সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে নির্ভরশীলতার যুক্তি; Argument from contingency
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে নির্ভরশীলতার যুক্তি; Argument from contingency
মানব মনের স্বাভাবিক একটি প্রশ্ন হলো এই মহাবিশ্বের উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে। মহাবিশ্বের উৎপত্তির পিছনে কি কোনো বুদ্ধিমান সত্তার হাত রয়েছে? সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব কি সত্যিই আছে? দুনিয়ার এই জীবনই কি একমাত্র জীবন, নাকি এরপরেও কোন জীবন আছে? মৃত্যুর সাথে সাথেই কি এই জীবনের সমাপ্তি, নাকি এর পরেও পরকালের জীবনের জের টানতে হবে? মানব মনের স্বাভাবিক এসব প্রশ্নের জের ধরে যুগে যুগে মানুষের মধ্যে নানারকম মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। এসব প্রশ্নের ভিত্তিতে প্রধানত দুটি বিপরীতমুখী মতবাদ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। একটি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের পক্ষে এবং অন্যটি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের বিপক্ষে। স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে মানব ইতিহাস জুড়ে বিতর্ক হয়ে আসছে। আস্তিক এবং নাস্তিকরা একইভাবে এই বিষয়ে তাদের অবস্থানকে ন্যায্য করার জন্য তাদের স্ব স্ব যুক্তি, তথ্য উপস্থান করেছে। এখানে আমি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের পক্ষের কিছু যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আর্গুমেন্ট ফ্রম কন্টিনজেন্সি বা নির্ভরশীলতার যুক্তি
এই আর্গুমেন্টটি ভালোভাবে বুঝতে হলে কিছু ফিলোসফিক্যাল টার্ম সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। যেমন পসিবল এক্সিস্টেন্স, কন্টিনজেক্ট এক্সিস্টেন্স, নেসেসারি এক্সিস্টেন্স, ইনিশিয়াল প্রপার্টিস, অ্যাকসিডেন্টাল প্রোপার্টিস, পিএসআর ইত্যাদি।
পসিবল এক্সিস্টেন্স এবং ইম্পসিবল এক্সিস্টেন্স কি?
পসিবল এক্সিস্টেন্স বা সম্ভাব্য অস্তিত্ব হলো একটা হাইপোথেটিক্যাল সিনারিও বা কোনো অস্তিত্বের অল্টারনেটিভ সিনারিও। অর্থাৎ, কোনো কিছু যেভাবে আছে ঠিক সেভাবে না থেকে অন্যভাবেও থাকতে পারতো। যেমন, আপনি যে মোবাইলটি ফোনটি ব্যাবহার করছেন, সেটার রং কালো। মোবাইলটি কালো না হয়ে সাদা বা নীল অথবা অন্য যে কোনো রঙ এর হতে পারতো। এটাই হচ্ছে সম্ভাব্য অস্তিত্ব। মোবাইলটি কালো রঙ এর না হয়ে অন্য যত রঙ এর হতে পারতো সেগুলো সব মোবাইলটির বর্তমান অবস্থার অল্টারনেটিভ সিনারিও। এক্ষেত্রে অল্টারনেটিভ সিনারিও অবশ্যই ল অফ লজিকের সূত্র অনুসরণ করতেই হবে। অর্থাৎ, কোনো একটা অস্তিত্বের সে সম্ভাব্য অপশনগুলো আছে বা অল্টারনেটিভ যে অপশনগুলো থাকতে পারতো সেগুলো লজিক্যালি কন্ট্রাডিকশমূলক হতে পারবেনা। যেমন, আমি যে মোবাইলটি ব্যাবহার করছি সেটা কালো রঙ এর। মোবাইলটি কালো ব্যতিত অন্য কালারেরও হতে পারতো। কিন্তু যদি বলা হয় মোবাইলটি একই সাথে কালো এবং সাদা বা একই সাথে কালো এবং অন্য যে কোনো রঙ এর তাহলে তা লজিক্যালি কন্ট্রাডিকশন করবে।
অথবা এভাবেও উদাহারণ দেওয়া যেতে পারে যে, কোনো একজন লোক বিবাহিত। কিন্তু একই সাথে সে বিবাহিত আবার অবিবাহিত হতে পারবেনা, কারণ তা লজিক্যালি কন্ট্রাডিক্ট করে। সুতরাং, ফিলোসফির মোডাল লজিক এর ভিত্তিতে যেই জিনিসগুলো কোনো লজিক্যাল কন্ট্রাডিকশন তৈরি করেনা, সেগুলো সকল জিনিসই পসিবল। আর যেই জিনিসগুলো লজিক্যাল কন্ট্রাডিকশন তৈরি করে সেগুলো ইম্পসিবল। কোনো কিছু লজিক্যাল কন্ট্রাডিকশন তৈরি করতেছে কিনা এটা বুঝতে হলে Laws of logic সমন্ধে ধারণা থাকতে হবে। যুক্তিবিদ্যা অর্ধায়ে (দ্বিতীয় অর্ধায়ে) ল অব লজিকের নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণণা করা হয়েছে।
সম্ভাবনার ধরন (Types of possibilities)
পসিবিলিটি মূলত দুই ধরণের। ১. লজিক্যালি পসিবল বা যৌক্তিকভাবে সম্ভব। ২. সাইন্টেফিক্যলি পসিবল বা বৈজ্ঞানিকভাবে সম্ভব।
লজিক্যাল পসিবিলিটি
লজিক্যালি পসিবল বলতে বুঝানো হয় ল অফ লজিকের সূত্র মোতাবেক যা কিছু হওয়া পসিবল তা। যেমন, ২+২=৪ এটা প্র্যত্যেক পসিবল ওয়ার্ল্ডেই সত্য। কিন্তু ২+২=৫ এটা প্র্যত্যেক পসিবল ওয়ার্ল্ডেই মিথ্যা। কারণ এটা ল অব লজিকের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করে। আবার একটু ত্রিভূজের তিনটি বাহু বা কোণ আছে। এটা প্রত্যেক পসিবল ওয়ার্ল্ডে সত্য। কেউ যদি এমন দাবী করে যে, কোনো পসিবল ওয়ার্ল্ডে ত্রিভূজের ৫টি বাহু বা কোণ আছে তাহলে তা মিথ্যা বলে বিবেচিত হবে। লজিক্যালি পসিবল এর মূল কথা হলো, যা কিছু যুক্তিবিদ্যার মৌলক নিয়মগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান করেনা তা পসিবল বা সম্ভাব্য বলে বিবেচিত হবে। যুক্তিবিদ্যার মৌলিক নিয়ম নিয়ে দ্বিতীয় অর্ধায়ে বিস্তারিত বর্ণণা দেওয়া রয়েছে।
যদি প্রশ্ন করা হয়, একজন লোকের দুই রঙ এর শার্ট থাকতে পারে কিনা? অথবা দুই রকমের চুলের কালার থাকতে পারেনা কিনা? এর উত্তর হবে, হুম, অবশ্যই থাকতে পারে। কারণ এটা লজিক্যালি কন্ট্রাডিকশন করেনা। সুতরাং লজিক্যালি এটা পসিবলা যে, একজন মানুষের দুই রকমের শার্ট থাকতে পারে, ২+২=৪ এটাও লজিক্যালি পসিবল। কিন্তু ২+২=৫ অথবা স্কোয়ার সার্কেল, বা চার বাহু বিশিষ্ট ত্রিভূজ থাকা লজিক্যালি পসিবল না।
সাইন্টেফিক পসিবলটি
