অন্টোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট

ফিলোসোফি

অন্টোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট বা তত্ত্ব বিষয়ক যুক্তি

প্রথমে যে যুক্তিটি আমরা আলোচনা করব সেটি হল তত্ত্ববিষয়ক যুক্তি (Ontological Argument) । তত্ত্ববিষয়ক যুক্তিটি বিভিন্ন ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। কিন্তু এই যুক্তিটির মূল বক্তব্য হল এই যে, স্রষ্টার ধারণার (idea of God) মধ্যেই স্রষ্টার বাস্তবতা (reality of God) নিহিত। ঈশ্বরের ধারণা হল এক অভিনব ধারণা, কাজেই তা নিছক ধারণা হতে পারে না। সেজন্য এই যুক্তি স্রষ্টার ধারণা থেকেই স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণে সচেষ্ট হয়। আমাদের মনে স্রষ্টার ধারণার উপস্থিতি তার সত্তা বা অস্তিত্ব প্রমাণ করে (Self- evidence)। চিন্তন বা ধারণা থেকে অস্তিত্বে উপনীত হওয়া বা অস্তিত্বের সিদ্ধান্ত করাই হল এই যুক্তিটির সার কথা। এই যুক্তিটির উল্লেখযােগ্য উপস্থাপক হলেন আনসেল্ম এবং দেকার্ত।

আনসেল্মের যুক্তি

আনসেল্মের মতে স্রষ্টার ধারণা : কান্টারবেরীর আনসেল্ম স্রষ্টার ধারণাকে কিভাবে ব্যক্ত করেছেন, প্রথমে তা দেখা যাক। তিনি স্রষ্টার ধারণাকে ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, “এ হল এমন সত্তা যার থেকে বৃহত্তর কিছু ধারণা করা যায় না (a being than which nothing greater can be conceived)”। এটা স্পষ্ট যে, “বৃহত্তম” (greater) বলতে আনসেল্ম মনে করেন অধিকতর পূর্ণ (more perfect), দৈশিক দিক থেকে বহত্তর (spatially bigger) নয়। , আনসেল্ম ঈশ্বরকে বর্ণনা করেছেন সেই পূর্ণ সত্তা রূপে, যার থেকে অধিকতর পূর্ণ সত্তার ধারণা করা যায় না।

সেন্ট আনসেল্ম (St. Anselm) যুক্তিটিকে এভাবে উপস্থাপিত করেছেন (আনসেল্মের প্রোসলজিওন গ্রন্থের (Proslogion) চ্যাপ্টার ২-৪ এ এটি পাওয়া যাবে) –

যুক্তিটির প্রথম রূপ : আমাদের মনে এক পূর্ণ সত্তার (Perfect Being) ধারণা আছে। এই পূর্ণ সত্তা হল স্রষ্টা । স্রষ্টার ধারণা এমন যার থেকে পূর্ণতম ও মহত্তম কিছু চিন্তা করা যায় না (a being than which nothing greater can be conceived)। কিন্তু এই পূর্ণ সত্তার অস্তিত্ব স্বীকার না করলে তা কিভাবে পূর্ণ হতে পারে? অস্তিত্ব পূর্ণতার অন্তর্গত। যার অস্তিত্ব নেই তাকে পূর্ণ বলা যায়না। শুধু চিন্তায় যার অস্তিত্ব আছে তার তুলনায় চিন্তায় এবং বাস্তবে যার অস্তিত্ব আছে তা পূর্ণতর। আমাদের মনে যে পূর্ণ সত্তার ধারণা আছে বাস্তবে তার যদি অস্তিত্ব না থাকে, তাহলে আমরা অপর এক পূর্ণ সত্তার ধারণা করতে পারি যার বাস্তবে অস্তিত্ব আছে। তাহলে শেষােক্ত সত্তা প্রথমটির তুলনায় অধিকতর পূর্ণ হবে। যেহেতু স্রষ্টা পূর্ণতম বা মহত্তম তার অস্তিত্ব শুধুমাত্র চিন্তায় নেই, বাস্তবেও আছে। কাজেই স্রষ্টা অস্তিত্বশীল। [1]Malcolm, Norman, “Anselm’s Ontological Argument,” Philosophical Review, vol. 69, no. 1 (1960), 41-62

