বিজ্ঞান কি আল্লাহর অস্তিত্ব বাতিল প্রমাণ করেছে? আল্লাহর অস্তিত্ব ও বিজ্ঞান।

বিজ্ঞান কি আল্লাহর অস্তিত্ব বাতিল প্রমাণ করেছে? আল্লাহর অস্তিত্ব ও বিজ্ঞান।

বিজ্ঞানবাদী, মুক্তমনা, নাস্তিকরা দাবি করে আল্লাহর অস্তিত্ব বলতে যদি কিছু আসলেই থাকতো তাহলে বিজ্ঞান অবশ্যই এতো দিনে আল্লাহকে খুঁজে পেত। যেহেতু বিজ্ঞান এখনো স্রষ্টাকে খুঁজে পাইনি তাই স্রষ্টা বলতে কিছু থাকতে পারেনা। কিন্তু বিজ্ঞানের চোখে কোন কিছু ধরা পড়েনি তাই বলে তার অস্তিত্ব নেই এমন চিন্তাধারার সাথে কি বিজ্ঞানের কোন সম্পর্ক আছে? নাস্তিক নিউরোসাইন্টিস্ট রেমন্ড ট্যালিস এর মতে,

যেহেতু বিজ্ঞানের চোখে ধরা পড়েনি, তাই এর কোন অস্তিত্ব নেই এমন মানসিকতার সাথে বিজ্ঞানের কোন সম্পর্ক নেই। বরং, এমন কথা তারাই বলে যারা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানকে সর্বশক্তিমান বানিয়ে ফেলেছে। এটা বিজ্ঞানবাদী আচরণ।[1]ডা.রাফান আহমেদ; হোমো স্যাপিয়েনস; পৃঃ ১৪৩

বিজ্ঞানের দর্শন[2] বিজ্ঞানের দর্শন – Faith and Theology (faith-and-theology.com) লিখাতে আমরা জেনেছি বিজ্ঞান কি, বিজ্ঞানের আলোচনার বিষয় কি, এবং বিজ্ঞান কীভাবে কাজ করে। বিজ্ঞান শুধু মাত্র আমাদের এই বাহ্যিক জগতের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য ও পরিক্ষণযোগ্য সেসব বিষয় নিয়েই কাজ করে। বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে দেখেছি বিজ্ঞানের সিদ্ধান্তগুলো চিরস্থায়ী ও সুনিশ্চিত নয়। সকল প্রশ্নের জবাবও দিতে পারে না। এমন অনিশ্চিত পদ্ধতির উপর নির্ভর করে যদি কেউ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে আল্লাহর অস্তিত্ব বলতে আদতে কিছু নেই! তাহলে কি এই সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক বলা যায়?

স্রষ্টাকে বিজ্ঞানের চোখে দেখতে চাওয়ার অর্থ হলো, স্রষ্টাকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা। আমরা জানি স্রষ্টা মহাবিশ্ব বা এই প্রকৃতির অংশ নয়। বরং, স্রষ্টা হলো অতিপ্রাকৃত এক সত্তা। কিন্তু বিজ্ঞান কি কখনোই অতিপ্রাকৃতক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে? অতিপ্রাকৃতক বিষয় দূরের কথা, বিজ্ঞান কি এই প্রকৃতির সব কিছুর ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারে? বিজ্ঞানের এত অগ্রগতি সত্ত্বেও, মানব সভ্যতার এতো পার হওয়ার পরেও এই মহাবিশ্বের মাত্র ৫% এর কিছু অংশ বিজ্ঞান আমাদের জানাতে পেরেছে।[3]How did we get here? – NASA Science

বিজ্ঞান এবং মহাকাশ লেখক ক্লারা মস্কোভিটজ এর মতে,

বর্তমানে দেখা যায় এমন সমস্ত নক্ষত্র, গ্রহ এবং ছায়াপথ মহাবিশ্বের মাত্র ৪ শতাংশ। বাকি ৯৬ শতাংশ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দেখতে, শনাক্ত করতে বা এমনকি বুঝতেও পারে না এমন জিনিস দিয়ে তৈরি। এই রহস্যময় পদার্থগুলোকে বলা হয় ডার্ক এনার্জি এবং ডার্ক ম্যাটার।[4]What’s 96 Percent of the Universe Made Of? Astronomers Don’t Know | Space

ডার্ক এনার্জির ধারণা আবিষ্কার করার জন্য ২০১১ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়া টিমের সদস্য প্রফেসর অ্যালেক্স ফিলিপ্নেনকো (নাস্তিক) RT News’কে দেওয়ার এক সাক্ষাৎকারে বলেন,

বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের মাত্র ৪ শতাংশ সম্পর্কে জানেন – অর্থাৎ, আমরা মহাবিশ্বের ৪ শতাংশের প্রকৃতি বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারি। মহাবিশ্বের ৯৬ শতাংশ ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি দিয়ে তৈরি। এবং যদিও আমরা জানি যে তারা উপস্থিত রয়েছে আমরা জানি না তাদের বিস্তারিত বৈশিষ্ট্যগুলি কী বা কেন তারা সেখানে রয়েছে। বা ঠিক কি হচ্ছে।[5]‘Scientists only understand 4% of universe’ — RT World News

এই মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জানার চেয়ে অজানাই বেশি। আমরা ডার্ক এনার্জি বা অন্ধকার শক্তি (৬৮%) এবং ডার্ক ম্যাটার (২৭%) আছে তা জানি। এই ডার্ক মেটার এবং ডার্ক এনার্জি ছাড়া পৃথিবীর সমস্ত কিছু, আমাদের পর্যবেক্ষণ করা সমস্ত কিছু, সমস্ত স্বাভাবিক পদার্থ, মহাবিশ্বের ৫% এরও কম। যেখানে বিজ্ঞান নিজেই মহাবিশ্বের সবকিছুর ব্যাখ্যা করতে পারে না, জানতে পারেনা, সেখানে বিজ্ঞান স্রষ্টাকে খুঁজে পাইনি তাই স্রষ্টা নেই এমন দাবি কি আদৌ যুক্তিযুক্ত মনে হয়?

