণ ভৌত (ফিজিক্যাল) তত্ত্বের অ-ভৌতিক (নন-ফিজিক্যাল) গাণিতিক ফলাফল। [9]Does every black hole contain a singularity?
পদার্থ বিজ্ঞানে সিঙ্গুলারিটি বলতে বুঝায় যে জায়গায় পদার্থের নিয়ম কাজ করেনা, গণিত অনুসরণ করা যায়না তাকেই সিঙ্গুলারিটি বলা হয়। গণিতের ক্ষেত্রে আমরা যদি 1/X দিয়ে ভাগ করি এবং X এর মান যদি হয় ০, অর্থাৎ 1/0= অমীমাংসিত বা অসংজ্ঞায়িত। গাণিতিকভাবে এটাকে সিঙ্গুলারিটি হিসেবে ধরা যায়।
আমাদের মহাবিশ্বের দুইটা বিন্দু রয়েছে যাকে বিজ্ঞানীরা সিংগুলারিটি বলে থাকে।
১. ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্র। ২. বিগ ব্যাং এর উৎস।
বিগ ব্যাং সিঙ্গুলারিটি
সুতরাং, বিগ ব্যাং সিঙ্গুলারিটি বলতে কখনোই ফিজিক্যাল রিয়েলিটি কে বোঝাই না কেননা এটা ভ্যারিফায়েবল নয় এবং প্রেডিক্টেবল কোনো কিছুও না। মর্ডান ফিজিক্সে সিঙ্গুলারিটি কেবল মাত্র একটি গানিতিক দৃষ্টিভঙ্গি। সিঙ্গুলারিটি হলো একটা মেথমেটিক্যাল আইডিয়া। যদি আমাদের সম্প্রসারিত মহাবিশ্বকে একটি ফোলানো বেলুন হিসেবে কল্পনা করি এবং এর ক্রোনোলজি কে অতীতের দিকে ঘুরিয়ে দেই তাহলে দেখবো বেলুনের বাতাস ছেড়ে দিলে যেমন বেলুন ধীরে ধীরে চুপসে যেতে থাকে আমাদের মহাবিশ্বের সম্প্রসারিত রুপ তেমনই ভাবে সংকুচিত হতে থাকবে এবং এক পর্যায়ে সকল পদার্থ, স্থান-কাল একক অদ্বৈত বিন্দুতে উপস্থিত হবে এই থট কেই গানিতিক ভাবে এক্সপ্রেস করার সময় সিংগুলারিটি ( এককতা) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
অসীম মহাবিশ্ব ?
অসীম বলতে, সীমাহীন,অন্তহীন বা যে কোনো সংখ্যার চেয়ে বড় কিছুকে বুঝায়। বিগ ব্যাং থিওরী অনুযায়ী আমাদের মহাবিশ্বের একটা শুরু আছে। আমাদের মহাবিশ্ব ক্রমাগত সম্প্রসারণ হচ্ছে। এবং একটা সময়ে গিয়ে মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাবে। যেহেতু আমাদের মহাবিশ্বের একটা শুরু ও শেষ আছে সেহেতু মহাবিশ্ব অসীম নয়। কিন্ত অনেকেই অসীম মহাবিশ্ব এই ধারণাকে যৌক্তিক মনে করে। তাদের মতে মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসার পিছনে অসীম সংখ্যক কারণ রয়েছে। যেহেতু মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসার জন্য অসীম সংখ্যক কারণ রয়েছে সেহেতু মহাবিশ্বের কোনো শুরু নেই। এবং মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসার জন্য কোনো সৃষ্টিকর্তা বা অতিপ্রাকৃতিক সত্তারও প্রয়োজন নেই। তবে তাদের এই দাবী মোটেও যৌক্তিক নয়।
ফিলোসফিতে দুই ধরণের অসীম বা ইনফিনিটির ধারণা পাওয়া যায়।
Potential Infinity ( সম্ভাব্য অসীম )
Potential Infinity বা সম্ভাব্য অসীম বলতে বুঝায়, যা শেষ না করেই চলতে থাকে। অর্থাৎ, ভবিষ্যৎ এর দিকে চলতেই থাকবে। কখনোই শেষ হবেনা। ইনফিনিটি বাস্তবে এক্সিস্ট করেনা। এটা কেবলই একটা ধারণা। আপনি ইনফিনিটি কে ইনফিনিটি দিয়ে গুণ করলে, বিয়োগ করলে ইনফিনিটিই আসবে। কখনোই ফাইনেট আসবেনা।
উদাহারণ স্বরূপ, ভবিষ্যতে অসীম সংখ্যক দিন রয়েছে। কিন্তু অসীম যদি নাই থাকে, আমরা কেন বলি অসীম সংখ্যক দিন ? দেখুন আমরা চাইলে একটা দিনের পর আরেকটা দিন যোগ করে অসীম সংখ্যক দিনে পৌঁছাতে পারবো ! কিন্তু সেটা আসলে অসীম না! আমরা হয়তো একটার পর একটা যোগ করতে করতে এক হাজার বা দুই হাজার সংখক দিন পর্যন্ত যোগ করতে পারবো! কিন্ত একটা সময় গিয়ে আমরা আর কাউন্ট করতে পারবেন না বিধায় বলি অসীম সংখ্যক দিন! কিন্তু সেটা আসলে অসীম না! মূলত আমরা গণনা করতে পারিনা বিধায় বলি অসীম।
আরেকটি উদাহারণ খেয়াল করুন, আপনি একটা মুদ্রার সাথে আরেকটা মুদ্রা যোগ করে কখনোই অসীমে পৌঁছাতে পারবেন না! আপনি হয়তো একটা পর একটা যোগ করে কয়েক হাজার পর্যন্ত যেতে পারবেন! ধরুন আপনি কয়েন মিলিয়ন পর্যন্ত গেলেন! কিন্তু এরপর আর কাউন্ট করা পসিবল না বিধায় আমরা বলবো অসীম সংখ্যক কয়েন। কিন্তু সেটা অসীম না!
