দাস প্রথা কি? দাস প্রথা ও ইসলাম

দাস প্রথা কি? দাস প্রথা ও ইসলাম

দাসত্ব বলতে বোঝায় কোনো মানুষকে জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা, এবং এক্ষেত্রে কোনো মানুষকে অন্য কোনো মানুষের অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। কাউকে তার ইচ্ছার পরিবর্তে দাস করা, কাউকে আটক করে, ক্রয় করে জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা ও যৌন ব্যাবসায় খাটানো। দাসত্ববিরোধি আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যান্টি-স্ল্যাভেরি ইন্টারন্যাশনাল দাসত্বের সংজ্ঞা দিতে দিয়ে একে ‘জোরপূর্বক শ্রম দেওয়া’ হিসেবে উল্লেখ করছে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে এখনো ২ কোটি ৭০ লক্ষ দাস রয়েছে। এই সংখ্যা ইতিহাসের যে-কোন সময়কার দাসের সংখ্যার তুলনায় বেশি। এমনকি প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাসে আফ্রিকা থেকে আমেরিকায় আনা আফ্রিকান দাসের মোট সংখ্যাও প্রায় এর অর্ধেক। আন্তজার্তিক শ্রম সংস্থা জোরপূর্বক শ্রম দেওয়াকে দাসত্ব হিসেবে ধরেনা। তাদের হিসাব অনুযায়ী এখনো বিশ্বের ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ জোরপূর্বক শ্রম, দাসত্ব ও দাসত্ব সংশ্লিষ্ট প্রথার সাথে যুক্ত আছে।এই দাসের বেশিরভগ ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় দাসে পরিণত হয়েছে। 

দাসপ্রথার অন্যতম আরকটি উৎস হচ্ছে মানুষ পরিবহন। মানুষ পরিবহর করা হয় মূলত নারী ও শিশুদের যৌন ব্যবসায় খাটানোর জন্য। এটি দাস বাণিজ্য হিসেবে পরিচিত। প্রাচিলকালে ও মধ্যযুগে মানুষ কেনা-বেচার প্রচলন ছিলো। বর্তমান বাজারে আমরা যেভাবে পণ্য ক্রয় করি তখন ঠিক তেমনিভাবে মানুষ কেনা-বেচা করা হতো। এমনকি দাস-দাসীদের জন্য আলাদা বাজার ছিল। দাস-দাসী আমদানি ও রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তো। কেননা, দাসদের দিয়ে যাবতীয় কাজ কর্ম করানো হতো এবং দাসীদের যৌন ব্যাবসায় খাটানো হতো। সেই সময় গুটি কয়েক দাস রাখা ছিলো সম্মানের ব্যাপার।    

এছাড়া রোম আর গ্রীসের দাসপ্রথা ছিলো আরে জঘন্যতম। তারা সব সময় যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো। এবং যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পর তারা পরাজিত পক্ষের নারী-পুরুষ সবাইকে দাস বানিয়ে পশুর মতো খাটাতো আর নারীদেরকে ভোগপণ্যের মতো ব্যাবহার করতো। রোমান সমাজে দাস-দাসীদের মাঠে করানো হতো এমতঅবস্থায় যে, তাদেরকে ভারী বেড়ি পরিয়া বন্দী করে রাখা হতো। যাতে দাস-দাসীরা পালিয়ে যেতে না পারে। তাদের খাবার দেওয়া হতো খুবই সামান্য। যে পরিমাণ খাবার দেওয়া হতো তাতে তাদের কোনরকম জীবনটুকু বাঁচিয়ে রাখা হতো। যাতে করে দাস-দাসীদের চতুষ্পদ জন্তুর মত অনুগত গোলাম হয়ে কাজ করতে পারে। দাস-দাসীদের অন্যায়ভাবে প্রহার করা হতো এবং এতে মনিবগণ আমোদ-ফূর্তি অনুভব করতো। দাস-দাসীদের দুর্গন্ধময় অন্ধকার সেলে ঘুমাতে দেওয়া হতো। তাদেরকে তরবারী ও বর্শা(বল্লম) দ্বারা প্রতিযোগিতার আসরে ঠেলে দেওয়া হত। এবং সেই প্রতিযোগিতায় মনিবগণ সমবেত হত তাদের নিজ নিজ দাসের তরবারি আক্রমন ও বর্শা নিক্ষেপ প্রতিযোগিতা উপভোগ করার জন্য। প্রতিযোগিতার স্থান শ্লোগানে শ্লোগানে কন্ঠস্বর প্রচণ্ড ধ্বনিতে পরিণীত হত। প্রতিযোগিরা যখন একে অপরের জীবন বিপন্ন করে দিত, তখন চারদিকে অট্রহাসি ছড়িতে পড়ত। তারপর তার নিষ্প্রাণ দেহকে যমীনে নিক্ষেপ করা হতো। দাস-দাসীদের সাথে এমন অমানবিক আচরণের পরেও গোলাম কতৃক অভিযোগ করার কোনো অধিকার ছিল না। রোমানিয় আইনে দাস-দাসীরা ছিলো জীব-জানোয়ারের চেয়েও অধম। দাস-দাসীদের ভয়ানক হিংস্র প্রাণীর সাথে বা মারাত্মক অরপারধীদের সাতেহ লড়াই করতে বাধ্য করা হতো। [1]Roman Gladiator