সাইন্টেফিক পসিবিলিটি বলতে বোঝায়, আমাদের মহাজগতে কিছু নিয়ম ফিক্সড, সেই নিয়মগুলোকে ভায়োলেট করা পসিবল না। যেমন, আমাদের কনক্রিট ওয়ার্ল্ডে আলোর গতি কন্সট্যান্ট। তাই আপনি এই কনক্রিট ওয়ার্ল্ডে আলোর গতি কন্সটেন্স এটাকে ব্রেক করতে পারবেন না। কারণ এটা সাইন্টিফিক্যালি পসিবল না। কিন্তু সাইন্টিফিক্যালি পসিবল না বলে বিষয়টা এমন না যে, এটা লজিক্যালিও পসিবল না। অর্থাৎ, এমন কোনো পসিবল ওয়ার্ল্ড থাকতেই পারে যেখানে আমাদের প্রকৃতিতে ফিজিক্সের যে ল আছে সেগুলো অন্যভাবে সাজানো।
এক্ষেত্রে একটা উদাহারণের সাহায্যে বিষয়টা বুঝানোর চেষ্টা করা যাক, আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কোনো প্রকার বৈজ্ঞানি প্রযুক্তি ছাড়া কি আমরা আকাশে উড়তে পারবো কিনা? এর উত্তর হবে অবশ্যই না। কারণ, সাইন্টিফিক্যালি এটা পসবিল না যে আমরা কোনো ধরণের প্রযুক্তি ছাড়া আকাশে উড়তে পারবো। কিন্তু সাইন্টিফিক্যালি পসিবল না বলে এমন না যে এটা লজিক্যলিও পসিবল না। এমন কোনো পসিবল ওয়ার্ল্ড থাকতেই পারে যেখানে আমরা কোনো প্রকার বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ছাড়াই আকাশে উড়তে পারবো।
Principle of sufficient reason (PSR)
PSR অনুযায়ী সব কিছুর অস্তিত্বের জন্য পর্যাপ্ত কারণ ব্যাখ্যা রয়েছে। সবকিছুর পিছনে কারণ থাকাটা স্বতঃসিদ্ধ। আমাদের চারপাশে যা কিছু দেখি, যেমন- চেয়ার, টেবিল, গাছপালা ইত্যাদি এগুলো এমনি এমনি কোনো কারণ ছাড়া অস্তিত্বে এসেছে এমনটা কেউ বিশ্বাস করেনা। এসব কিছুর পিছনে আমরা অবশ্যই কারণ খুঁজি।
কিছু নাস্তিক এখানে দাবী করতে পারে যে, কোয়ান্টম ফ্লাকচুয়েশন এ ভার্চুয়াল পার্টিকেল কোনো কারণ ছাড়াই অস্তিত্বে চলে আসতে পারে। উদাহারণ হিসেব তারা দেখায় যে, Raido Active Decay বা তেজস্ক্রিয় ক্ষয় এর বিষয়টি। এই দাবীটা আসলে সত্য নয়। মূলত আইসোটোপ কার্বন -১৪ থেকে -১২ পর্যন্ত একক পরমাণুর তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের সময় কিভাবে কি হবে তা আমরা ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারিনা। তেজস্ক্রিয় ক্ষয় কোয়ান্টম মেকানিক্স দ্বারা নির্ধারিত হয়, যা সহজাতভাবে সম্ভাব্য। সুতরাং, কোনো নির্দিষ্ট পরমাণু কখন ক্ষয় হবে তা বের করা অসম্ভব। কারণ তেজস্ক্রিয় ক্ষয় সম্পূর্ণ র্যান্ডম অবস্থা। এক্ষেত্রে কার্যকারণ অজানা থাকে। [1] Protection and Dosimetry an Introduction to Health Physics. https://doi.org/10.1007/978-0-387-49983-3
তাত্ত্বিক কোয়ান্টাম পদার্থবিদ ক্যাসলাভ ব্রুকনার কোয়ান্টাম ওয়ার্ল্ডে কার্যকারণকে ব্যখ্যা করেছেন এভাবে,
ধরুণ, আপনার সামনে একসাড়ি ডমিনো সাজানো আছে। আপনি যখনই প্রথম ডমিনোটি ফেলে দিবেন তখন আস্তে আস্তে বাকি ডমিনোগুলো পরতে থাকবে একের পর এক। A থেকে B ডমিনো, B থেকে C ডমিনো এবং B ডমিনোর থেকে A ডমিনো স্বাধীন। এটি আমাদের দৈননিন্দন জীবনের কার্যকরণে উদাহারণ। তবে কোয়ান্টম জগতে A ডমিনোর পতনের ফলে B ডমিনো পরবে নাকি C ডমিনো পরবে তা নির্ধারণ করা যায়না। ডমিনোর পতন A থেকে শুরু হবে নাকি B থেকে শুরু হবে তা অজানা থাকে। তাই কোয়ান্টাম ওয়ার্ল্ডে কার্যকারণ অনির্ধারিত থাকে বা অজানা থাকে। [2]Caslav Brukner Causality in a quantum world. DOI.org/10.1063/PT.6.1.20180328a
রয়্যাল সোসাইটিতে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে বলেছে কার্যকারণ তত্ত্ব সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এবং তা সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। প্রফেসর ডি আরিয়ানো ২০১৮ সালে রয়্যাল সোসাইটিতে প্রকাশিত এক পেপার ‘Causality re established’ গবেষণায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে কার্যকারণ তত্ত্ব নিয়ে বলেন, আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি যে কার্যকারণ কোয়ান্টাম তত্ত্বের একটি উপপাদ্য এবং এটি ফলসিফায়েবল এবং প্রেডিকশন তৈরি করতে সক্ষম। যার ফলে কার্ল পপারের ডিমার্কেশন ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী কার্যকারণ সবক্ষেত্রেই বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। [3]D’Ariano, G. M. (2018). Causality re-established. Philosophical Transactions of the Royal Society A: Mathematical, Physical and Engineering Sciences, 376(2123), 20170313
কন্টিনজেন্ট এক্সিস্টেন্স
A contingent being is something that could have not existed, or it has other properties. I might never have been born, so I am contingent. অর্থাৎ, কন্টিনজেন্ট বিং হচ্ছে এমন কিছু যা অস্তিত্বে নাও থাকতে পারতো, অথবা যেভাবে আছে সেভাবে না থেকে অন্যভাবেও থাকতে পারতো। আমি জন্ম নাও নিতে পারতাম। তাই আমি কন্টিনজেন্ট।
মোডাল লজিকে সেসকল জিনিসকে কন্টিনজেন্ট এক্সিটেন্স বলা হয় যা প্রত্যেক পসিবল ওয়ার্ল্ডে বাধ্যতামূলকভাবে বা নেসেসারিলি এক্সিস্ট করা লাগবেনা। আমাদের মহাবিশ্বের সবকিছু কন্টিনজেন্ট। আমরা যা কিছু অনূভব করি, পর্যবেক্ষণ করি, তা কোনো না কোনোভাবে কন্টিনজেন্ট। এগুলোর অস্তিত্ব নেসেসারি না। আমি, আপনি, আমাদের চারপাশের এই প্রকৃতি, এগুলো অস্তিত্বে নাও থাকতো পারতো। আপনি এখন যে চেয়ারে বসে বইটি পড়ছেন এটাও কন্টিনজেন্ট। কারণ এরকম হাজারো অবস্থা আমরা কল্পনা করতে পারি। এই চেয়ারটি তো প্রস্তুতকারি নাও বানাতে পারতো, অথবা আপনি এটা নাও কিনতে পারতেন। আবার যেভাবে আছে সেভাবে না থেকে অন্যভাবেও থাকতে পারতো। যে জিনিস এহেন বৈশিষ্ঠ ধারণ করে তার অস্তিত্বের জন্য ব্যখা প্রয়োজন। কারণ এগুলো কন্টিনজেন্ট। আপনি জিজ্ঞেস করতেই পারেন যে এটা তো নাও থাকতে পারতো, তাহলে কেন আছে? এটা কি নিজে নিজে সৃষ্টি হয়েছে? নাকি কেউ এটাকে সৃষ্টি করেছে? এটার সেইপ এমন কেন হলো? কেউ এটাকে এই সেইপ দিয়েছে নাকি এটা নিজেই নিজের সেইপ এভাবে নির্ধারণ করেছে?
