ফিলোসোফি অব বায়োলজিতে ফাংশন এর ধারণা, Junk DNA বনাম ENCODE Project

ফিলোসোফি অব বায়োলজিতে ফাংশন এর ধারণা, Junk DNA বনাম ENCODE Project

ডিএনএ কি?

ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ইংরেজি: DNA) একটি নিউক্লিক এসিড যা জীবদেহের গঠন ও ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণের জিনগত নির্দেশ ধারণ করে।

জিন কাকে বলে?

জীবের প্রতিটি কোষে Deoxyribonucleic acid বা DNA নামে একটি অণু থাকে, আর এই অনুগুলি একটি জীব কোষের গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি ধারন করে। Adenine (A), cytosine (C), guanine (G), and thymine (T) নামের চারটি নিউক্লিওটাইড বেস (nucleotide bases) বিভিন্ন ক্রমে পর পর রৈখিকভাবে সজ্জিত হয়ে এই DNA গঠন করে।[1] এই যে বিভিন্ন সজ্জাক্রম, একেই DNA sequence বা ক্রম বলে, আর এই সজ্জাক্রম জীবের প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য নির্ধারণ করে। তবে গোটা DNA জুড়েই যে তথ্য থাকে এরকম নয়, যে অংশগুলিতে তথ্য থাকে সেইগুলির নাম gene বা জিন। এই জিনগুলি এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে বাহিত হয়।[2] কোষের মধ্যে দুটি প্রধান অংশ, একটি নিউক্লিয়াস অন্যটি সাইটোপ্লাজম। সাইটোপ্লাজমের মধ্যে বিভিন্ন পর্দা দ্বারা বেষ্টিত অঙ্গানু থাকে। আর নিউক্লিয়াসের মধ্যে বংশগতির ধারক ও বাহক DNA থাকে। কিন্তু সব জীবের ক্ষেত্রে এক রকম নয়। অনেক এককোষী জীবের ক্ষেত্রে সুগঠিত নিউক্লিয়াস ( অর্থাৎ নিউক্লিক বস্তু নিউক্লিয়ার মেমব্রেন দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে না) ও বাকি অঙ্গানুগুলি থাকে না। তাদের prokaryote বা আদি কোষ বলা হয়। আর যাদের নিউক্লিয়াস সুগঠিত থাকে তাদের eukaryote বা প্রকৃত কোষ বলা হয়। প্রকৃত কোষের মধ্যে বংশগতির ধারক ও বাহক DNA একটি পর্দা বেষ্টিত অঙ্গানু নিউক্লিয়াসের মধ্যে থাকা ক্রোমোসোমের মধ্যে সজ্জিত থাকে। DNA অনু আর কিছু নিউক্লিয়ার প্রোটিন (histone) মিলে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে একটি সুসংগঠিত ঘন গঠন তৈরি করে, এদের বলে Chromatin বা ক্রোমাটিন। ক্রোমাটিনগুলি আরও খানিক ঘনীভূত হয়ে ক্রোমোসোম তৈরি করে। কোষ বিভাজনের সময় এই প্যাঁচানো আকার সরলীকৃত হতে থাকে, তখন মাইক্রোস্কোপের নীচে ক্রোমাটিন দেখতে অনেকটা পুঁতির মালার মতো দেখায়। ইউক্রোমাটিন বা কম ঘনীভূত ক্রোমাটিন থেকে প্রোটিন তৈরির সঙ্কেত বাহিত হয় কিন্তু হেটেরোক্রোমাটিন বা অত্যন্ত ঘনীভূত ক্রোমাটিন থেকে প্রোটিন তৈরির সঙ্কেত বাহিত হয় না।একটি জীবের মধ্যে সঞ্চিত যাবতীয় তথ্যকে একসাথে জিনোম বলে। এই জিনোম কোষের ক্রোমোসোমের মধ্যে যে DNA থাকে সেইখানে এই তথ্য সঞ্চিত থাকে। ডিএনএ -র ছোট ছোট অংশগুলি যেখান থেকে আরএনএ -র কোড তথা জীবের প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরির সঙ্কেত সঞ্চিত থাকে সেই অংশগুলিকে বলা হয় gene বা জিন।[3]

