মুসলিমরা কি কাবা শরীফের পূজা করে?

মুসলিমরা কি কাবা শরীফের পূজা করে?

মুক্তমণা নাস্তিক ও অমুসলিমরা ইসলাম সম্পর্কে প্রায়ই অভিযোগ তোলে যে মুসলিমরা তো কাবা বা মক্কা শরিফের পূজা করে। এহেন অভিযোগ সবচেয়ে বেশি শুনা যায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী সম্প্রাদয়ের মুখে। তাদেরকে যদি কখনো প্রশ্ন করেন, নিজের হাতের মূর্তি বানিয়ে আবার সেই মূর্তির উপসানা কেন করেন? প্রতিউত্তরে দ্বিধাহীন কন্ঠে তিনি হয়তো আপনাকে পালটা জবাব দিয়ে বসবে “তোমরা মুসলিমরাও তো কাবার পূজা করো! সালাত আদায় করার সময় কা’বার সামনে মাথা অবনত করো!”     

আসলেই কি মুসলিমরা কাবার পূজা বা কাবার উপাসনা করে ? 

কাবা হচ্ছে মুসলিমদের সালাত আদায় করার দিক নির্দেশন স্থান। মুসলিমরা কাবার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করে কিন্তু কাবার পূজা করেনা। আল্লাহ ব্যতিত অন্য কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর সামনে মাথা নত করা ইসলামে ‘শিরক’

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, 

আকাশের দিকে বার বার তোমার মুখ ফিরানো আমি অবশ্যই দেখছি। অতএব আমি অবশ্যই তোমাকে এমন কিবলার দিকে ফিরাব, যা তুমি পছন্দ কর। সুতরাং তোমার চেহারা মাসজিদুল হারামের দিকে ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাক, তার দিকেই তোমাদের চেহারা ফিরাও। আর নিশ্চয় যারা কিতাবপ্রাপ্ত হয়েছে, তারা অবশ্যই জানে যে, তা তাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য এবং তারা যা করে, সে ব্যাপারে আল্লাহ গাফিল নন। [1]সূরা বাকারঃ ২ঃ১৪৪ 

সালাত আদায় করার জন্য যদি নিদির্ষ্ট কোনো দিক নির্ণয় না করা থাকতো তাহলে কেউ হয়তো উত্তর দিকে সালাত আদায় করার ইচ্ছে পোষণ করবে, কেউ হয়তো দক্ষিণ দিকে, কেউ হয়তো বা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে মুখ করে সালাত আদায় করার ইচ্ছে করবে। যার ফলে ইবাদত নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো। 

মুসলিমরা পৃথিবীর যেই স্থানেই থাকুক, এক আল্লাহর ইবাদতে চূড়ান্ত ভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আল্লাহ কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে যেসব মুসলিমরা কা’বার পশ্চিমে বাস করে তারা পূর্ব দিকে ফিরে, যারা পূর্বে বসবাস করে তারা পশ্চিম দিকে মুখ ফিরে সালাত আদায় করে। আবার, কাবার দক্ষিণে বসবাস করা লোকেরা উত্তর দিকে ও উত্তরে বসবাস করা লোকেরা দক্ষিণ দিক ফিরে সালাত আদায় করে। বিশ্ব মানচিত্রে কা’বা পৃথিবীর কেন্দ্রে অবস্থান করে। পৃথিবীর প্রথম মানচিত্র অংকন করে মুসলিমরা। যদিও পরবর্তিতে পশ্চিমারা নতুনভাবে মানচিত্র অংকন করে। কিন্তু তবুও কা’বা পৃথিবীর কেন্দ্রে অবস্থান করে। 

মুসলিমরা কাবার ইবাদত করেনা বরং কাবা হচ্ছে আল্লাহর ইবাদতের প্রতিক।  

অতএব তারা যেন এবাদত করে এই (কাবা) ঘরের পালনকর্তার। [2]সূরা: কুরাইশ,১০৬ঃ৩

পবিত্র কুরআনে এই আয়াত দিয়েই প্রমাণীত হয় যে মুসলিমরা কা’বার ইবাদত করেনা বরং কাবার মালিকের ইবাদত করে। 

