কুরআনের আয়াত ছাগলে খেয়ে ফেলায় কি কুরআন বিকৃত প্রমাণ হয়?

কুরআনের আয়াত ছাগলে খেয়ে ফেলায় কি কুরআন বিকৃত প্রমাণ হয়?

পবিত্র কুরআন নিয়ে অমুসলিমদের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম একটি হলো কুরআনের কিছু আয়াত ছাগলে খেয়েছিলো। হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায় যে, কুরআনের একটি আয়াত ছাগলে খেয়েছে। সেই আয়াতটি এখন আর কুরআনে নেই। আল্লাহ এবং কুরআন যদি সত্য হয়ে থাকে তবে আল্লাহর দেওয়া ওহী কিভাবে একটা ছাগলে খেয়ে ফেলে এবং তা হারিয়ে যায়? যে হাদিসটি দেখিয়ে নাস্তিকরা এহেন দাবি করে যে, কুরআন বিকৃত সেই হাদিসগুলো নিন্মরুপ; 

পরিচ্ছেদঃ ৯/৩৬. বয়স্ক লোকে দুধ পান করলে।

২/১৯৪৪। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রজম সম্পর্কিত আয়াত এবং বয়স্ক লোকেরও দশ ঢোক দুধপান সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা একটি সহীফায় (লিখিত) আমার খাটের নিচে সংরক্ষিত ছিল। যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন এবং আমরা তাঁর ইন্তিকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তখন একটি ছাগল এসে তা খেয়ে ফেলে।[1] সুনান ইবনু মাজাহ| হাদিস:১৯৪৪ | Sunan ibn Majah, Hadith No. 1944 (hadithbd.com) 

৩৪৬৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরআনে এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিলঃ عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ ’দশবার দুধপানে হারাম সাবিত হয়।’ তারপর তা রহিত হয়ে যায় خَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ এর দ্বারা। (পাঁচবার পান দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হয়) তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন অথচ ঐ আয়াতটি কুরআনের আয়াত হিসাবে তিলাওয়াত করা হত।[2] সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)| হাদিস:৩৪৬৬ | Sahih Muslim (Islamic foundation), Hadith No. 3466 (hadithbd.com) 

এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারলাম রজম সম্পর্কে ও বয়স্ক লোকেরও দশ ঢোক দুধপান সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়েছিলো। কিন্তু আয়াত দুটি ছাগলে খেয়ে ফেলে। যেহেতু, কুরআনের আয়াত ছাগলে খেয়ে ফেলেছে সেহেতু কুরআন বিকৃত। এছাড়াও আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,

নিশ্চয় আমিই কুরআন নাযিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক।[3] (15:9) Al-Hijr | (১৫:৯) আল-হিজর-অনুবাদ/তাফসীর (hadithbd.com)  

আল্লাহ যদি নিজেই কুরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে থাকে তাহলে কুরআন কিভাবে ছাগলে খেয়ে পেলে এবং হারিয়ে যায়? 

এই অভিযোগের উত্তর হলো, ছাগলে খেয়ে নেওয়া আয়াতটি হারিয়ে যায়নি বরং এখনো তা আছে। রজমের আয়াতটি হলো:- الشيخ والشيخة إذا زنيا فارجموهما البتة. (ইবনে মাজাহ/২৫৫৩) তবে আয়াতগুলো রহিত বা নাসখ হয়ে গিয়েছে তাই কুরআনে সেগুলো সংকলন করা হয়নি। পাঁচ ঢোক দুধপানের আয়াতও যে রহিত হয়েছিলো, তা বিভিন্ন হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়। যেমন:-

حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ بْنُ عَبْدِ الصَّمَدِ بْنِ عَبْدِ الْوَارِثِ حَدَّثَنَا أَبِي حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْقَاسِمِ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَمْرَةَ عَنْ عَائِشَةَ أَنَّهَا قَالَتْ كَانَ فِيمَا أَنْزَلَ اللهُ مِنْ الْقُرْآنِ ثُمَّ سَقَطَ لَا يُحَرِّمُ إِلَّا عَشْرُ رَضَعَاتٍ أَوْ خَمْسٌ مَعْلُومَاتٌ.

হজরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রথমদিকে কুরআনে এই বিধান ছিলো, যা পরে রহিত হয়ে যায়ঃ দশ ঢোক বা পাঁচ ঢোক দুধ পানের কমে নিষিদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত হয়।[4] সুনান ইবনু মাজাহ| হাদিস:১৯৪২ | Sunan ibn Majah, Hadith No. 1942 (hadithbd.com)  

সুতরাং, ছাগলে খেয়ে নেওয়া আয়াতগুলো হারিয়ে যায়নি। বরং, সেগুলো নসখ হয়ে যাওয়ার কারণে আয়াতগুলো কুরআনে সংকলন করা হয়নি। আর যে আয়াতগুলো নসখ হয়ে যাবে সেগুলো কুরআনে থাকবেনা এটাই স্বাভাবিক। তাই ওই আয়াতগুলো ছাগলে খেয়ে নেওয়ার কারণে কুরআন বিকৃত এই দাবিটি কিছুতেই যুক্তিযুক্ত নয়।

নসখ এবং মানসুখ কি?

আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, আমি যে আয়াত রহিত করি কিংবা ভুলিয়ে দেই, তার চেয়ে উত্তম কিংবা তার মত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। [5] (2:106) Al-Baqara | (২:১০৬) আল-বাকারা-অনুবাদ/তাফসীর (hadithbd.com) 

’নসখ’ শব্দ দ্বারা বিধি-বিধান দূর করা অর্থাৎ রহিত করা বোঝানো হয়। অর্থাৎ কোনো আয়াতকে যে আয়াত দ্বারা রহিত করা হয় সেই আয়াতকে নসখ বলা হয়। যেমন,  ‘দশবার দুধপানে হারাম সাবিত হয়।’ (عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ) এই আয়াতটি রহিত বা নসখ হয় ‘পাঁচবার পান দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হয়।’ ( خَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ) দিয়ে। সুতরাং, দশবার দুধপানে হারাম সাবিত হয়।’ (عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ) এই আয়াতটি হলো মানসুখ। এবং দশবার দুধপানে হারাম সাবিত হয়।’ (عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ) এই আয়াতটি হলো নাসখ।

রজমের আয়াত নাসখ হওয়ার দলিল।

হাদিসে উল্লেখিত রজমের আয়াতটি বর্ণিত হওয়ার সময়ই রাসুল (সাঃ) তা কুরআনের অংশ হিসেবে লিপিবদ্ধ করতে নিষেধ করেছিলেন। পরবর্তীতে এ বিধান সাহাবিদের অন্তরে গেঁথে গেল। সাহাবিরা অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া পর রজমের আয়াতের তিলাওয়াত আল্লাহ রহিত করে দেন। কিন্তু বিধান বহাল রাখেন।

কাসির বিন সালত (রহ.) থেকে বর্ণিত, জায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, “যখন কোন বিবাহিত পুরুষ অথবা মহিলা ব্যভিচার করে, তাদের উভয়কে রজম কর।”(এটি শুনে) আমর বলেন, “যখন এটি নাজিল হয়েছিল, আমি নবী (সা.)-এর নিকট আসলাম এবং এটি লিপিবদ্ধ করব কিনা তা জানতে চাইলাম। তিনি তা অপছন্দ করলেন। (আল মুসতাদরাক লি হাকিম, হাদিস নং ৮১৮৪) 

পরিচ্ছেদঃ ৭. রজম (পাথর মেরে হত্যা)-এর প্রমাণ

১৪৩১। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজমের আইন বাস্তবায়ন করেছেন, আবূ বকর (রাঃ)-ও রজমের আইন বাস্তবায়ন করেছেন এবং রজমের আইন আমিও বাস্তবায়ন করছি। আল্লাহ্ তা’আলার কিতাবের মধ্যে যদি কোন কিছু যোগ করাকে আমি নিষিদ্ধ মনে না করতাম তবে অবশ্যই এই বিধান মাসহাফে (কুরআনে) লিখে দিতাম। কেননা আমার ভয় হয় যে, পরবর্তী সময়ে মানব জাতির এমন দল আসবে যারা এই হুকুম আল্লাহ্ তা’আলার কিতাবে না দেখতে পেয়ে তা অস্বীকার করবে।

