প্রবলেম অব ইভল ! মন্দ সমস্যার সমাধান

প্রবলেম অব ইভল ! মন্দ সমস্যার সমাধান

পৃথিবীতে মানুষ অনেক কারণেই নাস্তিক্যবাদকে গ্রহণ করে থাকে যার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো প্রবলেম অব ইভল বা মন্দ সমস্যা। এই বিষয়ে প্রশ্ন হলো যে, মহাশক্তিধর ও দয়াময় আল্লাহ বা স্রষ্টা যদি থেকেই থাকে তাহলে পৃথিবীতে এতো দুঃখ-দুর্দশা কেন?  

স্রষ্টার ধারণা 

মেটাফিজিক্যালি স্রষ্টা বলতে বুঝানো হয়, স্রষ্টা এমন এক সত্তা যা প্রথম কারণ বা কারণহীন কারণ, অনিবার্য অস্তিত্ব, পরম সত্তা, চূড়ান্ত বাস্তবতা, ইত্যাদি। অন্যদিকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষ করে ইসলামী বিশ্বাস মতে আল্লাহ বা স্রষ্টা হচ্ছে একক সত্তা যাকে কেউ সৃষ্টি করেনি, স্ব-নির্ভর, চিরন্তন, স্বয়ংসম্পূর্ণ, অনিবার্য অস্তিত্ব(ওয়াজিবুল উজুদ)। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার যে স্রষ্টাকে অবশ্যই এমন হতে যে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান, সবচেয়ে দয়ালু। 

এরকম একজন সত্তা যদি থেকে থাকে তাহলে তিনি তো আমাদের দুঃখ-কষ্ট সম্পর্কে জানেন। তিনি তো  দুঃখ-দুর্দশা, অন্যায়-অরাজকতা,কষ্ট-যাতনা গুলো দূর করে দেওয়ার কথা। কিন্তু পৃথিবীতে আমাদের দুঃখ-দুর্দশা, অন্যায়-অরাজকতা,কষ্ট-যাতনার অন্ত নেই। কিন্তু আপনি কখনো এমনটা ভেবেছেন কি, একজন মহাশক্তিধর, দয়াময় আল্লাহ থাকার পরেও পৃথিবীতে কেন এতো দুঃখ-দুর্দশা, অন্যায়-অরাজকতা?  পৃথিবীতে সবকিছুই তো আল্লাহর ইচ্ছাতে হয়। সর্বশক্তিমান, দয়াময় আল্লাহ চাইলে তো আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া সকল অন্যায়-অত্যাচার এক নিমিষেই শেষ করে দিতে পারেন! আমাদের চিন্তা হয়তো এতটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু নাস্তিকরা পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া এসব দুঃখ-দুর্দশা, অন্যায়-অরাজকতাকে কেন্দ্র করে আল্লাহর অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে বসে! 

তাদের যুক্তির সংক্ষিপ্ত রুপ 

  • যদি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকে, তাহলে সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ এবং নৈতিকভাবে নিখুঁত।
  • সৃষ্টিকর্তা যদি সর্বশক্তিমান হন, তবে সৃষ্টিকর্তার সমস্ত মন্দ দূর করার ক্ষমতা রয়েছে।
  • সৃষ্টিকর্তা যদি সর্বজ্ঞ হন, তাহলে সৃষ্টিকর্তা জানেন কখন মন্দ থাকে।
  • সৃষ্টিকর্তা যদি নৈতিকভাবে নিখুঁত হন, তবে সৃষ্টিকর্তার সমস্ত মন্দ দূর করার ইচ্ছা আছে।
  • কিন্তু মন্দ বিদ্যমান।
  • যদি মন্দ বিদ্যমান থাকে এবং সৃষ্টিকর্তা অস্তিত্ব থাকে, তাহলে হয় সৃষ্টিকর্তার  সমস্ত মন্দ দূর করার ক্ষমতা নেই, বা কখন মন্দ আছে তা জানেন না, বা সমস্ত মন্দকে দূর করার ইচ্ছা নেই।  
  • অতএব, সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নেই।

সাবেক নাস্তিক দার্শনিক এনটনি ফ্লিউ, জিম আল খলিলি, স্টিফেন ফ্রাই, মাইকেল রুজ, বার্ট ডি.আরমেন সহ প্রায় সকল নাস্তিকের ঘাঁটিতে এই “প্রবলেম অব ইভল ” যুক্তির স্থান সবার উপরে।     