Actual Infinity (প্রকৃত অসীম )
Actual Infinity বা প্রকৃত অসীম বলতে বুঝায়, যার শুরু কি-বা শেষ নেই। অধিকাংশ ফিলোসফার ও সাইন্টিস্টরা একমত যে ইনফিনিটি কখনোই রিয়েলিটিতে এক্সিস্ট করেনা।
মনে করুন আপনি সকালে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। তো আপনার আম্মু আপনাকে শর্তদিলো যে অসীম সংখ্যক প্লেট পরিষ্কার করতে না পারলে আপনি বাসা থেকে বের হতে পারবেন না। আপনি হয়তো চিন্তা করবেন যত দ্রুত সম্ভব প্লেটগুলো পরিষ্কার করবেন। কিন্তু আপনি কি কখনোই অসীম সংখ্যক প্লেট পরিষ্কার করা শেষ করতে পারবেন ? চিন্তা করতে থাকুন……
হিলবার্ট হোটেল প্যারাডক্স
আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, ১ থেকে ৫ এর মধ্যে কয়টি সংখ্যা রয়েছে? সাবলীল ভাবেই আপনি উত্তর দিবেন ৫টি। কিন্তু যদি বলি আপনার উত্তর ভুল, তখন আপনার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে? হয়তো বলবেন আমি নিশ্চয় পাগল হয়ে গিয়েছি। তবে আসলেই আপনার উত্তর পুরোপুরো সঠিক নয়। কারণ সংখ্যারেখার দিকে তাকালে দেখবেন এই ১ থেকে ৫এর মাঝে আরো অগণিত সংখ্যা রয়েছে, যা আপনি গুণে শেষ করতে পারবেন না। এই অসীমত্বকে কাজে লাগিয়ে জার্মান গণিতবিদ ডেভিড হিলবার্ট একটি প্যারাডক্স তৌরি করেন যা, Hilbert’s Infinite Grand Hotel Paradox বা হিলবার্ট প্রবলেম নামে পরিচিত।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ২০০৮ এর তথ্য মতে, কক্ষের উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হোটেল হলো মালেশিয়ার “ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড হোটেল”। “মালেশিয়ার লাস ভেগাস” নামে পরিচিত এই হোটেলটির কক্ষ সংখ্যা ৬,১১৮টি। ধরুন, হোটেলের প্রতিটি কক্ষে ১জন করে গেস্ট থাকতে পারে। এর মানে যদি হোটেলের ৬,১১৮টি কক্ষ গেস্ট দ্বারা পূর্ণ থাকে, তাহলে হোটেলে ম্যানেজার চাইলে নতুন কোনো গেস্টকে চেক ইন করতে পারবেনা; যদিনা কোনো গেস্ট চেক আউট করে ৬,১১৭ বা তার চেয়ে কম হয়।
কিন্তু হিলবার্ট হোটেল পুরোপুরি আলাদা। এটি “মালেশিয়ার ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড হোটেল” বা মালেশিয়ার লাস ভেগাস” নামে পরিচিত হোটেলটির চাইতে অসীমভাবে বড়। বিষয়টা এমন নয় যে এটি অনেক অনেক বড়। বরং অসীমভাবে বড়। এমনও নয় যে হিলবার্ট হোটেলে ১হাজার, ১মিলিয়ন, ১ট্রিলিয়ন রুম রয়েছে। এখানে অসীম সংখ্যক রুম রয়েছে।
একদিন হোটেলে নতুন একজন গেস্ট এসে হোটেল ম্যানেজারকে বললো তার একটা রুমের প্রয়োজন। এমত অবস্থায় আপনি হলে কি করতেন? নিশ্চয় নতুন আসা গেস্টকে হোটেলে রুম খালি নেই বলে বিদায় করে দিতেন! কিন্তু হিলবার্ট হোটেলের ম্যানেজার ছিলো একজন গণিতবিদ। তিনি চিন্তা করলেন, রুম-১ এর গেস্টকে রুম-২এ শিফট করলে, রুম-২এর গেস্টকে রুম-৩এ শিফট করলে, এভাবে nতম রুমের গেস্টকে n+1তম রুমে শিফট করলে এবং এই প্রক্রিয়া অসীম সংখ্যকবার চলতে থাকলে একটি রুম ফাঁকা হয়ে যাবে। কারণ হিলবার্ট হোটেলের রুম সংখ্যা যেহেতু অসীম সেহেতু গেস্টদের এই মুভমেন্টও অসীম সংখ্যকবার চলতে থাকবে। এভাবে হোটেল ম্যানেজার নতুন আসা গেস্টকে চেক ইন করিয়ে নিলেন। নতুন গেস্ট চেক ইন করার আগেও হোটেলের গেস্ট সংখ্যা ছিলো অসীম। বর্তমানেও হোটেলের গেস্ট সংখ্যা হচ্ছে অসীম। কারণ, অসীমের সাথে অসীম যোগ করলেই ফলাফল অসীমই হবে।
পরদিন সকালে হোটেলে অসীম সংখ্যক অতিথি নিয়ে একটি বাস আসলো। এবং অসীম সংখ্যক অতিথির জন্যও অসীম সংখ্যক রুমের প্রয়োজন। হোটেল ম্যানাজের যেহেতু একজন তুখোড় গণিতবিদ, তাকে তো অথিতিদের জায়াগা করে দিতেই হবে। তিনি চিন্তা করলেন, যেকোনো সংখ্যাকে ২ দিয়ে গুণ করা হলে সবসময়ই জোড় সংখ্যা পাওয়া যাবে। তাহলে nকে যদি ২দিয়ে গুণ করা হয় তাহলে ফলাফল হবে 2n, তাহলে প্রতিটা রুমের পর্যটক তাদের রুমের সাথে ২গুণ করে যে সংখ্যাটি পাওয়া যাবে সেই রুমে শিফট করলে অসীম সংখ্যক রুম ফাঁকা হয়ে যাবে। তাই হোটেল ম্যানেজের ১নং রুমে থাকা অতিথিকে রুম-২এ, ২নং রুমে থাকা অতিথিকে রুম-৪এ, ৩নং রুমে থাকা অতিথিকে রুম-৬এ, এভাবে nতম রুমের অতিথিকে 2nতম রুমে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। ফলে হোটেলে অসীম সংখ্যক রুম ফাঁকা হয়ে গেল। কারণ, হোটেলে রুম সংখ্যা যেহেতু অসীম, তাই হোটেলের জোড় সংখ্যক রুমও অসীম এবং বিজোড় সংখ্যক রুমও অসীম। এভাবে হোটেল ম্যানেজার নতুন আসা অসীম সংখ্যক অতিথিকে হোটেলের খালি হওয়া বিজোড় সংখ্যার রুমগুলোতে যেতে বলেন। ব্যাস, ঝামেলা শেষ!
