ভ্যালেন্টাইন ডে এর ইতিহাস

ভ্যালেন্টাইন ডে এর ইতিহাস

ভ্যালেন্টাইন ডে এর ইতিহাস

মাত্র পাঁচ বছর আগেও সৌদি আরবে ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস উদযাপন ছিল রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ। যখন সৌদি আরবের যুবরাজ মুহম্মদ বিন সালমান দেশটির সৎকর্মে উৎসাহ প্রদান ও অসৎকর্ম রোধ এর নিমিত্তে পরিচালিত কমিটি ভেঙে দিলেন তখন পরিবর্তন আসতে শুরু হলো। উক্ত কমিটির দায়িত্ব ছিল জনসাধারণের উপর ধর্মীয় বিধিনিষেধ প্রয়োগ। কমিটি ভেঙে দেবার আগ পর্যন্ত ভ্যালেন্টাইন উদযাপনকারীদের গ্রেপ্তার করা হতো এবং দোকানমালিকদের ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিশেষ মার্চেন্ডাইজ বিক্রি করা হতে প্রতিহত করা হতো।”[1]Where Valentine’s Day is unloved—and forbidden, National Geographic

এটা ছিল একটি ইসলামী সমাজকে লিবারেলাইজ করার একটি চাল মাত্র। এটুকু করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। এ অশুভ পরিবর্তনকে যথাযথ প্রমাণ করার জন্য তারা এটিকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।সৎকর্মে উৎসাহ প্রদান ও অসৎকর্ম রোধ এর নিমিত্তে পরিচালিত কমিটির সাবেক সভাপতি আহমেদ আল ঘামিদি বলেছেন,

এগুলো নেহায়েতই সামাজিক আচার অনুষ্ঠান এবং এগুলো ধর্ম সংশ্লিষ্ট বিষয় নয় যার বৈধকরণের জন্য ধর্মীয় অনুমতি প্রয়োজন হবে। তিনি ভালবাসাকে একটি ইতিবাচক অনুভূতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং বলেছেন ভ্যালেন্টাইন্স ডে তো “মানুষের এক পবিত্র অনুভূতিকে উদযাপন করে””[2]Un-forbidden love: Saudis enjoy second ‘religious police-free’ Valentine’s Day | Arab News (archive.org)

তাঁদের এ দাবি কী সত্য? এটা কি আসলেই কোনো ধর্মীয় বিষয় নয় এবং এই আয়োজন কি আসলেই মানুষের এক পবিত্র অনুভূতিকে উদযাপনের নিমিত্তে অনুষ্ঠিত?

আমাদের উচিত ভ্যালেন্টাইন ডে এর ইতিহাসটা জানা। ইতিহাসবিদদের মত, একসময়ের প্রচলিত দুটি উৎসবের মিশ্রণ হিসেবে উদ্ভুত আজকের ভ্যালেন্টাইন্স ডে। একটি একজন খ্রিস্টান পাদ্রীর সাথে সংশ্লিষ্ট, অন্যটি হলো রোমান মূর্তিপূজারীদের উৎসব LUPERCALIA. এই লেখায় দ্বিতীয়োক্ত আয়োজন সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।

LUPERCALIA উৎসবটা ঠিক ভ্যালেন্টাইন ডে এর মতো ছিল না। LUPERCALIA উদযাপন জুড়ে ছিল রক্তাক্ত, নৃশংস যৌন নিপীড়ন। সাথে ছিল পশুবলি আর Random matchmaking (দৈবভাবে একজন নারী এবং পুরুষ একে অপরকে পছন্দ করে তার সাথে রাত্রিযাপন)। এসবের উদ্দেশ্য ছিল অশুভ আত্মা তাড়ানো ও বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি এড়ানো [3]https://www.history.com/topics/ancient-rome/lupercalia

এ জঘন্য উৎসব উদযাপন করা হতো প্রতি বছর ১৫ই ফেব্রুয়ারী, আজকের যুগে ভালোবাসা দিবস যেদিন উদযাপিত হয় তার পরের দিন। এই উৎসব Februa নামেও পরিচিত ছিল। Februa অর্থ পরিশোধন। এই Februa শব্দ থেকেই February শব্দের আগমন।[4]https://en.wikipedia.org/wiki/Lupercalia

উৎসবের শুরুতেই Luperci নামে পরিচিত একদল রোমান পুরোহিত একটি নির্দিষ্ট স্থান(উদাহরণস্বরূপঃ lupercal গুহা) এ জমায়েত হতো। তারা একটি ছাগল ও একটি কুকুর বধ করত তাদের ভূয়ো উপাস্যের নামে। ছাগল বধ ছিল উর্বরতার প্রতীক। এরপর বলিদানে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ব্যবহার করে দুইজন নগ্ন যুবক luperci-র কপালে রক্ত লেপে দেয়া হতো। ভ্যালেন্টাইন্স ডের সময় চারিদিকে যে লালের ছড়াছড়ি দেখেন, তার আগমন এই রক্তের লাল রঙ থেকেই। এরপর একটি উল ব্যবহার করে রক্ত মুছে ফেলা হতো। পুরোটা সময়জুড়ে ওই luperci ভুতুড়ে ঢং এ হাসত।