কন্টিনজেন্ট এক্সিস্টেন্সের আরেকটি বৈশিষ্ঠ হচ্ছে এগুলো পরনির্ভরশীল। কোনো বস্তু যদি তার অস্তিত্বের জন্য অন্য কিছুর নির্ভর করে, এটাই পর-নির্ভশীলতা। যা কিছু তার অস্তিত্বের জন্য অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল তার অস্তিত্ব অনিবার্য বা নেসেসারি নয়। এবং তা অপ্রয়োজনীয়। যেমন ধরুন আপনি নিজেই নিজের অস্তিত্বের জন্য আপনার বাবা-মা, অক্সিজেন, খাবার, এমন অনেক কিছুর উপর নির্ভরশীল। সুতরাং যা কিছু তার অস্তিত্বের জন্য অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল বা অপ্রয়োজনীয় তা কন্টিনজেন্ট এক্সিস্টেন্স। অপ্রয়োজনীয় বলতে বুঝানো হচ্ছে, যেটা অস্তিত্বে থাকাটা জরুরি না। থাকতেই হবে বিষয়টা এমন না। সাধারণত আমরা প্রয়োজনীয় বলতে আমরা বুঝি যা আমাদের দরকার। কিন্তু ফিলোসফিতে যখন কোনো কিছুর অস্তিত্বকে প্রয়োজনীয় বলা হয়, তখন তা অনিবার্য অস্তিত্ব। অর্থাৎ, যার অস্তিত্ব থাকতেই হবে। যার অস্তিত্ব না থাকাটা অসম্ভব বা এমনটা ভাবাও যায়না।
Essential properties
এসেনশিয়াল প্রপার্টি বলতে বুঝানো হয়, যেসকল প্রোপার্টিস যেগুলো সকল পসিবল ওয়ার্ল্ডে কোনো বস্তুর সাথে বাধ্যতামূলক ভাবে এক্সিস্ট করবে তার বৈশিষ্ঠ হিসেবে৷ যেমন, ত্রিভূজের আইডেন্টিটি বা বৈশিষ্ঠ হলো তিন বাহু। কোনো পসিবল ওয়ার্ল্ডেই তিনবাহু ছাড়া ত্রিভূজ হবেনা। তাই ত্রিভূজের তিনবাহু হলো ত্রিভূজের এসেনশিয়াল প্রপার্টি। আবার, একজন ব্যাচেলর এর সংজ্ঞা কি? যিনি বিয়ে করেনি। তার মানে প্রত্যেক পসিবল ওয়ার্ল্ডেই একজন ব্যাচেলর হবে অবিবাহিত। এমন কোনো পসিবল ওয়ার্ল্ড নেই যেখানে একজন ব্যাচেলর বিবাহিত হবেন। তাই অবিবাহিত হওয়াটা ব্যাচেলরের জন্য এসেনশিয়াল প্রপার্টি।
Accidental Properties
এক্সিডেনশিয়াল প্রপার্টিস হলো এসেনশিয়াল প্রপার্টিস এর বিপরীত। এশেনশিয়াল প্রপার্টিস এর ক্ষেত্রে তা বাধ্যতামূলকভাবে থাকা লাগতো। যেমন, ব্যাচেলর। ব্যাচেলর এর এসেনশিয়াল প্রপার্টিস হলো অবিবাহিত। তাই বাধ্যতামূলকভাবেই একজন ব্যাচেলরকে অবিবাহিত হতে হবে। কিন্তু এক্সিডেনশিয়াল প্রপার্টিস এর ক্ষেত্রে এই বিষয়টি তার উল্টো। এক্সিডেন্টশিয়াল প্রপার্টিসগুলো বাধ্যতামূলকভাবে এক্সিস্ট নাও করতে পারে। যেমন, মানুষ মরণশীল। এটা মানুষের এসেনশিয়াল প্রপার্টিস। কিন্ত মানুষের অবস্থান বা কাজ এগুলো এক্সিডেন্টশিয়াল প্রপার্টিস। ধরুন, মাজেদ আল নোয়াব হলেন একজন ইসলামীক স্কলার। এটা তার এক্সিডেন্টশিয়াল প্রপার্টিস। মাজেল আল নোয়াব বাধ্যমামূলকভাবে ইসলামীক স্কলার হতেই হবে এমন না। তিনি দার্শনিক বা বিজ্ঞানীও হতে পারতেন। অন্যদিকে, মাজেদ আল নোয়াব হলো মরণশীল। এটা তার এসেনশিয়াল প্রপার্টিস।
নেসেসারি এক্সিস্টেন্স
নেসেসারি এক্সিস্টেন্স বলতে বুঝায় কারণহীণ কারণ, অনিবার্য অস্তিত্ব, স্বাধীন অস্তিত্ব। মোডাল লজিক অনুসারে যেসকল জিনিস বা অস্তিত্ব সকল পসিবল ওয়ার্ল্ডে বাধ্যতামূলক বা নেসেসারিলি অস্তিত্বশীল বা সত্য তাকে নেসেসারি এক্সিস্টেন্স বলে। যেমন ধরুন, একটা ত্রিভূজের তিনটা বাহু থাকবে এটা নেসেসারি। প্রত্যেক পসিবল ওয়ার্ল্ডেই ত্রিভূজের তিনটা বাহু থাকা লাগবে অবশ্যই। এমন কোনো পসিবল ওয়ার্ল্ড নেই যেখানে ত্রিভূজের বাহু ৫টা বা ১০টা। এই ধরণের অস্তিত্বগুলো নেসেসারি। নেসারি এক্সিস্টেন্স এর আরেকটা বৈশিষ্ঠ হলো, নেসেসারি এক্সিস্টেন্স তার অস্তিত্বের জন্য অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল নয়। যেমন, ত্রিভূজের তিনটা বাহু। ত্রিভূজের তিনটা বাহু কিন্তু অন্য কোনো কিছুর উপর নির্ভর করে হয়নি। বরং নিজেই নিজের প্রকৃতি দিয়ে ব্যাখা করতে পারে।
মুসলিম দার্শনিক ইবনে সিনা নেসেসারি এক্সিস্টেন্সকে ব্যাখ্য করতে গিয়ে বলেন,
So, we say that the necessary existence is uncaused, whereas a ‘contingent existence’ is caused, and that the necessary existence is necessary in all possible ways and perspectives conceivable.[4]Ref: 4 Ibn Sīnā, A. (1997) Al-Shifā’. Markaz al-Nashr, p. 50.
What is the cause of contingent?
আমরা কন্টিনজেন্ট এক্সিস্টেন্স সম্পর্কে জেনেছি। PSR অনুযায়ী যেহেতু সব কিছু অস্তিত্বে আসার পেছনে কোনো কারণ বা ব্যাখ্যা থাকা লাগবে তাই কন্টিনজেন্ট এক্সিস্টেন্সগুলোর অস্তিত্বের জন্যও কারণ বা ব্যাখ্যা লাগবে। এদের অস্তিত্বের ব্যাখ্যা কি হতে পারে?
কন্টিনজেন্ট এক্সিস্টেন্স বা নির্ভরশীল অস্তিত্বগুলো শূন্য থেকে সৃষ্ট?
শূন্য বলতে বুঝানো হয় যাবতীয় সবকিছুর অনুপস্থিতি। অর্থাৎ, সকল পদার্থ, শক্তি, সময় যাবতীয় সবকিছুর অনুপস্থিতি। অথবা শূন্য মানে কোনো কারণজনিত পরিবেশের অনুপস্থিতিকেও বোঝায়। এরকম একটা অবস্থা থেকে কোনো কিছুই সৃষ্টি হতে পারেনা। কেননা অস্তিত্বহীন কিছু থেকে কিভাবে একটা কিছু অস্তিত্বে আসতে পারে!? শূন্য থেকে কিছুই আসেনা। ০+০+০+=০ই হবে! কখনো ৩ হবেনা।
ধরুন, * গতকাল রাতে আপনার বন্ধুর বিয়েতে খুব মজা করে কাচ্ছি খেলেন। কিন্তু সেটা কিছুই ছিল না!
* সেদিন পরিক্ষার হলে আমার পাশে কেউ বসেনি। কিন্তু তারা আমাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেখিয়েছিল
* আপনাকে কোনো এক নির্জন জায়গায় অন্ধাকার ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। দরজা-জানালা সব বন্ধ। আর নির্জন এলাকা বলে কেউ আপনার চিৎকারও শুনতে পাচ্ছেনা। আপনি বসে বসে ভাবছেন কিভাবে সেখান থেকে বের হবেন! কিন্তু কোনো ভাবেই উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আপনি ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুম থেকে উঠেই দেখলেন সেই অন্ধকার নির্জন ঘরে একটা টেবিল রাখা, তার উপর একটা ল্যাপটপ, ইন্টারনেট সংযোগ, বিদ্যুৎ সবই চলে আসছে।
উপরের তিনটি যুক্তি একজন সুস্থ বিবেকবান, র্যাশনাল মানুষ মাত্রই স্বীকার করবে এটা একেবারেই অসম্ভব এবং হাস্যকর। ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব?’ ব্যাপারটা ঠিক এরকমই অসম্ভব ও হাস্যকর!
