সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে নির্ভরশীলতার যুক্তি; Argument from contingency

সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে নির্ভরশীলতার যুক্তি; Argument from contingency

এই আর্গুমেন্টে প্রথমে আমাদের পসিবল এক্সিস্টেন্স এবং ইম্পসিবল এক্সিস্টেন্স সম্পর্কে জানতে হবে। পসিবল এক্সিস্টেন্স বলতে বুঝানো হয় যা কিছুর অস্তিত্ব থাকতে পারে। আর ইম্পসিবল এক্সিস্টেন্স বলতে বুঝানো হয় যা কিছুর অস্তিত্ব থাকতে পারেনা। পসিবল এক্সিস্টেন্স  দুই প্রকার।  ১.লজিক্যালি পসিবল। ২.সাইন্টেফিক্যালি পসিবল। যেমন, একজন মানুষের কি ভিন্ন কালারের শার্ট থাকতে পারে? বা ভিন্ন কালারের চুল থাকতে পারে? অবশ্যই পারে। কিন্তু ১+১=৩ হতে পারে? অবশ্যই না! এটা প্রত্যেক পসিবল ওয়ার্ল্ডেই ইম্পসিবল। আবার স্কয়ার সার্কেল কি থাকতে পারে? অবশ্যই না! কারণ এটাও ল অফ লজিককে ভায়োলেট করে। 

অন্যদিকে যদি বলা কোনো মানুষ কি কোনো প্রকার প্রযুক্তি ছাড়া আকাশে উড়তে পারবে? অবশ্যই না। কারণ এটা সাইন্টেফিক্যালি পসিবল না। তবে এটা লজিক্যালি পসিবল। হয়তো অন্য কোনো পসিবল ওয়ার্ল্ডে আমরা চাইলেই আকাশে উড়তে পারি। যা কিছু সাইন্টেফিক্যালি পসিবল না তার মানে এই না যে সেটা লজিক্যালিও পসিবল না।  যেমনঃ কোনো প্রকার প্রযুক্তি ছাড়া আমি মানুষ আকাশে উড়তে পারবো। এটা সাইন্টেফিক্যালি পসিবল না। কিন্তু লজিক্যালি এটা পসিবল। 

কন্টিনজেন্ট বিং ও নেসেসারি বিং 

কন্টিনজেন্ট 

A contingent being is something that could have not existed, or it has other properties. I might never have been born, so I am contingent. Examples: Man, Univers, Apple, Bird, etc. 

আমাদের মহাবিশ্বের সব কিছুই পর-নির্ভর। আমরা যা কিছু অনূভব করি, পর্যবেক্ষণ করি তা কোনো না কোনোভাবে পর-নির্ভরশীল বা কন্টিনজেন্ট।

কোনো বস্তু যদি তার অস্তিত্বের জন্য অন্য কিছুর নির্ভর করে, এটাই পর-নির্ভশীলতা। যা কিছু তার অস্তিত্বের জন্য অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল তার অস্তিত্ব অনিবার্য নয়। এবং তা অপ্রয়োজনীয়। যেমন, আমাদের মহাবিশ্ব। মহাবিশ্বের অস্তিত্ব নেসেসারি নয়। এটা নাও থাকতে পারতো। আপনি এখন যে ডিভাইস থেকে লিখাটি পড়ছেন এটা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়। কারণ এরকম হাজারো অবস্থা আমরা কল্পনা করতে পারি। এই ডিভাইসটি তো প্রস্তুতকারি নাও বানাতে পারতো অথবা আপনি এটা নাও কিনতে পারতেন। আবার যেভাবে আছে সেভাবে না থেকে অন্যভাবেও থাকতে পারতো। যে জিনিস এহেন বৈশিষ্ঠ ধারণ করে তার অস্তিত্বের জন্য ব্যখা প্রয়োজন। কারণ আপনি জিজ্ঞেস করতেই পারেন যে এটা তো নাও থাকতে পারতো, তাহলে কেন আছে? এটা কি নিজে নিজে সৃষ্টি হয়েছে? নাকি কেউ এটাকে সৃষ্টি করেছে? এটার সেইপ এমন কেন হলো? কেউ এটাকে এই সেইপে রুপ দিয়েছে নাকি এটা নিজেই নিজের সেইপ এভাবে নির্ধারণ করেছে? 

