ম্যাক্রো ইভোলিউশন কি এবং কিভাবে-

বিবর্তনবাদ

সূচনা

ম্যাক্রোবিবর্তন বলতে সাধারণত বড় আকারের কাঠামো এবং বৈশিষ্ট্যগুলির বিবর্তন বোঝায়। সহজ কথায় ম্যাক্রোবিবর্তন হল প্রজাতির স্তরের উপরে ট্যাক্সার বিবর্তন। (১) অর্থাৎ আমরা মাইক্রো বিবর্তনে রিপ্রোডাক্টিভ আইসোলেশনের মাধ্যমে একটি প্রজাতি থেকে অন্য আরেকটি প্রজাতিতে রুপান্তর দেখেছি, একক স্থানীয় প্রজাতি থেকে অন্য স্থানের নতুন প্রজাতির গঠন দেখেছি, কিন্তু এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো মাইক্রো বিবর্তনের মেকানিজমের আলোকে প্রজাতির যে পরিবর্তন বা এক প্রজাতির একাংশ রিপ্রোডাক্টিভ আইসোলেশনের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রজাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ইত্যাদি কিন্তু একই জেনাসের ভেতরে সংগঠিত হয়েছে। যেমন ফিঞ্চ পাখিদের ক্ষেত্রে এলোপেট্রিক এবং সিমপ্যাট্রিক প্রজাতি রিপ্রোডাক্টিভলি আইসোলেটেড হয়ে ভিন্ন প্রজাতিতে পরিণত হলেও তা কিন্তু পাখিই রয়ে গেছে। ফিঞ্চ পাখি কিন্তু অন্য কোনো প্রানী যেমন পাখি গোত্র থেকে বেরিয়ে মাছের কোনো জেনাসের ভেতর চলে আসেনি। যতসব পরিবর্তন ঘটেছে হোক তা প্রজনন বিচ্ছিন্নতা কিংবা ব্যবহারিক বিচ্ছিন্নতা সবকিছুই ঘটেছে একই ফ্যামিলি বা জেনাসের মধ্যেই এর বাহিরে নয়। ম্যাক্রো ইভোলিউশন বলতে বোঝানো হয় কেবল প্রজাতির ক্ষেত্রে নয় এমনকি জেনাস কিংবা ফ্যামিলির ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসে থাকে অর্থাৎ বিবর্তন ঘটে থাকে। যেমন ধরুন, শিম্পাঞ্জির জেনাস হলো Pan আর মানুষের জেনাস হলো Homo.

অর্থাৎ জেনাসের দিক দিয়ে ( মহাজাতিগত) শিম্পাঞ্জি এবং মানুষ কিন্তু আলাদা। এখানে একটু বোঝার ঘাটতি থেকে যেতে পারে। মূলত ক্যারোলাস লিনিয়াস মানুষের ট্যাক্সোনোমি নির্ধারণ করার সময় মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর সাদৃশ্য রেখেই তা নির্ধারণ করেছেন অন্যান্য প্রানীদের ক্ষেত্রেও তাই করা হয়। তবে জাতিগত ভাবে অর্থাৎ একক জাতি হিসেবে মানুষ এবং শিম্পাঞ্জি আলাদা। ডারউইনিয়ান বিবর্তন যা থেকে বর্তমানের ইভোলুশনারি বায়োলজি এই ফিল্ডের ধরে নেয়া বিশ্বাস হলো কোন এক সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে মানুষের এই homo জেনাস এবং শিম্পাঞ্জির Pan জেনাসের আগমন। অর্থাৎ কোনো এক সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে মানুষ অর্থাৎ homo এবং শিম্পাঞ্জি ও বোনোবো Pan আলাদা হয়েছে। এজন্যই দেখবেন শিম্পাঞ্জি ও বোনোবোর জেনাস Pan এবং মানুষের জেনাস Homo হলেও সাদৃশ্যের ভিত্তিতে এদের ফ্যামিলি কিন্তু একই দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে Hominidae. নিচের ছবিটা দেখলে সম্ভবত ভালোভাবে বোঝা যাবে। এখানে CHca হচ্ছে Chimpanzee Human common ancestor. যাইহোক শিম্পাঞ্জি আর মানুষ নিয়ে পরবর্তীতে আরও আলোচনা হবে আপাতত মূল বিষয় নিয়ে বলা যাক।