নাস্তিকরা দাবী করতে পারে কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম বা শূন্যতায় কোনো কণিকা শূন্য থেকে অস্তিত্বশীল হতে পারে। কিন্ত কোয়ান্টম ভ্যাকুয়াম বা শূন্যতা কোনো খালি যায়গা নয়। সেখানে পদার্থের নিয়ম চলে। কোয়ান্টম শূন্যতা হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী শক্তির অবস্থা। আর সেই শক্তি থেকেই প্রতিনিয়ত জোড়ায় জোড়ায় তৈরি হয় কণা ও প্রতিকণা। যারা পুনরায় ধ্বংস হয়ে আবার শক্তিতে পরিণত হয়ে যায়। সুতরাং কোয়ান্টম ভ্যাকুয়াম বা শূন্যতা মানে ভৌত কিছু। [5]Physics – The Force of Empty Space (aps.org)
কন্টিনজেন্ট এক্সিস্টেন্স বা নির্ভরশীল অস্তিত্বগুলো স্ব-সৃষ্ট
কন্টিনজেন্ট এক্সিস্টেন্স বা নির্ভরশীল অস্তিত্বগুলো কি নিজেরাই নিজেদের সৃষ্টি করতে পারবে? যেমন, আমি কি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করতে করতে পারবো? একটা আপেল কি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করতে পারেব? ইউনিভার্স কি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করতে পারবে?
সৃষ্টি বলতে বুঝানো হয় কোনো কিছু অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আসা। অর্থাৎ যার অস্তিত্ব পূর্বে ছিলোনা পরবর্তীতে অস্তিত্বে এসেছে। তার মানে এখান থেকে বুঝতে পারছি যে, কোনো কিছু সৃষ্টি হলে সৃষ্টির পূর্বে তাকে অনস্তিত্বে থাকতে হবে। এখন কোনো বস্তু বা সত্তা যদি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করে তাহলে সে অস্তিত্বে এসেছে অনস্তিত্ব থেকে। অস্তিত্বশীল হওয়ার পূর্বে সে ছিলো অস্তিত্বহীণ। আবার, Principle of sufficient reason (PSR) অনুযায়ী সব কিছুর অবশ্যই কারণ থাকবে। তাহলে কোনো বস্তু বা সত্তার অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আসার জন্যও কারণ থাকা লাগবে। এখন কোনো বস্তু বা সত্তা যদি নিজেই নিজের অস্তিত্বের কারণ হয়, তাহলে অস্তিত্বশীল হওয়ার জন্য অস্তিত্বে আসার পূর্বে অস্তিত্বের কারণ হিসেবে তাকে অস্তিত্বশীল হতে হচ্ছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে কোনো কিছু যদি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করে তাহলে একই সময় তাকে অস্তিত্বে থাকা লাগবে আবার অনস্তিত্বে থাকা লাগবে। যা লজিক্যালি ইম্পসিবল। উদাহারণ স্বরূপ, ‘ক’ নামক ব্যক্তি জন্ম নেওয়ার আগেই কি ‘ক’ নামক ব্যক্তি অস্তিত্বে থাকতে পারবে?
বিষয়টা আরো একটু সহজভাবে ব্যাখ্যা করি। ধরুন, ‘ক’ নামক ব্যক্তি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে। এখন সৃষ্টি মানে যেহেতু অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আসা তার মানে ‘ক’ নামক ব্যক্তিও অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এসেছে। অর্থাৎ, অস্তিত্বে আসার পূর্বে ‘ক’ ছিলো অস্তিত্বহীন।
Principle of sufficient reason (PSR) নিয়ম অনুযায়ী ‘ক’ অস্তিত্বে আসতে হলে অবশ্যই একটা কারণ লাগবে। যেহেতু ‘ক’ নামক ব্যক্তি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে সেহেতু ‘ক’ নামক ব্যক্তির কারণ সে নিজেই। সুতরাং ‘ক’ নামক ব্যক্তি অস্তিত্বে আসার আগেই নিজের অস্তিত্বের কারণ হিসেবে অস্তিত্বে থাকতে হচ্ছে। সুতরাং, ‘ক’ নামক ব্যক্তি যদি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করে তাহলে একই সময় তাকে অস্তিত্বে থাকা লাগবে আবার অনস্তিত্বে থাকা লাগবে। যা Low of Logic এর দ্বিতীয় সূত্র Low of Non-contradiction কে ভায়োলেট করে। যা Principle of noncontradiction (PNC) নামেও পরিচিত। Low of Non-contradiction বলতে বুঝানো হয় সাঙ্গর্ষিক কোনো কিছুই থাকতে পারেনা। যেমন, N= True, N= False.
এখানে N একই সাথে সত্য আবার মিথ্যা। কোনো জিনিস একই সময় পারস্পরিক দ্বন্দ্বমূলক অবস্থায় থাকা পসিবল না। Principle of noncontradiction কে অস্বীকার করা অসম্ভব। কারণ এটা স্বতঃসিদ্ধ সত্য। একটা দৃশ্যপট কল্পনা করুন, মুনিম নামের এক লোক বললো যে সে Principle of noncontradiction কে বিশ্বাস করেনা। যেহেতু সে Principle of noncontradiction বিশ্বাস করেনা সেহেতু তার মতে কোনো জিনিস একই সাথে সত্য আবার মিথ্যা হতে পারে। অর্থাৎ, তার বিশ্বাস করা আর বিশ্বাস না করা দুটো একই সময়ে একই। সুতরাং, মুনিম যখনই বলেছে সে, Principle of noncontradiction বিশ্বাস করেনা ঠিক তখনই তার মতে সে Principle of noncontradiction বিশ্বাস করে। অর্থাৎ, Principle of noncontradiction কে আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না।
অন্য কোনো সৃষ্ট সত্তা থেকে সৃষ্ট
পরনির্ভরশীল বস্তু বা সত্তা কি অন্য কোনো সৃষ্ট সত্তা থেকে সৃষ্ট? অথবা আমাদের এই মহাবিশ্ব যেহেতু পরনির্ভরশীল তাই তার অস্তিত্ব যেহেতু শূণ্য থেকে সৃষ্টি হওয়া পসিবল না, আবার স্ব-সৃষ্টও নয় সেহেতু মহাবিশ্ব কি এমন কোনো সত্তা থেকে সৃষ্টি হতে পারে যে কিনা আবার অন্য কোনো সত্তা থেকে সৃষ্ট? তর্কের খাতিরে যদি আমরা ধরেও নিই যে, হুম এই মহাবিশ্ব এমন কোনো সত্তা থেকে সৃষ্টি হয়েছে যে সত্তা আবার অন্য কোনো সত্তার থেকে সৃষ্টি হয়েছে।
এহেন উত্তর শুনে একজন যৌক্তিক মানুষ মাত্রই আপনাকে প্রশ্ন করবে তাহলে সেই সত্তাকে কে সৃষ্টি করেছে। যদি এই প্রশ্নের জবাবে এমন উত্তর আসে যে, সেই সত্তাকে অন্য কোনো সত্তা সৃষ্টি করেছে। তাহলে আবারো একই প্রশ্ন আসবে যে তাহলে সেই সত্তাকে কে সৃষ্টি করেছে। এবং প্রশ্নের চেইন আজীবন চলতে থাকবে যদি শুরুতে এমন একজন সত্তা না থাকে যে সত্তা হলেন অসৃষ্ট।
কার্যকারণ সম্বন্ধ কি অসীম হতে পারে?
