আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণের বোঝা কার উপর?
আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণের বোঝা কার উপর?
সাধারণত এটা বিশ্বাস করে নেওয়া হয় যে, আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করার দায়িত্ব তাদের উপর যারা কিনা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করে বা আস্তিকদের উপর। কিন্তু আস্তিকদের উপর এই প্রমাণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয় কেন? সম্ভবত এর কারণ হতে পারে যে, সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে যে দাবী আস্তিকরা করে থাকে তা ততক্ষণ পর্যন্ত জ্ঞান হতে পারেনা যতক্ষণ পর্যন্ত এই দাবির পক্ষে শক্তিশালী কোনো যুক্তি উপস্থাপন করা হবে। অথবা এভাবেও বলা হতে পারে যে যেহেতু সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব এর পক্ষে আস্তিকরা করে থাকে তাই বার্ডেন অফ প্রুফ (প্রমাণের বোঝা) তাদের কাঁধেই।
বিষয়টা অনেকটা এরকম যে,
১. সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাস ন্যায্য বা নিশ্চিত হতে পারে কেবল মাত্র ভালো যুক্তির মাধ্যমে।
২. যদি সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাসের পক্ষে কোনো ভালো যুক্তি না থাকে।
৩. তাহলে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ন্যায্য বা নিশ্চিত নয়।
জ্ঞানের ত্রিপক্ষীয় বিশ্লেষণ (The Tripartite Analysis of Knowledge)
জ্ঞান হলো ন্যায্যতা এবং সত্য বিশ্বাস। যদি কেউ কোনো বিষয় উপস্থাপন করে বা প্রস্তাব করে তবে তাকে অবশ্যই তিনটি বিষয়ের আলোকেই উপস্থাপন করতে হবে। যেমন; ১. তাকে প্রস্তাবটি বিশ্বাস করতে হবে। ২. প্রস্তাবটি সত্য হতে হবে। ৩. প্রস্তাবটি ন্যায়সঙ্গত হতে হবে।
যেমন;
১. করিম একজন ভালো ছেলে।
২. মিস্টার রহিম বিশ্বাস করে করিম একজন ভালো ছেলে।
৩. সুতরাং মিস্টার রহিমের বিশ্বাস ন্যায়সঙ্গত।
এই বিতর্কের শুরুতে আমি সকল নাস্তিকের কাছে যে প্রশ্নটি করতে চাই, এমন কোনো জ্ঞান কি নেই যা আমরা কোনো প্রকার যুক্তি প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস করি? আমাদের সমস্ত বিশ্বাস কি যুক্তির মধ্যেই বহাল থাকে?
একজন সৎ নাস্তিক এই প্রশ্নের জবাবে স্বীকার করে নিতে বাধ্য যে, এমন অনেক জ্ঞান রয়েছে যা আমরা কোনো প্রকার প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস করি। আমাদের সমস্ত বিশ্বাস কেবল মাত্র যুক্তির মধ্যেই বহাল থাকেনা। অন্যদিকে একজন অসৎ নাস্তিক এটাই বলবে যে, আমাদের সকল বিশ্বাস যুক্তির মধ্যেই বহাল থাকে। তবে এক্ষেত্রে এমন অনেক নাস্তিক পাওয়া যেতে পারে যারা এটা জানেই না যে, আমাদের সকল বিশ্বাস শুধুমাত্র যুক্তি বা প্রমাণের মধ্যে বহাল থাকেনা। নিজের অজান্তেই তারা হয়তো বিশ্বাস করে তাদের সকল বিশ্বাস যুক্তি প্রমাণের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠে। তাদের সামনে যদি সত্যতা তুলে ধরা হয় তাহলে তারা হয়তো নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসবে।
যাইহোক, মূল আলোচনায় ফিরে আসি। আমরা এটা বিশ্বাস করি যে, অন্যান্য মানুষ তারা আমদের মতো সচেতন এবং তার নিছক মেশিনের মতো কোনো কৃত্রিম রোবট নয়। বাহ্যিক জগতের বিশ্বাসের কথাও বিবেচনা করুন। আমরা কখনো এমনটা মনে করিনা যে আমাদের এই বহিজগতের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব অস্তিত্ব নেই, আমরা আসলে একটা ম্যাট্রিক্স সিমুলেশন বা নিছক স্বপ্নের মধ্যে রয়েছি। দূরের কোনো অজানা গ্রহের একটি পাত্রের মধ্যে ভেসে বেড়ানো নিছক এক মস্তিষ্ক হলাম আমরা। আর তাতে কলনাঠি নাড়িয়ে আমাদের হৃদিয়ে অনুভূতির সৃষ্টি করছে কোনো এলিয়েন। বরং আমরা বিশ্বাস করি বা আমাদের বেশিরভাগের কাছেই এটা স্পষ্ট যে “বাহ্যিক জগত” কোনো ম্যাট্রিক্স সিমুলেশন বা নিছক স্বপ্ন নয়। বরং এর বাস্তব অস্তিত্ব রয়েছে। এছাড়াও আমরা বিশ্বাস করি আমাদের যৌক্তিক চিন্তার প্রক্রিয়াগুলি মহাবিশ্ব সম্পর্কে সত্যিকারের বিশ্বাসে পৌঁছানোর জন্য কাজ করছে। আমাদের যৌক্তিক অনুষদ্গুলো অ-ভ্রান্ত। যদি আমরা এমনটা বিশ্বাস না করি তাহলে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমারা সন্দেহ প্রকাশ করতে পারিনা। কারণ আমরা কিভাবে বুঝবো যে এই ধরণের সন্দের প্রকাশের জন্য সঠিক উপায় কি?