নাস্তিকদের মতে, সব কিছু যদি আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়ে থাকে, পৃথিবীতে এতো এতো অন্যায়-অরাজকতা চলছে, দুঃখ-দুর্দশা এগুলোও আল্লাহর ইচ্ছাতেই হচ্ছে। সবচেয়ে দয়ালু, সবচেয়ে শক্তিধর একজন সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় কিভাবে এতো দুঃখ-দুর্দশা,অন্যায়-অরাজকতা ঘটতে পারে? সুতরাং সৃষ্টিকর্তা হয় মহাশক্তিধর নয় কিংবা দয়াময় নয়। অথবা কোনোটির একটিও নয়। কেননা, তিনি যদি মহাশক্তিধর হতেন তাহলে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া অন্যায় – অরাজকতা প্রতিহত করতেন। তিনি যদি দয়ালু হতেন তাহলে আমাদের সব দুঃখ-দুর্দশা এক নিমিষেই দূর করে দিতেন। কিন্তু পৃথিবীতে নানা রকম অন্যায় অরাজকতা চলেই যাচ্ছে। ডেফিনিশন অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন, সর্বশক্তিমান, সবচেয়ে দয়ালু। কিন্তু প্রভলেম অব ইভল যুক্তিতে নাস্তিকরা দেখানোর চেষ্টা করে  সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান হতে পারেনা, সবচেয়ে দয়ালুও হতে পারেনা। সুতরাং, হয় সৃষ্টিকর্তার যে বৈশিষ্ঠের কথা আমরা বলে থাকি তা ভুল কিংবা সৃষ্টিকর্তা বলতে আসলে কিছু নেই। আসুন তবে নাস্তিকদের এই যুক্তিগুলো খোলাসা করি।

মন্দ সমস্যার সমাধান

এই লিখাতে আমরা দুটি উপায়ে প্রমাণ করবো যে কেন মন্দ সমস্যা যুক্তিটি সঠিক নয়। যুক্তি দুটি হলো ১. মানুষের জ্ঞানতাত্ত্বিক সীমাবদ্ধতা ২. ইসলামি জ্ঞাণভান্ডার 

মানুষের জ্ঞানতাত্ত্বিক সীমাবদ্ধতা

ভালো মন্দ জাস্টিফাই করার যে ক্ষমতা আমাদের রয়েছে সেই ক্ষমতা কি এভসলিউট? না। কিন্ত কেন? কারণ মানুষের নানারকম সীমাবদ্ধতা রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম একটি হলো জ্ঞানতাত্ত্বিক সীমাবদ্ধতা। মানুষ হচ্ছে সসীম সত্তা। জ্ঞানের পাশাপাশি কোনো কিছুতেই মানুষ অসীম ক্ষমতার অধিকারি নয়। আমরা যখন কোনো বিষয়কে পর্যবেক্ষণ করি, বিচার বিশ্লেষণ করি তা আমাদের সীমিত জ্ঞান দিয়েই করি। মানুষ কখনোই দাবি করতে পারেনা যে তার কাছে অসীম জ্ঞান রয়েছে। এটা যৌক্তিকভাবেও সম্ভব না যে একজন মানুষের কাছে অসীম জ্ঞান রয়েছে। সুতরাং আমাদের যে জ্ঞানতাত্ত্বিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে এই বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। 

অন্যদিকে সৃষ্টিকর্তা বলতে বুঝানো হয় এমন এক সত্তাকে যিনি সর্বশ্রেষ্ট, সবচেয়ে জ্ঞানী,পরম সত্তা ইত্যাদি। যেহেতু স্রষ্টার জ্ঞানতাত্ত্বিক কোনো সীমাবদ্ধতা নেই সেহেতু স্রষ্টা যখন কোনো ঘটনা ঘটার পারমিশন দিয়ে থাকে সেখানে কোনো হিকমা বা কল্যাণ লুকিয়ে আছে কিনা তা সসীম মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। সৃষ্টিকর্তা যেহেতু সবচেয়ে জ্ঞানি এবং বিজ্ঞ আর আমরা যেহেতু সীমিত সত্তা, কাজেই আমারা সীমিত সত্তার মানুষ হিসেবে তার ঐশী প্রজ্ঞার সবকিছু বুঝে উঠতে পারিনা। ফলে আমরা যেটাকে দুঃখ-দুদর্শা বলি সেটা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীতে দুঃখ দুদর্শা। কিন্তু সেটার পিছিনে কোনো প্রজ্ঞা লুকায়িত থাকলে তা আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতার  কারণে বুঝে উঠতে পারিনা।  

