Creatio ex nihilo ( শূন্য থেকে সৃষ্টির তত্ত্ব)

ফিলোসোফি

Creatio ex nihilo ( শুন্য থেকে সৃষ্টিতত্ত্ব)

স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে সভ্যতার ইতিহাসে আলোচনা সমালোচনা ব্যাপক। প্রাচীন গ্রীক দর্শনে মনে করা হতো মহাবিশ্ব অসীম এবং সকল পদার্থ ও অসীম এবং এদের কোনো শুরু নেই। সুতরাং এসব কে অস্তিত্বে আনার জন্য আলাদা করে কোনো ঈশ্বরের প্রয়োজন ও নেই। পরবর্তীতে দার্শনিক জন ফিলোপনাস মহাবিশ্ব অসীম এই ধারণাকে নাকচ করে তার যুক্তি প্রদান করেন ইসলামি মধ্যযুগীয় সময়ে প্রখ্যাত দার্শনিক এবং ইসলামি চিন্তাবিদ ইমাম গাজ্জালী (র’) মহাবিশ্বের শুরু আছে এবং মহাবিশ্বের অসীমতার অসম্ভাব্যতা নিয়ে জজ ফিলোপনাস এর যুক্তি থেকে মডিফাই করে যুক্তিটিকে আরও ডেভেলপ করেন। আজ আমরা জানি মহাবিশ্ব অসীম নয় এবং এর একটা শুরু রয়েছে। মহাবিশ্বের অসীম হওয়া যে কারণে অসম্ভব তা জানার পর আমরা আলোচনা করব আমাদের মূল বিষয় doctrine of creation বা সৃষ্টির তত্ত্ব নিয়ে। যে কারণে মহাবিশ্ব অসীম হতে পারে না, হিলবার্ট হোটেল আর্গুমেন্ট আমাদের দেখায় মহাবিশ্বের অসীমতা অসম্ভব।হিলবার্ট হোটেল আর্গুমেন্ট আমাদের দেখায় মহাবিশ্বের অসীমতা অসম্ভব।  সৃষ্টির প্রকৃতি হিসেবে প্রচলিত এবং গ্রহণযোগ্য আইন টি হচ্ছে Creatio ex nihilo এই ল্যাটিন শব্দের কাঠখোট্টা ইংরেজি হলো Creation out of nothing শুন্য থেকে সৃষ্টি হওয়া। ফিলোসোফিতে Creatio ex nihilo এর অর্থ হচ্ছে, পদার্থ, স্থান-কাল সময় এসব শাশ্বত নয় বরং এসব কিছু ঈশ্বরের সৃজনশীলতার দ্বারা সৃষ্ট। [1]Nicholas; Yu, Jiyuan (2008). The Blackwell Dictionary of Western Philosophy. Blackwells. ISBN 9780470997215.

বেসিক:

Creatio ex nihilo বা শুন্য থেকে সৃষ্টি এ বিষয় নিয়ে মানুষের বেশ কিছু ভুল ধারণা বিদ্যমান। যেমন অনেকে মনে করে থাকে, Creatio ex nihilo ( Creation out of nothing) এই তত্ত্বে শুন্যতা কোনো সাবস্ট্যান্স বা কোনো কিছু। বা পূর্বে বিদ্যমান থাকা কোনো কিংবা থেকে ঈশ্বর মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। [2]Heidegger, M. (2010). Being and time. Suny Press. Creatio ex nihilo ল্যাটিন এই প্রিন্সিপাল এর মূল বিষয় হলো ঈশ্বর মহাবিশ্ব কে সৃষ্টি করেছেন শুন্য থেকে কোনো পূর্বে বিদ্যমান বস্তু ছাড়াই। আরও স্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করলে৷ Creatio ex nihilo তত্ত্বে বর্ণিত নাথিং বা শুন্যতা “কোন কিছু ” নয় বরং বাস্তবতার অনুপস্থিতি। কেবলমাত্র ঈশ্বর ছিলেন আমাদের রিয়েলিটির কোনো অস্তিত্ব ছিলো না এবং স্রষ্টা ব্যতীত কিছুই ছিলো না তখন ঈশ্বর এই মহাবিশ্ব কে অস্তিত্বে নিয়ে আসেন শুন্য ( অনস্তিত্ব) অবশ্য থেকে অস্তিত্বে। [3]Erickson MJ. Christian theology. Baker Academic; 1998. p: 396

 