Human-Chimp common ancestor ( inference) photo: mine

মলিকুলার ম্যাক্রো ইভোলিউশনঃ

আমরা মাইক্রো বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করার সময় মিউটেশন নিয়ে কিছুটা জেনেছি। ইভোলুশনারি বায়োলজিস্টদের ধারণা মিউটেশন ম্যাক্রো ইভোলিউশন এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এছাড়াও মিউটেশন কে বিবর্তন এর কাচামাল হিসেবে অবহিত করা হয়। যদিও আমরা জানি মিউটেশন এত ৭০% ই ডিলেটেরিয়াস এবং মিউটেশন নতুন কোনো তথ্য ( ফাংশনাল ইনফরমেশন) জেনারেট করতে সক্ষম নয়। তবে মিউটেশন কিছু ক্ষেত্রে ধাক্কাধাক্কিতে প্রোটিনের কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে এমনকি পরিবর্তন করতে পারে। এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে যেখানে মিউটেশনের মাধ্যমে প্রোটিনের কার্যকারিতা নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাসিটালডিহাইড ডিহাইড্রোজেনেস (EC:1.2.1.10) একটি মিউটেশন এটিকে 4-হাইড্রক্সি-2-অক্সোপেন্টানোয়েট পাইরুভেট লাইসে (EC:4.1.3.39) এ পরিবর্তন করতে পারে, অর্থাৎ, একটি মিউটেশন যা একটি এনজাইমকে একটি থেকে অন্য EC- তে পরিবর্তন করে। (১) Ec বলতে Enzyme Commission Number বোঝায় এর দ্বারা সাধারণত কেমিক্যাল রিয়েকশনের উপর ভিত্তি করে এনজাইমের ক্লাসিফিকেশন করা হয়ে থাকে। এখানে মনে রাখা প্রয়োজন পরিবর্তন মানে হলো মিউটেশন এর ফলে নিউক্লিওটাইড এ ভাঙ্গন দেখা দেয় যার ফলে কদাচিত এসব পরিবর্তন হয়ে থাকে। (২)

মাইক্রো বিবর্তনীয় প্রক্রিয়া কি ম্যাক্রোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

ডারউইনীয় বিবর্তনের চিন্তাধারায় মাইক্রো ম্যাক্রো বলে কিছু ছিলো না। ডারউইন ধারণা করেছিলেন তার প্রস্তাবিত প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে জীবের মধ্যে ভ্যারিয়েশন ঘটে এবং পরবর্তীতে নতুন প্রজাতির উৎপত্তি হয়। তবে মাইক্রো ইভোলিউশন নিয়ে এবং এর প্রক্রিয়াসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় দেখেছি যে কোনো গোত্রের মধ্যে প্রজাতিগত পার্থক্য কেবল প্রাকৃতিক নির্বাচন এর মাধ্যমে আসেনা বরং মিউটেশন, জিনের প্রবহণ, জেনেটিক ড্রিফট এর মতো বেশ কিছু স্বতন্ত্র প্রক্রিয়ায় এই পরিবর্তন ঘিটে থাকে৷ আমরা ডারউইনিজম এর উদ্ভব এবং বিকাশ অধ্যায়ে আলোকপাত করেছি যে ডারউইনের তথ্য অসম্পূর্ণ ছিলো এবং পরবর্তীতে অন্যান্য বিজ্ঞানীরা মিউটেশন এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াকে ব্যক্ত করে মাইক্রো বিবর্তন কে প্রতিষ্ঠা করেছেন। মাইক্রো বিবর্তন প্রকৃতিতে অহরহ ঘটে এবং এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। যেহেতু ম্যাক্রো ইভোলিউশন হচ্ছে ট্যাক্সার উপর বিবর্তন বা পরিবর্তন সেক্ষেত্রে ইভোলিউশনারি বায়োলজিস্ট গণ মাইক্রো বিবর্তনীয় প্রক্রিয়া কেই ম্যাক্রো বিবর্তন এর প্রক্রিয়া অনুমান করে থাকেন যদিও তেমনটা সঠিক নয়। ডারউইনের সিলেকশন তত্ত্ব যখন ৯০ এর দশকে শেষের দিকে তখন থিওডসিয়াস ডবঝানস্কি সহ একদম বিজ্ঞানীরা ন্যাচারাল সিলেকশন এর সাথে মিউটেশন, জিন ফ্লো বিভিন্ন প্রক্রিয়া যুক্ত করে তৈরি করলেন মর্ডাণ সিন্থেসিস বা আধুনিক সংশ্লেষণ তত্ত্ব। চেষ্টা করা হলো এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ম্যাক্রো বিবর্তন কে ব্যাখ্যা করার। যদিও পরবর্তীতে মর্ডাণ সিন্থেসিস ও ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা প্রজাতির সৃষ্টি কখনোই সম্ভব নয়। যেমন বিখ্যাত বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী জেমস শাপিরো বলেন, ” ডারউইন যে দাবি করেছিলেন, সেই প্রাকৃতিক নির্বাচনের দ্বারা কখনোই নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়নি। এই বিষয়টা খেয়ালে রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ।” (৩) অপরদিকে জীববিজ্ঞানী লিন মার্গুলিস বলেন,