যুক্তিটির দ্বিতীয় রূপ: আনসেল্ম তার ‘Proslogion’ গ্রন্থের তৃতীয় পরিচ্ছেদে যুক্তিটিকে আবার ব্যক্ত করেছেন। তবে সেখানে শুধুমাত্র স্রষ্টার অস্তিত্বের কথা বলেন নি, ঈশ্বরের অবশ্যম্ভাবী অস্তিত্বের (necessary existence) কথা বলেছেন। স্রষ্টা সম্পর্কে এমন ভাবে সংজ্ঞা নির্দেশ করা হয়েছে যে, স্রষ্টা অস্তিত্বশীল নয় – এমনভাবে স্রষ্টাকে ধারণা করা যায় না। অবশ্যম্ভাবী অস্তিত্বের যে ধারণা তার মূল কথা হল নিজে নিজে অস্তিত্বশীল (self-existent) হওয়া। যেহেতু স্রষ্টা পূর্ণতা অসীম, তিনি কালে বা কালের দ্বারা সীমিত নন, (is not limited in or by time)। কাজেই কোন বিশেষ কালে স্রষ্টার অস্থিত্বশীল হওয়া এবং কোন বিশেষ কালে স্রষ্টার র অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়া, এই দুই সম্ভাবনাকেই বাতিল করা যায়। কাজেই স্রষ্টার নাস্তিত্ব অর্থাৎ ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই – এমন হওয়াটা অসম্ভব।

আনসেল্মের যুক্তির সমালোচনা :

আনসেল্মের সমসাময়িক চিন্তাবিদদের মধ্যে অনেকেই আনসেল্মের যুক্তিটির আলােচনা করেন। আনসেল্মের সমসাময়িকদের মধ্যে গনিলাে (Gaunilo) নামে একজন ফরাসী সন্ন্যাসী ‘A Book or behalf of the Fool’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করে আনসেল্মের প্রদত্ত যুক্তির উত্তর দেবার জন্য সচেষ্ট হয়েছিলেন। গনিলো আনসেল্মের সঙ্গে একমত যে, ঈশ্বরের ধারণা অনিবার্যভাবে তার মনে বর্তমান। কিন্তু তিনি বলেন যে, এর থেকে সিদ্ধান্ত করা অসম্ভব যে, ঈশ্বর বাস্তবে অস্তিত্বশীল। তিনি আরও বলেন যে, যদি কেউ তাকে এমন একটি অত্যাশ্চর্য দ্বীপের কথা ব্যক্ত করতেন যেটি এই জগতে স্বর্গের মতোই সুন্দর, তাহলে তার পক্ষে এই দ্বীপের ধারণা মনে গঠন করা এবং তাকে মনে জাগরুক রাখা সহজ হত। কিন্তু মনের এই ধারণা থেকে তিনি কখনও এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতেন না যে, দ্বীপটি বাস্তবে অনিবার্যভাবে অস্তিত্বশীল।[2]Cornman, James W.; Lehrer, Keith; Sotiros Pappas, George (1992). Philosophical problems and arguments: an introduction. Hackett Publishing. pp. 254

গনিলোর অভিযােগের উত্তর : আনসেল্ম গনিলাের সমালােচনার উত্তর দিয়েছিলেন। তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, দ্বীপ সম্পর্কে গনিলাে যুক্তি নির্ভুল এবং একটিমাত্র ক্ষেত্র ছাড়া অপর সব ক্ষেত্রেই এটি সত্য হবে। আনসেল্ম মনে করেন যে ঈশ্বরের ক্ষেত্রটি একটা বিশেষ ধরনের ক্ষেত্র। দ্বীপের ক্ষেত্রে যেমন অন্যান্য ক্ষেত্রেও, আমরা তাদের অস্তিত্বের কথা যেমন চিন্তা করতে পারি তেমনি তাদের নাস্তিত্বের কথাও চিন্তা করতে পারি। কেননা দ্বীপ হল এই জগতের একটা অংশ-একটি পরনির্ভর সত্তা (a dependent reality)। দ্বীপের নাস্তিত্বের চিন্তার মধ্যে কোন বিরােধিতা (contradiction) নেই। কাজেই আনসেল্মের বক্তব্য এক্ষেত্রে প্রযােজ্য নয়। কিন্ত আনসেল্ম মনে করেন যে ঈশ্বরের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। ঈশ্বরের বেলায় ঈশ্বরের নাস্তিত্বের কথা ধারণা করা যায় না। কারণ এক্ষেত্রে আমরা কোন দ্বীপ, অশ্ব বা বিদ্যালয়ের কথা চিন্তা করছি না যা সেই ধরণের বস্তুর মধ্যে মহত্তম এবং পূর্ণতম (the greatest and most perfect)। আমরা এমন কিছুকে চিন্তা করছি, সেটা যাই হােক না কেন, সব সত্তার মধ্যে মহত্তম এবং পূর্ণতম। একমাত্র ঈশ্বরের ক্ষেতেই চিন্তার অস্তিত্ব (existence in thought) থেকে বাস্তব অস্তিত্বে (existence in eality) উপনীত হওয়া সম্ভব। আনসেল্মের নীতি, ধারণা করা যায় এমন সবচেয়ে পূর্ণ সত্তার ক্ষেত্রেই প্রযােজ্য, কেননা এই ঈশ্বরের অনন্ত এবং অবশ্যম্ভাবী অস্তিত্ব (eternal and independent existence) আছে।