শুন্য থেকে কোনো কিছুকে অস্তিত্বে আনয়নঃ

সৃষ্টি নিয়ে অন্যান্য তত্ত্ব ও বিদ্যমান যেমন Creatio ex materia অর্থাৎ স্রষ্টা মহাবিশ্ব কে তৈরি করেছেন পূর্বে বিদ্যমান কোনো বস্তু থেকে যা শাশ্বত। এই তত্ত্বে সমস্যাটা হচ্ছে মহাবিশ্ব যদি আদোতে পূর্বে বিদ্যমান কোনো বস্তু থেকে সৃষ্টি হতো সেক্ষেত্রে মহাবিশ্ব ও অসীম হতো কিন্তু আমরা দেখেছি মহাবিশ্ব প্রকৃতপক্ষে অসীম নয়। Evangelical Dictionary of Theology অনুযায়ী Creatio ex nihilo তত্ত্বের মূল কথন হলো স্রষ্টা আক্ষরিক অর্থে পূর্বে বিদ্যমান কোনো বস্তু ছাড়াই মহাবিশ্ব কে নিজের ইচ্ছের দ্বারা অস্তিত্বে নিয়ে এসেছেন। বর্তমানে অস্তিত্বে থাকা বাস্তবতার শুরু হয়েছে ঈশ্বরের মাধ্যমে এসেছে এবং তিনি পূর্বে বিদ্যমান কোনো কিছু থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেননি। Creatio ex nihilo তত্ত্বের তিনটি ডোমেইন আছে।

১. সময়ের শুরু রয়েছে।

২. স্রষ্টা আক্ষরিক অর্থে মহাবিশ্ব কে শুন্য থেকে সৃষ্টি করেছেন।

৩. স্রষ্টা সময়ের উর্ধ্বে।

অর্থাৎ আমরা এখানে শুন্য থেকে সৃষ্টি হওয়া বলতে বোঝাতে চাচ্ছি, স্রষ্টা সৃষ্টি করার আগে তিনিই কেবলমাত্র অস্তিত্বে ছিলেন অন্য কিছুই অস্তিত্বে ছিলো না। এখন আমাদের মহাবিশ্ব অস্তিত্বে রয়েছে এর কারণ স্রষ্টা মহাবিশ্বকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সৃষ্টি করেছেন, মহাবিশ্ব স্রষ্টার উপর নির্ভরশীল এর অস্তিত্বের জন্য এবং স্রষ্টা মহাবিশ্বকে আক্ষরিক অর্থে শুন্য থেকে পূর্বে বিদ্যমান কোনো কিছু ছাড়াই নিজের ইচ্ছে এবং হুকুম দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। [4]Creation Out of Nothing: A Biblical, Philosophical, and Scientific Exploration. P: 15

কুরআন এবং শুন্য থেকে সৃষ্টির তত্ত্বঃ Creatio ex nihilo from Quranic perspective:

আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে বলেন,

بَدِیۡعُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ اِذَا قَضٰۤی اَمۡرًا فَاِنَّمَا یَقُوۡلُ لَهٗ کُنۡ فَیَکُوۡنُ ﴿۱۱۷﴾بدیع السموت و الارض و اذا قضی امرا فانما یقول لهٗ کن فیکون ﴿۱۱۷﴾

তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা। আর যখন তিনি কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন কেবল বলেন ‘হও’ ফলে তা হয়ে যায়। (সুরা বাকারা, আয়াতঃ ১১৭)

Originator of the heavens and the earth. When He decrees a matter, He only says to it, “Be,” and it is. ( Sahih International)

উক্ত আয়াত এ ব্যবহৃত “بَدِیۡعُ” বাদিয়্যু’ শব্দ দ্বারা originator ( উদ্ভুতকারী) বোঝায়। এছাড়াও এর আরও অনেক অর্থ রয়েছে। এর অন্যান্য সমার্থক অর্থ হচ্ছে brought into existence ( অস্তিত্বে নিয়ে আসা) newly ( নতুনভাবে) for the first time,( প্রথমবারের জন্য) not having been or existed before ( পুর্বে বিদ্যমান ছিলো না এখন কিছু) আল্লাহর অন্য এক নাম ই হচ্ছে “বাদিয়্যু” এর অর্থ আল্লাহ সৃজনকারী তিনি শুন্য থেকে নিজের ইচ্ছের মাধ্যমে কোনোকিছু কে অস্তিত্বে আনতে সক্ষম। এবং মহাবিশ্ব কে তিনি পূর্বে বিদ্যমান কোনো কিছু ছাড়াই আক্ষরিক অর্থে শুন্য থেকে সৃষ্টি করেছেন।  [5]Lane, Edward William (1863), “بَدِیۡعُ”, in Arabic-English Lexicon, London: Williams & Norgate

Refuting some objections

Creatio ex nihilo নিয়ে একাডেমিয়াতে কিছু সমালোচনা থাকে। তন্মধ্যে ইফেক্টিভ কিছু অবজেকশন নিয়ে কথা বলা যাক।

অবজেকশনঃ ১ ক্লাসিকাল মেটাফিজিক্স এর সূত্র হচ্ছে ex nihilo nihil fit অর্থাৎ শুন্য থেকে কোনো কিছুই আসতে পারে না তবে আক্ষরিক অর্থে মহাবিশ্ব কিভাবে ঈশ্বরের দ্বারা শুন্য থেকে অস্তিত্বে আসলো?

