সর্বেশ্বরবাদের সমালোচনা

সর্বেশ্বরবাদ

সর্বেশ্বরবাদের সমালোচনা

ফিলোসফি অব রিলিজয়নের অন্যতম একটি আলোচনার বিষয় হলো সর্বেশ্বরবাদ। এই মতবাদ অনুসারে, অতিবর্তি স্রষ্টা বলতে কিছু নেই। স্রষ্টা আমাদের এই মহাবিশ্বের বাহিরে এই বিশ্বাস কে এই মতবাদ অস্বীকার করে। তাদের মতে আমাদের এই মহাবিশ্ব স্রষ্টার অংশ, আলাদা কোন কিছু নয়। অর্থাৎ, স্রষ্টা এবং মহাবিশ্ব একই, সব কিছুই স্রষ্টা এবং স্রষ্টাই সবকিছু। পৃথিবীর প্রধান ধর্ম গুলো মনে করে যে স্রষ্টা এই মহাবিশ্ব থেকে আলাদা, স্রষ্টা এই মহাবিশ্ব তৈরি করেছেন। যেমন, ইসলাম, খ্রীস্টান, ইহুদি। অন্যদিকে হিন্দু ধর্মের অনুসারীগণ সর্বেশ্বরবাদ স্বীকার করেন। তারা মনে করেন, স্রষ্টা আর মহাবিশ্ব আলাদা নয় বরং একই। সব কিছুই স্রষ্টার অংশ।

সর্বেশ্বরবাদ কি? 

সর্বেশ্বরবাদ হলো অতিবর্তী ঈশ্বরবাদের বিরুদ্ধ মতবাদ। অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ বলতে বুঝানো হয়, স্রষ্টার সাথে জগতের সম্পর্ক আলাদা। অন্যদিকে  সর্বেশ্বরবাদের মূল কথা হলো, স্রষ্টাই সব এবং সবই স্রষ্টা। স্রষ্টা ও জগত এক। স্রষ্টা ব্যাতিত জগতের কোন সত্তা সত্য হতে পারেনা।

অক্সফোর্ড লার্নার্স ডিকশনারিতে সর্বেশ্বরবাদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, এই বিশ্বাস (সর্বেশ্বরবাদ) অনুযায়ী ঈশ্বর সমস্ত প্রাকৃতিক জিনিসের মধ্যে উপস্থিত।[1]pantheism noun – Definition, pictures, pronunciation and usage notes | Oxford Advanced Learner’s Dictionary at OxfordLearnersDictionaries.com

অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারিতে সর্বেশ্বরবাদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে,

ধর্মীয় বিশ্বাস বা দার্শনিক তত্ত্বে যে ঈশ্বর এবং মহাবিশ্ব অভিন্ন (ঈশ্বরের ব্যক্তিত্ব এবং অতিক্রমকে অস্বীকার করা বোঝায়); মতবাদ অনুযায়ী ঈশ্বর সবকিছু এবং সবকিছু ঈশ্বর। [2]L. S. Sprigge; Pantheism; Oxford University Press

ক্যামব্রিজ ডিকশনারিতে সর্বেশ্বরবাদীর সংজ্ঞা তে বলা হয়েছে,

এমন কেউ যিনি বহু বা সমস্ত ঈশ্বর বিশ্বাস করেন, বা বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বর মহাবিশ্বের সমস্ত জিনিস, প্রাণী এবং মানুষের মধ্যেই আছেন। [3]PANTHEIST | English meaning – Cambridge Dictionary