সাধারণত আমরা প্রয়োজনীয় বলতে আমরা বুঝি যা আমাদের দরকার। কিন্তু  ফিলোসফিতে যখন কোনো কিছুর অস্তিত্বকে প্রয়োজনীয় বলা হয়, তখন তা অনিবার্য অস্তিত্ব। অর্থাৎ, যার অস্তিত্ব থাকতেই হবে। অর্থাৎ, যার অস্তিত্ব না থাকাটা অসম্ভব বা এমনটা ভাবাও যায়না।  

নেসেসারি বিং

নেসেসারি বিং বলতে বুঝায় কারণহীণ কারণ। মুসলিম দার্শনিক ইবনে সিনা নেসেসারি এক্সিস্টেন্সকে ব্যাখ্য করতে গিয়ে বলেন, 

So we say that the necessary existence is uncaused, whereas a ‘contingent existence’ is caused, and that the necessary existence is necessary in all possible ways and perspectives conceivable. Its existence cannot be a result of the existence of anything else. If that were so, it would be as if each of those two things (i.e. the supposed necessary existence in question and the thing which it results from) are equal in terms of existence and interdependent of each other. And it is not cogently possible for the necessary existence’s existence to be as a result of many things. The necessary existence cannot cogently be ‘the reality’ that has any common aspect of it (with that which is not necessary). Thus, in order to be classified as ‘necessary’, the necessary existence cannot be added upon, constructed, mutable, divisible, or one of the multiple contributors to its own existence which is specific to it. [1]Ibn Sīnā, A. (1997) Al-Shifā’. Markaz al-Nashr, p. 50.

What is the cause of contingent? 

শূন্য থেকে সৃষ্ট? 

শূন্য বলতে বুঝানো হয় যাবতীয় সবকিছুর অনুপস্থিতি। অর্থাৎ, সকল পদার্থ,শক্তি, সময় যাবতীয় সবকিছুর অনুপস্থিতি। অথবা শূন্য মানে কোনো কারণজনিত পরিবেশের অনুপস্থিতিকেও বোঝায়। এরকম একটা অবস্থা থেকে কোনো কিছুই সৃষ্টি হতে পারেনা। কেননা অস্তিত্বহীন কিছু থেকে কিভাবে একটা কিছু অস্তিত্বে আসতে পারে!?  শূন্য থেকে কিছুই আসেনা। ০+০+০+=০ই হবে! কখনো ৩ হবেনা। 

ধরুন, * গতকাল রাতে আপনার বন্ধুর বিয়েতে খুব মজা করে কাচ্ছি খেলেন। কিন্তু সেটা কিছুই ছিল না!

* সেদিন পরিক্ষার হলে আমার পাশে কেউ বসেনি। কিন্তু তারা আমাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেখিয়েছিল

* আপনাকে কোনো এক নির্জন জায়গায় অন্ধাকার ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। দরজা-জানালা সব বন্ধ। আর নির্জন এলাকা বলে কেউ আপনার চিৎকারও শুনতে পাচ্ছেনা। আপনি বসে বসে  ভাবছেন কিভাবে সেখান থেকে বের হবেন! কিন্তু কোনো ভাবেই উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আপনি ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুম থেকে উঠেই দেখলেন সেই অন্ধকার নির্জন ঘরে একটা টেবিল রাখা,তার উপর একটা ল্যাপটপ,ইন্টারনেট সংযোগ,বিদ্যুৎ সবই চলে আসছে। এটা কি কিছুতেই সম্ভব ? 

উপরের তিনটি যুক্তি একজন সুস্থ বিবেকবান, র‍্যাশনাল মানুষ মাত্রই স্বীকার করবে এটা  একেবারেই অসম্ভব এবং হাস্যকর। ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব ?’ ব্যাপারটা ঠিক এরকমই অসম্ভব ও হাস্যকর !  