জাঙ্ক ডিএনএ

নন-কোডিং ডিএনএ ( cDNA ) সিকুয়েন্স হলোএকটি জীবের ডিএনএর এমন উপাদান উপাদান যা প্রোটিন সিকুয়েন্সকে এনকোড করে না। কিছু নন-কোডিং অঞ্চলগুলি বেশিরভাগই অকার্যকর বলে মনে হয়। যেমন ইন্ট্রোন , সিউডোজেন , ইন্টারজেনিক ডিএনএ ইত্যাদি। জাঙ্ক ডিএনএ” বিস্তৃতভাবে “এমন সব ডিএনএ সিকুয়েন্সকে বোঝায় যা বৃদ্ধি, শারীরবিদ্যা, বা অন্য কিছু জীব-স্তরের ক্ষমতায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে না।[4] “জাঙ্ক ডিএনএ” শব্দটি ১৯৬০-এর দশকে ব্যবহৃত হয়েছিল। তবে সুসুমু ওহনোর একটি গবেষণাপত্রে এটি শুধুমাত্র 1972 সালে ব্যাপকভাবে পরিচিত পায়।[5] মানুষের মধ্যে যে হারে মিউটেশন ঘটে, তার তুলনায় মানুষের জিনোম অনেক বড়। আর এইজন্য প্রতি প্রজন্মে ক্ষতিকর মিউটেশনের সংখ্যা অনেক কম। যদি পুরো জিনোমের মধ্যে অপরিহার্য তথ্য সংরক্ষিত থাকতো তাহলে তাহলে প্রতি প্রজন্মে অনেক বেশী ক্ষতিকারক মিউটেশন দেখা যেত। অর্থাৎ মানুষ জিনোমের সবটুকু কার্যকরী নয় বরং বিভিন্ন সময়ে মিউটেশন এর কারণে এসকল ডিএনএ রয়ে গেছে যা আদোতে আবর্জনা।[6] এর উপর ভিত্তি করে দাড় করানো হয়েছে Phylogenetics এর তত্ত্ব সৃষ্টি হলো মলিকিউলার ইভোলিউশন শাখা। এদের কাজ হল বিভিন্ন প্রজাতির ডিএনএ তে moleculer homology খুজে বের করা এবং এর উপর ভিত্তি করে একটি বিবর্তনের ক্রমবিন্যাস তৈরী করা।

ফিলোসোফি অফ বায়োলজিতে ‘ফাংশন’ এর অর্থ

ফিজিওলজিতে ফাংশন হলো একটি কার্যকলাপ বা প্রক্রিয়া যা একটি জীবের মধ্যে একটি সিস্টেম দ্বারা সঞ্চালিত হয় , যেমন একটি প্রাণীর মধ্যে সংবেদন বা গতিবিধি।[7] এই সংজ্ঞাটি শাস্ত্রীয় প্রাচীনত্বের জৈবিক ব্যাখ্যায় কেন্দ্রীয় বিষয় ছিলো।[8] ফিলোসোফি অফ বায়োলজি তে “ফাংশন” শব্দটির তিনটি ধারণা বিদ্যমান। যেমন-   ১.কার্যকারণ ভূমিকা ২.নির্বাচিত প্রভাব ৩.লক্ষ্য অবদান।