সহীহ, তা’লীক আলা ইবনু মা-জাহ, ইরওয়া (৮/৫০৪)

আলী (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। উল্লেখিত হাদীসটি বিভিন্ন সূত্রে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে।[6] সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)| হাদিস:১৪৩১ | Sunan at-Tirmidhi, Hadith No. 1431 (hadithbd.com)

উমার (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট গিয়েছিলেন এবং জিজ্ঞেস করেছিলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে রজমের আয়াতটি লিখে দেওয়া হোক। নবী মুহাম্মাদ (সা.) বললেন,’আমি তা করতে পারব না। (সুনানুল কুবরা বাইহাকী ৮/২১১ এবং সুনানুল কুবরা নাসাঈ হাদিস নং ৭১৪৮) তাহক্বীক আলবানী: সহীহ।

এই হাদিসগুলো থেকে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, রজমের আয়াতের তিলাওয়াত রহিত। এ কারণে এটি কুরআনে নেই। এটি তিলওয়াত হয়না তবে এর বিধান কিয়াতম পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

পাঁচ ঢোক দুধপানের আয়াত রহিত হওয়ার দলিল

৩৪৬৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরআনে এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিলঃ عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ ’দশবার দুধপানে হারাম সাবিত হয়।’ তারপর তা রহিত হয়ে যায় خَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ এর দ্বারা। (পাঁচবার পান দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হয়) তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন অথচ ঐ আয়াতটি কুরআনের আয়াত হিসাবে তিলাওয়াত করা হত।[7] সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)| হাদিস:৩৪৬৬ | Sahih Muslim (Islamic foundation), Hadith No. 3466 (hadithbd.com) 

এই হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে দশবার দুধপান হারাম সাবিত হয় পাঁচবার পান দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু এই হাদিস থেকে কোনোভাবেই এটা প্রমাণিত হয় না যে, পাঁচ ঢোক দুধপানের আয়াত কুরআনের অংশ। বরং হাদিসের ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলো এবং অন্যন্য হাদিসের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে, পাঁচ বার দুধপানের আয়াতও রহিত হয়েছিলো। 

এখানে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এই হাদিসে তো বলা হয়েছে যে,  (পাঁচবার পান দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হয়) তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন অথচ ঐ আয়াতটি কুরআনের আয়াত হিসাবে তিলাওয়াত করা হত। নাসখ হওয়ার পরেও কেন তিলওয়াত হতো? এর মানে কি এই না যে, ঐ আয়াতটি নাসখ হয়নি? 

নাসখ হওয়ার পরেও আয়াতটি তিলওয়াত করার কারণ, অনেকেই নাসখ হওয়ার খবর জানতো না। কারণ তৎকালীন যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ছিলো না। একটা খবর ছড়াতে বহু সময় লাগতো। ফলে না জানার কারণে অনেক লোক রাসুল (সা.)-এর মৃত্যুর পরেও তা তিলাওয়াত করতো। রহিত হওয়ার খবর জানার পর তিলাওয়াত করে বাদ দিয়ে দেয়।

আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রথমদিকে কুরআনে এই বিধান ছিলো, যা পরে রহিত হয়ে যায়ঃ দশ ঢোক বা পাঁচ ঢোক দুধ পানের কমে নিষিদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত হয় না।[8] সুনান ইবনু মাজাহ| হাদিস:১৯৪২ | Sunan ibn Majah, Hadith No. 1942 (hadithbd.com)

 

অতীতে বিধান ছিল দশ বা পাঁচ ঢোকের কম দুধ পান করলে বিবাহ হারাম হয় না। কিন্তু উপরোক্ত হাদিস অনুযায়ী এই বিধান রহিত হয়েছে। অর্থাৎ, এখন পাঁচ ঢোকের কম দুধ পান করলেও বা কোনোভাবে দুধ পেটে গেলেই বিবাহ হারাম হবে। সুতরাং, এই হাদিস দ্বারা পাঁচ ঢোকের বাধ্যবাধকতার বিধানও স্পষ্টভাবে রহিত প্রমাণিত হয়। 

এছাড়া ইমাম মালিক (রহ.) বলেন,

পাঁচবারের উপর আমল নেই। দুগ্ধ পান অল্প হোক বা বেশি হোক বিবাহ সম্পর্ক হারাম করবে।[9] মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং-১২৬৫