এতএব, কেউ যদি দুঃখ-দুদর্শা অন্যায়-অরাজকতাকে দায়ী করে সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করে তবে, সেটা হবে নিজের সসীম প্রকৃতিকে অসীম সত্তার সাথে তুলনা করা। যেটাকে বলে ক্যাটাগরি মিস্টেক ফ্যালাসি। আমরা যখন সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে কোনো কিছু বলি তা আমাদের র‍্যাশনাল আন্ডারস্টেন্ডিং, আমাদের চিন্তার সীমাবদ্ধতা,জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা দিয়েই বলি।  আল্লাহ যেহেতু সত্তাগত দিক থেকে ফিজিক্যাল ওয়ার্ল্ডের চাইতে ভিন্ন তাই আমাদের মানুষের জন্য ন্যায়-অন্যায় বিচার করতে যে ধরনে যুক্তি-বুদ্ধি প্রযোয্য সেগুলো আল্লাহর জন্যও প্রযোয্য হবেনা। এই কারণে আল্লাহ কেন খারাপ কাজ ঘটতে দিচ্ছেন, কেন সেগুলো থামিয়ে দিচ্ছেনা এই প্রশ্নগুলো ক্যাটাগরি মিস্টেক ফ্যালাসি।  যারা অসীম সত্তাকে সমীম সত্তার সাথে মিলিয়ে ফেলে তারা এক ধরণের কগনেটিভ বায়াসে আক্রান্ত। যাকে বলে ইগোসেন্ট্রিজম।

এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত উদাহারণ দেওয়া রয়েছে “ইসলামি জ্ঞাণভান্ডার” অংশে।  

ইসলামি জ্ঞাণভান্ডার

নাস্তিকরা প্রভলেম অব ইভল আর্গুমেন্টের ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তাকে কেবল দুটি বিশেষত্বের ঘোরাটেপে চিন্তা করে। যেমন, সর্বশক্তিমান এবং সচেয়ে দয়ালু। যা সৃষ্টিকর্তার প্রকৃতিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে। কিন্তু ইসলামী বিশ্বাস মতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তালা শুধু মাত্র আল-কাদীর (মহাশক্তিধর), আর-রহমান (সবচেয়ে দয়াবান) নন। আল্লাহর অরো অনেক বিশেষত্ব আছে। যেমন; আল্লাহর একটি বিশেষত্ব হচ্ছে ‘আল-হাকিম’ মানে সবচেয়ে জ্ঞানী, মহাবিজ্ঞ। মহাজ্ঞানী আল্লাহ যা কিছুই করেন না কেন, তার পিছনে অবশ্যই কোনো না কোনো বিজ্ঞতার ছাপ থাকবে। কোনো না কোনো কল্যাণ নিহিত থাকবে। 

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

কিন্তু তোমরা যা অপছন্দ কর হতে পারে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালবাস হতে পারে তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ্‌ জানেন তোমরা জান না। [1]আল কুরআন, বাকারাহ ২ : ২১৬

উপরে আমরা স্পষ্ট করেছি যে আমাদের সীমাবদ্ধতার জন্য আমরা আল্লাহর প্রজ্ঞার সবকিছু বুঝে উঠতে পারিনা। ফলে আমরা যেটাকে দুঃখ-দুদর্শা বলি সেটা আমাদের দৃষ্টিতে দুঃখ দুদর্শা। কিন্তু সেটার পিছিনে কোনো প্রজ্ঞা লুকায়িত থাকলে তা আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতার কারণে বুঝে উঠতে পারিনা। আল্লাহ যেহেতু সবচেয়ে জ্ঞানি এবং বিজ্ঞ আর আমরা যেহেতু সীমিত সত্তা, কাজেই আমারা সীমিত সত্তার মানুষ হিসেবে তার ঐশী প্রজ্ঞার সবকিছু বুঝে উঠতে পারিনা।  

এতএব, কেউ যদি দুঃখ-দুদর্শা অন্যায়-অরাজকতাকে দায়ী করে সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করে, সেটা হবে নিজের সসীম প্রকৃতিকে অসীম সত্তার সাথে তুলনা করা। যেটাকে বলে ক্যাটাগরি মিস্টেক ফ্যালাসি। যারা অসীম সত্তাকে সমীম সত্তার সাথে মিলিয়ে ফেলে তারা এক ধরণের কগনেটিভ বায়াসে আক্রান্ত। যাকে বলে ইগোসেন্ট্রিজম।

আমরা কোনো কিছুকে যেভাবে চিন্তা করি ঠিক একইভাবে কি আল্লাহকেও চিন্তা করতে হবে ? এটা একেবারেই অযৌক্তিক এবং অসম্ভব। যদি তাই হতো তাহলে, সসীম মানুষ ও অসীম সৃষ্টিকর্তার মধ্যে পার্থক্য হতো কোথায়? আমরা যখন কোনো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে বিশ্লেষণ করি সেখানে আমাদের বুদ্ধিভিত্তিক সীমাবদ্ধতা থাকে। কিন্তু অতিপ্রাকৃতিক সত্তা যিনি সব চেয়ে মহাজ্ঞানী, যার কাছে রয়েছে সমস্ত জ্ঞানের আঁধার তিনি তো আমাদের মতো চিন্তা করতে বাধ্য নয়! তার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। 