১. কার্যকারণ ভূমিকা– জৈবিক ক্রিয়াকলাপের কার্যকারণ ভূমিকা তত্ত্বগুলোর উৎপত্তি রবার্ট কামিন্সের 1975 সালের একটি গবেষণাপত্রে খুঁজে পাওয়া পায়।[9] কামিন্স একটি সিস্টেমের একটি উপাদানের কার্যকরী ভূমিকাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে, যে উপাদানটি বৃহত্তর ধারণকারী সিস্টেমে কার্যকারণ প্রভাব ফেলে তাই কার্যকারণ ভূমিকা । উদাহরণস্বরূপ, সংবহনতন্ত্রে রক্ত ​​পাম্প করার প্রকৃত কার্যকারণ ভূমিকা রয়েছে হৃদয়ের; তাই হৃৎপিণ্ডের কাজ (ফাংশন) হল রক্ত ​​পাম্প করা। আবার একজন জীববিজ্ঞানী বলতে পারেন, রক্ত প্রবাহ থেকে বর্জ্য নিরসনে কিডনি ভূমিকা পালন করে সুতরাং এটি হচ্ছে কিডনির একটি ফাংশন। এই ধারণার উপর এই কারণে আপত্তি করা হয়েছে যে এটি ফাংশন সম্পর্কে খুব শিথিল ধারণা। উদাহরণস্বরূপ, হৃৎপিণ্ডেরও একটি শব্দ তৈরির কার্যকারণ প্রভাব রয়েছে, তবে আমরা শব্দ তৈরি করাকে হৃৎপিণ্ডের কাজ বলে মনে করতে পারিনা। এরুপ আপত্তির ক্ষেত্রে রবার্ট কামিন্স উত্তর দিয়েছেন। প্রকৃত ফাংশন এবং অন্যান্য প্রভাবগুলির মধ্যে পার্থক্য করার কোনও উদ্দেশ্যমূলক উপায় নেই। একটি উপাদানের প্রভাব বিভিন্ন সামগ্রিক ক্ষমতা ব্যাখ্যায় প্রাসঙ্গিক হতে পারে। কি ক্ষমতা ব্যাখ্যা করা উচিত তার সীমা গবেষকদের বিশেষ ব্যাখ্যামূলক আগ্রহের উপর নির্ভর করে। শরীরের রক্ত ​​সঞ্চালনের ক্ষেত্রের সাথে হৃদপিণ্ড সম্পর্কিত, হৃৎপিণ্ড একটি পাম্পিং প্রক্রিয়া হিসাবে কাজ করে বলা যেতে পারে সুতরাং হৃদপিণ্ডের কাজ (বায়োলজিকাল ফাংশন) হচ্ছে পাম্পিং কারণ এটি রক্ত সঞ্চালনে ভুমিকা রাখে এখন রক্ত সঞ্চালন জীবের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শব্দ তৈরির ক্ষেত্রে এখানে হৃদপিণ্ড কোনো কিছু করার সামর্থ্যের তুলনায় হৃৎপিণ্ড এখানে শব্দ সৃষ্টিকারী হিসেবে কাজ করে। সেক্ষেত্রে এই শব্দ কে হৃদপিণ্ডের বায়োলজিক্যাল ফাংশন না বললেও সমস্যা নেই। তবে সিস্টেমে ভালো / খারাপ প্রভাব ফেলে এমন কোনো কিছু করলে তাকে অবশ্যই বায়োলজিক্যাল ফাংশন বলা যাবে। কার্যকারণ ভূমিকার উপর আরও অন্যান্য সমালোচনার উত্তর দিয়েছেন বেশ কয়েকজন একাডেমিশিয়ান।[10][11][12]

২.নির্বাচিত প্রভাব– জৈবিক ক্রিয়াকলাপের নির্বাচিত প্রভাব তত্ত্ব অনুযায়ী একটি জৈবিক বৈশিষ্ট্যের ফাংশন হল সেই ফাংশন যার জন্য বৈশিষ্ট্যটি নির্বাচিত হয়েছিল , যেমনটি রুথ মিলিকান যুক্তি দিয়েছিলেন।[13] উদাহরণ স্বরূপ, হৃৎপিণ্ডের কাজ হল রক্ত ​​পাম্প করা, কারণ এটাই সেই ক্রিয়া যার জন্য বিবর্তনের মাধ্যমে হৃদয়কে বেছে নেওয়া হয়েছিল। অন্য কথায়, রক্ত ​​পাম্প করা হৃৎপিণ্ডের বিকাশের কারণ । ফাংশনের এই ধারণাটিও খুব সীমাবদ্ধ হওয়ার জন্য সমালোচিত হয়েছে৷ এটি সর্বদা পরিষ্কার নয় যে কোন আচরণ একটি বৈশিষ্ট্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে, কারণ জৈবিক বৈশিষ্ট্যগুলির কার্যকারিতা থাকতে পারে, এমনকি যদি সেগুলিকে নির্বাচিত না করা হয় তবুও। যেমন উপকারী মিউটেশন প্রাথমিকভাবে এর জন্য নির্বাচিত হয় না, তবে তাদের কার্যকারিতা রয়েছে।[14]