এই আর্টিকেলে আমি দেখানোর চেষ্টা করবো, কেন সর্বেশ্বরবাদ সঠিক নয়।

অনিবার্য অস্তিত্ব ও নির্ভরশীল অসতীত্বের দ্বন্দ্ব  

স্রষ্টার অস্তিত্ব বিষয়ক আর্গুমেন্ট, সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নির্ভরশীলতার যুক্তিতে [4]সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নির্ভরশীলতার যুক্তি আমরা দেখেছি আমাদের এই মহাবিশ্ব এবং মহাবিশ্বের ভেতরে যা কিছু পর্যবেক্ষণ করা যায় সব কিছুই নির্ভরশীল বা কন্টিনজেন্ট ফ্যাক্ট। নির্ভরশীল অস্তিত্ব বলতে বুঝানো হয় যা কিছু তার অস্তিত্বের জন্য অন্য কিছুর উপর নির্ভর করে। অন্যদিকে স্রষ্টা হচ্ছে, অনিবার্য, স্বাধীন, স্বনির্ভর ও অসীম সত্তা। আমাদের এই মহাবিশ্ব এবং এর মধ্যে যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ ও অনুভব করি তার সব কিছুই নির্ভরশীল এবং এগুলো সসীম। সুতরাং, স্রষ্টা এবং মহাবিশ্ব যদি এক হয় তাহলে এই মহাবিশ্বের ন্যায় স্রষ্টা তার অস্তিত্বের জন্য পরনির্ভরশীল হয় যাবে। যদি স্রষ্টা তার অস্তিত্বের জন্য পরনির্ভরশীল হয় তাহলে তিনি আর স্রষ্টা থাকেনা।

যুক্তিবিদ্যার মৌলিক নিয়ম অনুসারে এটাও সম্ভব না যে, কোন কিছু একই সাথে দুইটা দ্বন্দ্বমূলক অবস্থানে থাকবে। তাই স্রষ্টা একই সাথে স্বনির্ভর আবার পরনির্ভরশীল, একই সাথে সসীম আবার অসীম হতে পারেনা। সুতরাং, হয় স্রষ্টা স্বাধীন, স্বনির্ভর এবং অসীম হবে অন্যথায় পরনির্ভরশীল, সসীম হবে। “নির্ভরশীলতার যুক্তি”তে আমরা দেখেছি স্রষ্টা সসীম বা পরনির্ভরশীল নয়। বরং স্রষ্টা স্বাধীন, স্বনির্ভর এবং অসীম। তাই স্রষ্টা এবং মহাবিশ্ব এক এই মতবাদ টি মোটেও যুক্তিসংগত নয়। আমরা একটা ডিডাক্টিভ আর্গুমেন্টের মাধ্যমে এই যুক্তির সত্যতা প্রমাণ করতে পারি।

প্রেমিসঃ১- সৃষ্টিকর্তা অনিবার্যভাবে স্বাধীন, স্বনির্ভর, অসীম।

প্রেমিসঃ২- যদি কোন সত্তা পরনির্ভরশীল, সসীম হয় তাহলে সে সৃষ্টিকর্তা হতে পারেনা।

প্রেমিসঃ৩- সর্বেশ্বরবাদ অনুযায়ী স্রষ্টা এবং মহাবিশ্ব একই। 

প্রেমিসঃ৪- আমাদের এই মহাবিশ্ব এবং এর ভেতরে যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ ও অনুভব করি তা সব কিছুই পরনির্ভরশীল, সসীম। 

প্রেমিসঃ৫- যেহেতু মহাবিশ্ব এবং স্রষ্টা একই, সেহেতু স্রষ্টা পরনির্ভরশীল। কনক্লুশনঃ সুতরাং, সর্বেশ্বরবাদ যে স্রষ্টার কথা বলে তার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়।

ব্যাখ্যা:

প্রেমিসঃ১- সৃষ্টিকর্তা অনিবার্যভাবে স্বাধীন, স্বনির্ভর, অসীম ।

আমরা নির্ভরশীলতা যুক্তি তে সৃষ্টিকর্তা যে স্বাধীন, স্বনির্ভর এবং অসীম, তা প্রমাণ করেছি। সুতরাং আমাদের ১নং প্রেমিস সত্য।

প্রেমিসঃ২- যদি কোন সত্তা পরনির্ভরশীল, সসীম হয় তাহলে সে সৃষ্টিকর্তা হতে পারেনা। নির্ভরশীলতা যুক্তি তে আমরা এটাও প্রমাণ করেছি যে কোন সত্তা পরনির্ভরশীল হলে, সসীম হলে সেই সত্তা স্রষ্টা হতে পারেনা। কারণ তার অস্তিত্বে কারণ যেহেতু সে নিজে হতে পারেনা, অর্থাৎ স্ব সৃষ্ট হতে পারেনা ( স্ব সৃষ্ট অস্তিত্ব কেন তা থাকতে পারেনা তা নিয়ে “নির্ভরশীলতার যুক্তি তে” বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।) তাই অস্তিত্বের জন্য তার এক্সটার্নাল কোন কারণের প্রয়োজন। আর এক্সটার্নাল কারণ অবশ্যই সৃষ্ট বস্তু থেকে সত্তাগতভাবে আলাদা হতে হবে। ধরুন, আপনি একটা চেয়ার বানালেন। তো চেয়ারের অস্তিত্ব নিশ্চয়ই আপনার মধ্যে নেই। বরং আপনার থেকে চেয়ারের অস্তিত্ব আলাদা। তাই পরনির্ভরশীল সত্তা তার অস্তিত্বের জন্য অন্য কোন এক্সটার্নাল কারণের উপর নির্ভর করে। তাই পরনির্ভরশীল সত্তা ডেফিনিশন অনুযায়ী স্রষ্টা হতে পারেনা। তাই আমাদের ২নং প্রেমিসও সত্য।