পবিত্র কুরআনে নবী মূসা (আঃ) ও খিজিরের ঘটনাগুলোতে এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে যে, খিজির এমন কিছু কাজ করছিলো যেগুলো বাহিরে থেকে দেখে নবী মূসা  (আঃ) এর কাছে অযৌক্তিক মনে হলেও যখন এসব ঘটনার পিছনের কারণ জানতে পারলেন তখন বুঝতে পারলেন যে বুদ্ধিভিত্তিক সীমাবদ্ধতার জন্যই তার কাছে ঘটনাগুলো অযৌক্তিক মনে হয়েছিল। 

পবিত্র কুরআনে নবী মূসা (আঃ) ও খিজিরের উল্লেখিত ঘটনাগুলো

‘ নিজেদের ফেলে আসা পায়ের ছাপ দেখে দেখে পেছনে ফিরে চলল তারা। যেতে যেতে তারা খুঁজে পেল আমার এক বান্দাকে। যাকে আমি (আল্লাহ) আমার তরফ থেকে আমি রহমত দান করেছি এবং আমার পক্ষ থেকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছি।

মূসা তাঁকে বলল, ‘আমি কি আপনাকে এই শর্তে অনুসরণ করব যে, আপনাকে যে সঠিক জ্ঞান দেয়া হয়েছে, (আল্লাহ পক্ষ থেকে) তা আমাকে শিক্ষা দেবেন’? 

সে(খিজির) বলল, ‘আপনি কখনো আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না’।

আপনি কীভাবে সে বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করবেন যা আপনার জ্ঞানের আয়ত্বের বাইরে?’

মূসা বলল, ‘ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং কোন বিষয়ে আমি আপনার অবাধ্য হব না’।

সে (খিজির) বলল, ‘আপনি যেহেতু আমার অনুসরণ করতেই চান, তাহলে আপনি আমাকে কোন ব্যাপারেই প্রশ্ন করবেন না যতক্ষণ না আমি নিজেই সে সম্পর্কে আপনাকে বলি।’ 

অতঃপর তারা দু’জনে চলতে লাগল যতক্ষণ না তারা নৌকায় উঠল, অতঃপর লোকটি(খিজির) নৌকায় ছিদ্র করে দিল। মূসা বলল, ‘আপনি কি তার আরোহীদেরকে ডুবিয়ে দেয়ার জন্য তাতে ছিদ্র করলেন? আপনি অবশ্যই মন্দ কাজ করলেন’।

খিজির বলল, ‘আমি কি আপনাকে বলিনি যে, আপনি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধরতে পারবেন না?’

,মূসা বলল, ‘আমি যা ভুলে গিয়েছি, সে ব্যাপারে আমাকে ধরবেন না এবং আমাকে আমার বিষয়ে কঠোর আচরণ করবেন না। 

তারপর তারা চলতে লাগল। চলতে চলতে এক বালককে তারা দেখতে পেল। তখন সে (খিজির) তাকে হত্যা করে ফেলল। মূসা বলল, ‘আপনি কি এক নিরাপরাধ জীবনকে কোন প্রকার হত্যার অপরাধ ছাড়াই হত্যা করে দিলেন? আপনি তো গুরুতর এক অন্যায় কাজ করে ফেললেন!’

সে(খিজির) বলল, ‘আমি কি আপনাকে বলিনি যে, আপনি আমার সাথে কখনই ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না’?

মূসা বলল, ‘এরপর আমি যদি কোন বিষয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করি, তাহলে আপনি আর আমাকে সঙ্গে রাখবেন না, ওযর অন্যায় আমার পক্ষ থেকেই ঘটেছে।’

অতঃপর তারা দু’জন চলতে শুরু করল। অবশেষে যখন তারা একটি জনপদের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছল তখন তাদের কাছে কিছু খাবার চাইল; কিন্তু তারা তাদেরকে মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। অতঃপর তারা সেখানে একটি প্রাচীর দেখতে পেল, যা পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সে(খিজির) তখন প্রাচীরটি সোজাভাবে দাঁড় করিয়ে দিল। মূসা বলল, ‘আপনি ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক নিতে পারতেন’।

লোকটি(খিজির) বলল, ‘এখানেই আপনার সাথে আমার সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটল। এখন আমি আপনাকে ব্যাখ্যা জানিয়ে দেব যে বিষয়ে আপনি ধৈর্য ধরতে পারেননি।

‘নৌকাটির বিষয় হল, তা ছিল কিছু দরিদ্র লোকের যারা সমুদ্রে কাজ করত। আমি(খিজির) নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে চেয়েছি কারণ তাদের পেছনে ছিল এক রাজা, যে নৌকাগুলো জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিচ্ছিল’।