কিন্ত এবার পরেরদিন সকালে অসীম সংখ্যক বাস এবং অসীম সংখ্যক বাসের প্রত্যেকটিতে অসীম সংখ্যক যাত্রী রয়েছে। হোটেল ম্যানেজার দুশ্চিন্তায় পরে গেল কিভাবে এতো এতো অতিথিকে হোটেলে রুমের ব্যাবস্থা করে দিবেন! এমন সময় হোটেল ম্যানেজারের চোখ পরলো তার টেবিলে রাখা গণিতবিদ ইউক্লিডের ছবির দিকে। ইউক্লিড প্রমাণ করেছিলেন যে, মৌলিক সংখ্যার (যে সংখ্যাকে কেবল ১ ও সেই সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় তাকে মৌলিক সংখ্যা বলে। যেমন, ১,৩,৫,৭,১১,১৩…) সেট অসীম। তাই হোটেল ম্যানেজার চিন্তা করলেন যদি, প্রথমে অসীম সংখ্যক রুম ফাঁকা করা যায়, তাহলে সেখানে একটা বাসের অসীম সংখ্যক অতিথিকে জায়গা করে দেওয়া যাবে। এরপর আরেকবার অসীম সংখ্যক রুম ফাঁকা করে সেখানে আরেকটি বাসের অসীম সংখক অতিথিদের জায়গা দেওয়া যাবে। এবং এভাবে অসীম সংখ্যকবার করে গেলে তাহলে অসীম সংখক বাসের অসীম সংখ্যক যাত্রীকে হোটেলে জায়গা করে দেওয়া যাবে। এবং এই কাজটা অসীম সংখ্যকবার করতে হবে।
তাই হোটেল ম্যানেজার বর্তমানে হোটেলে থাকা সব অতিথিদের প্রথম মৌলিক সংখ্যা ২এর ঘাত অনুযায়ী শিফটড হওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। অর্থাৎ, ২নং রুমের অতিথিকে 2^2=4 নং রুমে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। ৩নং রুমের অতিথিকে 2^3=8 নং রুমে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। ৪নং রুমের অতিথিকে 2^4=16 নং রুমে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। সুতরাং nতম রুমের অতিথি যাবেন 2^nতম রুমে। এভাবে হোটেলে অসীম সংখ্যক রুম ফাঁকা হয়ে গেল। সুতরাং, হোটেলে অবস্থানরত সব অতিথি চলে যাবে প্রথম মৌলিক বা প্রাইম নাম্বার ২এর ঘাত অনুযায়ী রুমে। তাহলে নতুন করে আসা অসীম সংখ্যক বাসের অসীম অতিথিরা কোথায় যাবে? প্রথম বাসের অতিথিদের বললেন দ্বিতীয় মৌলিক পূর্ণ সংখ্যা ৩এর ঘাত অনুযায়ী রুমে যাবে। অর্থাৎ, বাসের প্রথম সিটের অতিথি যাবে 3^1=3 নং রুমে। দ্বিতীয় সিটের অতিথি যাবে 3^2=9 নং রুমে। তৃতীয় সিটের অতিথি যাবে 3^3=27 নং রুমে। চতুর্থ সিটের অতিথি যাবে 3^4=81 নং রুমে। nতম রুমের অতিথি যাবে 3^nতম রুমে। এভাবে তিনের ঘাত আমরা অসীম সংখ্যকবার করতে পারবো। একইভাবে, ২য় বাসের অতিথিদের ৫এর ঘাত অনুযায়ী হোটেল রুমে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। ৩য় বাসের অতিথিদের ৭এর ঘাত, ৪র্থ বাসের অতিথিদের ১১এর ঘাত ৫নং বাসের অতিথিদের ১৩এর ঘাত অনুযায়ী হোটেল রুমে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন………। এভাবেই হোটেল ম্যানেজার অসীম সংখ্যক বাসের অসীম সংখ্যক অতিথিদের হোটেলে জায়গা করে দিলেন। যাদিও এই অসীম সংখ্যক অতিথিকে হোটেলে যায়গা করে দেওয়ার আগেই হোটলের অতিথি সংখ্যা ছিলো অসীম।
এবার প্রথম সিচুয়েশনটি কল্পনা করুন। হোটেল ম্যানেজার অসীম সংখ্যক রুম পূর্ণ হোটেলে একজন নতুন অতিথিকে জায়গা করে দিয়েছিলো। যদি সেখান থেকে অসীম সংখ্যক অতিথিকে বিয়োগ করা হয় তাহলে ফলাফল হবে ১জন। ধরুন, অসীম সংখ্যক অতিথি হচ্ছে x1 এখন নতুন ১জন অতিথি আসার পরে হোটেলের বর্তমান অতিথি সংখ্যাও অসীম। তাহলে এখন অসীম সমানও ধরুন X1 তাহলে এখন যদি x থেকে x বিয়োগ করেন তাহলে ফলাফল হবে x-x= 1.
এবার দ্বিতীয় সিচুয়েশনটি কল্পনা করুন, হোটেল ম্যানেরজার অসীম বিজোড় সংখ্যক রুম ফাঁকা করে অসীম সংখ্যক অতিথিকে জায়গা করে দিয়েছিল। তার মানে তখনো হোটেলে অসীম জোড় সংখ্যক অতিথি ছিলো। যদি হোটেল থেকে জোড় সংখ্যক অতিথি চেকাউট করে তাহলে কি হবে? ধরুন জোড় সংখ্যক অসীম = x এবং বিজোড় সংখ্যক অসীম = x. তাহলে, x-x=x. কারণ জোড় সংখ্যক অসীম থেকে বিজোড় সংখ্যক অসীম বাদ দেওয়ার পরেও জোড় সংখ্যক অসীম থেকেই যাচ্ছে। যদিও অসীম সংখ্যক অতিথি চেকাআউট করেছে।
এবার তৃতীয় সিচুয়েশনটি কল্পনা করুন। মৌলিক সংখ্যা আছে যেহেতু অসীম সেহেতু হোটেলটি পূর্ণ অবস্থায় হোটেল ম্যানেজার অসীম সংখ্যক নতুন গেস্টকে হোটেলে জায়গা করে দিয়েছেন। সুতরাং আবারো অসীম থেকে অসীম বিয়োগ করলে ফলাফল হবে অসীম। x-x=x. এই এনালজিতে দেখা যাচ্ছে যে, Identical Quantity – Identical Quantity = Different Result! কারণ, আপনি যদি দুই থেকে দুই বিয়োগ করেন তাহলে প্রতিবারই ফলাফল আসবে শূন্য। কখনোই ফলাফল শূন্য ছাড়া অন্য কিছু হবেনা।
কিন্তু ইনফিনিটির ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি ইনফিনিটি থেকে বিয়োগ করলে একেকবার একেক ফলাফল আসে। অর্থাৎ, এটা কন্ট্রাডিকশনমূলক এবং মেটাফিজিক্যালি নেসেসারি ট্রুথ কে ভায়োলেট করে। ইনফিনিট হোটেল পূর্ণ থাকার পরেও হোটেলে নতুন মানুষকে জায়গায় করে দেওয়া যাচ্ছে, যা পুরোপুরো অযৌক্তিক। কেননা রুম আগে থেকেই পূর্ণ ছিলো। অর্থাৎ একই সাথে একই সময়ে খালি এবং পূর্ণ। আবার আইডেন্টিক্যাল কোয়ান্টিটি বাদ দিলে আমরা ভিন্ন ভিন্ন ফলাফল পাচ্ছি যা কন্ট্রাডিকশন তৌরি করে।
সুতরাং যা কিছু মেটাফিজিক্যাল নেসেসারি ট্রুথকে ভায়োলেশন করে তার অস্তিত্ব থাকা পসিবল না। ইনফিনিটি মেটাফিজিক্যাল নেসেসারিকে ভায়োলেশন করে, তাই ইনফিনিটি অস্তিত্বে থাকতে পারেনা। হিলবার্ট হোটেলের এই অযৌক্তিকতা আমাদের এটা দেখায় যে ইনফিনিটি কেবলমাত্র গাণিতিক ধারণা এবং এটাকে আমরা বাস্তব জীবনে উপলব্ধি করতে পারিনা। সুতরাং মহাবিশ্ব কখনোই অসীম হতে পারেনা। আর অসীম না হলে মহাবিশ্বের অস্তিত্বে আসার জন্য অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন আছে।
একটা থট এক্সপিরিমেন্টের সাহায্যে ইনফিনিটি কেন পসিবল না তা বুঝার চেষ্টা করি,