এই অবজেকশনের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে এবং ex nihilo nihil fit এর অর্থ শুন্য থেকে কিছুই আসে না বলতে বোঝানো হয় শুন্য থেকে কারণ ছাড়া কিছু অস্তিত্বে চলে আসেনা। Creatio ex nihilo অনুযায়ী আক্ষরিক অর্থে স্রষ্টা মহাবিশ্ব তৈরি করেন, সেক্ষেত্রে creatio ex nihilo কখনোই অস্তিত্বের জন্য কারণ কে বাদ দিচ্ছে না সুতরাং creatio ex nihilo র সাথে ex nihilo nihil fit এর আদোতে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।

 

অবজেকশনঃ ২ নৈমিত্তিক ঘটনার জন্য উক্ত ঘটনার সম্ভাবনা এবং এজেন্ট এর প্রয়োজন হয়। যেমন একটি কাঠের টুকরোর মধ্যে কাঠের অন্যান্য ফর্মেশনের কিছু সম্ভাবনা থাকে এরপর কোনো দক্ষ কাঠুরী সেটা দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে কাঠের গুড়ির সম্ভাবনা কে বাস্তবে রুপান্তর করেন, যদিও ঈশ্বরের প্রথম সৃষ্টি অবশ্যই ভিন্ন ছিলো, সেটা কোনো বস্তুগত ( material) কারণ ছিলো না বরং কার্যকর ( efficient) কারণ ছিলো। সেক্ষেত্রে যে সমস্যাটি দেখা দেয়, বস্তুগত কারণ কে ঈশ্বরের প্রাথমিক কাজ থেকে বের করে দেয়ার মাধ্যমে ঈশ্বরের কিছু সৃষ্টির সম্ভাবনা কে আমরা বাতিল করে দিচ্ছিনা? সুতরাং যেহেতু ঈশ্বর কোনো কিছু কে ex nihilo ( শুন্য থেকে) অস্তিত্বে আনার চেষ্টা করেন এবং সেখানে সম্ভাবনা নেই সেক্ষেত্রে এটা যৌক্তিকভাবে অসম্ভব।

এই অবজেকশনের ক্ষেত্রে মূল ফোকাস টি হচ্ছে বস্তুগত কারণ। কোনো কিছু হওয়ার জন্য অবশ্যই সেই বিষয়টি একচুয়ালাইজড হওয়ার পূর্বে তার মধ্যে পটেনশিয়ালিটি থাকা আবশ্যক। এবং আমি Actuality and Potentiality: Proof for Transcended RealityActuality and Potentiality: Proof for Transcended Reality  নামক আর্টিকেলে দেখিয়েছিলাম যে যদি মহাবিশ্ব অসীম ও হয় তবুও এর অস্তিত্বের সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য একজন ঈশ্বরের প্রয়োজন। তবে যেহেতু আমরা জানি মহাবিশ্ব অসীম হয় সেক্ষেত্রে ক্রিয়েটিও এক্স নিহিলো সম্ভব। এটা সত্য যে বস্তুগত কারণের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা থাকে এবং সেই সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য একজন এজেন্ট এর প্রয়োজন। আক্ষরিক অর্থে স্রষ্টা মহাবিশ্ব শুন্য থেকে ( পূর্বে বিদ্যমান কোনো কিছু ছাড়াই) সৃষ্টি করলে সৃষ্টির সম্ভাবনা কোথায় ছিলো? শুন্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার জন্য সম্ভাবনা ঈশ্বরের শক্তির মধ্যেই নিহিত। যেহেতু ঈশ্বরের সৃষ্টি করার ক্ষমতা রয়েছে সেক্ষেত্রে এককভাবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকা অবস্থায় ও মহাবিশ্বের অস্তিত্বের সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেই সম্ভাবনা কোনো বস্তুর মধ্যে নিহিত নয় বরং ঈশ্বরের নিজের ক্ষমতার মধ্যেই তা নিহিত। সুতরাং বস্তুগত সম্ভাব্যতার অনুপস্থিতি ঈশ্বরের সৃজনশীল সৃষ্টি কে প্রশ্নবিদ্ধ করে না।

References

References
1 Nicholas; Yu, Jiyuan (2008). The Blackwell Dictionary of Western Philosophy. Blackwells. ISBN 9780470997215.
2 Heidegger, M. (2010). Being and time. Suny Press.
3 Erickson MJ. Christian theology. Baker Academic; 1998. p: 396
4 Creation Out of Nothing: A Biblical, Philosophical, and Scientific Exploration. P: 15
5 Lane, Edward William (1863), “بَدِیۡعُ”, in Arabic-English Lexicon, London: Williams & Norgate

Asief Mehedi

Assalamualaikum to all.My name is Asief Mehedi . I am an informal philosophy student. Let's talk about comparative theology, we work to suppress atheism. Help us to suppress atheism and come forward to establish peace.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button