আবদুল্লাহ বিন সারজিস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি আল-উসায়লিহ্ অর্থাৎ উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কে দেখলাম যে, তিনি হাজরে আসওয়াদে চুমা দিচ্ছেন আর বলছেন, আমি অবশ্যই তোমাকে চুম্বন করছি। আমি নিশ্চিত জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র, তুমি ক্ষতিও করতে পারো না এবং উপকারও করতে পার না। আমি যদি রাসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তোমায় চুমা দিতে না দেখতাম , তাহলে আমিও তোমায় চুমা দিতাম না। [3]সুনানে ইবনে মাজাহ; হাদিস নংঃ ২৯৪৩

‘‘আল্লাহ ছাড়া এমন মাবুদকে ডেকোনা, যে তোমার উপকার করতে পারবেনা এবং ক্ষতিও করতে পারবেনা। তুমি যদিএমন কর, তাহলে নিশ্চয়ই তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন বিপদে ফেলেন, তাহলে একমাত্র তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা থেকে তোমাকে উদ্ধার করতে পারবে না। আর তিনি যদি তোমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চান, তাহলে কেউ তাঁর অনুগ্রহকে প্রতিহত করতে পারেনা। স্বীয় বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান, তাকেই তিনি স্বীয় অনুগ্রহ দান করেন; তিনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু’’। [4]সূরা ইউনুস; ১০ঃ১০৬ [5]সূরা ইউনুস; ১০ঃ১০৭

ইসলামী বিশ্বাসের ভিত্তি তাওহীদ

ইসলাম গড়ে উঠেছে তাওহীদের উপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ, আল্লাহই একমাত্র প্রভু এবং তিনি ছাড়া উপসনার যোগ্য আর কেউ নেই। এই তত্ত্বকে অবলম্বন করেই ইসলামের সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও কর্মপদ্ধতি গড়ে উঠেছে। কালেমার শুরুতেও স্পষ্টভাবে এই বিষয়ের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

ইসলামে এই বিশ্বাসের বিপরীত অন্যকোনো কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর উপাসনা ইসলামের দৃষ্টিতে ভয়ংকর অপরাধ।  

নিশ্চয়ই সেজদার স্থানসমূহের মালিক আল্লাহ তাআলা। অতএব তোমরা তার সাথে কারো ইবাদত করো না।’ [6]সূরা জিন; ৭২ঃ১৮

হজরত কিস বিন সাদ (রা.) বলেন,

‘আমি হিরা নামক স্থানে গিয়েছি। সেখানে দেখলাম, মানুষ তাদের রাষ্ট্রপ্রধানদের সিজদা করছে। আমি (মনে মনে) বললাম, রাসুলুল্লাহ (সা.) সিজদা পাওয়ার অধিক হকদার। তারপর আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললাম, হিরা নামক স্থানে আমি দেখেছি, সেখানকার লোকেরা রাষ্ট্রপ্রধানদের সিজদা করে। আপনি তো আল্লাহর রাসুল। আপনি তো এ বিষয়ে অধিক হকদার। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তুমি যদি আমার কবরের পাশ দিয়ে যাও, তাহলে কি তাকে সিজদা করবে? আমি বললাম, না। অতঃপর মহানবী (সা.) বলেছেন, কখনো এমনটি করবে না। আমি যদি কাউকে কারো জন্য সিজদা করার আদেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীদের বলতাম তাদের স্বামীদের সিজদা করতে। কেননা আল্লাহ তাআলা স্ত্রীদের কাছে স্বামীদের বিশেষ হক দিয়েছেন। ’ [7]আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪০

ইসলাম সম্পর্কিত অভিযোগের জবাব – Faith and Theology (faith-and-theology.com)

Sazzatul Mowla Shanto

As-salamu alaykum. I'm Sazzatul mowla Shanto. Try to learn and write about theology and philosophy.

One Comment

  1. মাশা-আল্লাহ। খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button