আপনি চট্রগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে বাসে উঠতে গেলেন। বাসের সামনে গিয়ে দেখলেন আপনার সামেন কিছু সংখক যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে কি আপনি বাসে উঠতে পারবেন? অবশ্যই পারবেন। কারণ আপনার সামনে কিছু সংখ্যক যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে, ওই কিছু সংখ্যক যাত্রী বাসে উঠার পরেই আপনি বাসে উঠতে পারবেন।
এভার দৃশ্যপটটি ঠিক উল্টোভাবে চিন্তা করুন। টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে আপনি বাসে উঠতে গিয়ে দেখলেন যে আপনার সামনে অসীম সংখ্যক যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে কি আপনি কখনোই বাসে উঠতে পারবেন? অবশ্যই পারবেন না। কারণ আপনার সামনে যেহেতু অসীম সংখ্যক যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে, এই অসীম সংখ্যক যাত্রীর বাসে উঠার পরেই আপনি বাসে উঠতে পারবেন। কিন্তু অসীম সংখ্যক যাত্রীর বাসে উঠতে সময়ও লাগবে অসীম। আর অসীম যেযেতু কখনো শেষ হবেনা তাই আপনার বাসে উঠাও কখনো হবেনা।
এবার এই উদাহারণটি মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে চিন্তা করুন। আপনার বাসে উঠা = মহাবিশ্ব। আর আপনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসীম সংখ্যক যাত্রী = মহাবিশ্বের পেছনের অসীম সংখ্যক কারণ। যদি এমন হয় তাহলে কি কখনো এই মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসতে পারবে? অবশ্যই না!
সুতরাং, কোনো কিছু অস্তিত্বে আসার পেছনে যদি অসীম সংখ্যক কারণের উপর নির্ভরশীল হয় তাহলে তা ইনফিনিটি রিগ্রেস এর কারণে কখনোই বর্তমানে আসতে পারবেনা। যা আমরা উপরের উদাহারণ থেকেই বুঝতে পেরেছি যে, অসীম সংখ্যক কারণ ঘটলে ইনফিনিটি রিগ্রেস ঘটবে, এবং বর্তমানেই আসা সম্ভব না। কেবল তখনই অস্তিত্বে আসা সম্ভব যদিনা শুরুতে এমন একটা কারণ থাকে যে কারণটি কারণহীন, যে কারণটি তার অস্তিত্বের জন্য অন্য কোনো কিছুর উপর নির্ভরশীল নয়।
Philosophical Argument: An Actually Infinite Number of Things Cannot Exist.
If the universe never began to exist, then the number of past events prior to today would be actually infinite. But that’s impossible.
- উদাহারণ স্বরূপ, আমাদের মহাবিশ্ব যদি “X” হয়, আর একে সৃষ্টি করে থাকে “X1”, আবার “X1” কে যদি সৃষ্টি করে “X2” আর এইভাবে যদি অনন্তকাল চলতে থাকে তাহলে “X” কখনোই অস্তিত্বে আসতে পারবে ? না কখনোই পারবেনা ! কেননা “X” অস্তিত্বে আসার জন্য নির্ভর করে “X1″এর উপর, আবার “X1” অস্তিত্বে আসার জন্য নির্ভর করে “X2″এর উপর এবং এভাবে অনন্তকাল চলতে থাকে। “X” অস্তিত্বে আসার জন্য নির্ভর করে অনাদিকাল ধরে চলা সৃষ্ট কিছুর উপর। এইভাবে অনাদিকাল ধরে চলা সৃষ্ট কিছুর উপর নির্ভর করলে “অনবস্থা দোষ”(Infinite regress) দেখা দিবে। সুতরাং মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসার জন্য অসীম সংখ্যক কারণ বা মহাবিশ্ব অসীম হওয়া পসিবল না। বরং মহাবিশ্বের একটা শুরু আছে, এটা সব সময় অস্তিত্বে ছিলোনা। বিগ ব্যাং থিওরিও আমাদের একই কথা বলে যে মহাবিশ্বের শুরু আছে।
সুতরাং, মহাবিশ্ব কখনোই অসীম হতে পারেনা। কারণ অস্তিত্বে আসার জন্য মহাবিশ্বের একটা শুরু আছে। অস্তিত্বে আসার জন্য যার শুরু থাকে তা কখনো অসীমত্ব ধারণ করতে পারেনা। মহাবিশ্ব যদি অসীম হতো তাহলে এর পৃর্বে অসীম সংখ্যক কারণ থাকতো যার ফলে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হবে বা বর্তমান সময়ে আসবে। কিন্তু কোনো কিছু অস্তিত্বে আসার পেছনে যদি অসীম সংখ্যক কারণের উপর নির্ভরশীল হয় তাহলে তা ইনফিনিটি রিগ্রেস এর কারণে কখনোই বর্তমানে আসতে পারবেনা। যা আমরা উপরের উদাহারণ থেকেই বুঝতে পেরেছি যে, অসীম সংখ্যক কারণ ঘটলে ইনফিনিটি রিগ্রেস ঘটবে, এবং বর্তমানেই আসা সম্ভব না। যার ফলে মহাবিশ্ব কখনোই সৃষ্টি হতোনা। সুতরাং মহাবিশ্ব অসীম নয় বরং সসীম। সুতরাং, ইউনিভার্স সৃষ্টির কারণ যদি সৃষ্টিকর্তা হয় তাহলে সৃষ্টিকর্তার জন্য অসীম সংখ্যক কারণের প্রয়োজন নেই। বরং শুরুতে এমন একজন স্রষ্টা আছে যার পিছনে আর কোনো স্রষ্টা নেই।
এছাড়া, Law of parsimony ( মিতব্যয়িতা নিয়ম ) অনুসারে, একই জিনিসের একটি মাত্র কারণ থাকা সম্ভব। তাহলে এই ইউনিভার্সের একটি মাত্র কারণ থাকা সম্ভব। এবং সেই কারণই হলো সৃষ্টিকর্তা।
ইনফিনিটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মত
এরিস্টটলের মতে,
ইনফিনিটি অস্তিত্বশীল না, কারণ ইনফিনিটি হলো প্যারাডক্সিক্যাল। [10]Potential Infinite v. Actual Infinite | Aristotle (middlebury.edu)
বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানি স্টেফিন হকিং তার ওয়েভসাইটে এই বিষয়ে লিখেছেন,
The conclusion of this lecture is that the universe has not existed forever. Rather, the universe, and time itself, had a beginning in the Big Bang, about 15 billion years ago. – The Beginning of Time, Stephen Hawking” “এই বক্তিতা শেষে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছি যে, মহাবিশ্বের অস্তিত্ব চিরকাল বিদ্যমান ছিল না। বরং, মহাবিশ্ব এমনকি স্বয়ং সময়ের সূচনা হয়েছিল বিগ ব্যাংএর মধ্য দিয়ে, প্রায় ১৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে। [11]Stephen Hawking
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব
মানব মনের স্বাভাবিক একটি প্রশ্ন হলো এই মহাবিশ্বের উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে। মহাবিশ্বের উৎপত্তির পিছনে কি কোনো বুদ্ধিমান সত্তা বা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব কি রয়েছে? সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব কি সত্যিই আছে? দুনিয়ার এই জীবনই কি একমাত্র জীবন, নাকি এরপরেও কোন জীবন আছে? মৃত্যুর সাথে সাথেই কি এই জীবনের সমাপ্তি, নাকি এর পরেও পরকালের জীবনের জের টানতে হবে? মানব মনের স্বাভাবিক এসব প্রশ্নের জের ধরে যুগে যুগে মানুষের মধ্যে নানারকম মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে যা এখনো চলমান। এসব প্রশ্নের ভিত্তিতে প্রধানত দুটি বিপরীতমুখী মতবাদ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। একটি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের পক্ষে এবং অন্যটি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের বিপক্ষে। এই লিখাতে আমরা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের পক্ষে একটি যুক্তি নিয়ে আলোচনা করবো। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে বেশকিছু আর্গুমেন্ট রয়েছে তবে এক লেখাতে সবগুলো আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। এখানে আমরা কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট নিয়ে আলোচনা করবো। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের পক্ষে যেসব যুক্তি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট।
কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট (KCA) বর্তমানে ন্যাচারাল থিওলজিতে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত একটি বিষয়। জগত বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক ইমাম আল-গাজালি ছাড়াও অনেক দার্শনিকগণ কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট এর পক্ষে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, প্লেটো, এরিস্টটল, রেনে ডেকার্ট, ইবনে সিনা, সেন্ট এন্সেলম, সেন্ট থমাস একুইনাস, স্পিনোজা, লাইবনিজ সহ আরো অনেকে। মুসলিম দার্শনিক ইমাম আল-গাজালি কালাম কসমোজিক্যাল আর্গুমেন্টকে আধুনিক রুপে (The Kalam Cosmological Argument) সহজভাবেই উপস্থাপন করেছেন। গাজ্জালীর যুক্তি অনুযায়ী, অস্তিত্বের জন্য যা কিছুর শুরু আছে তা কিছু অস্তিত্বে আসার জন্য কারণ (Cause) আছে। আমাদের এই মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য শুরু রয়েছে তাই মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য কারণ (Cause) রয়েছে। অর্থাৎ, অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আসতে হলে তার পিছনে আবশ্যই একটা কারণ থাকতে হবে। সৃষ্ট হওয়া সবকিছুর যদি কারণ থাকে তাহলে কারণেরও কারণ আছে। তবে এই কার্য থেকে কারণ সম্পর্ক হিসেব করতে করতে আমাদের চিন্তাধারা ক্রমান্বয়ে পিছনের দিকে যেতে পারেনা। কেননা তখন “অনবস্থা দোষ”( infinite regress) দেখা দিবে। যদি “অনবস্থা দোষ”( infinite regress) দেখা যায় তাহলে কখনোই বর্তমানে আসা সম্ভব না।
কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট প্রেমিসঃ
- Whatever begins to exist has a cause. ( যা কিছুর অস্তিত্বের শুরু আছে তার একটি কারণ আছে।)
- The universe began to exist. ( মহাবিশ্বের অস্তিত্ব শুরু হয়েছিল )
- Therefore, the universe has a cause. ( এতএব, মহাবিশ্বের একটি কারণ আছে )
আমেরিকান বিখ্যাত দার্শনিক উইলিয়াম লেন ক্রেগ প্রথমে ইমাম আল-গাজালির এই সূত্র গ্রহণ করলেও পরবর্তীতে ইমাম আল-গাজালির সূত্রের প্রথম প্রেমিসে পরিবর্তন এনে নতুন মডেলে প্রকাশ করেছেন। ক্রেগের প্রকাশিত মডেলের প্রথম প্রেমিস,
- If the universe began to exist, the universe has a cause of its beginning.
কালাম কসমোলজির আর্গুমেন্ট সত্য হবে যদি প্রেমিস ১ এবং প্রেমিস ২ সত্য হয় এবং উপসংহার যদি প্রেমিসগুলো যৌক্তিকভাবে অনুসরণ করে।
আমরা কিভাবে বুঝবো যে কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্টের প্রেমসিগুলো সত্য?
নিন্মে কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্টের প্রেমিসগুলোর স্বপক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং Deductive (অবরোহী) আর্গুমেন্ট দেওয়া হলো। কালাম কসলোমজিক্যাল আর্গুমেন্টের প্রথম প্রেমিস,
Whatever begins to exist has a cause of its beginning. (অস্তিত্বের জন্য যা কিছুর শুর আছে তার শুরুর কারণ আছে।)
প্রেমিস-1 হচ্ছে “Principle of sufficient reason” এর সংস্করণ। এটি দার্শনিক লাইবনিজ তার কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্টের ক্ষেত্রে ব্যাবহার করেছিলো। আমরা আমাদের চারপাশে যেসব জিনিস দেখি যেমন, চেয়ার, টেবিল, গাছপালা, ঘরবাড়ি ইত্যাদি। এগুলো কোনো কিছুই চিরকাল ধরে অস্তিত্বে ছিলোনা। বরং একটা সময়ে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এসেছে। এবং কোনো কারণ ছাড়াই এগুলো এমনি এমনি অস্তিত্বে চলে এসেছে এমন দাবিও যৌক্তিক নয়। তাহলে অবশ্যই অস্তিত্বে আসার জন্য কোনো কারণ প্রয়োজন। মানবজাতির ইতিহাসে আমরা অগণিত জিনিসের সম্মুখিন হয়েছি। কিন্তু কখনো আমরা দেখিনি যে কোনো কিছু এমনি এমনি অস্তিত্বে চলে এসেছে। বরং অস্তিত্বে আসার জন্য সবকিছুর একটা কারণ (Cause) থাকা অনিবার্য। ধরুন, আপনার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন আপনার ডিপার্টমেন্টের ক্লাসরুম গুলো কে তৌরি করেছে? জবাবে আপনার বন্ধু আপনাকে বললো, এগুলো কেউ তৌরি করেনি, এমনি এমনি অস্তিত্বে চলে এসেছে। এমন উত্তর শুনে আপনি নিশ্চয় আপনার বন্ধুকে হেমায়েতপুর পাঠানোর ব্যাবস্থা করবেন। কারণ যৌক্তিকভাবে এটা কখনো সম্ভব নয় যে কোনো কিছু এমনি এমনি অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে চলে এসেছে। সুতরাং, আমরা বলতে পারি যে, কোনো কিছু এমনি এমনি অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আসতে পারেনা। আরো একটি পদ্ধতিতে ব্যখ্যা করা যাক,
- Something cannot come from nothing.