ইসলামে দাসপ্রথা

দাসপ্রথার প্রচলন ইসলাম থেকে আসেনি। আজ হতে প্রায় পৌনে ৪০০০ বছর আগেও ব্যাবলনিয় Code of Hummurai-তে দাসপ্রথার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ইসলামের প্রাথমিক যুগ বা ইসলাম পূর্ব যুগে দাস-দাসী রাখা অত্যন্ত স্বাভাবিক একটা ব্যাপার ছিলো। বলা যেতে পারে সেই সময়কার সভ্যতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলো দাসপ্রথা। সেই সময় অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিকভাবে দাস প্রথার প্রচলন ছিলো। ইসলামের আগমন হয়ছে এমন সময়ে, যখন পুরো পৃথিবীতে সকল রাষ্ট্রে দাসপ্রথা ছিলো স্বীকৃত এবং অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং সামাজিকভাবে প্রচলিত। ইসলাম প্রাচীনকালে যে-সকল প্রন্থায় দাস বানানো হতো তার সকল উৎস বন্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র একটি উপায়ে উন্মুক্ত রেখেছে, তা হলো শরিয়ত সম্মত যুদ্ধ বা জিহাদ। সেই সময়ে এবং বর্তমানে বহুল প্রচলিত ও প্রভাব বিস্তারকারী প্রথা যুদ্ধবন্দীদেরকে দাস-দাসী বানানো অথবা তাদেরকে হত্যা করা। ইসলামে দাসপ্রথা সংস্কার এতই মৌলিক ছিলো, যার পরিণতিতে দাসপ্রথা ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

আল্লাহ সুবহানাতায়ালা বলেন,

অতঃপর যখন তোমরা কাফিরদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের ঘাড়ে আঘাত হালো, অবশেষে যখন তাদেরকে পূর্ণরুপে পরাস্ত কর, তখন তাদেরকে শক্তভাবে বেঁধে ফেল। অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রন কর, না হয় তাদের থেকে মুক্তিপন গ্রহন কর। তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, যে পর্যন্ত না শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করে। এই নির্দেশই তোমাদেরকে দেয়া হল। [2]সূরা মোহাম্মদ; ৪৭ঃ৪

ইসলামে কোনো স্বাধীনব্যক্তিকে দাস বানানো হারাম। কেউ স্বাধীন ব্যক্তিতে দাস করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার বিরুদ্ধে হবে। আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছে,

আল্লাহ[তায়ালা] বলেনঃ আমি কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে হবো। ১. যে আমার নামে শপথ করে অতঃপর বিশবাসঘাতকতা করে। ২. যে কোন স্বাধীন ব্যক্তিকে (ক্রীতদাস হিসেবে) বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করে।৩. যে কোন মজুরকে নিযুক্ত করে তার থেকে পরিপূর্ণ কাজ গ্রহণ করে অথচ তার পারিশ্রমিক প্রদান করেনা। [3]সহিহ বুখারি; হাদিস নং- ২২২৭; ইংরেজি অনুবাদ, ভলি-৩, বুক ৩৪, নম্বর ৪৩০

দাস প্রথা বিলুপ্ত করতে ইসলামের ভূমিকা

ইসলাম পূর্ব যুগে দাসপ্রথা ছিলো অত্যন্ত স্বাভাবিক ও সম্মানের বিষয়। দাস-দাসীদের সাথে অমানবিক নির্যাতন করা ছিলো সেই সমাজের নিত্যদিনের চিত্র। দাসদের কোনো অধিকার ছিলো না। পশুর মতো ছন্নছাড়া জীবন-যাপন করতো দাস-দাসীরা। ঠিক এমনি এক সময়ে মানবতার মুক্তির দিশারি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এসেছেন আলোর বার্তা, আলোর দিশারি,  পবিত্র কুরাআন নিয়ে। সমাজ থেকে দাসপ্রথা উচ্ছেদের আহ্বান করেন। দাস-দাসীদের মুক্তির ব্যাবস্থা করেন এবং নতুন করে দাস বানানোর উপর নিষেজ্ঞা আরোপ করেন। সমাজে তাদের পূর্ণ সম্মান দিয়েছে, ব্যক্তি মর্যাদা দিয়েছে। দাসদেরও স্বাধীন মানুষের মতো অধিকার দিয়েছে। এভাবে ইসলাম দাসপ্রথা বিলুপ্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ইসলামে দাস মুক্তির বিধান 

ইসলাম ব্যতিত অন্য সকল ধর্ম ও মতবাদ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তারা দাস-দাসীর সাথে অমানবিক আচরণ করতো। কিন্তু ইসলাম দাস-দাসীদের দিয়েছে পূর্ণ সম্মান। দিয়েছে স্বাধীন ব্যক্তির মর্যাদা। সমাজে দাস-দাসীদের মুক্তির জন্য ইসলামে অনেক বিধান রেখেছে।

কুরআনের আলোকে

আল্লাহ সুবহানাতায়ালা বলেন, 

তোমাদের মালিকানাদীন দাস-দাসীদ্র মধ্যে কেউ তার মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি চাইলে, তাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হও, যদি তোমরা তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে বলে জানতে পার। আর আল্লাহ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছে তা থেকে তোমরা তাদেরকে দান করো। আর তোমাদের দাসীরা লজ্জা স্থানের পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলে দুনিয়ার জীবনের ধন-লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করোনা। আর যারা তাদেরকে বাধ্য করবে, নিশ্চয় তাদেরকে বাধ্য করার পর আল্লাহ তাদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। [4]সূরা নূর; ২৪ঃ৩৩

কোন মু’মিনকে হত্যা করা কোন মু’মিনের কাজ নয় তবে ভুলবশত হতে পারে, কেউ কোন মু’মিনকে ভুলক্রমে হত্যা করলে, একজন মু’মিন দাস মুক্ত করা বা তার পরিবারবর্গকে রক্তপণ দেয়া কর্তব্য, যদি না তারা ক্ষমা করে দেয়। [5]সূরা নিসা; ৪ঃ৯২