অতঃপর ছাগলের চামড়া আলাদা করে বেশ কিছু টুকরো করা হতো। টুকরোগুলিকে বলা হতো thong. এরপর একজন luperci শহরজুড়ে দৌড়ে বেড়াতো ও সামনে যে মহিলাকেই দেখত তাকে চাবুকপেটার মতো স্টাইলে thong দ্বারা আঘাত করত। এই সবকিছু করা হতো উর্বরতার উদ্দেশ্যে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মহিলারাও আঘাতপ্রাপ্ত হতে অনিচ্ছুক ছিলেন না, কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল এই আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ তাকে সন্তান জন্মদানে সক্ষম রাখবে। তবে কিছু সূত্র মোতাবেক এই আচার কখনো কখনো মহিলার সম্মতি ব্যতীতও পালিত হতো।

হপকিন্সের অভিমত, একটি মোজাইকচিত্র পাওয়া গেছে যেখানে Lupercalia উৎসবের বিবরণ বিদ্যমান। উক্ত মোজাইকচিত্রে দেখা যায়, দুজন লোক একজন নগ্ন নারীকে আটকে রেখেছে এবং একজন অর্ধনগ্ন লোক ওই নারীকে চাবুকপেটা করছে।” [5]https://www.mentalfloss.com/article/572191/lupercalia-ancient-roman-festival-facts

এই ‘রোমান্টিক’ উৎসবের শেষে থাকত দৈবভাবে একজন নারী এবং একজন পুরুষ একে অপরকে পছন্দ করে তার সাথে রাত্রিযাপন। অন্যকথায়, এই রাত ছিল ব্যভিচারে পূর্ণ এক রাত।

“সন্ত ভ্যালেন্টাইন” এর লোককাহিনীর সাথে এই রোমান উৎসবের সম্মিলন ঘটিয়েছিল ক্যাথলিক চার্চ। এটা ছিল খ্রিষ্টধর্মকে রোমান পৌত্তলিকদের কাছে গ্রহণযোগ্য ধর্মে পরিণত করার জন্য ক্যাথলিক চার্চের একটি কৌশল। যেমনভাবে চার্চ পৌত্তলিক উৎসব স্যাটারন্যালিয়ার সাথে যীশুখ্রিষ্টের জন্মকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলেছিল, তেমনই ভাবে তারা Lupercalia-র সাথে ভ্যালেন্টাইন্স ডে এর সামঞ্জস্য স্থাপন করেছে।

আজ বহু আপসকামী “দা’ঈ” কে ইসলামকে সুগারকোট করতে দেখা যায়। এর উদ্দেশ্য থাকে কুফ[ফা]রদের কাছে ইসলামকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য হিসেবে তুলে ধরা। যে জিনিসটা বুঝতে তারা ব্যর্থ হয় তা হলো এটা স্রেফ ইসলামের বিকৃতিসাধন ছাড়া আর কিছুই করে না।

কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা ইরশাদ করেছেন,

ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা তোমার প্রতি কখনও সন্তুষ্ট হইবে না, যতক্ষণ না তুমি তাহাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর। বল, ” আল্লাহর পথনির্দেশই প্রকৃত পথনির্দেশ।” জ্ঞান প্রাপ্তির পর যদি তুমি তাহাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করো তবে আল্লাহর বিপক্ষে তোমার কোন অভিভাবক থাকবে না এবং কোনো সাহায্যকারীও থাকিবে না।” [6]কুরআন ২ঃ১২০

ভাবতেও কষ্ট হয়, জঘন্য এক অনুষ্ঠানকে আজ “মানবতার এক পবিত্র বিষয়” হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে। ভ্যালেন্টাইন্স ডে এর এই জঘন্য ইতিহাস সম্পর্কে জানার পর দু’আ করছি যেন আমরা নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ মোতাবেক এধরনের বিশ্রী আচার অনুষ্ঠান উদযাপন থেকে বিরত থাকি।

“ইবন উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“যে ব্যক্তি বিজাতীয়দের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।” [7]

আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত।

(লেখাটি ইংরেজি ভাষায় “The Muslim Skeptic” এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছিল। লিখেছেন ক্রিপ্টো ক্রেনিয়াম। মূল লেখার লিংকঃ https://muslimskeptic.com/2022/02/14/the-dark-origins-of-valentines-day-muslims-might-be-unaware-of/ অনুবাদ ও ঈষৎ পরিবর্তন করেছে আমাদের টিমের একজন ভাই। ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।

Home – Faith and Theology (faith-and-theology.com)

Asief Mehedi

Assalamualaikum to all.My name is Asief Mehedi . I am an informal philosophy student. Let's talk about comparative theology, we work to suppress atheism. Help us to suppress atheism and come forward to establish peace.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button