যদি মহাবিশ্ব এমন কোনো সত্তা থেকে সৃষ্টি হয় যে সত্তা আবার অন্যকোনো সৃষ্ট সত্তা থেকে সৃষ্টি হয়েছে তাহলে, সেই সৃষ্ট সত্তাকে কে, সেই সৃষ্ট সত্তাকে কে, সেই সৃষ্ট সত্তাকে কে সৃষ্টি করেছে? এভাবে কার্যকারণ সম্বন্ধ আজীবন পিছনের দিকে যেতেই থাকবে। অর্থাৎ কার্যকারণ সম্বন্ধ হবে অসীম। অসীম বলতে, সীমাহীন, অন্তহীন বা যে কোনো সংখ্যার চেয়ে বড় কিছুকে বুঝায়।
কন্টিজেন্ট কোনো কিছুর অস্তিত্ব অসীম হতে পারেনা। কেননা প্রকৃত অসীম বাস্তবে এক্সিস্ট করেনা। যদি কোনো সৃষ্ট বস্তুর কারণ অসীম হয় তাহলে সে বস্তু সৃষ্টি বা বর্তমানে আসবেনা। তাও শুধুমাত্র আলোচনার খাতিরে যদি আমরা ধরে নেই যে মহাবিশ্বের অস্তিত্বের পিছনে অসীম সংখ্যক কারণ রয়েছে। কিন্তু আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন অসীমের এই ব্যখ্যায় আপনি প্রশ্নকারিকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন না।
উদাহারণ স্বরূপ, আমাদের মহাবিশ্ব যদি “X” হয়, আর একে সৃষ্টি করে থাকে “X1”, আবার “X1” কে যদি সৃষ্টি করে “X2” আর এইভাবে যদি অনন্তকাল চলতে থাকে তাহলে “X” কখনোই অস্তিত্বে আসতে পারবে? না কখনোই পারবেনা! কেননা “X” অস্তিত্বে আসার জন্য নির্ভর করে “X1″এর উপর, আবার “X1” অস্তিত্বে আসার জন্য নির্ভর করে “X2″এর উপর এবং এভাবে যদি অনন্তকাল চলতে থাকে তাহলে “X” অস্তিত্বে আসার জন্য নির্ভর করে অনাদিকাল ধরে চলা সৃষ্ট কিছুর উপর। এইভাবে অনাদিকাল ধরে চলা সৃষ্ট কিছুর উপর নির্ভর করলে “অনবস্থা দোষ” (Infinite regress) দেখা দিবে। সুতরাং, মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসার জন্য অসীম সংখ্যক কারণ বা মহাবিশ্ব অসীম হওয়া পসিবল না। বরং মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য শুরুতে এমন একটা কারণ থাকা অনিবার্য যেটা কারণহীন কারণ।
একটা থট এক্সপিরিমেন্টের সাহায্যে বুঝার চেষ্টা করি,
ধরুন, আপনি চট্রগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে বাসে উঠতে গেলেন। বাসের সামনে গিয়ে দেখলেন আপনার সামেন কিছু সংখক যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে কি আপনি বাসে উঠতে পারবেন? অবশ্যই পারবেন। কারণ আপনার সামনে কিছু সংখ্যক যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে, ওই কিছু সংখ্যক যাত্রী বাসে উঠার পরেই আপনি বাসে উঠতে পারবেন।
এখন দৃশ্যপটটি ঠিক উল্টোভাবে চিন্তা করুন। টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে আপনি বাসে উঠতে গিয়ে দেখলেন যে আপনার সামনে অসীম সংখ্যক যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে কি আপনি কখনোই বাসে উঠতে পারবেন? অবশ্যই পারবেন না। কারণ আপনার সামনে যেহেতু অসীম সংখ্যক যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে, এই অসীম সংখ্যক যাত্রীর বাসে উঠার পরেই আপনি বাসে উঠতে পারবেন। কিন্তু অসীম সংখ্যক যাত্রীর বাসে উঠতে সময়ও লাগবে অসীম। আর অসীম যেযেতু কখনো শেষ হবেনা তাই আপনার বাসে উঠাও কখনো হবেনা। এখন এই উদাহারণটি মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে চিন্তা করুন। আপনার বাসে উঠা = মহাবিশ্ব। আর আপনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসীম সংখ্যক যাত্রী = মহাবিশ্বের পেছনের অসীম সংখ্যক কারণ। যদি এমন হয় তাহলে কি কখনো এই মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসতে পারবে? অবশ্যই না!
কোনো কিছু অস্তিত্বে আসার পেছনে যদি অসীম সংখ্যক কারণের উপর নির্ভরশীল হয় তাহলে তা ইনফিনিটি রিগ্রেস এর কারণে কখনোই বর্তমানে আসতে পারবেনা। যা আমরা উপরের উদাহারণ থেকেই বুঝতে পেরেছি যে, অসীম সংখ্যক কারণ ঘটলে ইনফিনিটি রিগ্রেস ঘটবে, এবং বর্তমানেই আসা সম্ভব না। ইনফিনিটি সম্পর্কে আরো বিষদ আলোচনা থাকবে কালাম কসমোলজি আর্গুমেন্টে।
মুসলিম দার্শনিক ইবনে সিনা বলেন,
The set of contingent existences has culminated in the need for a necessary existence outside of the set in order to explain it. [6]The Burhan; Page;7
অসৃষ্ট থেকে সৃষ্ট
যেহেতু কন্টিনজেন্ট নিজে নিজে সৃষ্ট হতে পারেনা, শূন্য থেকেও সৃষ্টি হতে পারেনা এবং এর কারণ অসীমও হতে পারেনা তাহলে এর বিকল্প কী? বিকল্প হচ্ছে এটি এমন একটি কারণ যা কারণহীন কারণ (অস্তিত্বের জন্য কোনো কিছুর মুখাপেক্ষি নয়) বা অনাদী সত্তা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ যা সব সময়ই অস্তিত্বশীল (চিরন্তন)। পবিত্র কুরআনের সূরা ইখলাসে এই সত্যতা জ্বল জ্বল করছে।
পবিত্র কুরআনে সূরা ইখলাসে বলা হয়েছে,
বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী।তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই। [7]সূরা ইখলাস; ১১২ঃ ১-৪
নির্ভরশীলতার যুক্তি
নির্ভরশীলতা যুক্তিতে এটাই দেখানো হয় যে আমাদের এই মহাবিশ্বের যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ করি বা অনুভব করি তার সব কিছুই পর-নির্ভরশীল। আর এই কারণেই এসবের অস্তিত্বের জন্য ব্যাখ্যা প্রয়োজন। এর একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা হচ্ছে, পর-নির্ভরশীল অস্তিত্ব এমন কিছুর উপর নির্ভরশীল যার অস্তিত্ব এই মহাজগৎ থেকে স্বাধীন। অন্যথায় পর-নির্ভরশীল এর কারণগুলোর সাথে আরো একটি পর-নির্ভরশীল কারণ যুক্ত হবে এবং কারণের এই ধারাবাহিকা অসীমকাল ধরেই চলতে থাকবে। যার ফলে ইনফিনিটি রিগ্রেস ঘটবে। উপরে ইতিমধ্যে এই বিষয়ে বিস্তারিত লিখা হয়েছে।
এই মহাবিশ্বের যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ, অনুভব করি তা যে পর-নির্ভরশীল তা যেভাবে বুঝতে পারি,
১. পরনির্ভরশীল জিনিসের একটি বৈশিষ্ঠ হচ্ছে এটা অপ্রয়োজনিয়। অপ্রয়োজনীয় বলতে বুঝায়, এগুলোর অস্তিত্ব থাকতেই হবে বা এগুলো নেসেসারি এমন নয়। থাকতেও পারে নাও থাকতে পারে।