- I ask, “What brought into existence this classroom?”
- The classroom could not have brought itself into existence.
- And since “nothing” is, well, nothing—not anything—it has no property or power.
*Something cannot come from nothing.
প্রচলিত অর্থে শূন্য বলতে কি বোঝায় ? শূন্য মানে যাবতীয় সবকিছুর অনুপস্থিতি। অর্থাৎ পদার্থ,শক্তি, সম্ভাব্য সকল বিষয়ের অনুপস্থিতি। অথবা শূন্য মানে কোনো কারণজনিত পরিবেশের অনুপস্থিতিকেও বোঝায়। শূন্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি কথাটা এরকম যে মহাবিশ্ব এমনি এমনি অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে চলে এসেছে। কোনো কিছু এমনি এমনি অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আসতে পারেনা। কেননা অস্তিত্বহীন কিছু থেকে কিভাবে একটা কিছু অস্তিত্বে আসতে পারে!? শূন্য থেকে কিছুই আসেনা। ০+০+০+=০ই হবে! কখনো ৩ হবেনা।
মনে করুন,
- গতকাল রাতে আপনার বন্ধুর বিয়েতে খুব মজা করে কাচ্ছি খেলেন। কিন্তু সেটা কিছুই ছিল না!
- সেদিন পরিক্ষার হলে আমার পাশে কেউ বসেনি। কিন্তু তারা আমাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেখিয়েছিলো।
উপরের দুটি যুক্তি একজন সুস্থ বিবেকবান, র্যাশনাল মানুষ মাত্রই স্বীকার করবে এটা একেবারেই অসম্ভব এবং হাস্যকর। ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব ?’ ব্যাপারটা ঠিক এরকমই অসম্ভব ও হাস্যকর !
নাস্তিকরা দাবী করতে পারে কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম বা শূন্যতায় কোনো কণিকা শূন্য থেকে অস্তিত্বশীল হতে পারে। নাস্তিকদের এই দাবীটা একদম সঠিক নয়। কেননা, কোয়ান্টম ভ্যাকুয়াম বা শূন্যতা কোনো খালি যায়গা নয়। সেখানে পদার্থের নিয়ম চলে। কোয়ান্টম শূন্যতা হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী শক্তির অবস্থা। আর সেই শক্তি থেকেই প্রতিনিয়ত জোড়ায় জোড়ায় তৈরি হয় কণা ও প্রতিকণা। যারা পুনরায় ধ্বংস হয়ে আবার শক্তিতে পরিণত হয়ে যায়। সুতরাং কোয়ান্টম ভ্যাকুয়াম বা শূন্যতা মানে ভৌত কিছু। [12]Physics – The Force of Empty Space (aps.org)
*The classroom could not have brought itself into existence.
কোনো কিছু নিজেকে নিজে অস্তিত্বে আনতে পারেনা। কেউ যদি বলে ক্লাসরুম নিজেই নিজেকে অস্তিত্বে নিয়ে এসেছে তাহলে এটা কেবলই আমাদের বিনোদনের খোরাক যোগবে। কোনো কিছু সৃষ্ট হওয়া মানে একসময় যার কোনো অস্তিত্ব ছিলোনা কিন্তু পরবর্তিতে অস্তিত্বে এসেছে। সুতরাং, ‘এমনি এমনি” সৃষ্টি হয়েছে , এ-কথা বলার মানে অস্তিত্বশীল হওয়ার আগে যেন সেটা অস্তিত্বশীল ছিলো। এটা একেবারেই অযৌক্তিক।
মনে করুন, ‘ক’ ব্যক্তি ‘খ’ ব্যক্তিকে সৃষ্টি করলো। সুতরাং ‘ক’ আছে বলেই ‘খ’ ব্যক্তিকে পাচ্ছি । যেহেতু ‘খ’ সৃষ্ট, এ-কথার মানে ‘খ’ সৃষ্ট হওয়ার আগে অস্তিত্বশীল ছিলোনা। যদি এমন হয় যে, ‘খ’ ব্যক্তি কোনো কিছু সৃষ্টি করেছে বা নিজেকে নিজে সৃষ্টি করতে হলে তাকে অস্তিত্বশীল হতে হবে। সুতরাং ‘খ’ নিজেকে নিজে সৃষ্টি করতে হলে একই সময় তাকে অস্তিত্বশীল আবার অস্তিত্বহীন হতে হবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না।
The universe began to exist. (মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য শুরু আছে)
অস্তিত্বে আসার জন্য মহাবিশ্বের একটা শুরু রয়েছে এমন দাবির স্বপক্ষে যুক্তি।
Deductive argument:
প্রকৃত অসীমের অসম্ভবতার (প্রকৃত অসীম এক্সিস্ট করেনা) উপর ভিত্তি করে এই আর্গুমেন্টটি গড়ে উঠেছে। প্রেমিস আকারে,
- An actual infinite cannot exist. (প্রকৃত অসীম এক্সিস্ট করেনা।)
- An infinite temporal regress of events is an actual infinite. (কোনো ঘটনার জন্য অসীম টেম্পোরাল রিগ্রেস হলে তা প্রকৃত অসীমকে প্রতিনিধিত্ব করে)
- Therefore, an infinite temporal regress cannot exist. (সুতরাং, অসীম টেম্পোরাল রিগ্রেস থাকতে পারেনা।)
- Therefore, The Univers began to exist
প্রকৃত অসীম কেন এক্সিস্ট করেনা সে বিষয়ে উপরে “মহাবিশ্ব কি অসীম” আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু প্রকৃত অসীম এক্সিস্ট করেনা সেহেতু আমরা এখন এই আর্গুমেন্টে উপনীত হতে পারি যে,
- যা কিছু মেটাফিজিক্যাল নেসেসারি ট্রুথ ধারণ করে তা অস্তিত্বে থাকতে পারেনা।
- ইনফিনিটি বা প্রকৃত অসীম ল-অফ ভায়োলেশন ধারণ করে।
- সুতরাং, বাস্তবে ইনফিনিটি থাকতে পারেনা।
Scientific Argument:
বিগ ব্যাং তত্ত্বের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত যে আমাদের মহাবিশ্বের একটা শুরু আছে। আর্থাৎ, মহাবিশ্ব অসীম না। অস্তিত্বের জন্য যার শুরু আছে তার অবশ্যই একটা কারণ আছে। যদি মহাবিশ্বের কোনো শুরু না থাকতো তাহলে মহাবিশ্ব হতে হবে অসীম। যেটা অযৌক্তিক। বিগ ব্যাং তত্ত্ব নিয়েও উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। দূরবর্তী ছায়াপথ সমূহের বেগ সামগ্রীক পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এরা পরস্পর দূরে সরে যাচ্ছে। অর্থাৎ, মহাবিশ্ব ক্রমশই সম্প্রাসারণ হচ্ছে।