তবে সে বন্ধুর গিরিপথটি অতিক্রম করতে সচেষ্ট হয়নি। আর কিসে তোমাকে জানাবে, বন্ধুর গিরিপথটি কি?  তা হচ্ছে, দাস মুক্তকরণ। [6]সূরা আল-বালাদ; ৯০ঃ১১-১৩

আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অর্থহীন কসমের ব্যাপারে, কিন্তু যে কসম তোমরা দৃঢ়ভাবে কর সে কসমের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করেন। সুতরাং এর কাফফারা হল দশ জন মিসকীনকে খাবার দান করা, মধ্যম ধরনের খাবার, যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদের বস্ত্র দান, কিংবা একজন দাস-দাসী মুক্ত করা। অতঃপর যে সামর্থ্য রাখে না তবে তিন দিন সিয়াম পালন করা। [7]সূরা মায়েদা; ৫ঃ৮৯

সদাক্বাহ হল ফকীর, মিসকীন ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারী ও যাদের মন জয় করা উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাসমুক্তি ও ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে (ব্যয়ের জন্য) আর মুসাফিরের জন্য। এটা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ফরয। আর আল্লাহ হলেন সর্বজ্ঞ, মহাবিজ্ঞানী। [8]সূরা তাওবা; ৯ঃ৬০

হাদিসের আলোকে

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কেউ কোন মুসলিম ক্রীতদাস মুক্ত করলে আল্লাহ্‌ সেই ক্রীতদাসের প্রত্যেক অঙ্গের বিনিময়ে তার এক একটি অঙ্গ (জাহান্নামের) আগুন হতে মুক্ত করবেন। সাঈদ ইবনু মারজানা (রাঃ) বলেন, এ হাদীসটি আমি আলী ইবনু হুসাইনের খিদমতে পেশ করলাম। তখন ‘আলী ইবনু হুসাইন (রাঃ) তাঁর এক ক্রীতদাসের কাছে উঠে গেলেন যার বিনিময়ে ‘আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফার (রাঃ) তাকে দশ হাজার দিরহাম কিংবা এক হাজার দীনার দিতে চেয়েছিলেন এবং তিনি তাকে মুক্ত করে দিলেন। [9]সহিহ বুখারী; হাদিস নং- ২৫১৭

আসমা বিনতু আবূ বক্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্যগ্রহণের সময় ক্রীতদাস মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আলী (রহঃ) দরাওয়ারদী (রহঃ) সূত্রে হিশাম (রহঃ) হাদীস বর্ণনায় মূসা ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) -এর অনুসরন করেছেন। [10]সহীহ মুসলিম; হাদিস নং- ২৫১৯

আবদুল ওয়ারিস ইবনু আবদুস সামাদ (রহঃ) সুওয়াইদ ইবনু মুকাররিন (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, তার একজন দাসী ছিল। এক ব্যক্তি একদা তাকে এক চপোটাঘাত করল। তখন সুওয়াইদ (রাযিঃ) তাকে বললেন, তুমি কি জাননা যে, চেহারায় চপেটাঘাত করা নিষিদ্ধ? নিশ্চয়ই তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছ যে, আমরা সাত ভাই। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় আমাদের একজনের গোলাম ব্যতীত আর কারো গোলাম ছিল না। একদা আমাদের মধ্যকার জনৈক ব্যক্তি তাকে চপোটাঘাত করল। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন তাকে মুক্ত করে দেয়ার জন্য।[11]সহীহ মুসলিম; হাদিস নং- ৪১৯৬

মুইয়াবিন বিন সুওইয়াদ হতে বর্ণিত; আমি আমাদের এক ক্রীতদাসকে চপেটাঘার করি, অতঃপর পলায়ন করি। আমি ঠিক মধ্যাহ্নের আগে ফিরে এলাম এবং আমার পিতার পেছনে সালাত আদায় করলাম। তিনি তাকে (ঐ ক্রীতদাসকে) এবং আমাকে ডাকলেন এবং বললেন; সে তোমার প্রতি যা করেছে তুমিও তেমন করো। সে(ক্রীতদাস) আমাকে মাফ করে দিল। তখন তিনি (আমার পিতা) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর জীবদ্দশায় আমরা মুকাররিনের পরিবারভুক্ত ছিলাম এবং আমাদের একজন মাত্র ক্রীতদাসী ছিল। আমাদের একজন তাকে চড় মারলো, এই খবর রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর কাছে পৌঁছাল এবং তিনি বললেন; তাকে মুক্ত করে দাও। তারা (পরিবারের লোকজন) বললেন; সে ছাড়া আমাদের আর কোনো সাহায্যকারি নেই। কাজেই তিনি বললেন; তাহলে তাকে কাজে নিযুক্ত করো, আর যখনই তোমরা তাকে কাজ হতে অব্যাহতি দিতে সমর্থ হও তাকে মুক্ত করে দাও।[12] সুনানে আবু দাউন; হাদিস নং- ৫১৬৭ [13]https://sunnah.com/urn/240810

আবূ মাস’ঊদ আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, একদা আমার এক ক্রীতদাসকে প্রহার করছিলাম। এ সময় আমার পিছন হতে একটি শব্দ শুনতে পেলাম, হে আবূ মা’সঊদ! জেনে রাখো, আল্লাহ তোমার উপর এর চেয়ে বেশী ক্ষমতাবান যতটুকু তুমি তার উপর ক্ষমতাবান। আমি পিছন হতে তার এরূপ ডাক দু’বার শুনতে পেলাম। আমি পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! সে আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য স্বাধীন (আমি তাকে মুক্ত করে দিলাম)। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি যদি তাকে মুক্ত না করে দিতে তাহলে জাহান্নামের আগুন তোমাকে গ্রাস করতো। [14]সুনানে আবু দাঊদ; হাদিস নং-৫১৫৯