দেকার্তের অন্টোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট

প্রথম যুক্তি : পাঁচশো বছরেরও বেশি সময় পরে ফরাসী দার্শনিক দেকার্ত অন্টোলজিক্যাল আর্গুমেন্টকে   একটু ভিন্ন আকারে উপস্থাপিত করেছেন, দেকার্ত বললেন যে, ঈশ্বরের ধারণার মধ্যে কেবল যে অস্তিত্বের সম্ভাবনা নিহিত আছে তা নয়, অবশ্যম্ভাবী অস্তিত্ব (necessary existerice) ঈশ্বরের পূর্ণতম সত্তার ধারণার অন্তর্ভূক্ত। দেকার্ত ছিলেন একজন গাণিতিক। কাজেই গণিত থেকে তিনি একটি উদাহরণ নিয়ে তার বক্তব্য বােঝাবার চেষ্টা করলেন। তিনি বললেন, আমি এমন একটা ত্রিভুজের কথা কল্পনা করতে পারি, যার কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই। কিন্তু, যদিও এই ত্রিভুজটি আমার কল্পনার ওপর নির্ভরশীল, তবু এই ত্রিভুজের এমন কিছু গুণ আছে, যেমন –“ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি দই সমকোণের সমান” – যা আমার কল্পনার উপর নির্ভরশীল নয়, বরং বলা যেতে পারে যে কল্পনা পূর্ণতম সত্তার ধারণার নিরপেক্ষ। ‘ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি দুই সমকোণের সমান’ – এই গুণ বা বৈশিষ্ট্যটি যেমন ত্রিভুজের ধারণার মধ্যেই নিহিত বা এটি যেমন ত্রিভুজের একটি অনিবার্য বৈশিষ্ট্য তেমনি পূর্ণতম সত্তার ধারণার মধ্যেই তার অস্তিত্ব নিহিত অর্থাৎ অস্তিত্ব পূর্ণতম সত্তার এক অনিবার্য বৈশিষ্ট্য (যে বৈশিষ্টোর দ্বারা ত্রিভুজের সংজ্ঞা নির্দেশ করা হয় সেই বৈশিষ্ট্য ছাড়া যেমন ত্রিভুজটি ত্রিভুজ নয়, তেমনি অস্তিত্ব ছাড়া ঈশ্বর, ঈশ্বর নয়। পার্থক্য হল এই যে, ত্রিভুজের বেলায় আমরা কোন ত্রিভুজের অস্তিত্বের বিষয়টি অনুমান করে নিতে পারি না, কেননা অস্তিত্ব ত্রিভুজত্বের সারধর্ম (essence) নয়। কিন্তু পূর্ণতম সত্তার ক্ষেত্রে আমরা ঈশ্বরের অস্তিত্ব অনুমান করতে পারি, কেননা অস্তিত্ব হল একটি প্রয়েজনীয় গুণ যেটি ছাড়া কোন সত্তা সীমাহীন ভাবে পূর্ণ ছতে পারে না।)। কাজেই পূর্ণতম সত্তা অস্তিত্বশীল নয় একথা বলা হলে বক্তব্যের মধ্যে সেই বিরােধিতা দেখা দেবে, ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি দুই সমকোণের সমান নয় বললে, যে বিরােধিতা দেখা দেয়। ত্রিভুজের প্রকৃতিই হল এমন যে তার তিনটি কোণ দুই সমকোণের সমান। অনুরূপভাবে পূর্ণতম সত্তার প্রকৃতিই হল অস্তিত্বশীল হওয়া। তিনটি কোণ মিলে যেমন অবশ্যম্ভাবীভাবে দুটি সমকোণের সমান হয়, তেমনি পূর্ণতম সত্তা অবশ্যম্ভাবীভাবে অস্তিত্বশীল। কাজেই পূর্ণতম সত্তার ধারণা থেকে আমরা তার বাস্তব এবং অবশ্যম্ভাবী অস্তিত্ব অনুমান করতে পারি। যে সত্তার অস্তিত্ব নেই, তা কখনও অসীম এবং পূর্ণ হতে পারে না। পূর্ণতার ধারণা ছাড়া অন্য কোন ধারণার অবশ্যম্ভাবী অস্তিত্ব নেই। অস্তিত্বহীন পূর্ণ সত্তার ধারণা যৌক্তিক অসঙ্গতিপূর্ণ। উপরিউক্ত যুক্তি ছাড়া দেকার্ত ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য আরও কয়েকটি যুক্তি দিয়েছেন। সংক্ষেপে বলা যেতে পারে, অস্তিত্ব ঈশ্বরের ধারণার অন্তর্ভূক্ত এবং এই অন্তর্ভূক্ত হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ করা যায়। [3]Abbruzzese, John Edward, 2007. “The Structure of Descartes’ Ontological Proof,” British Journal for the History of Philosophy, 15: 253–282.