প্রেমিসঃ৩- সর্বেশ্বরবাদ অনুযায়ী যেহেতু স্রষ্টা এবং সৃষ্টি একই, তাই সৃষ্ট বস্তু যেহেতু পরনির্ভরশীল, সসীম সেহেতু স্রষ্টাও পরনির্ভরশীল, সসীম।

সর্বেশ্বরবাদ অনুযায়ী স্রষ্টা এবং মহাবিশ্ব এক। তাই আমাদের ৩নং প্রেমিসও সত্য। 

প্রেমিসঃ৪- আমাদের এই মহাবিশ্ব এবং এর ভেতরে যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ ও অনুভব করি তা সব কিছুই পরনির্ভরশীল, সসীম।

নির্ভরশীলতার যুক্তি তে আমরা প্রমাণ করেছি যে, আমাদের এই মহাবিশ্বের এবং এর ভেতরে যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ ও অনুভব করি তা পরনির্ভরশীল, সসীম। তাই আমাদের ৪নং প্রেমিস সত্য। প্রেমিসঃ৫- যেহেতু মহাবিশ্ব এবং স্রষ্টা একই, সেহেতু স্রষ্টা পরনির্ভরশীল। ৩নং ও ৪নং প্রেমিস সত্য হলে ৫নং প্রেমিসও সত্য।

কনক্লুশনঃ সুতরাং, সর্বেশ্বরবাদ যে স্রষ্টার কথা বলে তার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। ডিডাক্টিভ আর্গুমেন্ট অনুসারে প্রেমিস সত্য হলে কনক্লুশন বা সিদ্ধান্ত সত্য হতে বাধ্য।

এই আর্গুমেন্টে আমরা যেহেতু আমাদের প্রেমিসগুলো সত্য প্রমাণ করতে পেরেছি তাই সিদ্ধান্ত টি (“সর্বেশ্বরবাদ যে স্রষ্টার কথা বলে তার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়।”) সত্য হতে বাধ্য। 

নৈতিক যুক্তি

সর্বেশ্বরবাদ অনুসারে আমাদের এই বস্তুগত মহাবিশ্ব এবং স্রষ্টা একই। যদি এই বস্তুগত মহাবিশ্ব স্রষ্টা হয় তাহলে আমাদের এই বস্তুগত মহাবিশ্ব হলো ঐশ্বরিক। যদি বস্তুগত মহাবিশ্বের সমস্ত অংশ ঐশ্বরিক হয়, তবে আমরা যে সমস্ত বিষয় গুলি পছন্দ করি না তাও ঐশ্বরিক, যেমন রোগ-বলায়, মশা-মাছি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মল  এবং মানুষ কখনও কখনও একে অপরের যে সাথে ভয়ানক জিনিস গুলি করে যেমন, ধর্ষণ, হত্যা, চুরি, ইত্যাদি।

যেহেতু একজন সর্বেশ্বরবাদীর মতে, এই বস্তুগত জগত টি ঐশ্বরিক, এবং এটি ছাড়া আর কিছুই নেই যা “ঈশ্বর”। সেহেতু, হত্যা, অপব্যবহার এবং অন্য সবকিছু যাকে আমরা “খারাপ” বা “ভুল” বা “অনৈতিক” বলি তা আসলেই মহাবিশ্ব। এবং এগুলো কেবল স্বাভাবিকভাবেই উদ্ভাসিত হচ্ছে। “খারাপ” বা “ভুল” বা “অনৈতিক” এই কানগুলো স্রষ্টার প্রকৃতি। মানুষ খুন, অত্যাচার, ইত্যাদি যদি ঐশ্বরিক হয়ে থাকে, তাহলে এই কাজ গুলোকে খারাপ, অন্যায় বা অনৈতিক বলার কোনো মানে নেই। কারণ তারা নৈতিক ভাবে নিরপেক্ষ—ভাল নয় এবং খারাপ নয়। এগুলো হচ্ছে স্রষ্টার প্রকৃতি, সুতরাং স্রষ্টার প্রকৃতি যেমন হওয়ার বা করার কথা তাই করছে। তাই কেউ যদি এই কাজ গুলোকে খারাপ বলে তাহলে সে স্বয়ং স্রষ্টাকে ই খারাপ বলে অবহিত করে অজ্ঞতা বশত। কারণ যে জিনিসকে তারা খারাপ বলে সেগুলো সম্পূর্ণরূপে ঐশ্বরিক সত্তার অংশ বা সৃষ্টিকর্তা। তাই আমি মনে করি একজন সর্বেশ্বরবাদীকে স্বীকার করতে হবে যে সঠিক বা ভুল, ভাল বা খারাপ ধারণার আসলেই কোন অর্থ নেই। সব ঐশ্বরিক এবং সব ঈশ্বর।