হিলাল ইবনু ইয়াসাফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, আমরা সুয়াইদ ইবনু মুক্বাররিন (রাঃ) এর বাড়ীতে থাকতাম। আমাদের সঙ্গে একজন মেজাজী বৃদ্ধ ছিলেন এবং তার সঙ্গে একটি দাসী ছিল। তিনি তার চেহারায় চড় মারলেন। এ কারণে, সুয়াইদ (রাঃ) এতোটা উত্তেজিত হয়েছিলেন যে, আমরা তাকে এমন উত্তেজিত হতে আর দেখিনি। তিনি বললেন, একে আযাদ করা ব্যতীত তোমার জন্য অন্য কোন পথ নেই। তুমি দেখছো যে, আমাদের মুক্বাররিনের সাতটি সন্তান। আমাদের মাত্র একজন খাদেম ছিল। আমাদের কনিষ্ঠজন তার মুখে চড় মেরেছিল বিধায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে তাকে আযাদ করার নির্দেশ দিলেন। [15]সুনানে আবু দাঊদ; হাদিস নং- ৫১৬৬

উসমান (রাঃ) এববার তার এক গোলামকে দেখলেন উষ্ট্রীকে খাদ্য দিচ্ছে। পশুর খাবারে তিনি অপছন্দনীয় বা ঘৃণিত কোনো বস্তু দেখতে পেয়ে গোলামকে কানমলা দিলেন। পরে তিনি অনুতপ্ত হয়ে গোলামকে বললেন; তুমি আমার কাছে থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করো। দাসটি অস্বীকার করলে ‘উসমান বার বার পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন’।  বাধ্য হয়ে গোলামটি উসমান (রাঃ) কান টানলেন। ‘উসমান (রাঃ) বললেন, আখিরাতের কিসাসের পূর্বে দুনিয়ার কিসাস আদায় হয়ে যাওয়া কতইনা চমৎকার’। [16]আমিরুল মুমিনিন উসমান ইবনু আফফান; পৃষ্ঠা নং- ৮২

ইসলামে দাস দাসীর অধিকার ও আচরণ

ইসলাম ব্যতিত অন্য সকল মতবাদ ও ধর্মে দাস-দাসীদের নির্মমভাবে নির্যাতন করা হতো। তাদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হতো। দাস-দাসীদের মানুষ হিসেবে গণ্য করা হতোনা। কিন্তু ইসলাম এমন এক ধর্ম যেখানে দাস-দাসীদের অন্য সকল স্বাধীন মানুষের মতো স্বাধীন করে দিয়েছে। এমনকি কাউকে ‘দাস-দাসী’ বলে ডাকাও নিষেধ করা হয়ছে। ইসলাম পূর্ব যুগে যেখানে দাস-দাসীদের মানুষ হিসেবে গণ্য করা হতোনা, সেখানে ইসলাম তাদেরকে সম্মান পাওয়ার অধিকার দিয়েছ। এমনভাবে তাদের সাথে আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছে যাতে, তারা অনুভব করে তারা তাদের পরিবার-পরিজনদের সাথেই আছে। দাস-দাসীদের সাথে সৎ আচরণ ও তাদের অধিকার সংক্রান্ত কিছু রেফারেন্স নিন্মে দেওয়া হলো।

কুরআনের আলোকে

তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, কিছুইকে তার শরীক করোনা এবং মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের আয়াত্তাধীন দাস-দাসীদের সঙ্গে সব্দ্যবহার কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ লোককে ভালোবাসেন না, যে অহংকারী, দাম্ভিক।[17]সূরা নিসা; ৪ঃ৩৬

আর তোমাদের মধ্যে কারো মুক্ত ইমানদার নারী বিয়ের সামর্থ্য না থাকলে তোমরা তোমাদের অধিকারভুক্ত ইমানদার দাসী বিয়ে করবে, আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। তোমরা একে অপরের সমান, কাজেই তোমরা তাদেরকে বিয়ে করবে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে এবং তাদেরকে মোহর দিয়ে দিবে ন্যায়সংগতভাবে।[18]সূরা নিসা; ৪ঃ২৫

হাদিসের আলোকে

আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কারো যদি একটি বাঁদী থাকে আর সে তাকে প্রতিপালন করে, তার সাথে ভাল আচরণ করে এবং তাকে মুক্তি দিয়ে বিয়ে করে, তাহলে সে দ্বিগুন সাওয়াব লাভ করবে। [19]সহিহ বুখারি, হাদিস নং- ২৫৪৪   

আবূ হুরাইয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন ‘আমার দাস ও আমার দাসী’ না বলে এবং অধীনস্থরাও যেন ‘আমার রব, আমার রাব্বাতী’ না বলে। বরং মনিব তার দাসকে বলবে, ফাতায়া ও ফাতাতী (আমার যুবক ও আমার যুবতী)। আর অধীনস্থ লোকেরাও বলবে, আমার সাইয়িদ আমার সাইয়িদাহ (আমার নেতা ও আমার নেত্রী)। কেননা তোমরা সবাই গোলাম। মহান আল্লাহই হলেন একমাত্র রব। [20]সুনানে আবু দাউদ; হাদিস নং- ৪৯৭৫