 

পরিচ্ছেদঃ ৫১. কতটুকু দুধ পান করলে বিবাহ হারাম হবে

৩৩১৪. মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন বযী’ (রহঃ) … কাতাদা (রহঃ) বলেনঃ আমরা ইবরাহীম ইবন ইয়াযীদ নখয়ীকে দুধপান সম্বন্ধে প্রশ্ন করে লিখেছিলাম। উত্তরে তিনি লিখলেন, ’শুরায়হ আমাদিগকে বর্ণনা করেছেন। আলী (রাঃ) এবং ইবন মাসউদ (রাঃ) বলতেনঃ দুধপান অল্প হোক অথবা অধিক হোক, তা বিবাহ হারাম করে। তার কিতাবে রয়েছে, আবু শা’সা মুহারিবী বর্ণনা করেছেন- আয়েশা (রাঃ) তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ অল্প পরিমাণ পান করলে, তা হারাম করে না।[10]গ্রন্থঃ সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | বর্ণনাকারীঃ কাতাদাহ (রহঃ) … Continue reading 

পাঁচবার দুধপানের বিধানটি যে একটি মানসুখ বা রহিত বিধান, এ ব্যাপারে স্বয়ং উম্মুল মু’মিনিনগণ থেকেও একটি বর্ণনা রয়েছে।

পরিচ্ছেদঃ ১০. বয়স্ক লোক দুধপান করলে যা নিষিদ্ধ হয়

২০৬১। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী আয়িশাহ ও উম্মু সালামাহ (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। আবূ হুযাইফাহ ইবনু ’উতবাহ ইবনু রাবী’আহ ইবনু ’আবদি শাম্‌স সালিমকে পালক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করে তার সাথে স্বীয় ভাতিজী ওয়ালীদ ইবনু ’উতবাহ ইবনু রাবী’আহর মেয়ে হিন্দাকে বিয়ে দেন। সালিম এক আনসারী মহিলার ক্রীতদাস ছিলো। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়িদকে পালক পুত্র হিসাবে লালন করেছিলেন। জাহিলী যুগের নিয়ম ছিলো, কেউ কাউকে পালক পুত্র হিসাবে গ্রহণ করলে লোকেরা তাকে ঐ ব্যক্তির পুত্র হিসেবে সম্বোধন করতো এবং ঐ লোক মারা গেলে পরিত্যক্ত সম্পদের উত্তরাধিকারীও তাকে করা হতো।

কিন্তু যখন মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ ’’তাদেরকে (পালক পুত্রদেরকে) তাদের (প্রকৃত) পিতার নামে ডাকবে। তারা তোমাদের দীনি ভাই ও বন্ধু’’ (সূরা আহযাবঃ)। অতঃপর তাদের প্রকৃত পিতার নাম ধরেই ডাকা আরম্ভ হয়। আর পিতার সন্ধান না পাওয়া গেলে তাকে বন্ধু ও দীনি ভাই বলে ডাকা হতো। পরবর্তীতে আবূ হুযাইফাহ ইবনু ’উত্ববাহর স্ত্রী সাহলা সুহাইল ইবনু ’আমর আল-কুরাইশী আল-’আমিরী (রাযি.) এসে বলেন, হে আল্লাহ রাসূল! সালিমকে আমরা আমাদের পুত্র গণ্য করি। সে আমার ও আবূ হুযাইফাহর সাথে একই ঘরে থাকে। আর সে আমাকে একই বস্ত্রের মধ্যে দেখেছে। আল্লাহ যা কিছু অবতীর্ণ করেছেন আপনি তা ভালোভাবে অবহিত। এখন তার ব্যাপারে আপনি কি নির্দেশ দেন?