স্রষ্টার মন্দগুণ

সংজ্ঞা অনুযায়ী স্রষ্টাকে হতে হবে সবচেয়ে ভালো। সত্তাগতভাবে স্রষ্টা খারাপ হতে পারেনা। কিন্ত সর্বেশ্বরবাদ অনুযায়ী আমাদের এই মহাবিশ্ব এবং মহাবিশ্বের ভেতরের সবকিছুই স্রষ্টার অংশ বা সব কিছুই স্রষ্টা। আবার মহাবিশ্বের অনেক মন্দ কিছু রয়েছে। তাই স্রষ্টা এবং মহাবিশ্ব যেহেতু একই সেহেতু স্রষ্টারও মন্দগুণ রয়েছে। সংজ্ঞা অনুযায়ী যেহেতু স্রষ্টা সত্তাগতভাবে মন্দ হতে পারেনা তাই সর্বেশ্বরবাদ যে স্রষ্টার কথা বলে তার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব না। এই আর্গুমেন্টের ক্ষেত্রেও আমরা একটি ডিডাক্টিব আর্গুমেন্ট ব্যাবহার করতে পারি। 

প্রেমিস-১ সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, এবং সবচেয়ে ভালো।

প্রেমিস-২ যেহেতু সৃষ্টিকর্তা সবচেয়ে ভালো তাই তার মধে মন্দগুণ থাকা সম্ভব না।

প্রেমিস-৩ সর্বেশ্বরবাদ অনুযায়ী মহাবিশ্ব এবংএর ভেতরে যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ ও অনুভব করি তা এক। 

প্রেমিস-৪ মহাবিশ্বে মন্দ রয়েছে।

প্রেমিস-৫ যেহেতু মহাবিশ্বে এবং স্রষ্টা একই তাই স্রষ্টার সত্তাগতভাবে মন্দগুণ রয়েছে। 

সিদ্ধান্তঃ যেহেতু স্রষ্টার সত্তাগতভাবে মন্দগুণ রয়েছে কিন্তু এমন কিছু স্রষ্টা হতে পারেনা তাই  সর্বেশ্বরবাদ যে স্রষ্টার কথা বলে তার অস্তিত্ব নেই। 

ব্যাখ্যা:

প্রেমিস-১ সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, এবং সবচেয়ে ভালো।

বাই ডেফিনিশন অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, এবং সবচেয়ে ভালো। এই ব্যাপারটি আমরা নির্ভরশীলতার যুক্তিতেও প্রমাণ করেছি। তাই আমাদের প্রথম প্রেমিস সত্য। 

প্রেমিস-২ যেহেতু সৃষ্টিকর্তা সবচেয়ে ভালো তাই তার মধে মন্দগুণ থাকা সম্ভব না। 

কোনকিছু সবচেয়ে ভালো হলে তার মধ্যে মন্দ থাকা পসিবল হবেনা, এই বিষয়ে কেউ দ্বিমত করবেনা। তাই আমরা এই প্রেমিসটিকেও সত্য বলতে পারি। 

প্রেমিস-৩ সর্বেশ্বরবাদ অনুযায়ী মহাবিশ্ব এবংএর ভেতরে যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ ও অনুভব করি তা এক। এই প্রেমসিটিও সত্য। কারণ, সর্বেশ্বরবাদ অনুযায়ী মহাবিশ্ব এবংএর ভেতরে যা কিছু আমরা পর্যবেক্ষণ ও অনুভব করি তা এক। এখানে দ্বিমতের কোন সুযোগ নেই।