একটা দৃশ্যপট কল্পনা করুন, আপনি আর আপনার বন্ধু ফজরের নামাজ শেষে শীতের স্নিগ্ধ সকালে মেঠো পথের প্রান্তরে হেঁটে চলেছেন। হটাৎ একটা ফুটবল লক্ষ করলেন। ফুটবলটি দেখে নিশ্চয়ই আপনি এমনটা কল্পনা করবেন না যে, এটা এমনি এমনি এখানে চলে এসেছে। আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগবে ফুটবলটা এখানে কেন এসেছে? এর সম্ভাব্য ব্যাখ্যাটা হতে পারে, কেউ হয়তো ভুল করে এখানে ফেলে গিয়েছে। কারণ ফুটবলটি এখানে থাকার কথা নয়। এটা এখানে থাকাটা প্রয়োজনীয় নয়। এই ফুটবলটি যে এখানে রেখে গিয়েছে সে এখানে নাও রাখতে পারতো। ফুটবল প্রস্তুতকারী কোম্পানি এটাকে নাও তৌরি করতে পারতো। যে এখানে রেখে গিয়েছে সে এটা নাও কিনতে পারতো। সুতরাং, ফুটবলটি এখানে থাকার জন্য একটা ব্যাখ্যার প্রয়োজন হচ্ছে। তার মানে এটা পরনির্ভরশীল বা কন্টিনজেন্ট।
তেমনিভাবে আমাদের যেভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে তা নাও হতে পারতো। মহাবিশ্ব অস্তিত্বে নাও থাকতে পারতো, এর নিয়মগুলো যেমন আছে ঠিক তেমন নাও থাকতে পারতো, যেভাবে চলছে ঠিক সেভাবে নাও চলতে পারতো। কারণ এই সম্ভাবনাগুলো যৌক্তিকভাবে কোনো প্রকার সাংঘর্ষিকতা তৌরি করেনা, বা এগুলো যৌক্তিকভাবে অসম্ভব এমন কিছু না।
কেউ হয়তো দাবী করতে পারে যে মহাবিশ্বের নিয়মগুলো যেভাবে আছে সেভাবে না থাকে অন্যভাবে থাকতে পারেনা। কারণ, অন্যভাবে থাকলে মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে যেত। কিন্তু এই দাবীই এটা প্রমাণ করেনা যে, নিয়মগুলো অন্যভাবে থাকাটা লজিক্যালি অসম্ভব। বরং এই দাবী প্রমাণ করে নিয়মগুলো যেভাবে আছে সেভাবে না থাকাটা বৈজ্ঞানিকভাবে অসম্ভব। আমরা পসিবল এক্সিস্টেন্স নিয়ে আলোচনাতে জেনেছি যে, যা কিছু যৌক্তিকভাবে সাংঘর্ষিকত তৌরি করেনা তা সবকিছুই পসিবল। সুতরাং, মহাবিশ্ব যেভাবে আছে সেভাবে নাও থাকতে পারতো, বা এর অস্তিত্বই না থাকতে পারতো, এটা যৌক্তিকভাবে পসিবল।
২. কোনো জিনিসের উপাদানগুলোকে যদি যেভাবে আছে তার বিপরীতেও ব্যাখ্যা করা যায় সেক্ষেত্রেও সেটা পর-নির্ভর। নিচের উদাহারণটি লক্ষ্য করুণ,
মৃদু আলো আর সোডিয়াম বাতির ঝলসানো রাতের কোনো এক শূন্য রাস্তায় আপনি আর আপনার বন্ধু হেঁটে চলেছেন দিকভ্রান্ত পথিকের মতো। হটাৎ একটা গোল চত্বরে আসতেই আপনার চোখে পড়লো ফুল দিয়ে সজ্জিত করা তিনটি শব্দ; “আমি তোমাকে ভালোবাসি।” আপনার ভেতরে প্রশ্ন জাগতে পারে, ফুল গুলো এভাবে সজ্জিত না করে অন্যভাবেও তো করা যেত! “আমি তোমাকে ভালোবাসি” এ কথার পরিবর্তে তো” আমি তোমাকে পছন্দ করি” এভাবেও সজ্জিত করা যেত। কারণ এভাবে সজ্জিত হওয়ার যৌক্তিকভাবে অসম্ভব কিছুনা। ফুলগুলো যেহেতু অন্যভাবে সজ্জিত করা সম্ভব তার মানে এখানে একটা বাহ্যিক শক্তি ফুলগুলো এভাবে সজ্জিত করেছে। যেহেতু ফুলগুলো এভাবে সজ্জিত না থেকে অন্যভবে সজ্জিত থাকতে পারতো, তাই কেন এভাবে আছে এটার একটা ব্যাখ্যা প্রয়োজন-সুতরাং, ফুলগুলো ওভাবে সজ্জিত থাকাটা হচ্ছে পর-নির্ভরশীল।
এখানে ফুলগুলো যেহেতু নিজে নিজে এভাবে সজ্জিত হয়নি তাই এভাবে সজ্জিত হওয়ার জন্য একটা ব্যাখ্যা প্রয়োজন। ফুলগুলো গাছে থাকার কথা ছিলো, কেনই বা রাস্তায় এভাবে সজ্জিত অবস্থায় রয়েছে? কেউ যদি বলে ফুলগুলো এমনি এমনি এভাবে সজ্জিত হয়েছে আপনি নিশ্চয় তাকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর ব্যাবস্থা করবেন। এখানে সম্ভাব্য ব্যাখ্যাটি হতে পারে এমন যে, কেউ একজন গাছ থেকে ফুলগুলো তুলে এনেছে, তারপর রাস্তার উপর এগুলোর বিন্যাস নির্ধারণ করেছে সজ্জিত করেছে। এটাই হচ্ছে ফুলগুলো ওভাবে সজ্জিত হওয়ার বাহ্যিক কারণ।
একইভাবে আমাদের এই মহাবিশ্ব ঠিক সেভাবে সজ্জিত করা রয়েছে, এটা ঠিক তার উল্টোভাবেই থাকতে পারতো। এই ভেতরের ল গুলো অন্যরকম হতে পারতো। কারণ অন্যভাবে থাকাটা যৌক্তিকভাবে কোনো প্রকার অসঙ্গতি তৌরি করেনা। যেমন,
প্রাণের টিকে থাকার জন্য চাঁদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হলো, পৃথিবীকে নিজ অক্ষের ওপর ২৩ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকতে সাহায্য করে। যদি এমনটা না হতো তাহলে পৃথিবীতে তাপমাত্রা এতোটাই সংকটময় হয়ে পরতো যে এখানে প্রাণের বিকাশ সম্ভব হতোনা।
কিন্তু এমন কোনো পসিবল ওয়ার্ল্ড থাকতে পারে যেখানে চাঁদ নিজেই অস্তিত্বে নেই, অথবা পৃথিবীরই অস্তিত্ব নেই। কারণ এগুলোর অস্তিত্বে না থাকাটা যৌক্তিকভাবে কোন রকম সাংঘর্ষিকতা তৌরি করেনা। সুতরাং, মহাবিশ্বের উপাদানগুলো ঠিক যেভাবে আছে তার বিপরীতেভাবে থাকাও পসিবল ছিলো। তাই মহাবিশ্ব পর-নির্ভরশীল বা কন্টিনজেন্ট।
৩. পরনির্ভরশীল জিনিসের অন্যতম আরেকটি বৈশিষ্ঠ হচ্ছে, এদের রুপগত গুণের সীমাবদ্ধতা। যেমন, কোনো কিছুর রং, আকার, ভর, তাপমাত্রা, আকৃতি ইত্যাদি। এক্ষেত্রে ইউনিভার্সের প্রত্যেকটি বস্তুর নির্দিষ্ট রং, আকার, আকৃতি আছে। কিন্ত এটা এভবে না হয়ে অন্যভাবেও তো হতে পারতো। আমরা সেগুলোকে যেভাবে আছে তার বিপরীতভাবে চিন্তা করতে পারি। তার মানে এগুলো যেভাবে আছে সেটা কেউ নির্ধারণ করে দিয়েছে। তা না হলে, কেন এই বস্তু গুলোর আকার যেভাবে আছে সেভাবে না থেকে অন্যভাবে হয়নি? কেন বস্তুগুলোর রং অন্য ধরণের হয়নি? বস্তুগুলোতে নিজেই নিজের সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ করেনি। একটা ফুটবল হাতে নিয়ে নিশ্চয় আপনি এ কথা বলবেন না যে, ফুটবল নিজেই তার রং, আকার, ভর নির্ধারণ করেছে! সুতরাং এই রুপগত সীমাবদ্ধতাই প্রমাণ করে এগুলো পর-নির্ভর।
আমি যদি একটা কেক রান্না করে বলি, অনিবার্য কারণেই এটার স্বাদ এমন, আকার এমন, রংও এমন, তাহলে নিশ্চয় তাকে পাবনায় পাঠানোর ব্যাবস্থা করবেন। কারণ কেকটির স্বাদ, আকার, রং সম্পূর্ণ নির্ভর করে এর নির্মাতার হাতে। কেকটি নিজেই নিজের স্বাদ, আকার, রং নির্ধারণ করেনি। সুতরাং, যেসব জিনিসের রুপগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা পরনির্ভরশীল। একইভাবে আমাদের এই মহাবিশ্বের আকার, তাপমাত্রা, রং যেভাবে আছে সেভাবে না থেকে অন্যভাবেও থাকতো পারতো। গাছের পাতা সবুজ না হয়ে অন্য রঙ এর হতে পারতো। প্রকৃতির নিয়ম (law of nature) অন্যভাবেও হতে পারতো। মহাবিশ্ব নিজেই নিজের আকার ধারণ করেনি, নিজেই নিয়ম গুলো তৌরি করেনি। তারমানে এগুলো কেউ নির্ধারণ করে দিয়েছে। সুতরাং মহাবিশ্ব পরনির্ভরশীল।