মারূর ইবনু সুওয়াইদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, একবার আমি আবূ যার গিফারী (রাঃ) -এর দেখা পেলাম। তার গায়ে তখন এক জোড়া কাপড় আর তার ক্রীতদাসের গায়েও (অনুরূপ) এক জোড়া কাপড় ছিল। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, একবার এক ব্যক্তিকে আমি গালি দিয়েছিলাম। সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, তুমি তার মার প্রতি কটাক্ষ করে তাকে লজ্জা দিলে? তারপর তিনি বললেন, তোমাদের গোলামরা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্ত করেছেন, কাজেই কারো ভাই যদি তার অধীনে থাকে তবে সে যা খায়, তা হতে যেন তাকে খেতে দেয় এবং সে যা পরিধান করে, তা হতে যেন পরিধান করায় এবং তাদের সাধ্যাতীত কোন কাজে বাধ্য না করে। তোমরা যদি তাদের শক্তির ঊর্ধ্বে কোন কাজ তাদের দাও তবে তাদের সহযোগিতা কর। [21]সহীহ বুখারী; হাদিস নং- ২৫৪৫

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের দাস-দাসীর মধ্যে যারা তোমাদেরকে খুশি করে তাদেরকে তোমরা যা খাও তা-ই খেতে দাও এবং তোমরা যা পরিধান করো তাই পরতে দাও। আর যেসব দাস তোমাদের খুশি করে না তাদেরকে বিক্রি করো। তোমরা আল্লাহর সৃষ্টিজীবকে শাস্তি দিও না। [22]সুনানে আবু দাউন; হাদিস নং- ৫১৬১

আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত; নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “তোমাদের কেউ যেন [এভাবে সম্বোধন কিরে] না বলে, ‘তোমার প্রভুকে খাওয়াও’, ‘তোমার প্রভুকে অযু করাও’, ‘তোমার প্রভুকে পান করাও’, বরং বলবে, ‘আমার মুনিব (সাইয়্যিদ)’ বা ‘আমার অভিভাবক (মাওলা)’। আর তোমাদের কেউ যেন না বলে ‘আমার দাস/বান্দা (আবদ)’ বা ‘আমার দাসী/বান্দী (আমাত)’; বরং বলবে ‘আমার বালিকা (ফাতাত)’ এবং ‘আমর বালক (গুলাম)’। [23]সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ২৫৫২ ইংরেজি অনুবাদ; ভলি ৩; বুক ৪৬

সামুরাহ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন; যদি কেউ তার ক্রীতদাসকে হত্যা করে আমরা তাঁকে হত্যা করবো, আর কেউ যদি তার ক্রীতদাসের নাক কেটে দেয়, আমরাও তার নাক কেটে দেবো। [24]সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৫১৫ ইংরেজি অনুবাদ, বুক-৩৯

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, তাওবার নবী আবূল ক্বাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার নির্দোষ গোলামের উপর মিথ্যা অপবাদ দিবে, ক্বিয়ামাতের দিন তাকে বেত্রাঘাত করা হবে। [25]সুনান আবু দাউদ; হাদিস নং- ৫১৬৫

আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত; আমি আবুল ক্বসিম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছি, কেউ যদি তার ক্রীতদাসকে অপবাদ দেয় আর সেই ক্রীতদাস যদি সে যা বলছে তা হতে মুক্ত হয়, তবে তাকে (অপবাদ আরোপকারিকে) কিয়ামতের দিনে বেত্রাঘাত করা হতে থাকবে যতক্ষণ না সেই ক্রীতদাস তাই হয় যা সে বর্ণনা করেছে। [26]সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯৪৩, ইংরেজি অনুবাদ: ভলি ৮, বুক ৮২, নম্বর ৮৪১

আবু মুসা (রাঃ) হতে বর্ণিত; রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইই ওয়া সাল্লাম বলেন, যার একটি ক্রীতদাসি আছে আর এ তাকে শিক্ষাদীক্ষা দান করে, তার সাথে সদয় ব্যাবহার করে, অতঃপর তাকে মুক্ত করে বিবাহ করে সে দ্বিগুণ সওয়াব পাবে। [27]সহিহ বুখারি; হাদিস নং- ২৫৮৪; ইংরেজি অনুবাদ, ভলি-৩

কোন মুনিব তার ক্রীতদাসির সাথে আলোচনা না করে তাকে কারো সাথে বিবাহ দিতে পারবে না। [28]বুখারি, হাদিস নম্বর ৭০৫৬; ইংরেজি অনুবাদ: ভলি ৯, বুক ৮৬, নম্বর ১০০; http://sunnah.com/urn/65560

ইসলামে দাস দাসীর বিধান

ইসলাম মনিবের জন্য বৈধ করে দিয়েছে যে,কারো নিকট যুদ্ধ বন্দীদের থেকে কিছু সংখ্যক দাসী থাকতে পারবে এবং সে এককভাবে তাদেরকে উপভোগ করতে পারবে; আর ইচ্ছা করলে সে কখনও কখনও তাদের মধ্য থেকে কাউকে বিয়ে করতে পারবে; আর আল-কুরআনুল কারীম এই ধরনের ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন;

যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংরক্ষণ করে নিজেদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসী ব্যতীত, কারণ এ ক্ষেত্রে তারা নিন্দা থেকে মুক্ত। [29]সূরা আল-মুমিনুন, ২৩ঃ৫ / সূরা আল-মুমিনুন, ২৩ঃ৬