৩. লক্ষ্য অবদান– লক্ষ্য অবদান তত্ত্ব কার্যকারণ ভূমিকা এবং নির্বাচিত প্রভাব তত্ত্বের মধ্যে একটি মধ্যম স্থল তৈরি করতে চায়, যেমন[15] বুরস একটি জৈবিক বৈশিষ্ট্যের কাজকে সংজ্ঞায়িত করেন এভাবে, লক্ষ্য অবদান হচ্ছে তাই যা পরিসংখ্যানগতভাবে সেই বৈশিষ্ট্যটির বেঁচে থাকা এবং প্রজননের ক্ষেত্রে অবদান রাখে। সুতরাং উদাহরণস্বরূপ, জেব্রা স্ট্রাইপগুলি কখনও কখনও শিকারীদের বিভ্রান্ত করার কাজ করে। জেব্রা স্ট্রাইপের এই ভূমিকা জেব্রাদের বেঁচে থাকা এবং প্রজননে অবদান রাখবে এবং সেই কারণেই শিকারীদের বিভ্রান্ত করাটাকেই জেব্রা স্ট্রাইপের কাজ বলা হবে। এই ধারণা অনুযায়ী, একটি বৈশিষ্ট্যের একটি নির্দিষ্ট কার্যকারণ ভূমিকা তার কাজ ( ফাংশন) কিনা তা নির্ভর করে সেই কার্যকারণ ভূমিকা সেই জীবের বেঁচে থাকা এবং প্রজননে অবদান রাখে কিনা তার উপর।[16]

সি ভ্যালু প্যারাডক্স এবং এর সমাধান

সি-ভ্যালু হোল একটি হ্যাপ্লয়েড কোষে DNA-র পরিমান। “C-Value” কথাটা ব্যাবহার হয় ‘constant’ বা ‘characteristic’ থেকে, কারণ একই জীবের বিভিন্ন প্রকার কোষে এই C-Value-র মান সমান।[17]

স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে যে জীব যত জটিল তার কোষের মধ্যে সঞ্চিত তথ্যের পরিমান যেহেতু বেশী, তাই তার জিনোমের আকারও তত বেশী হওয়ার কথা। কিন্তু আদর্শ কোষ বা eukaryotic cell এই বিধান মানে না। অর্থাৎ বাস্তবে যে জীবদেহের গঠন যত জটিল তাদের জিনোম যে অপেক্ষাকৃত সরল জীবের থেকে বেশী হবে এরকম নয়। বরং এক বিশাল তারতম্য দেখা যায়। যেমন একটি উদাহরন হলো অ্যামিবা। অ্যামিবার জিনোম মানুষের থেকে প্রায় একশ গুণ বড়। প্রাথমিকভাবে, গবেষকরা আশা করেছিলেন যে ডিএনএর পরিমাণ একটি জীবের জৈবিক জটিলতার সাথে সম্পর্কযুক্ত হবে। তবুও গবেষণায় দেখা গেছে যে এমন কোনও সম্পর্ক নেই। কিছু তুলনামূলকভাবে সহজ জীব আরও জটিল জীবের তুলনায় একটি বড় C মান ধারণ করে। এই প্যারাডক্সের সমাধান করার জন্য, আণবিক জীববিজ্ঞানীরা প্রস্তাব করেছিলেন যে একটি জীবের জিনোমের বেশিরভাগ অংশই ডিএনএ নিয়ে গঠিত যা প্রোটিনের জন্য কোড করে না বা জিনের প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করে না। গবেষকরা উপসংহারে পৌঁছেছেন যে নন-কোডিং ডিএনএ কোন বাস্তব উদ্দেশ্য পরিবেশন করে না। তারা এটাকে বিবর্তনীয় প্রক্রিয়ার নিদর্শন বা আবর্জনা হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে সি ভ্যালু প্যারাডক্স এনকোড প্রজেক্ট এর জন্য আদোতে কোনো সমস্যা নয়। যেমনটা বলা হয় যে এনকোড সত্য হলে মানুষের তুলনায় যেসকল জীবের জিনোম আরও বৃহৎ তাদের আরও কার্যকরী উপাদান থাকতে হবে। বস্তুর বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এর কোনো মানে হয়না। তবুও মানুষের চেয়ে কম জটিল জীবের বৃহত্তম জিনোমের উপস্থিতি ব্যাখ্যা করা সম্ভব। এটা হতে পারে যে অতিরিক্ত ডিএনএ প্রোটিনের জন্য কোডিং এবং জিনের অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ ছাড়া অন্য ভূমিকা পালন করে। যেমন কিছু গবেষক পরামর্শ দিয়েছিলেন যে নন-কোডিং ডিএনএ আসলে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। তারা একটি মডেল তৈরি করেছে যেখানে নন-কোডিং ডিএনএ কোষের নিউক্লিয়াসের আয়তন নির্ধারণ করে। সামগ্রিক কোষের আয়তন বাড়ার সাথে সাথে নিউক্লিয়ার আয়তন বাড়ে এবং তাই ডিএনএ’র বস্তুও অবশ্যই বাড়তে হবে যাতে কোষের নিউক্লিয়ার বস্তুর সাথে কোষের সাইটোপ্লাজম (নিউক্লিয়াসের বাইরের জিনিস) এর সাথে কার্যকরভাবে যোগাযোগ রাখতে পারে। এবং এই গবেষকেরা ডিএনএ’র এই সি ভ্যালু প্যারাডক্স এর একটা সমাধান ও দিয়েছে।[18]