নাস্তিকরা দাবী করতে পারে কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম বা শূন্যতায় কোনো কণিকা শূন্য থেকে অস্তিত্বশীল হতে পারে। কিন্ত কোয়ান্টম ভ্যাকুয়াম বা শূন্যতা কোনো খালি যায়গা নয়। সেখানে পদার্থের নিয়ম চলে। কোয়ান্টম শূন্যতা হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী শক্তির অবস্থা। আর সেই শক্তি থেকেই প্রতিনিয়ত জোড়ায় জোড়ায় তৈরি হয় কণা ও প্রতিকণা। যারা পুনরায় ধ্বংস হয়ে আবার শক্তিতে পরিণত হয়ে যায়। সুতরাং কোয়ান্টম ভ্যাকুয়াম বা শূন্যতা মানে ভৌত কিছু। [2]Physics – The Force of Empty Space (aps.org)

স্ব-সৃষ্ট

কন্টিনজেন্ট বা নির্ভরশীল যা কিছু আছে তারা কি নিজেরাই নিজের সৃষ্টি করতে পারবে? যেমন, আমি কি নিজেই নিজেকে ক্রিয়েট করতে পারবো? একটা আপেল কি নিজেই নিজেকে ক্রিয়েট করতে পারেব? ইউনিভার্স কি নিজেই নিজেকে ক্রিয়েট করতে পারবে? 

সৃষ্টি বলতে বুঝানো হয় কোনো কিছু অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আসা। অর্থাৎ যার অস্তিত্ব পূর্বে ছিলোনা পরবর্তীতে অস্তিত্বে এসেছে। তার মানে এখান থেকে বুঝতে পারছি যে, কোনো কিছু সৃষ্টি হতে হলে সৃষ্টির পূর্বে তাকে অনস্তিত্বে থাকতে হবে। 

এখন কোনো বস্তু বা সত্তা যদি নিজেই নিজেকে ক্রিয়েট করে তাহলে সে অস্তিত্বে এসেছে অনস্তিত্ব থেকে। অস্তিত্বশীল হওয়ার পূর্বে সে ছিলো অস্তিত্বহীণ। আবার, principle of sufficient reason (PSR) অনুযায়ী সব কিছুর অবশ্যই কারণ থাকবে। তাহলে কোনো বস্তু বা সত্তার অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আসার জন্যও কারণ থাকা লাগবে। 

এখন কোনো বস্তু বা সত্তা যদি নিজেই নিজের অস্তিত্বের কারণ হয়, তাহলে অস্তিত্বশীল হওয়ার জন্য অস্তিত্বে আসার পূর্বে অস্তিত্বের কারণ হিসেবে তাকে অস্তিত্বশীল হতে হচ্ছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে কোনো কিছু যদি নিজেই নিজেকে ক্রিয়েট করে তাহলে একই সময় তাকে অস্তিত্বে থাকা লাগবে আবার অনস্তিত্বে থাকা লাগবে। যা লজিক্যালি ইম্পসিবল। 

উদাহারণ স্বরূপ, ‘ক’ নামক ব্যক্তি জন্ম নেওয়ার আগেই কি ‘ক’ নিজেকে সৃষ্টি করতে পারবে? বিষয়টা আরো একটু সহজভাবে ব্যাখ্যা করি। ধরুন, ‘ক’ নামক ব্যক্তি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে। এখন সৃষ্টি মানে যেহেতু অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আসা তার মানে ‘ক’ নামক ব্যক্তিও অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এসেছে। অর্থাৎ, অস্তিত্বে আসার পূর্বে ‘ক’ ছিলো অস্তিত্বহীন। 

principle of sufficient reason (PSR) নিয়ম অনুযায়ী ‘ক’ অস্তিত্বে আসতে হবে অবশ্যই একটা কারণ লাগবে। যেহেতু ‘ক’ নামক ব্যক্তি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে সেহেতু ‘ক’ নামক ব্যক্তির কারণ সে নিজেই। সুতরাং ‘ক’ নামক ব্যক্তি অস্তিত্বে আসার আগেই নিজের অস্তিত্বের কারণ হিসেবে অস্তিত্বে থাকতে হচ্ছে। 

সুতরাং, ‘ক’ নামক ব্যক্তি যদি নিজেই নিজেকে ক্রিয়েট করে তাহলে একই সময় তাকে অস্তিত্বে থাকা লাগবে আবার অনস্তিত্বে থাকা লাগবে। যা লজিক্যালি Low of Logic এর দ্বিতীয় সূত্র Low of Non-contradiction কে ভায়োলেট করে। Principle of noncontradiction (PNC) নামেও পরিচিত। Low of Non-contradiction বলতে বুঝানো হয় সাঙ্গর্ষিক কোনো কিছুই থাকতে পারেনা। যেমন,  N= True, N= False.   