‘আর বালকটির বিষয় হল, তার পিতা-মাতা ছিল মুমিন। অতঃপর আমি(খিজির) আশংকা* করলাম যে, সে সীমালংঘন ও কুফরী দ্বারা তাদেরকে অতিষ্ঠ করে তুলবে’। * তাঁর আশংকা নিছক ধারণা ভিত্তিক ছিল না, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি নিশ্চিত জানতে পেরেছিলেন।

‘তাই আমি(খিজির) চাইলাম, তাদের রব তাদেরকে তার পরিবর্তে এমন সন্তান দান করবেন, যে হবে তার চেয়ে পবিত্রতায় উত্তম এবং দয়ামায়ায় অধিক ঘনিষ্ঠ।

আর ঐ দেয়ালটির বিষয় হল- তা ছিল ঐ শহরের দু’জন ইয়াতীম বালকের। তার নীচে ছিল তাদের জন্য রক্ষিত ধন, তাদের পিতা ছিল এক সৎ ব্যক্তি। তাই তোমার প্রতিপালক চাইলেন তারা দু’জন যৌবনে উপনীত হোক আর তাদের গচ্ছিত ধন বের করে নিক- যা হল তোমার প্রতিপালকের রহমত বিশেষ। এ সব আমি নিজের পক্ষ থেকে করিনি। এ হল সে বিষয়ের ব্যাখ্যা যে সম্পর্কে আপনি ধৈর্য ধারণ করতে পারেননি।’ [2]সূরা আল-কাহফ; ১৮ঃ৬৫-৮২

পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত এই ঘটনা সমূহ থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, খিজিরের যে কাজগুলো থেকে নবী মূসা (আঃ) এর কাছে বুদ্ধিভিত্তিক সীমাবদ্ধতার কারণেই খারাপ মনে হচ্ছিল। কিন্তু খিজিরের কাছে ছিলো আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান। তাই তার কাছে উক্ত কাজগুলো ছিলো কল্যাণময়। 

আল্লাহর প্রজ্ঞা অসীম। অন্যদিকে আমাদের প্রজ্ঞা আল্লাহর প্রজ্ঞার তুলনায় ছিটেফোঁটা। তাই কোনো একটা বিষয়কে আমরা সামান্য প্রজ্ঞা দিয়ে চিন্তা করি বলে আমাদের কাছে অনেক কাজ অযৌক্তি মনে হয়। কিন্তু আমাদের কাছে অযৌক্তিক মনে হওয়া কাজগুলোর পিছনে যে আল্লাহর উত্তম পরিকল্পনা রয়েছে তা আমরা বুঝতে পারিনা। কিন্তু যখন আমরা সে বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি  জানতে পারি তখন ঠিকই বুঝতে পারি। ঠিক যেমন মূসা (আঃ)এর কাছে খিজিরের কাজগুলো অযৌক্তিক অন্যায় মনে হলেও পরে যখন তিনি ঘটনার পিছনের কারণ জানতে পেরেছিলেন তখন বুঝতে পেরেছেন যে খিজিরের কাজগুলো ছিলো মূলত প্রজ্ঞাময়।  

অনেক সময় এমন হয় যে আমরা কোনো একটা কিছু পাওয়ার জন্য অনেক প্রত্যাশা করি। কিন্তু দিনশেষে যখন আমরা ব্যার্থ হয় তখন হয়তো ভাবি যে আল্লাহ আমার জন্য ভালো কিছু রাখেনি। কিন্তু পরবর্তীতে যখন আমরা প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু পেয়ে যায় তখন নিশ্চয় এটা চিন্তা করি যে আগে না পাওয়াটাই আমার জন্য বেশ উপকার হয়েছে ! আগে পেয়ে গেলে হয়তো এখন এতো ভালো কিছু নাও পেতাম !  সুতরাং আমাদের কাছে যা ক্ষতি,দুঃখ মনে হচ্ছে তা হচ্ছে সাময়িক সময়ের জন্য বা আংশিক। কিন্তু এর পিছনে অবশ্যই আল্লাহর প্রজ্ঞাময় উদ্দেশ্য রয়েছে। যা অবশ্যই আমাদের জন্য অধিক কল্যাণময়।    

ভালো খারাপের বিষয়ে ইবনু তাইমিয়্যা বলেছেন,

পরম খারাপ বলে আল্লাহ কিছু সৃষ্টি করেন না। কল্যানের উদ্দেশ্যেই তার সৃষ্ট সবকিছুতেই থাকে এক প্রজ্ঞাময় উদ্দেশ্য। তবে তা হতে পারে কিছু লোকের জন্য সাময়িক বা আংশিক অকল্যাণ। সম্পূর্ণ বা পরম অকল্যাণের বেলায় আল্লাহ দায়মুক্ত। [3]ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমুউল-ফাতওয়া শাইখুল ইসলাম আহমাদ বিন তাইমিয়্যাহ। … Continue reading

Essayy sur les doctrines sociales et polotiques de Taki-d-Din Ahmad b. Taimiya শীর্ষক প্রবন্ধে অরি লাস্ত বলছেন,

জগতে খারাপের বাস্তব অস্তিত্ব নেই। যা কিছু আল্লাহ ইচ্ছা করেন তা এক সার্বভৌম সুবিচার এবং অপরিসীম কল্যাণের জন্যই। [4]মিনহাজুস সুন্নাহ; খন্ড;৩ পৃষ্ঠা; ২৬৬

সৃষ্টিকর্তা কেন অন্যায়, দুঃখ-দুর্দশা দিয়েছে? তিনি চাইলে কি এসব না দিয়ে কল্যাণ করতে পারতো না?  