মিউটেশনাল লোড আর্গুমেন্ট বনাম জাঙ্ক ডিএনএ

মানুষের মধ্যে যে হারে মিউটেশন ঘটে, তার তুলনায় মানুষের জিনোম অনেক বড়। আর এইজন্য প্রতি প্রজন্মে ক্ষতিকর মিউটেশনের সংখ্যা অনেক কম। যদি পুরো জিনোমের মধ্যে অপরিহার্য তথ্য সংরক্ষিত থাকতো তাহলে তাহলে প্রতি প্রজন্মে অনেক বেশী ক্ষতিকারক মিউটেশন দেখা যেত। অর্থাৎ মানুষ জিনোমের সবটুকু কার্যকরী নয় বরং বিভিন্ন সময়ে মিউটেশন এর কারণে এসকল ডিএনএ রয়ে গেছে যা আদোতে আবর্জনা। অনেক গবেষকদের দাবি মিউটেশনাল লোডের জন্য এনকোড প্রজেক্ট এর ফলাফল সত্য হতে পারেনা। এনকোডের সমালোচক Dan Graur যুক্তি দিয়েছিলেন, যে এনকোডের অভিজ্ঞতাভিত্তিক সিদ্ধান্তগুলি সম্ভবত সঠিক হতে পারে না কারণ

“মিউটেশনাল লোড বিবেচনা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে মানব জিনোমের মধ্যে কার্যকরী ভগ্নাংশ ১৫% এর বেশি হতে পারে না।[19]

অর্থাৎ ডিএনএর বাকি অংশগুলো আবর্জনাই থেকে যায়। এখানে যদি Dan Graur এর সকল যুক্তি সত্য ধরেও নেই তাহলেও বেশিরভাগ জিনোম বায়োকেমিক্যালি কার্যকরী হলে ক্ষতিকারক মিউটেশনের সংখ্যা হতো ব্যাপক, কিন্তু যেহেতু ডিএনএ ‘র বায়োকেমিক্যাল ফাংশন নেই সেক্ষেত্রে যদি বলা যায় নন কোডিং ডিএনএ ‘র উদ্দেশ্য হলো জীবের ক্ষতিকর মিউটেশনের সম্ভাবনা কমানো তাহলেও বিষয়টি কি চমৎকার, গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনের মতো শোনাচ্ছে। তাই না?

মিউটেশনাল লোড এনকোড প্রজেক্ট এর জন্য তেমন কোনো সমস্যা নয়। মিউটেশনাল লোড অনুযায়ী জিনোমের অধিকাংশই যদি কার্যকরী হয় তাহলে ক্ষতিকারক মিউটেশনের সংখ্যা অনেক হতো। সম্প্রতি জিনোম বায়োলজি এন্ড ইভোলিউশন জার্নালে তিনজন গবেষক এ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাদের গবেষণা অনুযায়ী,

আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আগের কাজের থেকে ভিন্ন যা মিউটেশন-নির্বাচন ভারসাম্যের গড় ফিটনেসকে এমন একজন ব্যক্তির ফিটনেসের সাথে তুলনা করে যার কোনো ক্ষতিকর মিউটেশন নেই; আমরা দেখাই যে এই ধরনের একজন ব্যক্তির অস্তিত্বের সম্ভাবনা খুবই কম।

অর্থাৎ ক্ষতিকারক মিউটেশনের সংখ্যা আদোতে কম নয়। উক্ত গবেষণার উপসংহার ছিলো,

 আমাদের উপসংহারটি হল যে মিউটেশনাল লোড থেকে একটি যুক্তি f (function) এর উপর বিশেষভাবে সীমাবদ্ধ বলে মনে হচ্ছে না।[20]

এনকোড প্রজেক্ট

দ্য এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ডিএনএ এলিমেন্টস (ENCODE) হল একটি পাবলিক রিসার্চ প্রজেক্ট যার লক্ষ্য হল মানুষের জিনোমের কার্যকরী উপাদান সনাক্ত করা। ২০০৭ এবং ২০১২ সালের এনকোড রিসার্চ প্রমাণিত হয়েছে মানবদেহের ৮০% জিনোমের বায়োকেমিক্যাল ফাংশন রয়েছে।[21]