এখানে N একই সাথে সত্য আবার মিথ্যা। কোনো জিনিস একই সময় পারস্পরিক দ্বন্দ্বমূলক অবস্থায় থাকা পসিবল না।  

বাহ্যিক কারণ কি অসীম হতে পারে? 

অসীম বলতে, সীমাহীন,অন্তহীন বা যে কোনো সংখ্যার চেয়ে বড় কিছুকে বুঝায়।

কন্টিজেন্ট কোনো কিছুর অস্তিত্ব অসীম হতে পারেনা। কেননা প্রকৃত অসীম বাস্তবে এক্সিস্ট করেনা। যদি কোনো সৃষ্ট বস্তুর কারণ অসীম হয় তাহলে সে বস্তু সৃষ্টি বা বর্তমানে আসবেনা। তাও শুধুমাত্র আলোচনার খাতিরে যদি আমরা ধরে নেই যে মহাবিশ্বের অস্তিত্বের পিছনে অসীম সংখ্যক কারণ রয়েছে। কিন্তু আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন অসীমের এই ব্যখ্যায় আপনি প্রশ্নকারিকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন না। 

উদাহারণ স্বরূপ, আমাদের মহাবিশ্ব যদি “X” হয়, আর একে সৃষ্টি করে থাকে “X1”, আবার “X1” কে যদি সৃষ্টি করে “X2” আর এইভাবে যদি অনন্তকাল চলতে থাকে তাহলে “X” কখনোই অস্তিত্বে আসতে পারবে ? না কখনোই পারবেনা ! কেননা “X” অস্তিত্বে আসার জন্য নির্ভর করে “X1″এর উপর, আবার “X1” অস্তিত্বে আসার জন্য নির্ভর করে “X2″এর উপর এবং এভাবে অনন্তকাল চলতে থাকে। “X” অস্তিত্বে আসার জন্য নির্ভর করে অনাদিকাল ধরে চলা সৃষ্ট কিছুর উপর। এইভাবে অনাদিকাল ধরে চলা সৃষ্ট কিছুর উপর নির্ভর করলে “অনবস্থা দোষ”(Infinite regress) দেখা দিবে।  সুতরাং মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসার জন্য অসীম সংখ্যক কারণ বা মহাবিশ্ব অসীম হওয়া পসিবল না। বরং মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য শুরুতে এমন একটা কারণ থাকা অনিবার্য যেটা কারণহীন কারণ।

কিন্তু কোনো কিছু অস্তিত্বে আসার পেছনে যদি অসীম সংখ্যক কারণের উপর নির্ভরশীল হয় তাহলে তা ইনফিনিটি রিগ্রেস এর কারণে কখনোই বর্তমানে আসতে পারবেনা। যা আমরা উপরের উদাহারণ থেকেই বুঝতে পেরেছি যে, অসীম সংখ্যক কারণ ঘটলে ইনফিনিটি রিগ্রেস ঘটবে, এবং বর্তমানেই আসা সম্ভব না। ইনফিনিটি সম্পর্কে আরো বিষদ আলোচনা করা হয়ছে, সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব বিষয়ক আরেকটি আর্টিকেলঃ [3]সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ; মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য ,প্রকৃতি বনাম আল্লাহ! – Faith … Continue reading

মুসলিম দার্শনিক ইবনে সিনা বলেন, 

The set of contingent existences has culminated in the need for a necessary existence outside of the set-in order to explain it. [4]The Burhan; Page;7 

অসৃষ্ট থেকে সৃষ্ট 

যেহেতু কন্টিনজেন্ট নিজে নিজে সৃষ্ট হতে পারেনা, শূন্য থেকেও সৃষ্টি হতে পারেনা এবং এর কারণ অসীমও হতে পারেনা তাহলে এর বিকল্প কী? বিকল্প হচ্ছে এমন একটি কারণ যা কারণহীন কারণ (অস্তিত্বের জন্য কোনো কিছুর মুখাপেক্ষি নয়) বা অনাদী সত্তা। অর্থাৎ যা সব সময়ই অস্তিত্বশীল (চিরন্তন)। পবিত্র কুরআনের সূরা ইখলাসে এই সত্যতা জ্বল জ্বল করছে। 