দ্বিতীয় যুক্তি : প্রতিটি ঘটনার একটা কারণ আছে। নিছক শূন্য থেকে কোন কিছুর সৃষ্টি হতে পারে না – এটি একটি স্বতসিদ্ধ বচন। কাজেই ঈশ্বরের ধারণারও একটা কারণ আছে। কার্যের মধ্যে যতখানি সত্যতা থাকবে, কারণের মধ্যেও ততখানি সত্যতা থাকবে, অর্থাৎ কার্য উৎপন্ন করার মতাে কারণকে ততখানি পর্যাপ্ত হওয়া দরকার। যার মধ্যে বেশি সত্যতা আছে বা যা সবচেয়ে পুর্ণ, তা কখনও কম সত্যতা আছে বা তার চেয়ে কম পূর্ণ, এমন বিষয়ের কার্য হতে পারে না। কাজেই ঈশ্বরের ধারণার কারণ আমি হতে পারি না যেহেতু আমি একজন সীমিত অপূর্ণ সত্তা। ঈশ্বরের ধারণা হল পূর্ণ অসীম সত্তার ধারণা। কাজেই কোন অসীম গুণ সত্তা, অর্থাৎ ঈশ্বর আমার মনের মধ্যে এই ধারণা সংস্থাপিত করেছেন। সুতরাং ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে।

এখানে কিছু দার্শনিকদের( ইমানুয়েল কান্ট, রাসেল) মুল একটি সমালোচনা রয়েছে, যে আনসেল্ম এবং দেকার্ত ধরে নিয়েছেন যে আমাদের সবার মনে একজন সর্বাধিক মহান সত্তার(MGB) নিহিত রয়েছে সুতরাং এটা অযৌক্তিক। তবে এখন আমরা জানি যে সত্যিই আমাদের সকলের মনে সর্বাধিক মহান সত্তার ধারণাটি সবসময়ই প্রোথিত ছিল এবং থাকবে।

একাডেমিক অলিভেরা পেট্রোভিচ মানুষের মনস্তত্ব এবং স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে কিছু গবেষণা পরিচালিত করেছেন। তিনি এই উপসংহারে এসেছেন যে একজন মানববৈশিষ্ট্যের উর্ধ্বে (Non-anthropomorphic) স্রষ্টায় বিশ্বাস হলো মানুষের প্রাকৃতিক অবস্থা। নাস্তিকতা একটি শেখা মনস্তত্ব। [4]Infants ‘have natural belief in God’. The Age National http://www.theage.com.au/national/infants-have-natural-belief-in-god-20080725-3l3b.html. Accessed 17 December 2014.আস্তিকতা আমাদের প্রাকৃতিক অবস্থা।