এই প্রশ্নের জবাব আমরা দুইভাবে দেওয়ার চেষ্টা করবো। প্রথমত ফিলোসফির দৃষ্টিভঙ্গিতে আলচোনা করা যাক। পুরোপুরি মঙ্গলময় একটা পৃথিবী তখনই হতে পারে যখন মানুষের কোনো স্বাধীনইচ্ছা শক্তি থাকবেনা, আকাঙ্ক্ষা থাকবেনা, কামনা থাকবেনা ইত্যাদি। অর্থাৎ মানুষ যদি যান্ত্রিক রোবট হতো তাহলে হয়তো এটা সম্ভব হতো যে পৃথিবী সর্বমঙ্গলময়। কিন্তু বাস্তবতা আমাদের ভিন্ন কিছু বলে। আমরা কোনো যান্ত্রিক রোবট না। আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিও রয়েছে। সুতরাং সর্বমঙ্গলময় পৃথিবী হওয়া পসিবল নয়। তাও যুক্তির খাতিরে যদি কিছু সময়ের জন্য ধরে নেওয়া হয় যে আমাদের পৃথিবী হচ্ছে সর্বমঙ্গলময় যেখানে কোনো অন্যায়-অরাজকতা নেই, দুঃখ-দুদর্শা নেই। এখন এমন একটা পৃথিবী যে সর্বমঙ্গলময় সেটা কি আমাদের অনুভব হবে? অবশ্যই হবেনা। কারণ মন্দ ছাড়া আমরা ভালোকে অনুভব করতে পারবো না। সুতরাং ভালো খারাপের পার্থক্য করতে হলেও আমাদের মন্দ থাকা অনিবার্য। 

ইসলামি জ্ঞানভান্ডারে এই সমন্ধে অনেক উত্তর দেওয়া আছে। ইসলামিক বিধান অনুযায়ী আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ সত্তা। যেহেতু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তালা একজন সর্বশ্রেষ্ঠ সত্তা সেহেতু আল্লাহ কেন এমনটা করেছে, কেন এটা না করে অন্যটা করেনি এই ধরণের প্রশ্ন করা যাবেনা। কারণ এখানে ক্যাটাগরি মিস্টের ফ্যালাসি ঘটবে। আল্লাহ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ একজন সত্তা, কিন্ত মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ কোনো সত্তা নয়। আমাদের ক্যাটাগরি এবং আল্লাহর ক্যাটাগরি দুটো পুরোপুরি আলাদা।

প্রথমত, আমাদের জানতে হবে আল্লাহ আমদের কেন সৃষ্টি করেছেন ? আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কি ? 

ক্ষণস্থায়ী সুখ, ভোগ-বিলাসিতা আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য নয়। বরং আল্লাহর উপাসনা করাই হচ্ছে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তালা বলেন, 

আর জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র এ কারণে যে, তারা আমারই ‘ইবাদাত করবে। [5]সূরা আয-যারিয়াত; ৫১ঃ৫৬

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তালার এই উদ্দেশ্য পূরণ করলেই আমরা লাভ করবো অনন্তকালের সুখের স্থান জান্নাত। আল্লাহর এই উদ্দেশ্য পূরণ করতে হলে আমাদের দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করবে হবে। তাই আমাদের জীবনে নানা রকম দুঃখ-কষ্ট আসতেই পারে। কিন্তু তার বিনিময়ে আমরা অনন্তকালের সুখের স্থান জান্নাত অর্জন করতে পারবো। 

ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে, যে মানুষ জীবনে কখনো দুঃখ কষ্ট ভোগ করেনি, বিলাসি জীবন-যাপন, অত্যাধিক সুখ যাকে আল্লাহর কাছে থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে, এমন লোকের চাইতে যে-মানুষের দুঃখ যন্ত্রণা তাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করেছে সেই ঢের ভালো মানুষ। 

কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, অনেক মানুষ বিনা অপরাধেই দিনের পর দিন শাস্তি ভোগ করে, যেমন পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অসংখ্য মানুষ বিনা অপরাধে নির্যাতিত হচ্ছে। তাহলে কি প্রশ্ন আসতে পারেনা যে, দুনিয়ার দুঃখ দুর্দশা তো সাময়িক সময় বা ক্ষণস্থায়ী নয়! 