পবিত্র কুরআনে সূরা ইখলাসে বলা হয়েছে, 

বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী।তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই। [5]সূরা ইখলাস; ১১২ঃ১-৪ 

নির্ভরশীলতার যুক্তি 

নির্ভরশীলতা যুক্তিতে এটাই দেখানো হয় যে আমাদের এই মহাবিশ্বের যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ করি বা অনুভব করি তার সব কিছুই পর-নির্ভরশীল। আর এই কারণেই এসবের অস্তিত্বের জন্য ব্যাখ্যা প্রয়োজন। আর একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা হচ্ছে, পর-নির্ভরশীল এমন কিছুর উপর নির্ভরশীল যার অস্তিত্ব এই মহাজগৎ থেকে স্বাধীন। 

অন্যথায় পর-নির্ভরশীল এর কারণগুলোর সাথে আরো একটি পর-নির্ভরশীল কারণ যুক্ত হবে এবং কারণের এই ধারাবাহিকা অসীমকাল ধরেই চলতে থাকবে। যার ফলে ইনফিনিটি রিগ্রেস ঘটবে। উপরে ইতিমধ্যে এই বিষয়ে বিস্তারিত লিখা হয়ছে। 

একটা দৃশ্যপট কল্পনা করুন, আপনি আর আপনার বন্ধু ফজরের নামাজ শেষে শীতের  স্নিগ্ধ সকালে মেঠো পথের প্রন্তরে হেঁটে চলেছেন। হটাৎ একটা ফুটবল লক্ষ করলেন। ফুটবলটি দেখে নিশ্চয়ই আপনারা এমনটা কল্পনা করবেন না যে এটা এমনি এমনি এখানে চলে এসেছে। আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগবে ফুটবলটা এখানে কেন এসেছে? এর সম্ভাব্য ব্যাখ্যাটা হতে পারে, কেউ হয়তো ভুল করে এখানে ফেলে গিয়েছে। কারণ ফুটবলটি এখানে থাকার কথা নয়। এইযে ফুটবলটি এখানে থাকার জন্য একটা ব্যাখ্যার প্রয়োজন হচ্ছে তার মানে এটা পরনির্ভরশীল। 

আবার কোনো জিনিসের উপাদানগুলোকে যদি যেভাবে আছে তার বিপরীতেও ব্যাখ্যা করা যায় সেক্ষেত্রেও সেটা পর-নির্ভর। নিচের উদাহারণটি লক্ষ্য করুণ,

মৃদু আলো আর সোডিয়াম বাতির ঝলসানো রাতের কোনো এক শূন্য রাস্তায় আপনি আর আপনার বন্ধু হেঁটে চলেছেন দিকভ্রান্ত পথিকের মতো। টিএসসির মোড়ে আসতেই আপনার চোখে পড়লো ফুল দিয়ে সজ্জিত করা তিনটি শব্দ; “আমি তোমাকে ভালোবাসি”। আপনার ভেতরে প্রশ্ন জাগতে পারে, ফুল গুলো এভাবে সজ্জিত না করে অন্যভাবেও তো করা যেত! “আমি তোমাকে ভালোবাসি” এ কথার পরিবর্তে তো ” আমি তোমাকে পছন্দ করি” এভাবেও সজ্জিত করা যেত। ফুলগুলো যেহেতু অন্যভাবে সজ্জিত করা সম্ভব তার মানে এখানে একটা বাহ্যিক শক্তি ফুলগুলো এভাবে সজ্জিত করেছে। যেহেতু ফুলগুলো এভাবে সজ্জিত না থেকে অন্যভবে সজ্জিত থাকতে পারতো, তাই কেন এভাবে আছে এটার একটা ব্যাখ্যা প্রয়োজন-তাই ফুলগুলো ওভাবে সজ্জিত থাকাটা হচ্ছে পর-নির্ভরশীল। 