যেহেতু মহাবিশ্ব ক্রমশই সম্প্রাসারণ হচ্ছে, সেহেতু এটির একটা শুরু আছে। আজ থেকে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে একটি বিন্দু থেকে, স্থান, কাল, নিয়মের সৃষ্টি হয়েছিল। অর্থাৎ,মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু মহাবিশ্বের শুরু আছে, সেহেতু মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসার জন্য অবশ্যই একটা কারণহীন কারণ বা অনাদি স্রষ্ট্রা বা সৃষ্টিকর্তা থাকা অনিবার্য। মোট কথা, কিছু একটা সব সময় অস্তিত্ববান। হয় সেটা সৃষ্টিকর্তা বা মহাজগৎ। যেহেতু আমরা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছি মহাজগৎ আজ থেকে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে সৃষ্ট সেহেতু মহাজগতের একটা শুরু আছে। এবং এটা নির্ভরর্শীল । কাজেই মহাজগৎ সব সময় অস্তিত্বশীল ছিলোনা। সব সময় যিনি অস্তিত্ববান তিনি অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা।
অধ্যাপক অ্যান্থনি ফ্লিউয়ের দেয়ার ইজ গড বইতের পরিশিষ্টে অধ্যাপক আব্রাহাম ভার্গেস জোরালোভাবে বলেছেন,
আস্তিক-নাস্তিক একটি বিষয়ে একমত হতে পারে; যদি কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকে, তা হলে এর আগে অবশ্যই এমন কিছু থাকতে হবে যা সব সময় অস্তিত্বশীল। চিরকালীন অস্তিত্ববান এই সত্তা কিভাবে এসেছে? এর উত্তর হলো, এটা কোনোভাবেই আসেনি। এটা সবসময় অস্তিত্ববান। এখন পছন্দ আপনার, হয় সৃষ্টিকর্তা নয় মহাজগৎ। কিছু একটা সব সময় ছিলো। [13]ফ্লিউ দেয়ার আ গডঃ হাউ দা ওয়ার্ল্ড’স মস্ট নটসিয়াস এথিস্ট চেইনজড হিজ … Continue reading
Therefore, the universe has a cause of its beginning. (অতএব, মহাবিশ্বের শুরুর জন্য একটি কারণ রয়েছ।)
আমরা 1 & 1 নং প্রেমিস সত্য প্রমাণ করেছি তাই ডিডাক্টিভ আর্গুমেন্টের ক্ষেত্রে আমাদের 3 নং প্রেমিসও সত্য হতে বাধ্য। সুতরাং, “মহাবিশ্বের শুরুর জন্য একটি কারণ রয়েছে” এটা সত্য। কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্টের মাধ্যমে এভাবেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণ হয়।
সৃষ্টিকর্তা কি ইচ্ছা শক্তিহীন জড় পদার্থ নাকি বুদ্ধিমান সত্তা?
ইতিমধ্যে আমরা কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্টে প্রমাণ করেছি যে মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসার জন্য একজন সৃষ্টিকর্তা বা এমন একটি কারণের প্রয়োজন যা অনাদিকাল ধরে অস্তিত্বশীল ছিলো । কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করতে পারে, সেই কারণ বা সৃষ্টিকর্তা ইচ্ছাশক্তিহীন জড় পদার্থ নাকি বুদ্ধিমান সত্তা? অথবা অনেকেই দাবী করেই বসতে পারে যে সেই সৃষ্টিকর্তা কোনো বুদ্ধিমান সত্তা নয় বরং তা হচ্ছে বস্তু!
বেশ কিছু কারণে অসৃষ্ট এই স্রষ্টার ইচ্ছাশক্তি থাকা লাগবে বা তিনি বুদ্ধিমান সত্তা হতে হবে।
প্রথমত, সেই অসৃষ্ট স্রষ্টা চেয়েছেন যে মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসুক। তিনি না চাইলে এটি কোনোভাবেই অস্তিত্বে আসতে পারতোনা। কারণ এই মহাবিশ্বের এমন অনেক সত্তা বিরাজমান যাদের ইচ্ছা এবং ইচ্ছাশক্তি রয়েছে। তাই এদের সৃষ্টিকর্তারও ইচ্ছাশক্তি থাকা আবশ্যক। কেননা, একটা বুদ্ধিহীন সত্তা কখনোই বুদ্ধিমান সত্তা তৌরি করতে পারবেনা।
দ্বিতীয়ত, (এই অংশটুকু লিখতে সহযোগিতা করেছেন মিছবাউল হক) মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা কি ইচ্ছাশক্তিহীন জড় পদার্থ নাকি বুদ্ধিমান সত্তা এটি বুঝার জন্য ফিলোসফার উইলিয়াম লেইন ক্রেইগ একটি সুন্দর আর্গুমেন্ট ব্যাবহার করে থাকেন।
ব্যাপারটা বুঝতে গেলে আমাদের প্রথমে জানতে হবে, “কিভাবে একটা পার্মানেন্ট (এটারনাল) কজ বা কারণ (গড) থেকে আমারা টেম্পোরাল ইফেক্ট (ইউনিভার্স) পেতে পারি?” সাধারনভাবে চিন্তা করলে আমরা দেখতে পাবো, একটি ইচ্ছাশক্তিহীন, বিবেকবুদ্ধি বিবর্জিত অপরনির্ভরশীল কার্যকারণ কখনোই তার ইফেক্ট ছাড়া অস্তিত্বে থাকে না। একটা উদাহরন দিলে বুঝতে সুবিধা হবে।
ধরুন, একটা ফাঁকা ঘরে কিছু বল রাখা আছে , কিন্তু, সেখানে কোন অভিকর্ষ বল বা গ্রাভিটি নেই। ফলশ্রুতিতে বলগুলো শূন্যে ভাসতে থাকবে। কিন্তু, এখন কোন প্রক্রিয়ায় যদি ঘরটিতে অভিকর্ষ বল ফিরে আসে, তৎক্ষণাৎ বলগুলো মাটিতে পড়ে যাবে। অর্থাৎ বুঝা গেল, এখানে বলগুলোর মাটিতে পড়ার কারন অভিকর্ষ বল যখনই ঘরটাতে অস্তিত্বসম্পন্ন হবে তখনই তার ইফেক্ট বা প্রভাব বিস্তার করা শুরু করবে অর্থাৎ বলগুলোকে মাটিতে ফেলে দিবে।