আল্লাহর অস্তিত্ব  অস্তিত্ব বিষয়ক লিখা নির্ভরশীলতার যুক্তি[6]সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে নির্ভরশীলতার যুক্তি; Argument from contingency – Faith and Theology … Continue reading লিখাতে আমরা দেখেছি সংজ্ঞা অনুযায়ী স্রষ্টা এমন এক সত্তা যিনি এই বস্তুজগতের বাহিরের এক অতিপ্রাকৃতিক সত্তা। যেহেতু বিজ্ঞান শুধু মাত্র পর্যবেক্ষণ ও পরিক্ষণের মাধ্যমে এই বাহ্যিক জগৎ বা বস্তুজগতের ব্যাখ্যা প্রধানে সীমাবদ্ধ। তাই অতিপ্রাকৃতিক কোন সত্তা বা আল্লাহর অস্তিত্ব আছে নাকি নেই এই বিষয়ে বিজ্ঞানের ভূমিকা হলো নিরপেক্ষ। বিজ্ঞান এই বিষয়ে কিছুই বলেনা। ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস এর বিজ্ঞানীদের মতে,

বিজ্ঞান প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের একটি উপায়। প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে জাগতিক ব্যাখ্যা প্রদানে এটি সীমাবদ্ধ। বিজ্ঞান অতিপ্রাকৃত সম্পর্কে কিছুই বলতে পারে না। স্রষ্টা আছেন নাকি নেই- এ প্রশ্নের ব্যাপারে বিজ্ঞান নিরপেক্ষ।[7]Teaching About Evolution and the Nature of Science. Page: 58.

প্রফেসর অ্যালেক্স ফিলিপ্নেনকো (নাস্তিক) RT News’কে দেওয়া একই সাক্ষাৎকারে আরো বলেন,

আমি শুধু মাত্র একজন বিজ্ঞানীর দৃষ্টিকোণ থেকে, বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে মহাবিশ্ব নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। আমি আধ্যাত্মিক ঈশ্বর বা ব্যক্তিগত ঈশ্বর বা মহাবিশ্বের একটি উদ্দেশ্য আছে কিনা তা নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি না – এইগুলি এমন প্রশ্ন যা বিজ্ঞানীরা সমাধান করতে পারেন না। আমার নিজের বিশ্বাস হল যে একবার আপনার কাছে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম থাকলে মহাবিশ্ব তার নিজের মতো চলতে থাকে। এমনকি এমনও হতে পারে যে, মহাবিশ্বকে প্রথম থেকে শুরু করার জন্য আপনার যা দরকার তা হল পদার্থবিদ্যার নিয়ম – “বিগ ব্যাং”। RT: তাহলে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রের উৎপত্তি কী? অ্যালেক্স ফিলিপ্নেনকো: এটা একটা বড় প্রশ্ন – পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রের উৎপত্তি কী? আমি জানি না এটি এমন একটি প্রশ্ন যা বিজ্ঞান উত্তর দিতে পারে না।

জীববিজ্ঞানী স্কট টড বিখ্যাত সায়েন্স জার্নাল Nature-এ প্রকাশিত এক চিঠিতে বলেন,

এমনকি যদি সমস্ত তথ্য উপাত্ত একজন বুদ্ধিমান ডিজাইনারকে (স্রষ্টা) নির্দেশ করে, তবে এই ধরনের অনুমান বিজ্ঞান থেকে বাদ দেওয়া হয় কারণ এটি প্রাকৃতিক (বিজ্ঞানের বিষয়) নয়। অবশ্যই, বিজ্ঞানী, একজন ব্যক্তি হিসাবে, এমন একটি বাস্তবতাকে আলিঙ্গন করতে স্বাধীন যা প্রকৃতিবাদকে অতিক্রম করে।[8]A view from Kansas on that evolution debate | Nature

যেহেতু, আল্লাহর অস্তিত্ব বিষয়ক আলোচনা বিজ্ঞানের অন্তভূক্ত নয়, এটি বিজ্ঞানের আওয়তার বাহিরে, আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ পেলেও তা প্রত্যাখ্যান করবে, সেহেতু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্যে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ খোঁজার চেষ্টা করা নিছক সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। স্রষ্টার অস্তিত্ব বা অতিপ্রাকৃত সত্তার অস্তিত্বের আলোচনা অধিবিদ্যার বিষয় এবং বিজ্ঞান কেবল বস্তুজগতের পর্যবেক্ষণযোগ্য বিষয়ের ব্যাখ্যা প্রদানে সীমাবদ্ধ, বা বিজ্ঞানের কর্মপরিধি এতটুকুই, সেহেতু বিজ্ঞান কখনোই স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ বা বাতিল প্রমাণ করতে পারেনা।

Sazzatul Mowla Shanto

As-salamu alaykum. I'm Sazzatul mowla Shanto. Try to learn and write about theology and philosophy.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button