আমাদের অতীত সম্পকে কি বলবেন?
মনে করুন আপনার বন্ধু আর আপনি খোলা মাঠে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। হঠাৎ করেই সে এমন একটি বিষয় নিয়ে বলতে শুরু করলো যে, আমাদের অতীত, গতকাল আমরা কি করেছি, গত বছর আমরা কি করেছি, স্কুল জীবনে আমরা যা যা করেছি এগুলো আসলে বাস্তবে ঘটেনি। এগুলো ছিলো আমাদের মস্তিষ্কের বিভ্রম। এমন উদ্ভট উপস্থাপনার পরে সে আপনাকে প্রশ্ন করলো, তুমি কি অতীতের অস্তিত্বে বিশ্বাস করো? আপনি কি কোনোভাবে প্রমাণ করতে পারবেন যে, না আমাদের অতীত অসলেই বাস্তব! এটা মস্তিষ্কের কোনো বিভ্রম নয়! হয়তো আমরা কখনোই প্রমাণ করতে পারবোনা। তবে আমরা বিশ্বাস করি যে অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বাস্তব। এছাড়া গাণিতিক সত্যতা অর্থাৎ ২+৩=৫ এটার পক্ষেও কোনো যুক্তি নেই।
“সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে যে দাবী আস্তিকরা করে থাকে তা ততক্ষণ পর্যন্ত জ্ঞান হতে পারেনা যতক্ষণ পর্যন্ত এই দাবির পক্ষে শক্তিশালী কোনো যুক্তি উপস্থাপন করা হবে।” এই পয়েন্টে ফিরে আসা যাক।
উপরে উল্লেখিত বিশ্বাসের যে ধরণ সম্পর্কে বলেছি যেমন, বাহ্যিক জগতের অস্তিত্ব, আমাদের অস্তিত্ব, অতীতের অস্তিত্ব, আমাদের যৌক্তিক অনুষদের অ-ভ্রান্ততা এ সমস্ত বিশ্বাস যেগুলোকে আমরা যৌক্তিক মনে করি সেগুলোর পক্ষে ভালো কোনো যুক্তি আছে কি? আমরা চাইলেও কি এগুলোর পক্ষে ভালো কোনো যুক্তি দিতে পারবো? আমরা কি কোনো প্রকার যুক্তি তর্কের মাধ্যেমে আমাদের অস্তিত্ব, বাহ্যিক জগতের অস্তিত্ব, অতীতের অস্তিত্ব, গাণিতিক সত্যতা এগুলো বিশ্বাস করি? অবশ্যই না! কারণ আমরা কখনোই যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে পারবোনা যে, এই বাহ্যিক জগত আসলেই বাস্তবে অস্তিত্বশীল এবং কোনো বিভ্রম নয়, অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আসলেই বাস্তব, ২+২= ৪ই হতে হবে ৫হবেনা, আমাদের যৌক্তিক অনুষদগুলো ভ্রান্ত নয় ইত্যাদি। কোনো প্রকার যুক্তি ছাড়াই আমরা এগুলো বিশ্বাস করি কারণ এগুলো স্বতঃসিদ্ধ বা স্ব-প্রমাণিত।
সুতরাং, আমরা যদি এ ধরণের বিশ্বাসকে যুক্তিসঙ্গতভাবে ধরে রাখতে পারি, যে ধরণের বিশ্বাসগুলো আমাদের কাছে যুক্তি ছাড়াই স্বজ্ঞাত তাহলে স্রষ্টার বিশ্বাসের পক্ষে কেন ভালো যুক্তি দেওয়ার পরেই তা জ্ঞান হবে? বা তা মেনে নেওয়া হবে? (আমরা মোটেও এমনটা বলছিনা যে, স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে আমাদের কাছে কোনো ভালো যুক্তি নেই। স্রষ্টার বিশ্বাসের পক্ষে আমাদের কাছে অনেক ভালো যুক্তি রয়েছে। আমরা কেবল দেখানোর চেষ্টা করছি যে, এমন অনেক কিছুই রয়েছে যা আমরা যুক্তি ছাড়াই বিশ্বাস করি। তাহলে শুধুমাত্র স্রষ্টার ক্ষেত্রেই কেন ভালো কোনো যুক্তি পাওয়ার পরেই বিশ্বাস করতে হবে।)