নাস্তিকরা হরহামেশাই প্রচার করে, যুদ্ধের ময়দানেই যে কোন যুদ্ধবন্দিনীর সাথে যে কোন মুসলিম যোদ্ধা ইচ্ছেমতো দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। কিন্তু এটি একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। একজন মুসলিমের জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধবন্দীদের মধ্য থেকে কোনো বন্দীনী’র সাথে তার মনোবাঞ্ছা পুরণ করা বৈধ হবে না, যতক্ষণ না বিচারক কর্তৃক তাদের বান্দী বা দাসী হওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। মুসলিম ব্যক্তির জন্য (কোনো বন্দীনী’র সাথে) তার মনোবাঞ্ছা পুরণ করা বৈধ হবে না, তবে বৈধভাবে তার মালিক হওয়ার পর তার জন্য তা বৈধ হবে।

যুদ্ধবন্দীনীকে দাসী বানানোর পর দুই অবস্থায় ছাড়া সে কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ মালিকানায় আসবে না। প্রথমত, মহিলাটি তার গণিমতের অংশ হওয়া। দ্বিতীয়ত, অন্যের নিকট থেকে তাকে ক্রয় করা, যখন সে তার মালিকানাভুক্ত হয়।কেউ তার মালিকানাভুক্ত হওয়ার পর পরই তার জন্য তাকে স্পর্শ করা বৈধ হবে না। গর্ভের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সে কমপক্ষে এক ‘হায়েয’ তথা একটি মাসিকের মাধ্যমে তার গর্ভাশয় পবিত্র করে নেয়ার পর তাকে স্পর্শ করতে পারবে। অতঃপর সে ইচ্ছা করলে তার নিকট গমন করতে পারবে, যেমনিভাবে সে তার স্ত্রীর নিকট গমন করে।

গর্ভবতী যুদ্ধবন্দিনীর সাথে মিলিত হওয়া যাবে না,

উম্মু হাবীবা বিনতু ইরবায সারিয়া ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত; তাকে তার বাবা ইরবায জানিয়ছে যে, গর্ভবতী যুদ্ধবন্দিদের সাথে সন্তান প্রসব হওয়ার আগ পর্যন্ত সহবাস করতে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বারণ করছেন।[30]জামে;-আত তিরমিজি, হাদিস নং ১৫৬৪

উম্মু হাবীবা বিনতু ইরবায ইবনু সারিয়া (রহঃ) হতে তার বাবা থেকে বর্ণিত; খাইবার যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) নিম্নের পশুগুলো খাওয়া অবৈধ ঘোষণা করছেনঃ শিকারি দাঁতওয়ালা হিংস্র পশু, নখর ও থাবাযুক্ত হিংস্র পাখি, গৃহপালিত গাধা, মুজাসসামা এবং খালীসা। তিনি ( সদ্য হস্তগত ) গর্ভবতী বাদীর সাথে সন্তান প্রসব না করা পর্যন্ত সহবাস করতেও বারণ করছেন।[31]জামে;-আত তিরমিজি; হাদিস নং ১৮৭৪

আমর ইবন আওন …… আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কোন গর্ভবতী বন্দিনীর সাথে তার সন্তান প্রসবের আগে এবং কোন রমনীর সাথে তার হায়েয হতে পবিত্র হওয়ার পূর্বে সহবাস করবে না।[32]সুনানু আবি দাউদ, ইফা, ৩/১৬১, হা- ২১৫৪

আমর বিন সুহাই’ব তার পিতার বরাতে তার দাদা হতে বর্ণনা করেন যে; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,যখন তোমাদের কেউ তার ক্রীতদাসের সাথে তার ক্রীতদাসির বিবাহ দেয়, তার (ক্রীতদাসির) গোপনাঙ্গের দিকে তাকানো তার (মুনিবের) জন্য উচিত নয়।[33]সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ৪১১৩

রুওয়াইফি ইবনে সাবিত আল আনসারি হতে বর্ণিত; আমি কি তোমাদেরকে বলবো না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হুনাইনের দিনে যা বলতে শুনেছি: “আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় অন্যের ফসলে পানি দেওয়া (অর্থাৎ কোন গর্ভবতী নারীর সাথে সঙ্গম করা)। এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় কোন যুদ্ধবন্দিনী নারীর সাথে সঙ্গম করা যতক্ষণ না এটা প্রতিষ্ঠিত হয় যে সে গর্ভবতী নয়। এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় বণ্টন হবার আগে গণিমতের কোন মাল বিক্রয় করা।”  [34]সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৫৮        

যুদ্ধক্ষেত্রে স্বামীসহ ধৃত যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন নিষিদ্ধ                              

বন্দি হবার পর সাধা রণভাবে বিবাহিত যুদ্ধবন্দিনীর পূর্বেকার বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হিসেবে গণ্য করা হয়, ফলে তাদেরকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণ করা তথা তাদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করা বৈধ বিবেচিত হয়।যদি যুদ্ধক্ষেত্রে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়েই একসাথে অথবা একজনকে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিধির বাইরে নিয়ে যাবার আগেই অন্যজন যুদ্ধবন্দি/বন্দিনী হিসেবে ধৃত হয়, সেক্ষেত্রে তাদের বিবাহ-বন্ধন অক্ষুন্ন থাকবে, ফলে উক্ত যুদ্ধবন্দিনীর সাথে স্বামী ভিন্ন অন্য কারো দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন অবৈধ হবে। যদি শুধুমাত্র একজন যুদ্ধক্ষেত্রে ধৃত হয়ে ইসলামী সীমানায় পৌঁছে যায়, সেক্ষেত্রে তাদের বিবাহ বন্ধন বিচ্ছিন্ন হিসেবে গণ্য হবে।দুই ক্রীতদাসী বোনের সাথে একত্রে মিলিত হওয়া যাবে না। [35]মুয়াত্তা মালিক, ইফা, ২/১৪৪-৪৫, রেওয়ায়েত-৩৪-৩৫ উমার (রা.) এর মতে, মা এবং কন্যার সাথেও একই সময়ে মিলিত হওয়া যাবে না। [36]রেওয়ায়েত-৩৩