ননকোডিং ডিএনএ-তে এমন ক্রম রয়েছে যা নিয়ন্ত্রক উপাদান হিসাবে কাজ করে, কখন এবং কোথায় জিন চালু এবং বন্ধ করা হয় তা নির্ধারণ করে। এটি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা জিন এক্সপ্রেশনে ব্যাঘাত ঘটলে পরিবেশ অনুযায়ী কোষ কাজ করতে পারবে না। এমনকি gene expression এ ব্যাঘাত ঘটলে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। আরেকটি বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন। ফিলোসোফি অফ বায়োলজিতে ফাংশনের সংজ্ঞা নিয়ে আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি। ফাংশনের সংজ্ঞা গবেষকদের বিশেষ ব্যাখ্যামূলক আগ্রহের উপর নির্ভর করে। তাছাড়া কোনো সিস্টেমে ভালো / খারাপ প্রভাব ফেললে তাকে অবশ্যই ফাংশন বলা হবে। তাহলে এনকোড প্রজেক্ট এর নির্ধারিত বায়োকেমিক্যাল এক্টিভিটি কি ফাংশন হিসেবে ঠিক? অবশ্যই। কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি নন কোডিং ডিএনএ যদি জিন এক্সপ্রেশন না করতো তাহলে মানবদেহে রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায় অর্থাৎ বেচে থাকার জন্য জিন এক্সপ্রেশন গুরুত্বপূর্ণ। এবার আমরা নন কোডিং ডিএনএ এবং আরএনএ র আরও কিছু কাজ দেখবো।

ট্রান্সপোজোনস জিনোমের জটিলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভিদের বিকাশে নন কোডিং ডিএনএ ট্রান্সপোজেবল এলিমেন্টস হিসেবে কাজ করে।[22] সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে নন কোডিং ডিএনএ কোষের নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে ক্রোমোজোমগুলি সঠিকভাবে বান্ডিল করা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে, যা কোষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয়। এবং এই ফাংশনটি অনেক প্রজাতি জুড়ে সংরক্ষিত বলে মনে হচ্ছে।[23] ট্রান্সপোজন ইঁদুর এবং সম্ভবত সব স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে কার্যক্ষমতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষকরা যখন ইঁদুরের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ট্রান্সপোসন ছিটকে দেন, তখন তাদের অর্ধেক ইঁদুরের বাচ্চা জন্মের আগেই মারা যায়। এটি স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য “জাঙ্ক ডিএনএ” এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাংশন।[24] অন্যদিকে নন কোডিং আরএনএ গুলোর জিন এক্সপ্রেশন এ মূল ভুমিকা রয়েছে। নন কোডিং আরএনএ ক্রোমাটিন ফাংশনকে সংশোধন করতে পারে, ঝিল্লিবিহীন নিউক্লিয়ার বডিগুলির সমাবেশ এবং কার্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সাইটোপ্লাজমিক mRNAগুলির স্থায়িত্ব এবং অনুবাদকে পরিবর্তন করতে পারে এবং সিগন্যালিং পাথওয়েতে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এই ফাংশনগুলির অনেকগুলি শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন জৈবিক এবং ফিজিওপ্যাথলজিকাল প্রেক্ষাপটে জিনের অভিব্যক্তিকে প্রভাবিত করে।[25] এছাড়াও সিউডোজিন ( তথাকথিত আবর্জনা ডিএনএ’র টুকরো) কে নন ফাংশনাল বলা যাবে না। স্পষ্টতই, তথাকথিত সিউডোজিনগুলি সত্যিই কার্যকরী, তা এখন কেবলমাত্র আর “আবর্জনা” বা “ফসিল” ডিএনএ হিসাবে বিবেচিত হবে না। সিউডোজিন নিয়ে ২০১০ এ করা গবেষণার উপসংহার তুলে দিচ্ছি এখানে।

The study of functional pseudogenes is just at the beginning. There remain many questions to be addressed, such as the regulatory elements controlling the cell or tissue specific expression of pseudogenes. But, definitely, the so-called pseudogenes are really functional, not to be considered any more as just “junk” or “fossil” DNA. Surely, many functional pseudogenes and novel regulatory mechanisms remain to be discovered and explored in diverse organisms.[26]