ধরুন, আপনি বিশ্বাস করেন যে ইউরোপের সকল হাতির রঙ গোলাপী। আপনার এই বিশ্বাস কি জ্ঞানের যোগ্য হতে পারে? আপনার এই বিশ্বাসে জ্ঞান হওয়ার জন্য যে যে উপাদান রয়েছে তার সুস্পষ্ট একটি উপাদানের ঘাটতি রয়েছে। যেমন, সত্য। হাতি সম্পর্কে আপনার এই নিছক বিশ্বাস জ্ঞানের জন্য যথেষ্ট হবে না, যদি না আপনার বিশ্বাসটিও সত্য হয়। অর্থাৎ যদি ইউরোপের সকল হাতি সত্যিকার অর্থেই গোলাপী হয় তাহলে আপনার বিশ্বাসটিও সত্য বলে বিবেচিত হবে।
একমাত্র সত্যই কি জ্ঞান হওয়ার জন্য যথেষ্ট?
আরেকটি বিশ্বাসের কথা চিন্তা করুন। আপনি বিশ্বাস করেন যে, ২০২২ বিশ্বকাপে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হবে। এবং মনে করুন ব্রাজিল ২০২২ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এখানে আপনার একটি বিশ্বাস ছিলো যে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হবে এবং সেই বিশ্বাসটি সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু আপনি কি আসলেই জানতেন যে, ব্রাজিল ২০২২ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হবে? অবশ্যই না! এখানে আপনার বিশ্বাস সৌভাগ্যের কারণে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই বিশ্বাসের পক্ষে আপনার কাছে কোনো যুক্তি প্রমাণ বা ন্যয্যতা ছিলোনা। তবুও এই বিশ্বাস সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
আরেকটি বিশ্বাসের কথা চিন্তা করুন, ধরা যাক আপনি বিশ্বাস করেন যে বাহিরে আজ বৃষ্টি হচ্ছে। ফুটবল খেলা সম্পর্কে আপনার যে বিশ্বাস ছিলো তার জন্য আপনার কাছে কোনো প্রমাণ বা ন্যায্যতা না থাকলেও এই বিশ্বাস সম্পর্কে আপনার কাছে যুক্তি ও ন্যায্যতা রয়েছে। অর্থাৎ আপনি আপনার বিশ্বাস এবং প্রমাণকে একত্রে সংযুক্তি করে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। আপনার ন্যায্যতা এই যে জানালার বাহিরে আপনি দেখতে পাচ্ছেন বৃষ্টি হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে আপনি আপনার বিশ্বাসকে জ্ঞানে পরিণিত করার উপাদানগুলো খুঁজে পেয়েছেন। যেমন, বিশ্বাস, সত্য এবং ন্যায্যতা।
জ্ঞানকে ন্যায়সঙ্গত-সত্য-বিশ্বাস (J T B) বলা কি সঠিক? ন্যায়সঙ্গত সত্য বিশ্বাস জ্ঞান কি?