৪. পরনির্ভরশীলতার অন্যতম আরেকটি বৈশিষ্ঠ হচ্ছে সসীমতা। আমাদের এই মহাবিশ্ব এবং এর ভেতরে যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ করি, যা কিছু আমরা অনুভব করি তার সব কিছুই সসীম। বিগ ব্যাং মডেল থেকে আমরা জানতে পারি আমাদের এই মহাবিশ্বের একটা শুরু আছে। এই বিষয়ে ‘বিগ ব্যাং থেকে মহাবিশ্ব’ অর্ধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
পরনির্ভরশীলতার এসব বৈশিষ্ঠ গুলো বুঝতে পারলে আমরা এটা বুঝতে পারি যে আমাদের এই মহাজগৎ এবং তার মধ্যে যা কিছুর আমরা অনুভব করি, পর্যবেক্ষণ করি তার সবকিছুই পরনির্ভরশীল। সুতরাং, এই মহাবিশ্বের যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ করি, অনুভব করি তা পরনির্ভরশীল।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা একটা ডিডাক্টিভ আর্গুমেন্টের মাধ্যমে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারি।
P1: Everything that exists has an explanation of its existence. (যা কিছু অস্তিত্বশীল তার অস্তিত্বের জন্য ব্যাখ্যা প্রয়োজন)
P2: The universe exists. (মহাবিশ্ব অস্তিত্বশীল)
P3: Therefore, the universe has an explanation for It’s existence. (এতএব, মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য একটি ব্যাখ্যা আছে)
P4: That explanation is either explained by its own nature or some external thing. (সেই ব্যাখ্যাটি হয় তার নিজস্ব প্রকৃতির দ্বারা অথবা কোন বাহ্যিক জিনিস দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়।)
P5: The explanation is a necessary Being/ God. (সেই ব্যাখ্যাটি হচ্ছে অনিবার্য অনিবার্য অস্তিত্ব বা স্রষ্টা।)
Conclusion: Therefore, God exists. (সুতরাং, স্রষ্টা অস্তিত্বশীল)
- P1: Everything that exists has an explanation of its existence. (যা কিছু অস্তিত্বশীল তার অস্তিত্বের জন্য ব্যাখ্যা প্রয়োজন)
PSR নিয়ে আলোচনাতে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি এবং দেখিয়েছি যে যা কিছু অস্তিত্বশীল তার অস্তিত্বের জন্য ব্যাখ্যা প্রয়োজন। কেউ চাইলেই এই ব্যখ্যার সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারবেনা। কারণ এটি Self-Evident. সুতরাং, প্রেমিস-১ (P1) সত্য।
- P2: The universe exists. (মহাবিশ্ব অস্তিত্বশীল)
আমাদের মহাবিশ্ব অস্তিত্বশীল এটা Self-Evident. তাই এটার সাথেও কেউ দ্বিমত করতে পারবেনা। যদি কেউ দ্বিমত করে তাহলে তাকে প্রমাণ দিতে হবে যে কেন মহাবিশ্ব অস্তিত্বশীল না। সুতরাং, আমরা বলতে পারি যে, প্রেমিস-২ (P2) সত্য।
- P3: Therefore, the universe has an explanation for It’s existence. (এতএব, মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য একটি ব্যাখ্যা আছে)
P1 এবং P2 তে থেকে আমরা জেনেছি যে যা কিছু অস্তিত্বে আছে তার অস্তিত্বের জন্য ব্যখ্যা লাগবেই। যেহেতু, আমাদের এই মহাবিশ্ব অস্তিত্বশীল সেহেতু মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য অবশ্যই ব্যাখ্যা লাগবে। সুতরাং, প্রেমিস-১ (P1) এবং প্রেমিস-২ (P2) এর মতো প্রেমিস-৩ (P3) সত্য হতে বাধ্য।
- P4: That explanation is either explained by its own nature or some external thing. (সেই ব্যাখ্যাটি হয় তার নিজস্ব প্রকৃতির দ্বারা অথবা কোন বাহ্যিক জিনিস দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়।)
যেহেতু আমাদের এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে, এটার শুরু আছে, এটা কন্টিনজেন্ট, তাই এর ব্যাখ্যা অবশ্যই বাহ্যিক কোনো কারণই হতে হবে। বিগ ব্যাং থেকে মহাবিশ্ব অর্ধ্যায়েও আমরা দেখেছি যে আমাদের এই মহাবিশ্বের একটা শুরু আছে। মহাবিশ্ব অসীম সময় ধরে অস্তিত্বে ছিলোনা। কন্টিনজেন্ট এক্সিস্টেন্স কি তা ব্যখ্যা করার সময় আমরা দেখিয়েছি যে, যা কিছুর অস্তিত্ব যদি এমন হয় যে সেটা অস্তিত্বে থাকতেও পারতো আবার নাও থাকতে পারতো তাহলে তা কন্টিনজেন্ট। আবার কোনো কিছু যদি যেভাবে আছে সেভাবে না থেকে অন্যভাবেও থাকা পসিবল, অর্থাৎ, যদি রি এরেঞ্জ করা পসিবল হয় তাহলে তাও কন্টিনজেন্ট।
যেহেতু আমাদের এই মহাবিশ্ব বা মহাবিশ্বের ভেতরে যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ করি, অনুভব করি তা অনিবার্য বা বাধ্যতামূলকভাবে অস্তিত্বশীল হতেই হবে এমন নয়, এগুলো কে আমরা যেভাবে আছে তার বিপরীতভবেও চিন্তা করতে পারি। অথবা এটার যে প্রপার্টিসগুলো আছে তা এসেনশিয়াল নয়, এক্সিডেন্টশিয়াল তাই আমাদের মহাবিশ্ব কন্টিনজেন্ট। এখানে অস্তিত্বশীল যা কিছু আছে তা চিরন্তন, অনিবার্য এবং স্বাধীন নয়। কেননা, কোনো কিছু নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করতে পারেনা। স্ব-সৃষ্ট কেন সম্ভব না তা ইতিমধ্যে আমরা ব্যাখ্যা করেছি। সুতরাং, প্রেমিস-৪ (P4) সত্য।
- P5: The explanation is a necessary Being/ God. (সেই ব্যাখ্যাটি হচ্ছে অনিবার্য অনিবার্য অস্তিত্ব বা স্রষ্টা।)
PSR থেকে আমরা জানাতে পেরেছি যে সব কিছুর অস্তিত্বের জন্য কারণ বা ব্যাখ্যা প্রয়োজন। আমরা নেসেসারি এক্সিস্টেন্স এবং কন্টিনজেন্ট এক্সিস্টেন্স সম্পর্কে জেনেছি। কন্টিজেন্ট এক্সিস্টেন্স তার অস্তিত্বের জন্য অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল এবং নির্ভরশীলতা অসীম সংখ্যক হতে পারবেনা। এই অর্ধ্যায়ের ‘কার্যকরণ সম্বন্ধ কি অসীম হতে পারে?’ এই অংশটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকলে আপনি এতোক্ষণে নিশ্চয় বুঝে যাওয়ার কথা যে কোনো কিছুর পেছনে অসীম সংখ্যক কারণ থাকা পসিবল না।
যেহেতু আমাদের এই বিশ্বের অস্তিত্বের জন্য একটা ব্যাখ্যা বা কারণ প্রয়োজন, আর সেই ব্যখ্যাটি অসীম সংখ্যক হতে পারবেনা, সেহতু শুরুতে এমন একটা কারণ থাকা লাগবে যেটা কারণহীন কারণ বা নেসেসারি বিং। এই কারণটি তার অস্তিত্বের জন্য স্বাধীন, স্ব-নির্ভর। কেননা, যদি এই কারণটি কারণহীন, স্বাধীন, স্ব-নির্ভর না হয় তাহলে ইনফিনিটি রিগ্রেসে পতিত হবে। যার ফলে ইউনিভার্স সৃষ্টিই হতে পারতোনা। সুতরাং, প্রেমিস-৫ (P5) সত্য।
- Conclusion: Therefore, God exists.