আলোচনা

ফিলোসোফি অফ বায়োলজিতে “ফাংশন” সংজ্ঞাটির ধারণা নিয়ে বেশ বিতর্ক চলেছে গত শতক ধরে। তবে এটুকু বলা যায় উপকারী/অপকারী প্রভাব পড়লে তাকে ঐ বস্তুর ফাংশন বলাটা যৌক্তিক। কার্যকারণ ভুমিকা এবং নির্বাচিত প্রভাব এর ধারণা ফাংশন এর মিনিং নির্ধারণে যথেষ্ট সফল। এছাড়াও কার্যকারণ ভুমিকার সমালোচনা হিসেবে উত্থাপিত বিষয়টি” যে হৃদপিণ্ড তো শব্দও তৈরি করে কিন্তু আমরা তো এই শব্দ উৎপন্ন করাকে হৃদপিণ্ডের ফাংশন হিসেবে চিহ্নিত করিনা ” এই যুক্তিটি এনকোড প্রজেক্ট এর ফলাফল এর সাথে তুলনা করা যায় না। কেননা নন কোডিং ডিএনএ এর ফাংশন, হোক সেটা বায়োকেমিক্যাল এক্টিভিটি কিংবা বায়োলজিক্যাল ফাংশন দুটোর ক্ষেত্রেই তা কার্যকারণ ভূমিকার সর্বোচ্চ ধারণাকে ধারণ করে। মিউটেশনাল লোড আর্গুমেন্ট বেশ ফ্রুটফুল হলেও এর দ্বারা নন কোডিং ডিএনএ এর “বায়োলজিকাল ফাংশন” এর ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়না। তাছাড়া সি ভ্যালু প্যারাডক্স এনকোড প্রজেক্ট এর নির্ধারিত ফলাফলে কোনো সমস্যা তৈরি করেনা। তাই জাঙ্ক ডিএনএ কে আর জাঙ্ক বলা যাচ্ছে না।

উপসংহার

এনকোড প্রজেক্ট এর মাধ্যমে আমরা তথাকথিত জাঙ্ক ডিএনএ র ফাংশন সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছি। “ফাংশন ” এর বিভিন্ন মিনিং এর জন্য এনকোড প্রজেক্ট এর সমালোচনা করা হলেও আমরা দেখতে পাচ্ছি এনকোড এর ফলাফল সঠিক এবং এনকোড এর নির্ধারিত ফাংশন এর সংজ্ঞা ও সঠিক এবং জাঙ্ক ডিএনএ জাঙ্ক নয়। ভবিষ্যতের গবেষণা এ বিষয় এ আরও সুস্পষ্ট ধারণা পেতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়।

রেফারেন্স

 

1. WATSON, J., CRICK, F. Molecular Structure of Nucleic Acids: A Structure for Deoxyribose Nucleic Acid. Nature 171, 737–738 (1953). https://doi.org/10.1038/171737a0

2. Bateson, W., & Mendel, G. (2013). Mendel’s principles of heredity. pp 318, Courier Corporation.

3. What is a gene?: MedlinePlus Genetics. (2021, March 22). What Is a Gene?: MedlinePlus Genetics. Retrieved December 19, 2022, from https://medlineplus.gov/genetics/understanding/basics/gene/

4. Palazzo AF, Gregory TR (2014) The Case for Junk DNA. PLoS Genet 10(5): e1004351. doi:10.1371/journal.pgen.1004351

5.Ohno S. (1972). So much “junk” DNA in our genome. Brookhaven symposia in biology, 23, 366–370. https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/5065367/

6. Motoo Kimura, Takeo Maruyama, THE MUTATIONAL LOAD WITH EPISTATIC GENE INTERACTIONS IN FITNESS, Genetics, Volume 54, Issue 6, 6 December 1966, Pages 1337–1351, https://doi.org/10.1093/genetics/54.6.1337

7. Fletcher, John (1837). On the functions of organized beings, and their arrangement. Rudiments of physiology, Part 2. On life, as manifested in irritation. John Carfrae & Son. pp. 1–15. https://archive.org/details/b21301608/page/n196/mode/1up

8. Tipton, J. A. (2013). Philosophical Biology in Aristotle’s Parts of Animals (2014th ed., Vol. 26), pg 14, 74, 78, 97. Springer International Publishing AG. https://doi.org/10.1007/978-3-319-01421-0

9. Robert Cummins. (1975). Functional Analysis. The Journal of Philosophy, 72(20), 741–765. https://doi.org/10.2307/2024640

10. Amundson, R., Lauder, G.V. Function without purpose. Biol Philos 9, 443–469 (1994). https://doi.org/10.1007/BF00850375

11. Ariew, A., Cummins, R., & Perlman, M. (2002). Functions : new essays in the philosophy of psychology and biology. Oxford University Press.