প্রেমিস-৪ মহাবিশ্বে মন্দ রয়েছে।

আমাদের এই মহাবিশ্বে অনেক মন্দ কাজ প্রতিনিয়ত সংঘঠিত হয়। যেমন, হত্যা, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি ইত্যাদি। তাই এই প্রেমিসটিও সত্য।

প্রেমিস-৫ যেহেতু মহাবিশ্বে এবং স্রষ্টা একই তাই স্রষ্টার সত্তাগতভাবে মন্দগুণ রয়েছে।

যেহেতু মহাবিশ্বে মন্দ রয়েছে এবং স্রষ্টা আর মহাবিশ্ব আলাদা কিছু নয় সেহেতু স্রষ্টার মধ্যে মন্দগুণ থাকাটা বাধ্যতামূলক। 

সিদ্ধান্তঃ যেহেতু স্রষ্টার সত্তাগতভাবে মন্দগুণ রয়েছে কিন্তু এমন কিছু স্রষ্টা হতে পারেনা তাই  সর্বেশ্বরবাদ যে স্রষ্টার কথা বলে তার অস্তিত্ব নেই।

আপনার আগেই প্রমাণ করেছি যে স্রষ্টাকে সর্বোচ্চ ভালো হতে হবে। যদি কোন সত্তার মধ্যে মন্দগুণ থাকে তাহলে সেই সত্তা স্রষ্টা হতে পারেনা। তাই ডিডাক্টিব আর্গুমেন্ট অনুসারে আমাদের প্রেমিসগুলো যেহেতু সত্য তাই সিদ্ধান্তও সত্য হতে বাধ্য। তাই সর্বেশ্বরবাদ যে স্রষ্টার কথা বলে তার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। 

স্রষ্টা কি জড় পদার্থ? 

স্রষ্টার অস্তিত্ব বিষয়ক আর্গুমেন্টে ‘কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্টে দেখিয়েছি’ [5] স্রষ্টার অস্তিত্ব বিষয়ক আর্গুমেন্ট, দ্যা কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট আমরা দেখিয়েছি যে, মহাবিশ্বের স্রষ্টাকে অবশ্যই বুদ্ধিমান সত্তা হতে হবে। কারণ জড় পদার্থের কোন কজাল (কোন কিছু ঘটানোর ক্ষমতা) নেই। সর্বেশ্বরবাদ অনুযায়ী আমাদের এই জড় জগত আর স্রষ্টা এক বা সব কিছুই স্রষ্টা। আবার আমাদের জগতে অনেক জড় পদার্থ রয়েছে। সর্বেশ্বরবাদ অনুযায়ী যেহেতু স্রষ্টাই সব কিছুই বা সব কিছুই স্রষ্টা তাই জড় পদার্থও স্রষ্টা। কিন্তু বুদ্ধিমান সত্তা কিভাবে জড় পদার্থ হতে পারে?

জড় এবং বুদ্ধিমান সত্তা দুটি পরস্পরবিরোধি অবস্থান। যুক্তিবিদ্যার মৌলিক নিয়ম অনুসারে কোন কিছুই একইসাথে দুটি পরস্পরবিরোধি অবস্থান ধারণ করতে পারেনা। তাই স্রষ্টাকে হয় জড় পদার্থ হতে হবে অন্যথায় স্রষ্টাকে বুদ্ধিমান সত্তা হতে হবে। ইতিমধ্যেই আমরা স্রষ্টার অস্তিত্ব বিষয়ক আর্গুমেন্ট কালাম কসমলোজিক্যাল আর্গুমেন্টে দেখিয়েছি যে স্রষ্টা অবশ্যই বুদ্ধিমান সত্তা হতেই হবে। কোন বুদ্ধিমান সত্তা ব্যতিত অন্য বুদ্ধিমান সত্তাকে কি সৃষ্টি করা সম্ভব? ধরুন, আপনার কাছে টাকা নেই। তাহলে কি আপনি অন্য কাউকে টাকা ধার দিতে পারবেন? অবশ্যই পারবেন না। ঠিক তেমনি স্রষ্টা যদি বুদ্ধিমান সত্তা না হয় তাহলে তিনি কিভাবে বুদ্ধিমান সত্তা তৌরি করলেন? এছাড়া জড় বস্তুর ভেতরে এমন কোন কিছু নিজে থেকে ঘটানোর ক্ষমতা নেই। তাই সর্বেশ্বরবাদ সে স্রষ্টার কথা বলে তার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব না। 

কোন কিছু তৌরি করতে হলে অবশ্যই কোননা কোন উপাদান লাগে, যদি মহাবিশ্ব স্রষ্টার অংশ বা স্রষ্টা না হয় এবং স্রষ্টা যদি মহাবিশ্ব শূণ্য থেকে তৌরি করেন তাহলে তিনি কোন উপদান দিয়ে মহাবিশ্ব তৌরি করেছেন? 