ডিডাক্টিভ আর্গুমেন্ট অনুসারে যদি প্রেমিস (P) সত্য হয়, তাহলে কনক্লুশনও সত্য হতে বাধ্য। তাই, সুতরাং, ‘স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে’ এই সিদ্ধান্তটি সত্য হতে বাধ্য।
নেসেসারি বিং থেকে স্রষ্টা
আমরা গডকে বা সৃষ্টিকর্তা ডিফাইন করি, সবচেয়ে পাওয়ারফুল, সর্বজ্ঞ, এক হিসেবে।
স্রষ্টা কেন সর্বশক্তিমান
সর্বশক্তিমান বলতে বুঝানো হয়, যিনি এমন শক্তিমান যার চাইতে শক্তিমান কোনো কিছুকে কল্পনা করা যায়না। সৃষ্টিকর্তা যদি সর্বশক্তিমান না হয় তাহলে তার মধ্যে লিমিটেশন আছে। তিনি চাইলে আরো শক্তি অর্জন করতে পারেন। তখন আমরা চাইলেই তার চেয়ে আরো বেশি শক্তিমান কোনো সত্তাকে চিন্তা করতে পারি। যেহেতু তার মধ্যে লিমিটেশন আছে সেহেতু তিনি কন্টিনজেন্ট বা পর-নির্ভরশীল। পরনির্ভরশীল সত্তার অস্তিত্বের জন্য আবার ব্যাখ্যা প্রয়োজন। সৃষ্টিকর্তা যদি পরনির্ভরশীল হয়ে থাকে তাহলে তিনি কার উপর নির্ভরশীল? তিনি যার উপর নির্ভরশীল তিনিও কি পর-নির্ভরশীল? যদি তিনিও পর-নির্ভরশীল হয় তাহলে তার অস্তিত্বের ব্যাখ্যা প্রয়োজন। এভাবে একের পর এক ব্যখ্যা দিতে গেলে আমরা ইনফিনিটি রিগ্রেসে পড়ে যাবো। সুতরাং শুরুতে এমন একজন সত্তা থাকতে হবে যার চেয়ে শক্তিমান আর কেউ নেই। তাই নেসেসারি বিং অবশ্যই সর্বশক্তিমান হতে হবে।
স্রষ্টা কেন সর্বজ্ঞ
সৃষ্টিকর্তা সর্বজ্ঞ বলতে বুঝানো হয় যে সৃষ্টিকর্তা এমন সর্বজ্ঞ যে তার চাইতে বেশি জানে এমন কোনো সত্তা আর নেই। তার চাইতে সব জান্তা আর কোনো সত্তাকে আমরা কল্পনা করতে পারিনা। স্রষ্টা যদি সর্বজ্ঞ না হয় তাহলে তার মধ্যে লিমিটেশন আছে। তিনি চাইলে আরো নলেজ অর্জন করতে পারবেন। সুতরাং তিনি নির্ভরশীল হয়ে যাবে কিন্ত সেটা পসিবল না। এখানেও ইনফিনিটি রিগ্রেসের দৃশ্যপটটি চিন্তা করুন।
একাধিক স্রষ্টা থাকে কেন সম্ভব না?
একটা দৃশ্যপট কল্পনা করুন যে, দুজন নেসেসারি বিং এক্সিস্ট করে। দুজনেরই ফ্রি উইল আছে। আর সে কারণেই দুজনে দুইরকম ইচ্ছা করলো। নেসেসারি বিং-১ ইচ্ছা করলো পুরো ইউনিভার্স থাকবে কালো। আর নেসেসারি বিং-২ ইচ্ছা করলো পুরো ইউনিভার্স থাকবে-সাদা। তো এখন দুজন নেসেসারি বিং ইচ্ছা কি প্রতিফলিত হওয়া পসিবল? অবশ্যই না! কারণ এটা ল অব লজিককে ভায়োলেট করে।
এবার দৃশ্যপটটি ঠিক উল্টোভাবে চিন্তা করুন। ধরুন দুইজনের একজনের ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে অন্যজনেরটা প্রতিফলিত হয়নি। এটা কি পসিবল? যদি এটা পসিবল হয় তাহলে যার ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়নি সে নেসেসারি বিং থাকতে পারছেনা। কারণ স্রষ্টা অবশ্যই সর্বশক্তিমান। সর্বশক্তিমান কোন সত্তা যদি তার ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করতে চাই তাহলে সেই ইচ্ছা প্রতিফলিত হবেই হবে।
যার উইল প্রতিফলিত হবেনা সে সর্বশক্তিমান নয়। কারণ তার মধ্যে লিমিটেশন আছে। তাই সে তার উইলকে প্রতিফলিত করতে পারেনি।
ধরুণ নেসেসারি বিং-১ এর ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে কিন্তু নেসেসারি বিং- ২ এর ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়নি। তাহলে নেসেসারি বিং -১ নেসেসারি বিং-২ এর চাইতে হচ্ছে সর্বশক্তিমান। নেসেসারি বিং -১ সর্বশক্তিমান বিধায় তার ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে। তাই তিনিই হলে স্রষ্টা। সুতরাং একই সাথে দুজন নেসেসারি বিং থাকা সম্ভব না।
এবার আরেকটি দৃশ্যপট কল্পনা করুন। দুজন নেসেসারি বিং এর কারো ইচ্ছাই প্রতিফলিত হলোনা। ধরুন, নেসেসারি বিং-১ ইচ্ছা করলো ইউনিভার্স সৃষ্টি করবে। নেসেসারি বিং-২ ইচ্ছা করলো ইউনিভার্স সৃষ্টি করবেনা। যদি এমনটা ঘটে তাহলে তো ইউনিভার্স সৃষ্টিই হতোনা। এছাড়াও এমনটা যদি ঘটে তাহলে দুজন নেসেসারি বিং এর মধ্যেই আমরা লিমিটেশন দেখতেই পাই। তাই তারা আসলে সর্বশক্তিমান কোনো সত্তাই হতে পারেনা। সুতরাং নেসেসারি বিং হতে হবে একক।
শেষ কথা
এই ডিডাক্টিভ আর্গুমেন্ট থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, স্রষ্টার অস্তিত্ব অনিবার্যভাবে সত্য। তিনি একক, সর্বশক্তিমান, এবং সর্বজ্ঞ। এই আর্গুমেন্টের মধ্যে পবিত্র কুরআনের সত্যতা ফুটে উঠেছে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
বলুন, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। [8]সূরা ইখলাস; ১১২:১
মহা মহিমান্বিত তিনি, সর্বময় কর্তত্ব ও রাজত্ব যার হাতে, তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান। [9]সূরা আল-মুলক; ৬৭:১
নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। [10]সূরা আল-বাকারা; ২:২৪৪
References
↑1 | Protection and Dosimetry an Introduction to Health Physics. https://doi.org/10.1007/978-0-387-49983-3 |
---|---|
↑2 | Caslav Brukner Causality in a quantum world. DOI.org/10.1063/PT.6.1.20180328a |
↑3 | D’Ariano, G. M. (2018). Causality re-established. Philosophical Transactions of the Royal Society A: Mathematical, Physical and Engineering Sciences, 376(2123), 20170313 |
↑4 | Ref: 4 Ibn Sīnā, A. (1997) Al-Shifā’. Markaz al-Nashr, p. 50. |
↑5 | Physics – The Force of Empty Space (aps.org) |
↑6 | The Burhan; Page;7 |
↑7 | সূরা ইখলাস; ১১২ঃ ১-৪ |
↑8 | সূরা ইখলাস; ১১২:১ |
↑9 | সূরা আল-মুলক; ৬৭:১ |
↑10 | সূরা আল-বাকারা; ২:২৪৪ |
3 Comments