” প্রাকৃতিক নির্বাচন জীবের বিলুপ্তি, অপসারণ এবং হয়তো প্রতিপালন করে, কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচন কোনো কিছু তৈরি করে না। নিউ ডারউইনিষ্টরা বলে থাকে যে মিউটেশন এর ফলে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে এবং জীবের পরিবর্তন ঘটায়, আমিও বিশ্বাস করতাম তবে যতক্ষণ না আমি এর প্রমাণ গুলো পর্যালোচনা করেছি। ” (৪)

মাইক্রো বিবর্তন এর প্রক্রিয়াসমূহ ম্যাক্রো বিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে না এ নিয়ে ২০০৭ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে,

” ঐতিহাসিকভাবে, নব্য-ডারউইনীয় সংশ্লেষকারীরা বিবর্তনের ক্ষেত্রে মাইক্রোমিউটেশনের প্রাধান্যের উপর জোর দিয়েছিল, যেখানে অন্যরা ম্যাক্রোমিউটেশনবাদের পক্ষে যুক্তি দিতে কিছু নাটকীয় মিউটেশন এবং বিবর্তনীয় পরিবর্তনের মধ্যে মিল উল্লেখ করেছে। উভয় পক্ষের যুক্তি মিউটেশনের উন্নয়নমূলক প্রভাব সম্পর্কে ভুল ধারণার দ্বারা পক্ষপাতদুষ্ট ছিলো। ” (৫)

অপরদিকে ২০০০ সালে রবার্ট ক্যারল তার গবেষণাপত্র ” Towards a new evolutionary synthesis এ বলেন,

” আণবিক উন্নয়নমূলক জীববিজ্ঞান , পদ্ধতিগত, ভূতত্ত্ব এবং জীবের সমস্ত গ্রুপের জীবাশ্ম রেকর্ড থেকে নতুন ধারণা এবং প্রাপ্ত তথ্যগুলোকে একটি প্রসারিত বিবর্তনীয় সংশ্লেষণে একীভূত করা প্রয়োজন। অধ্যয়নের এই ক্ষেত্রগুলি দেখায় যে আধুনিক জনসংখ্যা এবং প্রজাতির স্তরে পর্যবেক্ষণ করা বিবর্তনীয় প্রক্রিয়াগুলি থেকে এক্সট্রাপোলেশনের ভিত্তিতে বৃহৎ আকারের বিবর্তনমূলক ( ম্যাক্রো বিবর্তন) ঘটনাগুলিকে বোঝা যায় না । ” (৬)

প্রফেসর এন্ড্রু সাইমন তার গবেষণাপত্র The continuity of microevolution and macroevolution এ বলেন,

মাইক্রো বিবর্তন এবং ম্যাক্রো বিবর্তনের ধারাবাহিকতা নিয়ে জীববিজ্ঞানে একটি অবিরাম বিতর্ক বিদ্যমান। বিতর্কের বিষয় হলো ম্যাক্রো বিবর্তনের প্রবণতা আদৌ মাইক্রো বিবর্তনের নীতিসমূহ দ্বারা নিয়ন্ত্রণে কিনা ” (৭)

রেফারেন্সঃ

১.https://onlinelibrary.wiley.com/doi/10.1111/pala.12465

২.https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0959440X17300738

৩..James A. Shapiro (2011), Evolution: A View from the 21st Century (FT Press) p. 121

৪..Dick Teresi (2011), Lynn Margulis Says She’s Not Controversial, She’s Right. Discover Magazine.

৫.https://doi.org/10.1111/j.0014-3820.2000.tb00544.x

৬..https://doi.org/10.1016/S0169-5347(99)01743-7

৭..https://doi.org/10.1046/j.1420-9101.2002.00437.x

 

Asief Mehedi

Assalamualaikum to all.My name is Asief Mehedi . I am an informal philosophy student. Let's talk about comparative theology, we work to suppress atheism. Help us to suppress atheism and come forward to establish peace.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button