“এই সম্ভাবনা যে কিছু ধর্মীয় বিশ্বাসাদি হলো সার্বজনীন (উদাহরণস্বরূপ: একজন মানববৈশিষ্ট্যের উর্ধ্বে স্রষ্টায় প্রাকৃতিক জগতের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মৌলিক বিশ্বাস) যতটা ধর্মীয় পাঠ থেকে অনুমান করা যেতো তার চেয়ে বেশী তার পরীক্ষামূলক ভিত্তিই আছে। ধর্মীয় বুঝের উপর গবেষণার কিছু প্রারম্ভিক ফলাফল উন্নয়নমূলক গবেষণার অন্যান্য ক্ষেত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যা ইঙ্গিত করে যে মানব জ্ঞানের একাধিক ক্ষেত্রে চেতনাগত সার্বজনীনতা রয়েছে…”[5]Keu Psychological Issues in the Study of Religion. Olivera Petrovich. psihologija, 2007, Vol. 40 (3), str. 351-363

 

• University of Oxford এর Centre for Anthropology and mind বিভাগের সিনিয়র রিসার্চার Dr. Justin barrott দীর্ঘ ১০ বছর শিশুদের উপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা করে বলেছেন,

“Human beings are natural believers in God.” অর্থাৎ, মানুষ স্বভাবতই ঈশ্বরে বিশ্বাসী। তার বইতে তিনি বলেন,

“শিশুদের উন্নয়নশীল মন এবং অতিপ্রাকৃত বিশ্বাসের উপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে শিশুরা স্বাভাবিকভাবে এবং দ্রুত এমন মন অর্জন করে যেগুলো অতিপ্রাকৃত কর্তাদিতে (Supernatural agents) বিশ্বাসাদি সহজতর করে। বিশেষ করে জন্মের পর প্রথম বছরে, শিশুরা কর্তাদি (Agents) এবং অকর্তাদির (Non-agents) মধ্যে পার্থক্য করে, এটা বুঝে যে কর্তাদি উদ্দেশ্যমূলক উপায়ে তাদেরকে চালনা করতে পারে লক্ষ্যাদি অন্বেষণ করতে। তারা উত্সাহী তাদের আশেপাশে এজেন্সি পাওয়ার জন্য, অল্প প্রমাণ সত্ত্বেও। তাদের জন্মের একবছর পরপরই, বাচ্চাদের বুঝতে পারা প্রতীয়মান হয় যে কর্তাদি, কিন্তু প্রাকৃতিক শক্তি কিংবা সাধারণ বস্তু নয়, বিশৃঙ্খলা থেকে শৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে…এই ফাংশন এবং উদ্দেশ্য দেখার প্রবণতা, প্লাস, একটি বুঝ যে উদ্দেশ্য এবং শৃঙ্খলা মনোবিশিষ্ট সত্তা থেকে আসে, শিশুদেরকে প্রাকৃতিক ঘটনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে সৃষ্ট হিসেবে দেখাকে সম্ভাব্য করে। কে সৃষ্টিকর্তা? শিশুরা জানে মানুষেরা ভালো প্রার্থী নয় (সৃষ্টিকর্তা হওয়ার)। এটি একজন স্রষ্টা হবে…শিশুরা জন্মগত বিশ্বাসী তাতে যাকে আমি ডাকি প্রাকৃতিক ধর্ম।”[6]Justin L. Barrett. Born Believers: The Science of Children’s Religious Belief. Free Press. 2012, pp. 35 – 36.

বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের (নাস্তিক) গবেষক ডেবোরাহ কেলেমেন “শিশুরা কি সহজাতভাবে আস্তিক ?” এই শিরোনামে একটি প্রবন্ধ বের করেছেন। এবং সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন যে,

 

সাম্প্রতি সময়ে মননগত গবেষণায় দেখা যায় যে, ৫ বছরের দিকে শিশুরা বুঝতে শুরু করে প্রাকৃতিক বস্তু গুলো মানব সৃষ্ট নয়। ৬-১০ বছর বয়সী শিশুরা প্রকৃতির মাঝে একটা মহৎ উদ্দেশ্য খুঁজে পায়। এসব গবেষণা থেকে শিশুদের ব্যাক্ষ্যামূলক মনোভাবকে সহজাত আস্তিক্যবাদ হিসেবে বলা যেতে পারে।  [7]https://www.bu.edu/cdl/files/2013/08/2004_Kelemen_IntuitiveTheist.pdf

 

এছাড়াও ডেভবোরাহ কেলেমেন বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল থেকে সিদ্ধান্ত জানান যে,