আল্লাহ শুধু মাত্র দুনিয়াতেই দুঃখ দুর্দশার বিনিময়ে কল্যাণ দান করেন না। বরং আখিরাতেও পুষিয়ে দেয়। 

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,

পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট-ভোগ করা এক জান্নাতযাত্রী কে এক পলক জান্নাত দেখিয়ে জিজ্ঞেস করা “হে আদম সন্তান, কখনো কষ্ট দেখেছ কি ? জীবনে কখনো দুঃখ দুর্দর্শায় ছিলে? সে বলবে, “প্রভু কক্ষনো না! আল্লাহর কসম, আমি জীবনে কখনো কষ্ট পাইনি। কখনো দুর্দশা দেখিনি। [6]সহিহ মুসলিম; ৬৯৮১    

দ্বিতীয়ত, আমাদের পরিক্ষা করা,যাচাই করাও সৃষ্টির একটি উদ্দেশ্য। 

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তালা বলেন, 

যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল। [7]সূরা আল-মুলক; ৬৭ঃ০২

আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু হতে, তাকে পরীক্ষা করার জন্য। এজন্য আমি তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। [8]সুরা দাহর (ইনসান) ৭৬:২

দার্শনিকদের দৃষ্টিভঙ্গি

এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা জানায়- অধিকাংশ চিন্তাবিদ এই প্রবলেম অব ইভল আর্গুমেন্টকে বুদ্ধিহীনতার ফল মনে করেন। [9]patrick sherry,problem of evil.

নাস্তিক দার্শনিক জে.এল.ম্যাকি স্বীকার করেছেন,

ভালো/মন্দ অর্থাৎ মূল্যবোধের অস্তিত্ব নেই। [10]j.l. mackie ethics inventing right and wrong. page-15

ডারউইনিয়ন দৃষ্টিভঙ্গিতে ভালো মন্দ বলে কিছুই নেই। ভালো মন্দ বলতে যদি কিছু না থাকে তাহলে মন্দ সমস্যা আর্গুমেন্টে নাস্তিকরা মূলত মন্দের জন্যই সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করে। তাই প্রবলেম অব ইভল আর্গুমেন্টের শুরুতেই স্ববিরোধী অবস্থান বিধ্যমান।

নাস্তিক পন্ডিত Chad Meister এর মতে,

প্রবলেম অব ইভল আস্তিকতার বিরুদ্ধে শক্তপোক্ত যুক্তি নয়, বরং আবেগী যুক্তি। [11]Chad Meister; Introducing Philosophy of religion; page-144

নাস্তিক দার্শনিক জে.এল. ম্যাকি স্বীকার করেছেন;

মন্দ সমস্যা যুক্তি আস্তিক্যবাদের কেন্দ্রিয় মতবাদ্গুলো যৌক্তিকভাবে অবান্তর এমনটা প্রমাণে ব্যার্থ। [12]J.l Mackie; The miracle of theism. Page-154

কিছু প্রশ্ন

(এই অংশটুকু লিখেছেনঃ ইফতেখার হোসাইন সিমান্ত।) সবসময় নন-থিয়েস্টরা প্রশ্ন করবে আর আমরা জবাব দিবো। তা তো হয় না। এই জন্য আপনাদের কাছে কিছু অব্জেকশন তুলে ধরবো।

১) সাব্জেক্টিভিটি বনাম অব্জেক্টিভিটিঃ কোনো কিছু অনৈতিক তা বুঝার জন্য কিছু ফ্যাকচুয়াল স্ট্যান্ডার্ড পয়েন্ট দরকার হয়। নাস্তিকতার প্যারাডাইম অনুসারে যেহেতু অব্জেক্টিভ মোরালিটি এর অস্তিত্ব নেই তার মানে আল্লাহ(The one true God) নেই। আবার যদি তারা এই অব্জেকশন তুলে, “আল্লাহ নেই কারণ objective evil exist করে।” তাহলে লজিকালি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় “objective morality exist-ই করে না”। অর্থাৎ নাস্তিকদের মোরালিটি কোনটা সঠিক কোনটা ভুল তা প্রমাণ করার জন্য বা তা বুঝার জন্য ফ্যাকচুয়াল স্ট্যান্ডার্ড পয়েন্ট নেই বললেই চলে।

২) কেনো লজিকাল প্রব্লেম অফ ইভেল আর্গুমেন্টে আল্লাহর তিন গুণাবলীকে আক্রমণ করা হয়। যেমন- আল্লাহ সর্বশক্তিমান, আল্লাহ সর্বজ্ঞ, আল্লাহ দয়ালু। যেখানে আরেকটি গুণাবলী রয়েছে। আল-হাকিম। অর্থাৎ তিনি যা যা করবেন যা আমাদের কাছে প্রথম দিকে কষ্টকর মনে হলেও এর পিছনে রয়েছে এক মহৎ বিচক্ষণতা।