দাসী শুধু মাত্রই তার মালিকের জন্য। 

আব্দুর রহমান ইবনু হুনাইন নামে জনৈক ব্যাক্তি তার স্ত্রীর দাসীর সঙ্গে সঙ্গম করে। বিষয়টি কুফার গভর্ণর নু;মান ইবনু বাশীর (রাঃ) এর নিকট পেশ করা হলে তিনি বলেন, আমি অবশ্যই তোমার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ফায়সালার মতই ফয়সালা করবো। তোমার স্ত্রী যদি এ বাদীকে তোমার জন্য বৈধ করে দিয়ে থাকে, তবে আমি তোমাকে একশো বেত্রাঘাত করবো, আর যদি তোমার জন্য বৈধ না করে থাকে তাহলে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করবো। পরে তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, তার স্ত্রী বাঁদিকে তার জন্য বৈধ করে দিয়েছে। কাজেই তিনি তাকে একশো বেত্রাঘাত করেন। কাতাদাহ (রহ:) বলেন, আমি হাবীব ইবনু সালিমের নিকট চিঠি লিখলে তিনি ঐ হাদীসটি লিখে পাঠান। [37]সুনানে আবু দাউদ; হাদিস নং- ৪৪৫৮ 

কৃতদাসীর বিয়ে দিলে সে মালিকের জন্য হারাম হয়ে যাবে। 

আমর ইবনু শু’ আইব (রহ:) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা সূত্র থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ;আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ নিজ কৃতদাসীকে নিজ কৃতদাসে সাথে বিয়ে দিলে সে যেন তার গুপ্ত অঙ্গের দিকে না তাকায়। 

দাসীদের দৈহাহিক সম্পর্ক। 

ইসলাম কোনো মহিলাকে যদি স্বামীর পূর্বেই দারুল ইসলামে বন্দি করে নিয়ে আসা হয় তবে স্বামী যদি দারুল হারাবে থেকে যায় তাহলে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছেদ ঘটবে। আর স্বামী এবং স্ত্রীকে একত্রে বন্দি করা হয় (তবে স্বামীর পূর্বে স্ত্রীকে দারুল ইসলামে আনা যাবে না), তাবে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক অটুট থাকবে। যেমনটি ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) বর্ণনা করেছেন তার আস-সিয়ারুস সাগির কিতাবে। ইমাম সারাখসিও এমনটি বলেন। (এই অংশটি ইসলাম হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে।)      

ইসলাম কেন অন্যান্য সামাজিক ব্যাধির মতো এই দাস প্রথাকে চিরবিলুপ্ত করে দেয়নি? 

ইসলামের আগমন এমন সময় হয়েছে যখন দাসপ্রথার দৃষ্টিভঙ্গী বর্তমান সময়ের মতো ছিলো না। দাসপ্রথার উপর তখন অর্থনীতি অনেককাংশেই নির্ভর করতো। তাই হুট করেই ইসলাম দাসপ্রথাকে নিষিদ্ধ করতে পারেনি। কিন্তু দাসপ্রথার উৎস সমূহের সমস্থ পথ বন্ধ করে দিয়েছে। কেবল মাত্র শরিয়ত সম্মত জিহাদে যুদ্ধবন্দীনিদের বন্দী করার বিধান দেওয়া আছে। কেননা, ইসলামে জিহাদ যেহেতু চলমান প্রক্রিয়া, তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে যুদ্ধবন্দীদের দাসপ্রথা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত ঘোষণা করেনি, যাতে কাফিরদের মোকাবেলায় যুদ্ধনীতি বা রাজনৈতিক নীতিতে ইসলামে কোনো স্থবিরতা না থাকে।

এছাড়া ইসলামের আগমনের সময় দাসপ্রথা অত্যন্ত স্বাভাবিক একটা ব্যাপার ছিলো। তখন প্রায় মানুষের দাস ছিলো বা তার নিজেদের দৈনিন্দন কাজের জন্য দাস-দাসী রাখা হতো। এই দাসদের মধ্যে অনেকেই জানতোনা তাদের আসল ঠিকানা কোথায়, কোথায় থেকে এসেছে। কেননা তখন কেনা-বেচার মাধ্যমে একজন স্বাধীন মানুষকে দাস বানানো হতো। দাস-দাসীদের ছিলোনা কোনো বাসস্থান, তাদের বরণ-পোষণ সব কিছুরই দায়িত্ব ছিলো মনিবের। এমতঅবস্থায় দাসপ্রথা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হলে এসব দাস-দাসীদের ভরণ-পোষণ, বাসস্থানের নিশ্চয়তা থাকতো না। সুতরাং নানাবিধ সমস্যার কারণে ইসলাম দাসপ্রথাকে চিরতর বন্ধ করে দেয়নি। তবে দাস-দাসী আসার উৎসগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। অর্থাৎ, ইসলাম দাসপ্রথাকে এমনভাবে সংস্কার করেছে যার ফলে দাসপ্রথা চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে ইসলাম থেকে।  

ইসলাম সম্পর্কে নাস্তিকদের অন্যান্য অভিযোগের উত্তর সমূহজানতে আমাদের সাইটের (Home-Faith and Theology – Faith and Theology (faith-and-theology.com)) লেখাগুলো পড়তে পারেন।