“অতিপ্রাকৃতিক সত্তায় ধর্মীয় বিশ্বাস বাহ্যিক, সামাজিক উৎস থেকে নয় বরং, প্রাথমিকভাবে মানুষের ভেতর থেকেই উৎপত্তি হয়। এ বিশ্বাস মানব মনের মৌলিক উপকরণ।”  [8]. Patrick Mcnamara Ph.D, Wesley J. Wildman (etd.), Science and the World’s Re-ligions; vol. 02 (persons and Groups), p.206,209 (Publisher ABC-CLIO, July 19,2012)

আর্গুমেন্ট এ ফেরা

এবার পুনরায় আর্গুমেন্ট এ ফেরা যাক।

premise. 1 এটা সম্ভব যে স্রষ্টা ( Maximality Great Being) বিদ্যমান।

premise. 2 যদি এটা সম্ভব হয় যে স্রষ্টা (MGB) বিদ্যমান। তাহলে স্রষ্টা কিছু সম্ভাব্য জগতে তিনি বিদ্যমান।

premise. 3 যদি কিছু সম্ভাব্য জগতে স্রষ্টা ( MGB) বিদ্যমান থাকেন তাহলে তিনি (MGB) সকল সম্ভাব্য জগতে বিদ্যমান।

premise. 4 যদি স্রষ্টা (MGB) সকল সম্ভাব্য জগতে বিদ্যমান থাকেন তাহলে তিনি (MGB) প্রকৃত জগতেও বিদ্যমান।

Premise: 5. যদি স্রষ্টা MGB) প্রকৃত জগতে বিদ্যমান থাকেন তাহলে অবশ্যই স্রষ্টা অস্তিত্বশীল।

premise: 6. সুতরাং স্রষ্টার অস্তিত্ব রয়েছে।

অন্টোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট এর পরিচিতি এবং বিষয়াবলি বিশ্লেষণ

possible world:

দার্শনিকদের জন্য এটি একটি সাধারণ উপায় কোনো ধারণাকে যাচাই করার জন্য। যে একটি ধারণা সম্ভাব্য জগতে বিদ্যমান থাকতে পারে কিনা আমাদের এই প্রকৃত জগতের মতো। তবে অবশ্যই সেটার অস্তিত্ব “সম্ভব ” হতে হবে, লজিক্যালি ইনকনসিস্টেন্স কোনো কিছু পসিবল ওয়ার্ল্ডেও থাকতে পারে না।

সত্তা বা অস্ত্বিত্ব কে আমরা তিনভাগে ভাগ করে পারিঃ [9]Plantinga, A. (1978). The nature of necessity. Clarendon press.

অসম্ভব অস্তিত্ব: এমন এক সত্তা বা যা কোনো সম্ভাব্য জগতেই অস্তিত্বশীল নয় বা হতে পারে না। যেমনঃ গোলাকার ত্রিভুজ, ৫ এর রঙ ইত্যাদি।

সম্ভাব্য অস্তিত্ব( Contingent, Dependent etc):

এমন একটি অস্তিত্ব যা কিছু সম্ভাব্য জগতে বিদ্যমান। বা প্রকৃত জগতে বিদ্যমান তবে তা অন্যকোনো অস্তিত্বের উপর নির্ভরশীল। যেমনঃ আমাদের চারপাশের প্রায় সবকিছু, চেয়ার,টেবিল ইত্যাদি ইত্যাদি

অবশ্যম্ভাবী অস্তিত্ব( Necessary existence):

এমন একটি সত্তা যা সমস্ত সম্ভাব্য জগতে অস্তিত্বশীল। যার অনস্তিত্ব অসম্ভব।

( Maximally Great Being)  

এমন একজন সত্তা যার সকল গুণ (Attribute) সবচেয়ে মহান হবে। অর্থাৎ তিনি হবেন, সর্বশক্তিমান( All-powerful) সর্বদ্রষ্টা ( Omniscience) সর্বাধিক মহান। এবং তিনি সকল পার্ফেকশনমূলক প্রোপার্টি যেমন ভালোবাসার সর্বোচ্চ ক্ষেত্রটি কি হতে পারে? সার্বজনীন ভালোবাসা? all love? সেক্ষেত্রে (MGB) হবেন All-loving. ক্ষমতার পূর্ণতা বা পার্ফেকশন কি হতে পারে? সর্বশক্তি All- power, সেক্ষেত্রে তিনি হলেন সর্বশক্তিমান All-powerful. জ্ঞানের পূর্ণতা বা পার্ফেকশন কি হতে পারে? All knowledge, সেক্ষেত্রে তিনি হলেন Omniscience. সর্বোত্তম মহান সত্তার গুণ হচ্ছে তিনি যাবতীয় সকল পার্ফেকশন নিজের মধ্যে ধারণ করেন সেক্ষেত্রে তার অস্তিত্ব ও হতে হবে পার্ফেক্ট বা পূর্ণ আর অস্তিত্ব ছাড়া পূর্ণতা হয়না।

Omnipotent paradox কি ( MGB) কে প্রশ্নবিদ্ধ করে? 