12. Griffiths, P. E. (1993). Functional Analysis and Proper Functions. The British Journal for the Philosophy of Science, 44(3), 409–422. https://doi.org/10.1093/bjps/44.3.409

13. Millikan, R. G. (1989). In Defense of Proper Functions. Philosophy of Science, 56(2), 288–302. https://doi.org/10.1086/289488

14. Neander, K. (1991). Functions as Selected Effects: The Conceptual Analyst’s Defense. Philosophy of Science, 58(2), 168–184. https://doi.org/10.1086/289610

15. Boorse, Christopher (1977). “Health as a Theoretical Concept”. Philosophy of Science. 44 (4): 542–573. doi: https://doi.org/10.1086/288768

16. Bigelow, J., & Pargetter, R. (1987). Functions. The Journal of Philosophy, 84(4), 181–196. https://doi.org/10.2307/2027157

17. Greilhuber, J., Dolezel, J., Lysak, M. ., & Bennett, M. . (2005). origin, evolution and proposed stabilization of the terms ‘genome size’ and ‘C-value’ to describe nuclear DNA contents. Annals of Botany, 95(1), 255–260. https://doi.org/10.1093/aob/mci019

18. Cavalier-Smith, T. (1978). Nuclear volume control by nucleoskeletal DNA, selection for cell volume and cell growth rate, and the solution of the DNA C-value paradox. Journal of Cell Science, 34(1), 247–278. https://doi.org/10.1242/jcs.34.1.247

19. Graur, D. (2017). An Upper Limit on the Functional Fraction of the Human Genome. Genome Biology and Evolution, 9(7), 1880–1885. https://doi.org/10.1093/gbe/evx121

20. Galeota-Sprung, B., Sniegowski, P., & Ewens, W. (2020). Mutational Load and the Functional Fraction of the Human Genome. Genome Biology and Evolution, 12(4), 273–281. https://doi.org/10.1093/gbe/evaa040

21. Kundaje, A., Collins, P. J., Davis, C. A., Khatun, J., Lajoie, B. R., Safi, A., Altshuler, R. C., Cheng, C., Greven, M., Hoffman, M. M., Lassmann, T., Thurman, R. E., Wu, W., Zhuang, J., Gunter, C., Dekker, J., Elnitski, L., Giddings, M. C., Margulies, E. H., … Xue, C. (2012). An integrated encyclopedia of DNA elements in the human genome. Nature (London), 489(7414), 57–74. https://doi.org/10.1038/nature11247

22. Ariel, F. D., & Manavella, P. A. (2021). When junk DNA turns functional: Transposon-derived non-coding RNAs in plants. Journal of Experimental Botany, 72(11), 4132-4143. https://doi.org/10.1093/jxb/erab073

23. Jagannathan, M., Cummings, R., & Yamashita, Y. M. (2018). A conserved function for pericentromeric satellite DNA. Elife, 7, e34122 https://doi.org/10.7554/eLife.34122

24. Modzelewski, A. J., Shao, W., Chen, J., Lee, A., Qi, X., Noon, M., … & He, L. (2021). A mouse-specific retrotransposon drives a conserved Cdk2ap1 isoform essential for development. Cell, 184(22), 5541-5558. https://doi.org/10.1016/j.cell.2021.09.021

25. Statello, L., Guo, C. J., Chen, L. L., & Huarte, M. (2021). Gene regulation by long non-coding RNAs and its biological functions. Nature reviews Molecular cell biology, 22(2), 96-118. https://doi.org/10.1038/s41580-020-00315-9

26.Yan-Zi Wen, Ling-Ling Zheng, Liang-Hu Qu, Francisco J Ayala & Zhao-Rong Lun (2012) Pseudogenes are not pseudo any more, RNA Biology, 9:1, 27-32, DOI: 10.4161/rna.9.1.18277

Asief Mehedi

Assalamualaikum to all.My name is Asief Mehedi . I am an informal philosophy student. Let's talk about comparative theology, we work to suppress atheism. Help us to suppress atheism and come forward to establish peace.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button