References

References
1 Roman Gladiator
2 সূরা মোহাম্মদ; ৪৭ঃ৪
3 সহিহ বুখারি; হাদিস নং- ২২২৭; ইংরেজি অনুবাদ, ভলি-৩, বুক ৩৪, নম্বর ৪৩০
4 সূরা নূর; ২৪ঃ৩৩
5 সূরা নিসা; ৪ঃ৯২
6 সূরা আল-বালাদ; ৯০ঃ১১-১৩
7 সূরা মায়েদা; ৫ঃ৮৯
8 সূরা তাওবা; ৯ঃ৬০
9 সহিহ বুখারী; হাদিস নং- ২৫১৭
10 সহীহ মুসলিম; হাদিস নং- ২৫১৯
11 সহীহ মুসলিম; হাদিস নং- ৪১৯৬
12 সুনানে আবু দাউন; হাদিস নং- ৫১৬৭
13 https://sunnah.com/urn/240810
14 সুনানে আবু দাঊদ; হাদিস নং-৫১৫৯
15 সুনানে আবু দাঊদ; হাদিস নং- ৫১৬৬
16 আমিরুল মুমিনিন উসমান ইবনু আফফান; পৃষ্ঠা নং- ৮২
17 সূরা নিসা; ৪ঃ৩৬
18 সূরা নিসা; ৪ঃ২৫
19 সহিহ বুখারি, হাদিস নং- ২৫৪৪
20 সুনানে আবু দাউদ; হাদিস নং- ৪৯৭৫
21 সহীহ বুখারী; হাদিস নং- ২৫৪৫
22 সুনানে আবু দাউন; হাদিস নং- ৫১৬১
23 সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ২৫৫২ ইংরেজি অনুবাদ; ভলি ৩; বুক ৪৬
24 সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৫১৫ ইংরেজি অনুবাদ, বুক-৩৯
25 সুনান আবু দাউদ; হাদিস নং- ৫১৬৫
26 সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৯৪৩, ইংরেজি অনুবাদ: ভলি ৮, বুক ৮২, নম্বর ৮৪১
27 সহিহ বুখারি; হাদিস নং- ২৫৮৪; ইংরেজি অনুবাদ, ভলি-৩
28 বুখারি, হাদিস নম্বর ৭০৫৬; ইংরেজি অনুবাদ: ভলি ৯, বুক ৮৬, নম্বর ১০০; http://sunnah.com/urn/65560
29 সূরা আল-মুমিনুন, ২৩ঃ৫ / সূরা আল-মুমিনুন, ২৩ঃ৬
30 জামে;-আত তিরমিজি, হাদিস নং ১৫৬৪
31 জামে;-আত তিরমিজি; হাদিস নং ১৮৭৪
32 সুনানু আবি দাউদ, ইফা, ৩/১৬১, হা- ২১৫৪
33 সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ৪১১৩
34 সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৫৮
35 মুয়াত্তা মালিক, ইফা, ২/১৪৪-৪৫, রেওয়ায়েত-৩৪-৩৫
36 রেওয়ায়েত-৩৩
37 সুনানে আবু দাউদ; হাদিস নং- ৪৪৫৮

Sazzatul Mowla Shanto

As-salamu alaykum. I'm Sazzatul mowla Shanto. Try to learn and write about theology and philosophy.

2 Comments

  1. “কেননা, ইসলামে জিহাদ যেহেতু চলমান প্রক্রিয়া, তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে যুদ্ধবন্দীদের দাসপ্রথা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত ঘোষণা করেনি, যাতে কাফিরদের মোকাবেলায় যুদ্ধনীতি বা রাজনৈতিক নীতিতে ইসলামে কোনো স্থবিরতা না থাকে।”
    এই কথার মাধ্যমে তো এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে ইসলামে দাসপ্রথা এখনো আছে। আবার একটু পরেই বলছেন “ইসলাম দাসপ্রথাকে এমনভাবে সংস্কার করেছে যার ফলে দাসপ্রথা চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে ইসলাম থেকে। “। কি সব আজগুবি কথাবার্তা!!

    1. সাধারণ মানুষকে দাস বানানো হয় কিভাবে? হাঁটে বাজারে ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে, অপহরণ করার মাধ্যমে। এই কারণগুলো তো ইসলাম বন্ধ করে দিয়েছে। তাহলে দাস আসবে আর কিভাবে? ইসলাম যে পথটা খোলা রেখেছে সেটা হলো যুদ্ধের মাধ্যমে আসা যুদ্ধবন্দিনি। একটা দেশের সাথে আরেকটা দেশের যুদ্ধ হলে সেখানে এক পক্ষ অপর পক্ষের লোকদের বন্দি করবে এটাই তো স্বাভাবিক! আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যুদ্ধের ময়দানে শত্রু পক্ষের লোকদের আদর আপ্যায়ন করে ছেড়ে দিতে? এটাতো আকল বিরোধী চিন্তাভাবনা। যদি যুদ্ধ হয় তো দাস আসাটা খুবই স্বাভাবিক। এবং এটা পৃথীবিতে এখনো হয়ে আসছে। যেমন, প্রথম, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ, বর্তমানে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন যুদ্ধ, রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে তাকালেই সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন। তাই ইসলাম যদি যুদ্ধের মধ্যে শত্রুপক্ষকে বন্দি করা নিষেধ করতো ফলাফল কি হতো? মুসলিমদের সবাই বন্দি করে দাস বানাবে আর মুসলিম হাত গুটিয়ে বসে থাকেব?! এটা কি কোনো বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত হতো?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button