এখানে ফুলগুলো যেহেতু নিজে নিজে এভাবে সজ্জিত হয়নি তাই এভাবে সজ্জিত হওয়ার জন্য একটা ব্যাখ্যা প্রয়োজন। ফুলগুলো গাছে থাকার কথা ছিলো, কেনই বা রাস্তায় এভাবে সজ্জিত অবস্থায় রয়েছে? কেউ যদি বলে ফুলগুলো এমনি এমনি এভাবে সজ্জিত হয়েছে আপনি নিশ্চয় তাকে হেমায়েতপুর পাঠানোর ব্যাবস্থা করবেন। এখানে সম্ভাব্য ব্যাখ্যাটি হতে পারে এমন যে,কেউ একজন গাছ থেকে ফুলগুলো তুলে এনেছে, তারপর রাস্তার উপর এগুলোর বিন্যাস নির্ধারণ করেছে সজ্জিত করেছে। এটাই হচ্ছে ফুলগুলো ওভাবে সজ্জিত হওয়ার বাহ্যিক কারণ। 

আমারা যা কিছু পর্যবেক্ষণ করি, অনুধাবণ,অনুভব করি তা যদি পর-নির্ভরশীল হয় তাহলে সেগুলো আমরা নিন্মে দেওয়া তিনটির যে কোনো একটির সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে পারি।  

  1. এই মহাবিশ্বের যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ করি, যা কিছু আমরা অনুভব করি তা চিরন্তন, অনিবার্য এবং স্বাধীন 
  2. এই মহাবিশ্বের যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ করি, যা কিছু আমরা অনুভব করি তা অন্য এক পরনির্ভরশীলের উপর নির্ভরশীল। 
  3. এই মহাবিশ্বের যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ করি, যা কিছু আমরা অনুভব করি তা নিজ থেকেই অস্তিত্ববান, চিরন্তন এবং স্বাধীন। 

এই মহাবিশ্বের যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ করি, যা কিছু আমরা অনুভব করি তা চিরন্তন, অনিবার্য এবং স্বাধীন

আমাদের মহাবিশ্বে যা কিছু আছে, যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ করি, অনুভব করি তা কন্টিনজেন্ট বা নির্ভরশীল। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে বিস্তারিত লিখা হয়েছে উপরে। এখানে যা কিছু অস্তিত্বশীল তা অস্তিত্বে না থাকলে কোনো সমস্যা হতোনা। এগুলা নেসেসারি নয়। এগুলো নিজেদের অস্তিত্বের ব্যখ্যা নিজেরা দিতে পারেনা। যেভাবে আছে তার বিপরিতভাবেও থাকতে পারতো, উপাদানগুলোকে চাইলেই আমরা অন্যভাবে কল্পনা করতে পারি, অস্তিতবের আসার জন্য এগুলো অন্যের উপর নির্ভর করে। উপরের দাবিগুলোকে মাথায় রেখে চিন্তা করলে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, আমাদের মহাবিশ্ব বা এখানে অস্তিত্বশীল যা কিছু আছে তা চিরন্তন, অনিবার্য এবং স্বাধীন নয়। 

আমাদের প্রায় সকলের পোষা পাখি,বিড়াল আছে। এই পোষা প্রাণিগুলোকি নিজেদের প্রয়োজন নিজেরা মেটাতে সক্ষম? অবশ্যই না। তারা এর জন্য অন্য কিছুর উপর নির্ভর করে। 

কোনো জিনিসের রুপগত সীমাবদ্ধতাও পরনির্ভরশীলতার অন্যতম বৈশিষ্ঠ। আমাদের চারপাশে যেসকল বস্তু রয়েছে তাদের আকৃতি, রং, তাপমাত্রা, ওজন এগুলো যেভাবে আছে ওভাবে নাও থাকতে পারতো। আমরা সেগুলোকে যেভাবে আছে তার বিপরীতভাবে চিন্তা করতে পারি। তার মানে এগুলো যেভাবে আছে সেটা কেউ নির্ধারণ করে দিয়েছে।  তা না হলে, কেন এই বস্তু গুলোর আকার যেভাবে আছে সেভাবে না থেকে অন্যভাবে হয়নি? কেন বস্তুগুলোর রং অন্য ধরণের হয়নি? বস্তুগুলোতে নিজেই নিজের সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ করেনি। একটা ফুটবল হাতে নিয়ে নিশ্চয় আপনি এ কথা বলবেন না যে, ফুটবল নিজেই তার রং, আকার, ভর নির্ধারণ করেছে! সুতরাং এই রুপগত সীমাবদ্ধতাই প্রমাণ করে এগুলো পর-নির্ভর। 