না, কোনোভাবেই না কেননা,omnipotent paradox একটি ছদ্ম-প্যারাডক্স। প্যারাডক্স হলো এমন বিষয়, যা কনক্লুসিভলি সত্য বা মিথ্যা প্রমাণ করা যায় না। A paradoxical statement is a logically counter-balanced proposition। এই দৃষ্টিতে তথাকথিত অমনিপটেন্ট প্যারাডক্স হলো আসলে একটা fallacy বা ভুল কথা, যা বাহ্যত সঠিক মনে হতে পারে।

ঈশ্বর এমন কোনো পাথর তৈরি করতে পারেন কিনা যা তিনি উত্তোলন করতে অক্ষম? এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি হ্যাঁ/না যা-ই বলেন না কেন, উভয়ক্ষেত্রেই তা ঈশ্বরের সর্বশক্তিমান হওয়ার দাবিকে খণ্ডন করে। এই হলো অমনিপটেন্ট প্যারাডক্সের মূলকথা।

এবার আসুন আমরা খানিকটা পরখ করে নেই, এই যুক্তি কি ভালো যুক্তি, নাকি কুযুক্তি।

নাস্তিকদের এই যুক্তি একটা কুযুক্তি। কেননা, তা strawman fallacy-র জাজ্জ্বল্যমান উদাহরণ। প্রতিপক্ষের খড়কুটা দিয়ে একটা মূর্তি বানিয়ে সেটাকে ঘুষি দিয়ে কুপোকাত করে কেউ যদি দাবি করে সে তার প্রতিপক্ষকে ডিফিট দিয়েছে তাহলে তা হবে স্ট্রম্যান ফ্যালাসির উদাহরণ। প্রতিপক্ষ কী বলতে চায়, তা কোনো বিকৃতি ছাড়াই বুঝতে হবে। এরপর প্রশ্ন আসবে আপনি সেটাকে মানবেন কিনা।

আস্তিকরা যখন বলে, ‘ঈশ্বর সর্বশক্তিমান’, তখন এ কথার দ্বারা তারা যুক্তিসংগত যে কোনো ক্ষমতার বিষয়ে ঈশ্বরকে পরম হিসাবে দাবি করে। অর্থাৎ যুক্তিসংগত যে কোনো ক্ষমতার ক্ষেত্রে ঈশ্বর সব ধরনের ক্ষমতার অধিকারী।

ঈশ্বরের ধারণাটাই এসেছে যুক্তির দাবি হিসাবে। আস্তিকদের দৃষ্টিতে, আমাদের অস্তিত্ব সংক্রান্ত মৌলিক প্রশ্নগুলোর একমাত্র যুক্তিসংগত উত্তর হলো ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও ক্রিয়াশীলতা। ঈশ্বর যুক্তি ও নিয়মের বাইরে কিছু করেন না। একই সাথে সব যুক্তি ও নিয়মের উৎসও তিনি। তাই ঈশ্বর যুক্তির অধীন কিনা, এই প্রশ্নও অবান্তর।

ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান হয়ে থাকেন তাহলে তিনি এমন ভারী ও ব্ড় পাথর তৈরি করতে পারেন কিনা, যা তিনি উত্তোলন করতে অক্ষম? – এই প্রশ্নটা একটা ভুল প্রশ্ন। এটি ক্যাটাগরি মিসটেক এবং একটা loaded question।

যেমন, চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত কাউকে প্রথমেই জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘তুমি কেন চুরি করেছ, বলো’। এই প্রশ্নের উত্তরে সে যা-ই বলুক না কেন, সে চোর সাব্যস্ত হবে। সে যদি চোর না হয়ে থাকে তাহলে এ ধরনের ভুল ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রশ্নের বিষয়ে তার একমাত্র লজিক্যাল রেসপন্স হবে, প্রশ্নটার ভুল ধরিয়ে দেয়া।