এমনকি নাস্তিক দার্শনিকবিদ পল ড্রেপার বলেন,

লজিকাল প্রব্লেম অফ ইভেল সফল হতে হলে তাদেরকে দেখাতে হবে যে আল্লাহ কোনো কিছুর পিছনে মহৎ উদ্দেশ্য বুনে দিতে অক্ষম। যা আজকাল সাম্প্রতিক দার্শনিকরা দেখাতে পারেননি। [13]Draper, “The Problem of Evil,” 335

তাই আপনাদের কাছেও একই প্রশ্ন, লজিকালি দেখান যে কেনো আল্লাহ এই দুঃখ, দুর্দশার পিছনে মহৎ জ্ঞান লিপিবদ্ধ করতে পারেন না?

৩) যারা এর পিছনে থাকা মহৎ উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন না। তাদের কাছে প্রশ্ন । আপনাদের কাছে কি সম্পূর্ণ নলেজ রয়েছে যা দিয়ে দুনিয়ার সমস্ত ঘটনার পিছনে থাকা মহৎ উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে পারবেন? এখন অনেকেই বলতে পারেন এইটা “argument from ignorance” fallacy তবে এখানে কোনো প্রকার কুযুক্তি করা হয় নাই। বরং এই প্রশ্ন দিয়ে বুঝানো হচ্ছে নন-থিয়েস্টদের যেখানে নিশ্চয়তার বড় অভাব সেখানে তারা কিভাবে বুঝবে মহৎ উদ্দেশ্য আসলেই মহৎ উদ্দেশ্য কেননা তাদের মতাদর্শের কোনো ভিত্তি নেই।

 (বিঃদ্রঃ এখানে তাদের মতাদর্শের ভিত্তিকে নিয়ে কথা হচ্ছে; তাদের সাব্জেক্টিভ অভিজ্ঞতা নিয়ে না)

৪)সর্বশেষ প্রশ্ন হচ্ছে, যারা নাস্তিক, তারা যখন প্রব্লেম অফ ইভেল নিয়ে কথা বলেন তখন এইটা ভেবে নেন যে আল্লাহর অস্তিত্ব আছে এবং অব্জেক্টিভ মোরালিটিকেও পূর্বেই অনুমান করে নেন। তার মানে এই প্রশ্ন আপনাকে নাস্তিক না বরং অজ্ঞেয়বাদ বা agnostic হিসেবে বেশি মানায়। কেননা এখানে অস্তিত্ব নিয়ে বা ontology নিয়ে কথা হচ্ছে না। Epistemology নিয়ে কথা হচ্ছে। অর্থাৎ আপনারা এইসকল কর্মকান্ডের পিছনে হিকমাহ বুঝেন নাই দেখেই এই প্রশ্ন করেছেন। আর যদি এইটা ভেবে epistemology দিয়ে ontological conclusion টানবেন তাহলে আপনারা category mistake fallacy এর খপ্পরে পড়ে গেলেন। সুতরাং আপনাদের কাছে প্রশ্ন এর সাথে আসলে নাস্তিকতার সম্পর্ক কি?

সিদ্ধান্তঃ

আপনারা যারা মনে করে থাকেন এর পিছনের উত্তর ফাঁকা সেখানে মুসলিম ফিলোসোফার এবং স্কলাররা বিভিন্ন পার্স্পেক্টিভ থেকে এই সমস্যার সমাধান দিয়ে আসছেন। Faith and Theology (faith-and-theology.com)

References

References
1 আল কুরআন, বাকারাহ ২ : ২১৬
2 সূরা আল-কাহফ; ১৮ঃ৬৫-৮২
3 ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমুউল-ফাতওয়া শাইখুল ইসলাম আহমাদ বিন তাইমিয়্যাহ। খন্ড;১৪ পৃষ্টা; ২৬৬
4 মিনহাজুস সুন্নাহ; খন্ড;৩ পৃষ্ঠা; ২৬৬
5 সূরা আয-যারিয়াত; ৫১ঃ৫৬
6 সহিহ মুসলিম; ৬৯৮১
7 সূরা আল-মুলক; ৬৭ঃ০২
8 সুরা দাহর (ইনসান) ৭৬:২
9 patrick sherry,problem of evil.
10 j.l. mackie ethics inventing right and wrong. page-15
11 Chad Meister; Introducing Philosophy of religion; page-144
12 J.l Mackie; The miracle of theism. Page-154
13 Draper, “The Problem of Evil,” 335

Sazzatul Mowla Shanto

As-salamu alaykum. I'm Sazzatul mowla Shanto. Try to learn and write about theology and philosophy.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button