পরনির্ভরশীলতার অন্যতম আরেকটি বৈশিষ্ঠ হচ্ছে সসীমতা। আমাদের এই মহাবিশ্ব এবং এর ভেতরে যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ করি, যা কিছু আমরা অনুভব করি তার সব কিছুই সসীম। যেহেতু প্রকৃত অসীম মেটাফিজিক্যালি এক্সিস্ট করেনা তাই মহাবিশ্ব অসীম হওয়ার প্রশ্নই উঠেনা।  

এই মহাবিশ্বের যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ করি, যা কিছু আমরা অনুভব করি তা অন্য এক পরনির্ভরশীলের উপর নির্ভরশীল। 

আমাদের এই মহাবিশ্ব এবং এর ভেতরে যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষন করি, অনুভব করি তা অন্য কোনো নির্ভরশীলের উপর নির্ভরশীল হতে পারেনা। তবুও আলোচনার খাতিরে যদি ধরে নেওয়া হয় যে, অন্য কোনো নির্ভরশীলের উপর নির্ভরশীল, এহেন জবাবে প্রশ্নকারী সন্তুষ্ট হবেনা। কারণ আপনি যখন বলবেন মহাবিশ্ব অন্য এক নির্ভরশীল x এর উপর নির্ভর করে। একজন যৌক্তিক মানুষ মাত্রই আবার প্রশ্ন করবে তাহলে নির্ভরশীল x কার উপর নির্ভরশীল। এভাবে শুরু হবে অন্তহীন পিছনে চলতে থাকা এক অসীম লুপ। 

এই লিখাটির ‘বাহ্যিক কারণ কি অসীম হতে পারে?’ এই অংশটুকু আপনি ভালোভাবে পড়লে ইতিমধ্যেই জানার কথা যে অন্য কোনো নির্ভরশীলের উপর মহাবিশ্ব নির্ভরশীল নয়। 

এই মহাবিশ্বের যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ করি, যা কিছু আমরা অনুভব করি তা নিজ থেকেই অস্তিত্ববান, চিরন্তন এবং স্বাধীন।

যেহেতু উপরের দুটির একটিও আমাদের সঠিক ব্যাখ্যা প্রধান করেনি এবং এই এই মহাবিশ্বের যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ করি, যা কিছু আমরা অনুভব করি তা পর-নির্ভশীল। সুতরাং এদের জন্য একটা যৌক্তিক ব্যাখ্যা প্রয়োজন। আর সেই যৌক্তিক ব্যাখ্যাটি হচ্ছে এগুলো এমন কিছুর উপর নির্ভরশীল যা তার অস্তিত্বের স্বাধীন, স্ব-নির্ভর। অর্থাৎ যার অস্তিত্ব নেসেসারি। যদি তা না হয় এসবের অস্তিত্বের জন্য ব্যখা লাগবে। কিন্ত নেসেসারি বিং ছাড়া অস্তিত্বের এই ব্যাখ্যা ইনফিনিট রিগ্রসে পতিত হবে।  সুতরাং আমরা এটা বলতেই পারি যে, মহাবিশ্ব এবং আমরা যা কিছু পর্যবেক্ষণ এবং অনুভব করি তার অস্তিত্বের এমন এক নেসেসারি সত্তা যে তার অস্তিত্বের জন্য স্বাধীন, স্ব-নির্ভর।  