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে তোমার দুধ পান করাও। সুতরাং তিনি তাকে পাঁচ ঢোক দুধ পান করান। তখন থেকে সে তার দুধ পানকারী সন্তান গণ্য হয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ’আয়িশাহ্ (রাঃ) তার ভাগ্নী ও ভাতিজীদেরকে নির্দেশ দিতেন যে, ’আয়িশাহ্ (রাঃ) নিজে যাদেরকে সাক্ষাৎ দান ও যাদের আগমন পছন্দ করতেন, তাদেরকে যেন পাঁচ ঢোক নিজেদের দুধ পান করানো হয়, তাদের বয়স দুধ পানের বয়সের (দু’বছরের) বেশী হয়েও। অতঃপর তারা ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে সরাসরি আসতো।

কিন্তু উম্মু সালামাহ (রাযি.) এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্যান্য স্ত্রীগণ যে কোনো ব্যক্তিকে এরূপ দুধসন্তান বানিয়ে তাদের কাছে উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি বর্জন করলেন, যতক্ষণ না শিশু বয়সে দুধ পান করা হয়। তারা ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমাদের জানা নেই, সম্ভবত সালিমের বিষয়ে এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি বিশেষ অনুমোদন ছিলো যা অন্য কারোর জন্য প্রযোজ্য নয়।[11] সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)| হাদিস:২০৬১ | Sunan Abu Dawood, Hadith No. 2061 (hadithbd.com)

পাঁচঢোক দুধপানের আয়াতটি সূরা নিসার ২৩ নাম্বার আয়াত দ্বারাও রহিত হয়, যেখানে দুধপানের বাধ্যবাধকতার কোনো সীমা নেই।

তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদেরকে, তোমাদের মেয়েদেরকে, তোমাদের বোনদেরকে, তোমাদের ফুফুদেরকে, তোমাদের খালাদেরকে, ভাতিজীদেরকে, ভাগ্নীদেরকে, তোমাদের সে সব মাতাকে যারা তোমাদেরকে দুধপান করিয়েছে, তোমাদের দুধবোনদেরকে, তোমাদের শ্বাশুড়ীদেরকে, তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছ সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে রয়েছে তাদেরকে, আর যদি তোমরা তাদের সাথে মিলিত না হয়ে থাক তবে তোমাদের উপর কোন পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদেরকে এবং দুই বোনকে একত্র করা(তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[12] (4:23) An-Nisa | (৪:২৩) আন-নিসা-অনুবাদ/তাফসীর (hadithbd.com)  

সুতরাং, কুরআনের আয়াত ছাগলে খাওয়ার কারণে এটা প্রমাণিত হয় না যে, কুরআন বিকৃত। আর ছাগলে খাওয়া আয়াতগুলো হারিয়ে যায়নি বরং, সেগুলো নাসখ হওয়ার কারণে কুরআনে সংকলন করা হয়নি।

References

References
1 সুনান ইবনু মাজাহ| হাদিস:১৯৪৪ | Sunan ibn Majah, Hadith No. 1944 (hadithbd.com) 
2 সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)| হাদিস:৩৪৬৬ | Sahih Muslim (Islamic foundation), Hadith No. 3466 (hadithbd.com) 
3 (15:9) Al-Hijr | (১৫:৯) আল-হিজর-অনুবাদ/তাফসীর (hadithbd.com)
4 সুনান ইবনু মাজাহ| হাদিস:১৯৪২ | Sunan ibn Majah, Hadith No. 1942 (hadithbd.com)
5 (2:106) Al-Baqara | (২:১০৬) আল-বাকারা-অনুবাদ/তাফসীর (hadithbd.com) 
6 সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)| হাদিস:১৪৩১ | Sunan at-Tirmidhi, Hadith No. 1431 (hadithbd.com)
7 সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)| হাদিস:৩৪৬৬ | Sahih Muslim (Islamic foundation), Hadith No. 3466 (hadithbd.com) 
8 সুনান ইবনু মাজাহ| হাদিস:১৯৪২ | Sunan ibn Majah, Hadith No. 1942 (hadithbd.com)
9 মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং-১২৬৫
10 গ্রন্থঃ সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | বর্ণনাকারীঃ কাতাদাহ (রহঃ) |সর্বমোট হাদিসঃ [10] টি – Search Hadith online from hadithbd.com 
11 সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)| হাদিস:২০৬১ | Sunan Abu Dawood, Hadith No. 2061 (hadithbd.com)
12 (4:23) An-Nisa | (৪:২৩) আন-নিসা-অনুবাদ/তাফসীর (hadithbd.com)

Sazzatul Mowla Shanto

As-salamu alaykum. I'm Sazzatul mowla Shanto. Try to learn and write about theology and philosophy.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button