ঈশ্বর সর্বশক্তিমান কথাটাকে ধর্মের লোকেরা আক্ষরিকভাবে mean করে না। বরং তারা এই জগত সৃষ্টি ও পরিচালনার জন্য যে অসীম শক্তির দরকার, ঈশ্বরকে সেই অসীম ক্ষমতার আধার মনে করে।

সুতরাং সর্বাধিক মহান সত্তার ধারণাটি স্বজ্ঞাতভাবে অবশ্যই একটি সুসংগত ধারণা, এবং তাই এটি যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয় যে এই জাতীয় অস্তিত্ব থাকতে পারে। অনটোলজিকাল আর্গুমেন্টকে ব্যর্থ করার জন্য, একটি বিবাহিত ব্যাচেলরের ধারণার মতো সর্বাধিক মহান সত্তার ধারণাটি অসঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। কিন্তু সর্বাধিক মহান সত্তার ধারণাটি দূরবর্তীভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে হয় না। সুতরাং এটি সম্ভব যে সর্বাধিক মহান সত্তা বিদ্যমান।

পুনরালোচনা

আমরা আমাদের উপরোক্ত সুদীর্ঘ আলোচনা থেকে এই সিদ্ধান্তে এসেছি যে আমাদের premise 1 (true) সুতরাং premise, 2,3,4 অবশ্যই সত্যি এবং premise: 1,2,3,4 সত্যি হলে প্রেমিস (5) অবশ্যই অবশ্যই সত্যি (Must be true) সুতরাং স্রষ্টার অস্তিত্ব রয়েছে।

পুনরায় আমাদের যুক্তি অনুযায়ী,

premise. 1 এটা সম্ভব যে স্রষ্টা ( Maximality Great Being) বিদ্যমান।

premise. 2 যদি এটা সম্ভব হয় যে স্রষ্টা (MGB) বিদ্যমান। তাহলে স্রষ্টা কিছু সম্ভাব্য জগতে বিদ্যমান।

premise. 3 যদি কিছু সম্ভাব্য জগতে স্রষ্টা ( MGB) বিদ্যমান থাকেন তাহলে তিনি (MGB) সকল সম্ভাব্য জগতে বিদ্যমান।

premise. 4 যদি স্রষ্টা (MGB) সকল সম্ভাব্য জগতে বিদ্যমান থাকেন তাহলে তিনি (MGB) প্রকৃত জগতেও বিদ্যমান।

Premise: 5. যদি স্রষ্টা MGB) প্রকৃত জগতে বিদ্যমান থাকেন তাহলে অবশ্যই স্রষ্টা অস্তিত্বশীল।

premise: 6. সুতরাং স্রষ্টার অস্তিত্ব রয়েছে।

References

References
1 Malcolm, Norman, “Anselm’s Ontological Argument,” Philosophical Review, vol. 69, no. 1 (1960), 41-62
2 Cornman, James W.; Lehrer, Keith; Sotiros Pappas, George (1992). Philosophical problems and arguments: an introduction. Hackett Publishing. pp. 254
3 Abbruzzese, John Edward, 2007. “The Structure of Descartes’ Ontological Proof,” British Journal for the History of Philosophy, 15: 253–282.
4 Infants ‘have natural belief in God’. The Age National http://www.theage.com.au/national/infants-have-natural-belief-in-god-20080725-3l3b.html. Accessed 17 December 2014.
5 Keu Psychological Issues in the Study of Religion. Olivera Petrovich. psihologija, 2007, Vol. 40 (3), str. 351-363
6 Justin L. Barrett. Born Believers: The Science of Children’s Religious Belief. Free Press. 2012, pp. 35 – 36.
7 https://www.bu.edu/cdl/files/2013/08/2004_Kelemen_IntuitiveTheist.pdf
8 . Patrick Mcnamara Ph.D, Wesley J. Wildman (etd.), Science and the World’s Re-ligions; vol. 02 (persons and Groups), p.206,209 (Publisher ABC-CLIO, July 19,2012)
9 Plantinga, A. (1978). The nature of necessity. Clarendon press.

Asief Mehedi

Assalamualaikum to all.My name is Asief Mehedi . I am an informal philosophy student. Let's talk about comparative theology, we work to suppress atheism. Help us to suppress atheism and come forward to establish peace.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button