নেসেসারি বিং থেকে গড 

আমরা গডকে বা সৃষ্টিকর্তা ডিফাইন করি, সবচেয়ে পাওয়ারফুল, সর্বজ্ঞ, এক হিসেবে। 

গড কেন সর্বশক্তিমান 

সর্বশক্তিমান বলতে বুঝানো হয়, যিনি এমন শক্তিমান যার চাইতে শক্তিমান কোনো কিছুকে কল্পনা করা যায়না।  সৃষ্টিকর্তা যদি সর্বশক্তিমান না হয় তাহলে তার মধ্যে লিমিটেশন আছে। তিনি চাইলে আরো শক্তি অর্জন করতে পারেন। তখন আমরা চাইলে তার চাইলে আরো বেশি শক্তিমান কোনো সত্তাকে চিন্তা করতে পারি। যেহেতু তার মধ্যে লিমিটেশন আছে সেহেতু তিনি কন্টিনজেন্ট বা পর-নির্ভরশীল। পরনির্ভরশীল সত্তার অস্তিত্বের জন্য আবার ব্যাখ্যা প্রয়োজন। সৃষ্টিকর্তা যদি কোনো পরনির্ভরশীল হয়ে থাকে তাহলে তিনি কার উপর নির্ভরশীল? তিনি যার উপর নির্ভরশীল তিনিও কি পর-নির্ভরশীল? যদি তিনিও পর-নির্ভরশীল হয় তাহলে তার অস্তিত্বের ব্যাখ্যা প্রয়োজন। এভাবে একের পর এক ব্যখ্যা দিতে গেলে আমরা ইনফিনিটি রিগ্রেসে পড়ে যাবো। সুতরাং শুরুতে এমন একজন সত্তা থাকতে হবে যার চেয়ে শক্তিমান আর কেউ নেই। তাই নেসেসারি বিং অবশ্যই সর্বশক্তিমান হতে হবে। 

গড কেন সর্বজ্ঞ

সৃষ্টিকর্তা সর্বজ্ঞ বলতে বুঝানো হয় যে সৃষ্টিকর্তা এমন সর্বজ্ঞ যে তার চাইতে বেশি জানে এমন কোনো সত্তা নেই। তার চাইতে সব জান্তা আর কোনো সত্তাকে আমরা কল্পনা করতে পারিনা। এখন গড যদি সর্বজ্ঞ না হয় তাহলে তার মধ্যে লিমিটেশন আছে। তিনি চাইলে আরো নলেজ অর্জন করতে পারবেন। সুতরাং তিনি নির্ভরশীল হয়ে যাবে কিন্ত সেটা পসিবল না। এখানেও ইনফিনিটি রিগ্রেসের দৃশ্যপটটি চিন্তা করুন।  

একাধিক গড কেন পসিবল না? 

একটা দৃশ্যপট কল্পনা করুন যে, দুজন নেসেসারি বিং এক্সিস্ট করে। দুজনেরই ফ্রি উইল আছে। আর সে কারণেই দুজনে দুইরকম ইচ্ছা করলো। নেসেসারি বিগ-১ ইচ্ছা করলো পুরো ইউনিভার্স থাকবে কালো। আর নেসেসারি বিং-২ ইচ্ছা করলো পুরো ইউনিভার্স থাকবে-সাদা। তো এখন দুজন গডের ইচ্ছা কি প্রতিফলিত হওয়া পসিবল? অবশ্যই না! কারণ এটা ল অব লজিককে ভায়োলেট করে। 

এভার দৃশ্যপটটি ঠিক উল্টোভাবে চিন্তা করুন। ধরুন দুইজনের একজনের উইলও প্রতিফলিত হলো না। এটা কি পসিবল? এটাও পসিবল না। 

এবার আরেকটি দৃশ্যপট কল্পনা করুন, একজন নেসেসারি বিং এর ইচ্ছা পূরণ হয়েছে, অন্যজনেরটা পূরণ হয়নি। তাহলে যার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে তিনি যার ইচ্ছা পূরণ হয়নি তার চাইতে বেশি শক্তিমান এবং যার ইচ্ছা পূরণ হয়নি তার লিমিটেশন আছে। গড যেহেতু সর্বশক্তিমান, তারচাইতে শক্তিমান আর কিছু নেই, সেহেতু যার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে তিনিই নেসেসারি বিং এবং যার ইচ্ছে পূরণ হবেনা তিনি কন্টিনজেন্ট বা পর-নির্ভরশীল।

সুতরাং নেসেসারি বিং হবে একজন।    

Sazzatulmowla Shanto

As-salamu alaykum. I'm Sazzatul mowla Shanto. Try to learn and write about theology and philosophy. SEO (search engine optimization) expert and professional Graphic designer.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button

Adblock Detected

Please turn off the ad blocker