আরও একটি উদাহরন দেওয়া যায়, যেমনঃ আমরা জানি, পানি বরফ হওয়া বা জমার কারন 0 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। এখন কোথাও যদি 0 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সৃষ্টি হয় তবেই, সেখানে থাকা যেকোনো পানি তৎক্ষণাৎ জমাট হতে শুরু করবে, এক সেকেন্ড আগেও নয়, এক সেকেন্ড পরেও নয়। এখন কোন জায়গার তাপমাত্রা যদি ইনফিনিট সময় থেকে 0ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তবে সেখানে থাকা পানি একটি সসীম সময় আগে জমাট বাধা শুরু হওয়া অসম্ভব। এটা “principle of sufficient reason” বা সংক্ষেপে (PSR) ভঙ্গ করে। তাই সেখানে পানিও ইনফিনিট সময় ধরে বরফ থাকবে।
উপরিউক্ত উদাহরণ থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, ইচ্ছাশক্তিহীন, বুদ্ধিহীন কোন কার্যকারণ এবং তার ইফেক্ট বা প্রভাব একই সাথে অস্তিত্বশীল হয়। এবং একটির অস্তিত্ব থাকলে অপরটির অস্তিত্ব থাকেই।
কিন্তু কোন ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন কোনো সত্তা চাইলেই কোন পূর্বকার্যকারণ সাপেক্ষ ছাড়াই নতুন কোন ইফেক্ট বা প্রভাব বা ঘটনা ঘটাতে সক্ষম। যেমনঃ ধরুন এমন একজন ব্যক্তি যিনি অসীম সময় ধরে বসে আছেন, তিনি তার ইচ্ছা সাপেক্ষে একটি সসীম সময় আগে উঠে দাড়াতে পারেন। অর্থাৎ, তার উঠে দাঁড়ানোর মাধ্যমে একটি টেম্পোরাল ইফেক্ট সৃষ্টি হয়। ফিলসফির ভাষায় এরকম ঘটনাকে এজেন্ট কজেশনও বলা হয়ে থাকে।
আমরা আগেই জেনেছি ইউনিভার্সের কারণ বা সৃষ্টিকর্তাকে অবশ্যই এটারনাল বা চিরন্তন হতে হবে। সুতরাং সৃষ্টিকর্তা যদি ইচ্ছাশক্তিহীন বা বুদ্ধিহীন হয় তাহলে ইউনিভার্সকেও হতে হবে চিরন্তন বা অসীম। কারণ, ইচ্ছাশক্তিহীন বা বুদ্ধিহীন কোনো কিছু তার কজ এন্ড ইফেক্ট একই সময়ে অস্তিত্বশীল হয়। যার উদাহারণ আমরা উপরে দেখেছি যে, কোনো স্থানে যখনই ০ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকবে তখনই সেই স্থানে থাকা পানি বরফে পরিণত হবে। অথবা যখনই ফাঁকা ঘরে অভিকর্ষ বলের উপস্থিতি হবে তখনই বল মাটিতে পরে যাবে।
কিন্ত আমরা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছি যে মহাবিশ্ব অসীম বা চিরন্তন নয়। তাই এই মহাবিশ্বের সত্তাকে অবশ্যই ইচ্ছাশক্তিসম্পূর্ণ বা বুদ্ধিমান সত্তা হতে হবে। আবার আমারা উপরের আলোচনা থেকে এটাও বুঝতে পারলাম, কোন চিরন্তন ইচ্ছাশক্তিহীন, বুদ্ধিহীন কজ বা কারন তার ইফেক্ট বা প্রভাব ছাড়া অস্তিত্বশীল থাকে না। তাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, ইউনিভার্সের কজ বা সোজা বাংলায় সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই একজন ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন এজেন্ট বা বুদ্ধিমান সত্তা। [14]Blackwell companion to Natural theology by W.L Craig & J.P Moreland (page 193,194)
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে অন্যান্য লিখাগুলো পড়ুনঃ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব – Faith and Theology (faith-and-theology.com)
References
Osadharon Masha Allah
মাশা-আল্লাহ
স্রস্টা ছাড়া সৃষ্টি অসম্ভব
মাশ আল্লাহ
এইভাবে সকল ধর্মের সৃষ্টিকর্তা সত্য বলে প্রমাণিত হয়।
ফালতু প্যাচাল, পড়ে সময় নষ্ট করলাম।
প্রথমত, সৃষ্টিকর্তা একাধিক হওয়া পসিবল না। তাই একাধিক ধর্ম থাকার মানে এই না যে একাধিক ধর্মের জন্য একাধিক সৃর্ষ্টিকর্তা থাকা লাগবে। মূলত, একাধিক ধর্মের লোকেরা একাধিক উপায়ে সৃষ্টিকর্তাকে উপসনা করে থাকে। সুতরাং আপনি যদি একাধিক ধর্মের অযুহাত দেখিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করেন তবে তা হবে খুবই হাস্যকর বিষয়। একাধিক ধর্ম থাকা কখনোই প্রমাণ করেনা মহাবিশ্ব এমনি এমনি সৃষ্টি হয়েছে । মনেকরুন, সদ্য জন্ম নেওয়া এক শিশুর মাতৃত্বের দাবি একই সাথে দশ জন মহিলা দাবী করলো। যেহেতু দশজন মহিলা একই সাথে নিজেকে এক সন্তানের মা বলে দাবী করেছে তার মানে কি ওই শিশুর কোনো মা নেই ? ওই শিশু কি মা ছাড়াই জন্ম নিয়েছে? অবশ্যই না। কেউ যদি এমন দাবী করে আপনি নিশ্চয় তাকে পাবনা পাঠানোর ব্যাবস্থা করবেন। তাই কেউ যদি একাধিক ধর্মের অযুহাতে সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করে তাকেও কি পাবনায় পাঠানো উচিত না?
আপনি প্রশ্নটি এভাবে করতে পারতেন যে ঠিক আছে সৃষ্টিকর্তা তো একজন আছে তার প্রমাণ পেয়েছি, এখন আমি কিভাবে বুঝবো যে এতো এতো ধর্মের মাঝে কোন ধর্মটি আসলেই সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ধর্ম? এর উত্তরও একেবারেই সহজ। উপরের উদাহারণটি লক্ষ্য করুন, একজন শিশুর মাতৃত্বের দাবি একই সাথে দশ জন মহিলা করেছে বলেতো এমন নয় যে শিশুটির মা নেই। মা অবশ্যই আছে। কিন্তু আমরা কিভাবে আইডেন্টিফাই করতে পারি কোন মহিলা শিশুটির আসল মা ? পরিক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে তাই তো ? তো আপনিও বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে পড়াশুনা করেন, পরিক্ষা নিরিক্ষা করেন তাহলেই সঠিক ধর্মের খোঁজ পেয়ে যাবেন। ইনশা-আল্লাহ।
Masha-Allah
Masha-Allah