“ন্যায়সঙ্গত-সত্য-বিশ্বাস” জ্ঞান হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। ““Gettier Problem” দ্বারা এটা সহজেই ব্যাখ্যা করা যায়।
Gettier Problem
ধরুন, আপনি সবেমাত্র আপনার স্থানীয় ডাক্তারের ওয়েটিং রুমে প্রবেশ করেছেন। আপনি প্রচন্ড আতঙ্কিত ভেতরে ডুকলেন যে আপনি হয়তো আপনার সিরিয়াল মিস করেছেন। কোনো এক দূর্ঘটনার কারনে আপনার হাতের ঘড়িটি হারিয়ে গিয়েছে তাই সময় সম্পর্কে আপনি অবগত ছিলেন না। ওয়েটিং রুমে বসে আপনি দেওয়ালে টাঙ্গানো ঘড়ির দিকে লক্ষ করে দেখলেন এখনো বারোটা বেজেছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন কারণ আপনার সিরিয়াল আসতে এখনো পনের মিনিট বাকি। এখানে আপনি সময় দেখে বিশ্বাস করে নিলেন যে এখন বারোটা বাজে। এটা আপনার ন্যায়ঙ্গত-সত্য-বিশ্বাস।
এই ঘটনাটি ঠিক উল্টোভাবে চিন্তা করুন। আপনি প্রচন্ড আতঙ্গিত হয়ে ডাক্তারের ওয়েটিং রুমে প্রবেশ করলেন। এবং একটা বিশ্বাস ছিলো যে এই মূহুর্তে ঘড়িতে ঠিক বারোটা বেজে গিয়েছে। আপনার এই বিশ্বাসটি আসলেই সত্য। এবং এর পক্ষে ন্যায্যতা ছিলো যে, আপনি যখন দেওয়ালে টাঙ্গানো ঘড়ির দিকে লক্ষ্য করে দেখলেন গড়িতে ঠিক বারোটাই বাজে। দেখার মাধ্যমে আপনার জ্ঞান অর্জন হলো। কিন্ত ধরা যাক দেওয়ালে টাঙ্গানো গড়িটা আসলে কাজ করছিলোনা। এবং আপনি যখনই গড়িটিকে পর্যবেক্ষণ করেছেন তখন উভয় কাটা বারোটার দিকেই ছিলো। এই অকেজো গড়ি দেখে আপনার কি সত্য জ্ঞান অর্জন হয়েছে? অবশ্যই না! এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে আপনার কাছে ন্যায্যাতা থাকার পরেও আপনার সত্য জ্ঞানের অভাব ছিলো।
আরেকটু সহজভাবে বলি। মনে করুন একজন লোক মরুভূমিতে একটা মরিচিকা দেখে ভাবলো সেখানে পানি আছে। এবং সে সেখানে গিয়ে দেখলো যে সত্যিই সেখানে পানি আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে মরিচিকা দেখেই পানি মনে করেছে। এখন এই কাকতালিয় ঘটনাকে ঐ ব্যক্তির জ্ঞান বলা যাবে? অবশ্যই না।
আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি যে এমন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস আমরা ধারণ করি কোনো যুক্তিত ভিত্তিতে নয়। যেমন, আমাদের মন, অতীত, বাহ্যিক জগতের অস্তিত্ব ইত্যাদি। যুক্তির মধ্যমে এই বিশ্বাস গুলো আমরা জানতে না পারলেও তবুও আমরা এগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত।
এবার আরেকটি বিশ্বাস কল্পনা করুন ; মনে করুন বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। এবং এই বিষয় সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত হয়েছেন আপনার কগনেটিভ ফ্যাকাল্টি, দৃষ্টিশক্তি এবং শ্রবণশক্তি দ্বারা। জানালার বাহিরে বৃষ্টির ফোঁটা দেখে আপনি নিশ্চিত যে এই মূহুর্তে বৃষ্টিহচ্ছে তা একেবারে স্পষ্ট। কারণ আপনি মনে করেন যে আপনি এই মূহুর্তে কোনো ভ্রান্তির মধ্যে নেই বা আপনার যৌক্তিক অনুষঙ্গ স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু কিছু সময়ের ধরুণ আপনি হ্যালুশুলেশনে ভুগতেছিলেন। এবং একটা মরুভূমিতে দেখতে ফেলেন যে এক জায়গায় পানি রয়েছে। এবং কাছে গিয়ে দেখলেন সেখানে আসলে কোনো পানি নেই। সুতরাং হেল্যোশুলেশনের কারণে আপনি দেখা বিষয়টি জ্ঞান হচ্ছেনা।
যাইহোক, যেমনটি আমরা দেখতে পেয়েছি যে, একটি সত্য-বিশ্বাসের সাথে মিলিত “ন্যায্যতা” জ্ঞানের জন্য যথেষ্ট নয়। অতএব, আমরা ন্যায্যতা ব্যতীত অন্য একটি ধারণা সম্পর্কে কথা বলবো যা জ্ঞানের জন্য যথেষ্ট এবং এটিকে আমরা “ওয়ারেন্ট” হিসাবে উল্লেখ করি। তবে এর মানে এই না যে ন্যায্যতাকে আমরা একেবারেই বাদ দিয়ে দিচ্ছি। ওয়ারেন্টকে সহজভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, “সেই বিশেষ সম্পত্তি যা সত্য বিশ্বাসকে জ্ঞানে পরিণত করে”। যা কিছু স্বাধীনভাবে জ্ঞান হয় অর্থাৎ যা কিছু জ্ঞান হতে হলে কোনো কিছুর উপর নির্ভর করতে হয়না তাকে বলা হয় ওয়ারেন্ট।