সর্বেশ্বরবাদীরা দাবী করে যে, যদি মহাবিশ্ব একেবারে শূণ্য থেকে সৃষ্টি হয়, মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে যদি স্রষ্টা ছাড়া আর কিছুই না থাকে তাহলে স্রষ্টা কোন উপদান দিয়ে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে? এখানে সর্বেশ্বরবাদীরা সৃষ্টি আর রুপান্তর এই দুইটা বিষয়কে গুলিয়ে ফেলে। কোন উপদান থেকে নতুন কিছু তৌরি করাকে বলে রুপান্তর। অন্যদিকে একেবারে অনস্তিত্ব থেকে কোন কিছুকে অস্তিত্বে নিয়ে আসাকে সৃষ্টি বলে। যেমন, আপনি যদি একটা গাছ কেটে চেয়ার তৌরি করেন তাহলে সেটা হবে রুপান্তর। আপনি এখানে কেবল মাত্র গাছকে নতুন একটা রুপে রুপান্তর করেছেন। এখন আপনি গাছ কেটে চেয়ার বানান আর টেবিল বানান অথবা অন্য যে কোনোকিছুই বানান না কেন, সেটা সত্তাগতভাবে গাছই থেকে যায়। যদি মহাবিশ্বের স্রষ্টা তার সত্তার অংশ থেকেই আমাদের এই মহাবিশ্ব তৌরি করেন তাহলে মহাবিশ্ব স্রষ্টারই সত্তাগত অংশ হবে যদিও দেখতে একেকটা জিনিসকে আলাদা মনে হয়। কিন্তু এধরনে স্রষ্টার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। তা ইতিমধ্যেই আমরা উপরে প্রমাণ করেছি। 

স্রষ্টা অবশ্যই একাবারে শূণ্য থেকেই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে এই দাবীতে কোন লজিক্যাল কন্ট্রাডিকশন নেই। ফিলোসফিতে সম্ভ্যাবতা ও অসম্ভ্যাবতা নির্ভর করে লজিক্যাল কন্ট্রাডিকশনের উপর। যেমন, কোন কিছু একই সাথে পারস্পরিক দ্বন্দ্বমূলক অবস্থায়, একই সাথে সত্য আবার মিথ্য আবার মিথ্যা, সত্য মিথ্যার মাঝামাঝি কোন অবস্থানে থাকতে পারেনা। যদি থাকে তাহলে সেটাকে অসম্ভব বলে বিবেচিত হয় এবং যদি এই দন্দগুলো না থাকলে সেটা সম্ভ্যাব্য বলে বিবেচিত হয়। যেমন, কোন মানুষ একই সাথে বিবাহিত আবার ব্যাচেলর হতে পারেনা। কারণ এখানে পরস্পর দুটি দন্দমূলক অবস্থা দেখা যাচ্ছে। 

স্রষ্টা শূন্য থেকে মহাবিশ্ব তৌরি করেছে এখানে যৌক্তিক কোন সাংঘর্ষিকতা নেই। তাই এই অবস্থানকে মিথ্যা বলার কোন সুযোগ নেই। অন্যদিকে স্রষ্টা তার সত্তা থেকেই মহাবিশ্ব তৌরি করলে অথবা স্রষ্টা ও মহাবিশ্ব এক হলে স্রষ্টার বৈশিষ্ঠগুলো একই সাথে সংঘর্ষমূলক অবস্থান তৌরি করে। তাই যুক্তিবিদ্যার মৌলিক নিয়ম অনুসারে এমন স্রষ্টার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। স্রষ্টা যেহেতু সর্বশক্তিমান তাই স্রষ্টার পক্ষে এটা সম্ভব যে একেবারে শূণ্য থেকে কোন কিছুকে অস্তিত্বে নিয়ে আসা, যেহেতু এখানে লজিক্যাল কোন কন্ট্রাডিকশন নেই।

Sazzatul Mowla Shanto

As-salamu alaykum. I'm Sazzatul mowla Shanto. Try to learn and write about theology and philosophy.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button