স্বতঃসিদ্ধ বিষয়গুলো জ্ঞান হওয়ার জন্য কোনো কিছুর উপর নির্ভর করতে হয়না। উপরে আমরা অনেকগুলো স্বতঃসিদ্ধ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি যেগুলো কোনো প্রকার যুক্তি ছাড়াই সত্য। কার্য-কারণ সম্পর্ক “Principle of sufficient reason” এর সংস্করণ। এটাকে স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে ধরা হয়। স্বতঃসিদ্ধ বিষয়গুলোর একটা অংশ হচ্ছে সহজাত বিশ্বাস। আর সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাস হচ্ছে সহজাত। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে ‘নাস্তিকতা কি স্বভাবজাত?’ এই আর্টিকেলে।
যেহেতু সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাস হচ্ছে সহজাত সেহেতু সৃষ্টিকর্তার পক্ষে আস্তিকরা যে যুক্তি উপস্থাপন বা দাবী করে থাকে তা স্বাধীনভাবেই জ্ঞান। এখানে কোনো জাস্টিফিকেশন, ট্রুথ,বিলিভের প্রয়োজন নেই। আর সেই কারণে কেউ যখন দাবী করে সৃষ্টিকর্তা বলতে কেউ নেই, এই দাবীর পক্ষের তাকে প্রমাণ দিতে হবে। সুতরাং আমরা বলতে পারি সৃষ্টিকর্তা আছে এই দাবীর পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে হবেনা। কারণ এটা স্বাধীনভাবে জ্ঞান। বরং কেউ যখন দাবি করবে সৃষ্টিকর্তা নেই তাকেই তার দাবির স্বপক্ষে প্রমাণ দিতে হবে।
এই বিষয়ে আরো একটি যুক্তি দেওয়া যায়,
ধরুণ আপনি একটি পজিশন ধারণ করেছেন যে, কোনো কিছু না দেখে বিশ্বাস করা যাবেনা। সুতরাং কোনো অতিপ্রাকৃতিক সত্তা রয়েছে এমন কিছু আপনি বিশ্বাস করেন না। তাই আপনি মনে করেন যারা অতিপ্রাকৃতিক সত্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে তাদের এমন বিশ্বাসের পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে, কেন অতিপ্রাকৃতিক সত্তার অস্তিত্ব রয়েছে। আপনার এই ধারণাটি মোটেই সঠিক নয়। কারণ স্রষ্টার অস্তিত্বে অস্বীকারকারীকেও অস্বীকার করার পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে।
ধরুন আপনি ও আপনার বন্ধু একটা ক্রাইম স্পটে গেলেন যেখানে একজন নারীকে হত্যা করা হয়েছে। স্পটে ক্রাইমের অনেকগুলো আলামত পাওয়া গেল। যেমন; হত্যার জন্য ব্যাবহার করা ছুরি, ভিক্টিমের গায়ে আঘাতের চিহ্ন, এক টুকরো চিরকুট ইত্যাদি। আলামত গুলো দেখার পরে আপনি মনে করলেন যে এই নারীকে তার স্বামী হত্যা করেছে। একই আলামত দেখার পর আপনার বন্ধু আপনার মতের বিরোধিতা করে বলেন, এই হত্যা কিছুতেই তার স্বামী করতে পারেনা, এটা করেছে তার বন্ধু। এই পরিস্থিতে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে, কেন উক্ত নারীকে তার স্বামী হত্যা করেছে। এবং আপনার বন্ধুকেও প্রমাণ করতে হবে যে, কেন উক্ত নারীকে তার স্বামী নয় বরং তার বন্ধু হত্যা করেছে। সুতরাং এখানে প্রমাণের বোঝা কিন্তু উভয়ের উপরেই পরে।
এবার মহাবিশ্বের সাথে এই উদাহারণটির তুলনা করুন। আমাদের এই মহাবিশ্ব অস্তিত্বের জন্য একটা শুরু রয়েছে, এটা ফাইন-টিউনড, এর ভেতরের সব কিছু নির্ভরশীল। এসব আলামত থেকে একজন আস্তিক সিদ্ধান্ত নিলো যে মহাবিশ্বের অবশ্যই একজন সৃষ্টিকর্তা আছে। অন্যদিকে একই আলামতের উপর নির্ভর করে একজন নাস্তিক সিদ্ধান্ত নিলো যে সৃষ্টিকর্তা নেই। এক্ষেত্রে উভয় পক্ষকেই তাদের দাবির পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে।